অপরিকল্পিত নগরায়ন ও কিছু কথা

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও কিছু কথা-শেখ সায়মন পারভেজ হিমেল। ” নগরায়ন” শব্দটি শোনামাত্রই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের রচনার কলকাতার নামটি স্মরণ হলেও বর্তমান বাংলা সাহিত্যে ঢাকা কেন্দ্রিক পটভূমির বিস্তার বেশ লক্ষণীয়। ব্যাপারটা একটু বিশ্লেষণ করি।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন আমলে অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলের প্রথম দিকে প্রত্যক্ষ শাসনামলে কলকাতা ছিল ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর রাজধানী। আর এটা আমরা জানি রাজধানীকে কেন্দ্র করে একটি দেশের নগরায়ন গড়ে উঠাই স্বাভাবিক। কালক্রমে কলকাতা নগরায়ন গড়ে উঠার ফলে বাংলা সাহিত্যে নগর ভিত্তিক বর্ণনার ক্ষেত্রে কলকাতা নামটি অগ্রগণ্য পেয়েছে সেই সূত্র অনুসারে।

বণিকদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে বুড়িগঙ্গার তীরে নগরায়ন গড়ে উঠলেও আস্তে আস্তে নগরায়ন সর্বত্র ঢাকায় বিস্তৃত হয়েছে । পরবর্তীকালে ইংরেজ শাসন থেকে মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রেক্ষিতে ঢাকা রাজধানী হওয়ার দরুন ঢাকায় নগরায়ন গড়ে উঠেছে আর নগরকেন্দ্রিক ঘটনা বর্ণনা করতে এবং পাঠকের বোধগম্যতা সহজ করতে বাংলা সাহিত্যে কলকাতার পরিবর্তে ঢাকার নামটি ব্যবহার হওয়াটা স্বাভাবিক ও যুগোপযোগী।

নগরায়ন বলতে মূলত গ্রামীণ জনপদ নগরে রূপান্তরিত হওয়ার সামগ্রিক প্রক্রিয়াটিকে বুঝায় । এটা হতে পারে ,গ্রামীণ জনপদ প্রয়োজনের তাগিদে কিংবা সময়ের ব্যবধানে নগরে রূপান্তরিত হওয়া ।শুধু গ্রাম জনপদে নগরায়ন ঘটে এমনটি নয়, শহরেও নগরায়ন ঘটে, তবে শহরে এটি প্রকটভাবে । অতএব শহরে ও গ্রামে উভয়েই নগরায়নের ঘটে। এত বিস্তৃত বর্ণনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই যে, নগরায়নের প্রেক্ষিতে নানা বিষয়ে প্রভাবিত হয় এবং নাগরিক জীবনে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়। পরিকল্পিত নগরায়ন হলে যেমন সুফল প্রতিটি জনগণ ভোগ করতে পারে তেমনি অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে সমস্যার মূল্য দিতে হয়।

লেখকের প্রশ্ন আমাদের নৈতিকতা ও সমাজ বাস্তবতার প্রেক্ষাপট নির্দেশ করে । সেই সাথে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট তদারকির অভাবও রয়েছে। অতএব লেখকের প্রশ্নের সমাধান প্রসঙ্গে কিছু ধারনা দিতে পারি। যেমন আমাদের নগরায়ন ব্যবস্থা হতে হবে সুপরিকল্পিত। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে স্থাপন করা যেতে পারে।

তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরেও স্থাপন করা যেতে পারে । এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলি একই পরিকল্পনা রাখতে হবে। একটি বিষয় লক্ষ করি, যখন কিছু মন্ত্রণালয় বিভাগীয় শহর কিংবা জেলা শহরে স্থানান্তরিত হবে তখন ঢাকার ওপরে জনসংখ্যার চাপ কিংবা দাপ্তরিক নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমে যাবে।

