যাদু-টোনা তাবিজ করেছে কিনা সেটা কিভাবে বুঝব?

যাদু-টোনা যেটাকে আরবীতে সেহর বলা হয় তার আসল অর্থ হলো কোনো কিছুর প্রকৃতি পরিবর্তন করে দেয়া।
যখন যাদুকর যাদু করে তখন সে কোনো ঘটনা, বিষয়বস্তু বা যে কোনো কিছুকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বিপরীতভাবে উপস্থাপন করে এবং মিথ্যাকে সত্য ও সত্যকে মিথ্যারুপে দৃষ্টিগোচর করে দিয়েছে বলে মনে হতে পারে। মূল বিষয়বস্তু, হাকিকত বা ঘটনাকে যাদুকর পরিবর্তন করে ফেলছে বলে হয়। যা সম্পূর্ণ হারাম, মিথ্যাচার এবং ধোঁকাবাজি।

অনেক যাদুকর আছে যারা তন্ত্র টোনার কুফর শিরক ও পাপাচারের প্রতি নির্ভর করে দুজন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী করা বা তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করে। যারা এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তারা শয়তান অনিষ্টকারী জ্বীনকে সন্তুষ্ট করে কার্যসিদ্ধি করার চেষ্টা চালায়। যারা এই কাজকে পেশা হিসেবে নিয়েছে এবং যারা এই ঘৃণিত কাজের ওপর নির্ভর করে চলে, আস্থা রাখে তারা সকলেই গুনাহগার।

ইসলামের পরিভাষায়, যাদু করা কবিরা গুনাহ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাদু-টোনার মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেয়া হয়। জাদুকরের গুনাহ শবে কদর ও শবে বরাতের মহিমান্বিত রাতেও ক্ষমা করা হয় না। যে ব্যক্তি যাদু করে বা করবে বা যে এতে রাজি হবে সে কাফের বলে গন্য হবে।

পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের আলোকে জানা যায়, পৃথিবীতে প্রথম যাদু বিদ্যার সঙ্গে মানুষ পরিচিত হয় হারুত ও মারুত নামে দুজন ফেরেশতার মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারা’তে বলেছেন,

‘ঐ দুজন (হারূত- মারুত ফেরেস্তা) কাউকে যাদু শিক্ষা দিতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত এই ক্থা না বলতেন- নিশ্চয় আমরা (তোমাদের জন্য) পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং (আমাদের নিকট যাদু শিখে) কাফের হয়ো না।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১০২)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাতটি কবীরাহ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য বলেছেন। সাত কবিরা গুনাহর একটি কবিরা গুনাহ হচ্ছে যাদু টোনা করা। এতোটা ঘৃণিত এই কাজ, তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যাদু- টোনাকারীদের কঠোর শাস্তির কথাও উল্লেখ করেছেন।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যাদুকরের শাস্তি হলো তরবারি দিয়ে হত্যা করা’ (তিরমিযী)।

এটি এমন জঘন্য কাজ যারা জাদুটোনাতে জড়িত হয়ে যায় এতে আস্থা রাখে তারা কুফরিতে জড়িয়ে যায় এবং এ থেকে মুক্তি ও পেতে পারে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, তিন শ্রেণীর মানুষ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবে না। তারা হলো, শরাবখোর বা মদ্যপায়ী , রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্নকারী এবং যাদুর প্রতি আস্থা স্থাপনকারী। (হাদিসে মুসনাদে আহমদ)

নবী রাসূলদের সময়কালেও যাদু-টোনার প্রচলন ছিল। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর মুজেজা পেয়েছিলেন তার বিপরীতে ফেরাউন বড় বড় যাদুকরদের ডেকে এনে যাদু দেখানোর নির্দেশ দিতেন। তবে আল্লাহর নবী হজরত মুসা আলাইহিস সালামের মুজেজার কাছে ওইসব যাদুকরদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতো।

হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের কালেও যাদুবিদ্যা বিস্তার লাভ করেছিলো। সে সময় ইহুদীরা পথভ্রষ্ট শয়তান জ্বীনদের ব্যবহার করে জাদু-টোনার আশ্রয় নিতো। তবে নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও জ্বীনদের ব্যবহার করে কাজ করতেন যা কুফুরি ছিল না। তিনি ভালো কাজে এদের ব্যবহার করতেন। নবী সুলাইমান আলাইহিস সালামের সময়ে মানুষ এবং জ্বীনদের বেশ মেলামেশা ছিল।

