অনলাইনে পরীক্ষা কতটা যৌক্তিক?-সিনথিয়া সুমি

অনলাইনে পরীক্ষা কতটা যৌক্তিক? শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা মানুষের জ্ঞান বিবেককে জাগ্রত করে কিন্তু সেই শিক্ষাই এখন ক্রান্তিলগ্নে। কেননা গত বছর লকডাউনের কবলে পরে ১৬ ই মার্চ ২০২০ সালে করোনা সতর্কতা হিসেবে বাংলাদেশ সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ৩১ ই মার্চ ২০২০ পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন। এরপর থেকে ধাপে ধাপে ছুটি বাড়ানো হচ্ছে কিন্তু কোনো ভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হচ্ছে না তার কারণ শিক্ষার্থীরা করোনা মোকাবিলায় অক্ষম।

কোভিড -১৯ তথা করোনা ভাইরাসের প্রকোপে আজ বিপর্যস্ত মানব সমাজ এবং শিক্ষা। কোভিট -১৯ এর বিস্তাররোধে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ধাপে ধাপে চলছে লকডাউন। তবে লকডাউনে দূরপাল্লার গাড়ি সহ সবকিছু সচল। লকডাউনে সব কিছুই যখন চলাচল করছে তখন বন্ধ শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা কি শুধু শিক্ষার্থীদের উপর আঘাত হানে?

এদিকে গত বছরেই সেশনজট ঠেকাতে সরকার অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করে দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো অনলাইন ক্লাস কি আদৌ কাজে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের। নাকি নামে মাত্র অনলাইন ক্লাস হচ্ছে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ পরিবারই অসহায় দারিদ্রপীড়িত। করোনা ভাইরাস এবং লকডাউনের কারণে এ অসহায়ত্ব বেড়ে গেছে অনেকগুণ। কাজকর্ম বন্ধ হওয়ায় সাধারণ মানুষের অভাবও অনেক বেড়ে গেছে। অভাবের তাড়নায় চিন্তিত স্বাভাবিক জীবন-যাপনের গতিপথ হারিয়ে ফেলেছে সাধারণ জনগণ। করোনা প্রতিষেধক টিকা দেশে আসার কারণে দেশের সব কিছুই ঠিকভাবে সচল হলে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে।

গণপরিবহন থেকে শুরু করে দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে। নিষেধাজ্ঞা শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা পড়েছে দুর্বিপাকে। তবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে চরম হতাশাগ্রস্ত। অনেকের পরীক্ষা আটকে থাকায় তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। এরই মাঝে শোনা যাচ্ছে পরীক্ষার নির্দেশনা। তবে পরীক্ষা অনলাইন অথবা সশরীরে নেয়া যাবে। কিন্তু অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

অনলাইনে পরীক্ষা কতটা যৌক্তিক যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী গ্রাম অঞ্চলে বসবাস করে। এমনিতেই সেখানে নেটওয়ার্ক সমস্যা লেগেই থাকে। ক্লাস করতে গেলে বাড়ি থেকে দূরে, নদীর ধারে এমনকি অনেকেই গাছে পর্যন্ত উঠে ক্লাস করেছে এমন দৃশ্যও দেখা গিয়েছে। অনেকে পিতামাতা তাদের আর্থিক সমস্যার জন্য পর্যাপ্ত ডাটা পর্যন্ত কিনতে পারে না। সশরীরে ক্লাস করা এবং অনলাইনে ক্লাস করার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে কেননা সরাসরি ক্লাসে অংশগ্রহণ করলে আমরা শিক্ষকদের থেকে সবকিছু ভালোভাবে বুঝিয়ে নিতে পারতাম, বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারতাম।

কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাসে তা আমরা পারছিনা এতে করে শিক্ষার্থীদের শুধু নামে মাত্র অনলাইন ক্লাস হচ্ছে আর কিছু না। দেখা যায় শতভাগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত মাত্র ৪০/৫০ জন তবে ক্লাস চলাকালীন সময়ে এমন উপস্থিত থাকলেও ক্লাস শেষে ত্রিশের উপরে আর শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। হয়তো কারো ডাটা শেষ হয়ে যায় কিংবা নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকে আর বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ক্লাস থেকে বঞ্চিত রয়ে যায়। স্বল্প মূল্যে শিক্ষার্থীদের ডাটা প্যাক দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।

একদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছে। অনেকেই পরিবারের কথা ভেবে লেখাপড়া বাদ দিয়ে বিভিন্ন কাজকর্মে শামিল হচ্ছে অথবা বিপথে যাচ্ছে। মেয়েদের কথা আর কি বলব? সমাজে তাদেরকে হেয় করে অনেক কথা বলা হচ্ছে এবং এহেন পরিস্থিতিতে তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবার ও তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত।

কিন্তু এখন বলা হচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনলাইনে অথবা সশরীরে পরীক্ষা নেয়া হবে। সশরীরে পরীক্ষা নিলে ভালো কিন্তু এই অনলাইন পরীক্ষা কতোটা যৌক্তিক যেখানে ৫০% শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণই করতে পারছে না। সেখানে সকল শিক্ষার্থী অনলাইন পরীক্ষা তো দূরের কথা ঠিকমতো অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতেই পারেনা। সুতরাং কর্তৃপক্ষ সব দিক বিবেচনা করে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিবেন বলে মনে করি। অন্যথায় অনেকেই পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
গোপালগঞ্জ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!