যদিও এটি বাস্তবায়ন করা সময়ের ব্যাপার কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে ,এর প্রাপ্ত ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী, দীর্ঘস্থায়ী ও সুপরিকল্পিত জনবান্ধব। মিল ,ফাক্টরি, শিল্প কারখানা শহরের বাইরে পরিকল্পিতভাবে স্থাপন করতে হবে। যেন আবাসিক এলাকা থেকে একটু অবস্থানগতভাবে দূরবর্তী হয়। অতএব ঢাকাকেন্দ্রিক মানুষগুলো অনেকাংশে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে যাবে। যার প্রেক্ষিতে যানজট নিরসন কিংবা পানির সমস্যা কিংবা জীবনযাত্রার মান যথেষ্ট পরিবর্তন হবে। তখন হয়তো অপরিকল্পিত নগরায়নে সৃষ্ট সমস্যা-পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, পানি সমস্যা, যানজট সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

আরেকটা বিষয় দেখা যায় ফুটপাত গুলো যেন দখল করে রেখেছে বিভিন্ন হকাররা। যার ফলে পথচারীদের চলাচল করতে সমস্যা। সেই সাথে নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। ছোটখাটো দোকানপাট যেখানে-সেখানে তৈরি নগরায়ন প্রকল্পকে বাধাগ্রস্ত করে।সরকারের উচিত পরিকল্পিত নগরায়নের ব্যাপারে কঠোর হওয়া। বুড়িগঙ্গার পূর্ব যৌবন সতেজ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রতিটি পদক্ষেপ যেন জনবান্ধব হয়। সেই সাথে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের এক্ষেত্রে মতামত গ্রহণ করতে হবে। তবে এটা মানতেই হবে যে, অপরিকল্পিত নগরায়নের সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে জনসচেতনতা অতি মুখ্য বিষয়। অতএব আমাদের আত্ম সচেতন হতে হবে। বিশ্বজন প্রক্রিয়ায় বুড়িগঙ্গার পানি ব্যবহারে আমাদের উদ্বুদ্ধ হতে হবে। নৈতিকতা বিকাশ ঘটাতে হবে। কেননা অপচয় বিষয়টি নৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক। নৈতিকতা ও বিবেকবোধ সৃষ্টিতে পারিবারিক শিক্ষা ও ধর্মীয় অনুভূতি বেশ কার্যকর। অতএব এই দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

যখন আমাদের মাঝে বিবেকবোধ কাজ করবে, তখন অযথা পানি অপচয় করার বিষয়টি আমাদের মাঝে কখনো আসবেনা। যখন পানির অপচয় হবে না তখন পানির যথেষ্ট সাশ্রয় হবে। এভাবে প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা বোধ ও বিবেকবোধ এর মাধ্যমে পানি সাশ্রয়ের প্রেক্ষিতে পানি সঙ্কট থেকে রেহাই পাব। গনমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা গণমাধ্যমের প্রচারণায় প্রেক্ষিতে জনসাধারণে যেকোনো তথ্য অতি সহজেই প্রচার করা যায়।

সুশীল সমাজ লেখক-কলামিস্ট কবি সাহিত্যিক নাট্যজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সকলের এগিয়ে আসতে হবে। সর্বপুরী সরকারের পরিকল্পিত নগরায়ন ও জনগণের সচেতনতা গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিকল্পিত নগরায়নে সৃষ্ট সমস্যা থেকে আমাদের বাঁচতে হবে এবং আগামী প্রজন্মকে সুন্দর নির্মল সুপরিকল্পিত একটি নগরায়ন উপহার দিতে হবে। আর এই সুন্দর পৃথিবীর কাছে আমার আকুল আবেদন, তরুণ কবি তানজিমুর রহমানের ভাষায়–

“আমি কবি হয়ে কখনো আসি নি,
তবুও কাব্যের ভাষায় করছি নিবেদন,
আমার বিশ্বাস তোমার শান্ত নিরব মন
একদিন ঠিকই আমায় করবে গ্রহণ।”

লেখক: শেখ সায়মন পারভেজ হিমেল
শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ,
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Comment

error: Content is protected !!