পবিত্র কুরআনের এসেছে, ‘তারা বরং সেগুলো অনুসরণ করত, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করত। সুলাইমান কোনোদিন কুফরী করেনি, বরং ওই শয়তানগুলোই কুফরী করেছিল। ওরা মানুষকে জাদু শিখিয়েছিল। বাবিল শহরে পাঠানো দুই ফেরেশতা হারুত এবং মারুতকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছিল, তা শিখিয়েছিল।’ (সূরা: আল-বাক্বারাহ, আয়াত ১০২)

সে সময় যারা এই শয়তানী কুফুরি কাজ করতো তারা এটা বলে বেড়াতো যে হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও একিই কাজ করতো। কিন্তু তাদের এই প্রচার ছিল ভুল। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেন।

বনি ইসরাইলেরা যাদু-টোনা করতো এবং তা তাদের সর্বনাশ করে। সে প্রসঙ্গটি কোরআনে এসেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তারা শিখেছিল কীভাবে নিজেদের সর্বনাশ করা যায়, কিন্তু কীভাবে নিজেদের কল্যাণ করা যায় সেটা নয়। যদিও তারা খুব ভালোভাবে জানতো যে, এই জ্ঞান যে শিখবে, তার আখিরাত শেষ। কী জঘন্য কারণেই না তারা নিজেদের আত্মাকে বেঁচে দিয়েছিল- যদি তারা বুঝতো।’ (সূরা: আল বাক্বারাহ, আয়াত: ১০২)

আমাদের যাদু টোনা হতে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম। যাদু-টোনা হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে আল্লাহর সাহায্য যথেষ্ট। আল্লাহ তায়ালার ওপর যিনি ভরসা করেন, তার জন্যে আল্লাহর সাহায্যই যথেষ্ট। আল্লাহ তায়ালার ওপর একান্ত বিশ্বাস, তাওহীদ স্থাপন করতে হবে। আল্লাহর ক্ষমতা অসীম।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করলে কেউ তোমাদের পরাস্ত করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমাদেরকে একা ছেড়ে দেন, তাহলে কে আছে, যে তোমাকে সাহায্য করবে? যাদের ঈমান আছে তাদের উচিত শুধুমাত্র আল্লাহরই ওপর ভরসা করা।’ (সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ৩:১৬০)

যাদু-টোনার ওপর আস্থা রাখা, নিজেকে জড়িয়ে ফেলা এবং যাদু-টোনা চর্চা করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়ংকর। ইহজগত এবং পরজগতে তাদের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। যাদুকর এবং যে তার দ্বারস্থ হয় তার কোনো ইবাদত এবং দোয়া কবুল হবে না। সাময়িক সাফল্য এলেও একসময় তাদের চরম ব্যর্থতা বরণ করে নিতে হবে। জান্নাত তাদের জন্যে হারাম হয়ে যায়।

সূরা ফাতিহা, সূরা ফালাক্ব এবং সূরা নাস পাঠে অশুভ দৃষ্টি, খারাপ প্রভাব, যাদু-টোনা হতে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

মহান রাব্বুল আরামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

এবার প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে জেনে নিন আপনাকে কেউ যাদু টোনা তাবিয করেছে কিনা।

প্রশ্নঃ আমাকে কেউ যাদু/তাবিয করেছে কিনা সেটা কিভাবে বুঝব?

উত্তরঃ অনেক ভাবে বুঝা যায়। প্রথমত অনেক পরিবর্তন আসে। হঠাৎ করে কারো সাথে সম্পর্ক খুব খারাপ, আবার কারো সাথে কোন কারন ছাড়াই খুব ঘনিষ্টতা। এরকম আরো কিছু লক্ষন দেখে বুঝা যায়।

নিচের লক্ষণগুলো মিলিয়ে দেখুন আপনার সাথে কতগুলো লক্ষণ মিলেঃ

১। মুখের অবস্থা অস্বাভাবিক বা অসুন্দর লাগা।

২। কোন কারণ ছাড়াই শরীর গরম থাকা।

৩। ব্যাকপেইন। বিশেষত মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যথা করা।

৪। (মহিলাদের ক্ষেত্রে) অনিয়মিত মাসিক (পুরুষদের ক্ষেত্রে) প্রস্রাবে ইনফেকশন এর সমস্যা।

৫। প্রায়সময় পেট ব্যথা থাকা।

৬। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেও কোন রোগ ভালো না হওয়া।

৭। তীব্র মাথা ব্যথা, ঔষধ খেয়েও তেমন লাভ হয়না।

৮। হঠাৎ করে কারো প্রতি তীব্র ঘৃণা বা তীব্র ভালোলাগা অনুভব হওয়া।

৯। পরিবার, বাসা, সমাজের প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণা থাকা।

