সংকটে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক

সংকটে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক: করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক দুর্যোগ গোটা বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থাকে চরমভাবে ধাক্কা দিয়েছে। আর এই মহামারির মধ্যে সংকটে দিন কাটছে কেরানীগঞ্জের নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জাতীয়করণ না হওয়া বেসরকারি প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকদের।

কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র বেতন পান, তারা নির্ভর করেন মূলত প্রাইভেট টিউশনির ওপর। করোনাকালে দীর্ঘ ও অনিশ্চিত এই বন্ধে তাদের টিউশনি যেমন বন্ধ রয়েছে, তেমনি অনিশ্চিত হয়েছে তাদের উপার্জন। তারা না পাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন, না পাচ্ছেন প্রাইভেট পড়ানো বাসা থেকে কোনো বেতন। কাজেই জীবন চালানো, সংসার চালানো তাদের জন্য হয়েছে দুরূহ।

কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেল বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর কয়েক দফায় সময়য় বাড়িয়ে তা খোলার সম্ভাব হয়নি। অথচ করোনাকালে বন্ধে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু নিজস্ব আয়ে চলা বেসরকারি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা চরম বিপাকে পরেছেন। তাদের পরিবার নিয়ে চলতে অসুবিধা হলেও কারো কাছে হাত পাততে পারছেন।

বেসরকারি স্কুল শিক্ষক এরদোয়ান ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেসরকারি স্কুল তথা কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষক হিসেবে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের মত স্কুল শিক্ষকদের চেয়ে খেটে খাওয়া, গার্মেন্টস কর্মী যারা ৫০০০-৮০০০ টাকা বেতনে কাজ করে ভালো আছেন।

এ দেশে গার্মেন্টস কর্মীদের মূল্য আছে। যারা মানুষ গড়ার কারিগর, যারা শিক্ষা বিস্তার ঘটায়, শিক্ষা দান করেন। এদেশে তাদের কোন দামই নাই। এ মহামারীতে আমাদের খোঁজ-খবর নেয়ার মত কেউ নাই। স্কুল পরিচালকরা বা কি করবেন। তারা শিক্ষার্থী অভিভাবকদের কাছ থেকে বেতন নিতে পারছেন না। পরিবার পরিজন নিয়ে আমাদের খুব কষ্টে দিন কাটছে।

তিনি আরও বলেন, আমার অনেক সহকর্মী আছেন। তিন বেলার খাবার একবেলা খেয়ে বেঁচে আছেন। আমি নিজেই ধার দেনা করে চলছি আর কত? নিজের মূল্যবান জিনিস বিক্রি করে চলছি। বড় এক দীর্ঘশ্বাসে তিনি বলেন আমাদের আবার ঈদ! বেঁচে আছি এইতো বেশি।

টাইমস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, খুবই মানবেতর জীবন চলছে সবার। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি দ্বারা পরিচালিত হয়। করোনার কারণে গত বছর ১৬ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে বেঁচে যেতেন স্কুল মালিক ও শিক্ষকরা।

বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা না পারছেন অন্যের কাছে সহযোগিতা চাইতে, না পারছেন পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে। কর্মহীন হয়ে পড়ায় বর্তমানে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এই সেক্টরের সামনে হয়তো আরও দুর্দিন অপেক্ষা করছে। এই দুর্যোগ মুহূর্তে আসন্ন ঈদ কে সামনে রেখে স্কুল শিক্ষক ও তাদের পরিবারে হাহাকার বিরাজ করছে।

এমতাবস্থায় ভরসার সর্বশেষ কেন্দ্রস্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি যদি আমাদের প্রতি সুনজর না দেন তাহলে আমরা সর্বসান্ত ও নিঃস্ব হয়ে না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবো। মিডৌ স্কালাস্টিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক নবীন সাদিক বলেন, করোনার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বন্ধ। প্রাইভেট পড়ানোও বন্ধ। এতে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছি। আমরা ভালো নেই। এই শহরে নিজের থাকা-খাওয়াই কষ্ট তার ওপর পরিবারের দায়িত্ব। বড়ই কষ্টে পার হচ্ছে সময়, যা ভাষায় প্রকাশের নয়।

নাম মাত্র একটি টিউশন, ধারদেনা, বাড়ি ভাড়া বকেয়া রেখে চলছে দিন। শিক্ষা দিতে এসে পেটেপিঠে যে শিক্ষা পাচ্ছি বলার নয়। সরকারের সুনজর আমাদের দিকে সামান্যও নেই, এটাই সবচেয়ে বড় কষ্ট। এরদোয়ান, নবীন সাদিক ও সাজ্জাদ হসেনের মতই কেরানীগঞ্জের প্রতিটি কিন্ডারগার্টেন ও নন-এমপিও শিক্ষকদের প্রায় সবারই একই দশা। তাই তারাও বাঁচার তাগিদে প্রণোদনা চান সরকারের কাছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!