১০। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত খুব অস্বস্তিতে ভুগা অথবা মেজাজ খারাপ থাকা।

১১। কোন কারণ ছাড়াই বাড়ি থেকে দৌড় দিয়ে বের হয়ে যেতে ইচ্ছা হওয়া।

১২। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।

১৩। ঠিকমত ঘুমাতে না পারা। ঘুমালেও ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা।

১৪। স্বপ্নে কোনো গাড়ি বা প্রাণিকে আক্রমণ করতে বা ধাওয়া করতে দেখা (যেমনঃ কুকুর, বিড়াল, গরু, মহিষ, বাঘ, সিংহ, সাপ)।

১৫। স্বপ্নে কোন ফাঁকা বাড়ি, মরুভূমি বা গোরস্থানে হাঁটাচলা করতে দেখা।

১৬। স্বপ্নে বিভিন্ন যায়গায় পানি দেখা (যেমন সাগর, নদী, পুকুর, ইত্যাদি)।

১৭। স্বপ্নে ঘনঘন কোথাও আগুন জ্বলতে বা কিছু পোড়াতে দেখা।

১৮। স্বপ্নে নিজেকে উড়তে দেখা বা কোন পাখি অথবা বড়বড় গাছ দেখা।

জাদু-টোনা ও তাবিজ-কবজ আসলেই কী শিরক?

পবিত্র কোরআন শরীফে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘শয়তানরা কুফরীতে লিপ্ত হয়ে মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১০২)।

বস্ততঃ অভিশপ্ত শয়তানরা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত আল্লাহর সঙ্গে শিরক করার জন্য। হারুত ও মারুত নামক দু‘জন ফেরেশতার কাহিনী বর্ণনা প্রসংঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তারা উভয়ে কাউকে জাদু শিখানোর আগে এ কথা বলে দিত যে আমরা পরীক্ষাস্বরুপ। কাজেই তোমরা কুফরীতে শামিল হয়ো না। তারপর তাদের কাছ থেকে মানুষেরা এমন জাদু শিখতো, যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ও সংঘাত ঘটানো যায়।

অথচ তারা আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তা দ্বারা কারো ক্ষতি করতে পারতো না। তারা যে জাদু শিখতো তা তাদের শুধু ক্ষতি করতো, উপকার করতো না। আর এ কথাও জানিয়ে দিত যে, যে ব্যক্তি জাদু আয়ত্ত্ব করবে, কিয়ামতে তার কোনো অংশ পাওনা নেই।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১০২)। এ জন্য বহু পথভ্রষ্ট লোককে জাদুর আশ্রয় নিতে দেখা যায়। গোমরাকারী লোকদের ভ্রান্ত ধারণা যে, এটা নিছক হারাম কাজ। মূলতঃ তা যে কুফরী কাজ, তারা তা বুঝতে পারে না।

পর পুরুষের সঙ্গে কোনো মহিলার প্রেম-প্রণয় সৃষ্টি, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানোর কাজে এমন সব রহস্যপূর্ণ মন্ত্র পাঠ করে জাদু করা হয়, যা অধিকাংশ শিরক ও কুফরীতে পরিপূর্ণ। জাদুকরের জন্য ইসলামী বিধান মৃত্যুদন্ড। কারণ তা আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কুফরীতে সম্পর্কযুক্ত। রাসূল (সা.) যে সাতটি কবীরাগুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন, তাতে জাদু সম্পর্কযুক্ত।

সুতরাং আল্লাহকে ভয় করা উচিত এবং দুনিয়া ও আখেরাতের উভয় জায়গায় ক্ষতিকর এমন কাজের ধারে কাছে যাওয়া উচিত নয়। হাদিসে আছে, ‘জাদুকরের শাস্তি তরবারীর আঘাতে তাকে খতম করা।’ (তিরমিযী)। ইবনে আবদা বলেছেন, হজরত ওমর (রা) ইন্তেকালের এক বছর আগে আমাদের কাছে এ মর্মে ফরমান আসে যে,‘জাদুকর স্ত্রী বা পুরুষ যেই হোক তাকে হত্যা কর।’ (বুখারী)।

হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। যে জাদু করে, তার জন্য জাদু করা হয়, আর যে ভবিষ্যদ্বাণী করে, তার জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, যে শুভ অথবা অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে বা কাউকে বিশ্বাস করতে উপদেশ দেয়, তারা আমার বান্দা নয়।’

হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘গণক ও জাদুকর উভয়ই কাফের।’ হজরত আবু মুসা আশ‘আরী (রা.) বলেন. রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরণের লোক জান্নাতে যাবে না। (১) মদ্যপায়ী। (২) রক্ত সম্পর্ক আত্মীয়তা ছিন্নকারী। (৩) জাদুর ওপর আস্থা স্থাপনকারী। (মুসনাদে আহমাদ)।

আমাদের জানা প্রয়োজন যে, ইসলামে তাবিজ ব্যবহারে অনুমতি নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবিজ ব্যবহারকে শিরক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। (مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ) ‘যে ব্যক্তি তাবিজ লটকালো সে শির্ক করল।’ (মুসনাদে আহমাদ, (৪/১৫৬) ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা হাদীছ নম্বর (১/৮০৯)) এ মর্মে আরো অনেক হাদিস রয়েছে। তাবিজে বিভিন্ন ধরণের অর্থহীন আঁকিবুঁকি, ইবলিশ শয়তান, নমরূদ, ফেরআউন, হামান, কারূন ইত্যাদির নাম লেখা হয়। লেখা হয় বিভিন্ন যাদু ও তেলেসমাতী বিষয়। তাবিজে এসব লেখা থাকলে তা ব্যবহার করা শিরক এতে কোনো সন্দেহ নাই।

তবে পুরো কোরআন, কোরআনের আয়াত, হাদিসের দোয়া দ্বারা তাবিজ লেখা থাকলে অনেক আলেম তাকে শিরকী তাবিজ হিসেবে আখ্যায়িত করেন নি। কিন্তু তা শিরকী তাবিজের রাস্তাকে খুলে দিতে পারে- এ দৃষ্টি কোন থেকে হারাম বলেছেন।

তাছাড়া তাবিজে আল্লাহর নাম, আল্লাহর কালাম ইত্যাদি থাকলে তাতে এগুলো অসম্মান হয় এতে কোনো সন্দেহ নাই। কারণ, মানুষ এগুলো গলায়, কোমরে পেঁচিয়ে রাখে যার কারণে, অনেক সময় ঘুমের অবস্থায় সেগুলো তার শরীরের নিচে যায়, তাবিজ পরা অবস্থায় স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়, স্বপ্নদোষের মাধ্যমে শরীর নাপাক হয়, এগুলো শরীরে ঝুলা অবস্থায় মানুষ কত শত অশ্লীলতা ও পাপাচারে লিপ্ত হয়, টয়লেট ও নাপাক স্থানে যায়। ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে কোরআন ও হাদিসের দোয়া ইত্যাদি দ্বারা তাবিজ ব্যবহার করা হারাম।

সর্বোপরি কথা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোরআন ও দোয়া লিখে তাবিজ ব্যবহার করেছেন বা কাউকে লিখে তাবিজ দিয়েছেন তার কোনো প্রমাণ নাই। বরং তিনি কোরআনের বিভিন্ন সূরা ও বিভিন্ন দোয়া পড়ে রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) করেছেন, তার প্রিয় দৌহিত্র দ্বয় তথা হাসান ও হুসাইন (রা.)- কে রুকিয়া করেছেন, তাঁর কন্যা ফাতিহা (রা.)-কে করতে বলেছেন এবং তা উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। কোরআনের তাবিজ বৈধ হলে তিনি অবশ্যই নিজে বাস্তবায়ন করতেন এবং সাহাবীদেরকে তার শিক্ষা দিতেন। কিন্তু এমন কোনো তথ্য সহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।

উল্লেখ্য যে, ‘আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) তার অবুঝ সন্তানদের জন্য তাবিজ লিখে তা লটকিয়ে দিতেন’ বলে তাবিজ ব্যবহারের পক্ষে যে দলীল দেয়া হয় তা মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে দুর্বল। শাইখ আলবানী (রাহ.) হাদিসের এ কথাটুকু যঈফ হওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

মোটকথা, কোরআনের আয়াত, হাদিসের দোয়া, আল্লাহর নাম ও সিফাত ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা তাবিজ দেয়া হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে শিরক। অন্যথায় অনেক আলেমের মতে তা শিরক না হলেও হারাম। (যদিও কোনো কোনো আলেম তা জায়েয বলেছেন।

কিন্তু তা দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হয় না)। সুতরাং কোরআন-দোয়া, আল্লাহর নাম ও সিফাত ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা লিখিত তাবিজ সর্বসম্মতিক্রমে শিরক কিন্তু এগুলো দ্বারা লিখিত তাবিজ অগ্রাধিকার যোগ্য মতানুসারে হারাম এবং রাসূল (সা.) এর আদর্শ পরিপন্থী কাজ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!