অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০১

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০১ অক্টোবর ১, ২০০১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৪৮৪জন সতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫৪টি দল থেকে মোট ১৯৩৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। এটি হলো ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বিতীয় নির্বাচন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন লতিফুর রহমান।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০১


← ১৯৯৬ ১ অক্টোবর ২০০১ ২০০৮ →

জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের
সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ১৫১টি আসন

Khaleda Zia.jpg Sheikh Hasina - 2009.jpg
নেতা/নেত্রী খালেদা জিয়া শেখ হাসিনা
দল বিএনপি আওয়ামী লীগ
নেতা হয়েছেন ১৯৮৪ ১৯৮১
নেতার আসন ফেনী-১ গোপালগঞ্জ-৩
সর্বশেষ নির্বাচন ১১৬ আসন, ৩৩.৬০% ১৪৬ আসন, ৩৭.৪০%
আসনে জিতেছে ২০০ ৬২
আসন পরিবর্তন বৃদ্ধি ৮৪ হ্রাস ৭৯
জনপ্রিয় ভোট ২৩,০৭৪,৭১৪ ২২,৩১০,২৭৬
শতকরা ৪১.৪০% ৪০.০২%


প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পূর্বে
শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগ
প্রধানমন্ত্রী-মনোনীত
খালেদা জিয়া
বিএনপি

 

ফলাফল

স • আ বাংলাদেশের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সারসংক্ষেপ
দলের নাম ভোট % আসন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ২৩,০৭৪,৭১৪ ৪১.৪০ ১৯৩
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২২,৩১০,২৭৬ ৪০.০২ ৬২
জাতীয় পার্টি

  • ইসলামী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট-এর প্রার্থীসহ
৪,০২৩,৯৬২ ৭.২২ ১৪
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২,৩৮৫,৩৬১ ৪.২৮ ১৭
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি – বিজেপি ৫২১,৪৭২ ০.৯৪
ইসলামী ঐক্য জোট ৩১২,৮৬৮ ০.৫৬
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২৬১,৩৪৪ ০.৪৭
জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ২৪৩,৬১৭ ০.৪৪
সতন্ত্র ও অন্যান্য ২,২৬২,০৪৫ ৪.০৬
খালি
মোট (গৃহীত ৭৪.৯ %) ৫৫,৭২৮,১৬২ ১০০.০ ৩০০
বাতিল ভোট ৪৪১,৮৭১
মোট ভোট ৫৬,১৬৯,২৩৩
নিবন্ধিত ভোটার ৭৪,৯৫১,৩১৯
উৎস: বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন

কিছু তথ্য

  • প্রার্থীদের নিবন্ধনের শেষ তারিখ – ২৯শে আগস্ট, ২০০১
  • মোট ভোট কেন্দ্র – ২৯,৯৭৮
  • মোট ভোটার – ৭,৫০,০০,৬৫৬
    • পুরুষ – ৩,৮৬,৮৪,৯৭২
    • মহিলা – ৩,৬৩,১৫,৬৮৪
  • মোট মহিলা প্রার্থী – ৩৭

কেমন ছিল দেশের ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ঢাকা: স্বাধীনতার পর একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ মোট ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। স্বাধীন বাংলাদেশের ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘুরে ফিরে তিনটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে। এরইমধ্যে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি চারবার করে ক্ষমতায় আসলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ পঞ্চমবারের মত সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে দেশের পুরনো দলটির জন্য এটি একটি নতুন রেকর্ড হতে যাচ্ছে। এর আগে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল চারবার করে সরকার গঠন করে রেকর্ডের সমান ভাগিদার ছিল। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামীলীগের পঞ্চমবার সরকার গঠন: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ পাঁচবার ও বিএনপি চারবার এবং জাতীয় পার্টি দুইবার বিজয়ী হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামীলীগ প্রথম, সপ্তম, নবম,. দশম ও এগারতম সংসদে এবং বিএনপি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে জয় পায়। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়। এর আগে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি টানা দুইবার করে সরকার গঠন করলেও কোন দল টানা তিনবার সরকার গঠন করতে পারেনি। এবার আওয়ামীলীগ টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।

পাঁচটি সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি: বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচন হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। প্রতিটি সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও ১০টি সংসদের মধ্যে ৫টি সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে ৫টি সংসদ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। মেয়াদ শেষ করতে না পারা সংসদের মধ্যে রয়েছে, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং ষষ্ঠ সংসদ। তবে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম সংসদ তার মেয়াদকাল পূরণ করতে পেরেছে।

 

কোন নির্বাচনে কত ভোট পড়েছে: বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে। এই নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে। এতে ভোট পড়ে ২৬.৫ শতাংশ। এছাড়াও, প্রথম সংসদ ৫৪.৯ শতাংশ, দ্বিতীয় সংসদ ৫১.৩ শতাংশ, তৃতীয় সংসদ ৬১.৩ শতাংশ, চতুর্থ সংসদ ৫২.৫ শতাংশ, পঞ্চম সংসদ ৫৫.৪ শতাংশ। অন্যদিকে, সপ্তম সংসদে ৭৫.৪৯ শতাংশ, অষ্টম সংসদে ৭৫ শতাংশ এবং দশম সংসদে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের কত শতাংশ ভোট পড়েছে তা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি। তবে, এবার ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ৩৯টি নিবন্ধিত দলের সব কয়টি দল অংশ গ্রহণ করে। নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৬১ জন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৭৩৩ জন এবং ১২৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। ৩০০ আসনের মধ্যে ১টি আসনের প্রার্থী মারা যাওয়ায় ২৯৯টি আসনে নির্বাচন হয়। ১টি আসনের ফলাফল স্থগিত থাকায় বাকি ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামীলীগ নৌকা প্রতীকে এককভাবে ২৫৯টি আসনে জয়লাভ করে। এছাড়াও জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকে ২০টি, বিএনপি ধানের শীষ প্রতীকে ৫টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ২টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ২টি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি)১টি, তরিকত ফেডারেশন ১টি , গণফোরাম ২টি আসনে জয়লাভ করে। অন্যদিকে, ৩টি আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

 

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বাকি ১৪৭টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মোট ২৩৪টি, জাতীয় পার্টি ৩৪টি, ওয়াকার্স পার্টি ৬টি, জাসদ ৫টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২টি, তরিকত ফেডারেশন ২টি, বিএনএফ ১টি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬টি আসনে জয়লাভ করেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করে।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদে আওয়ামীলীগ ২৩০টি আসনে জয়লাভ করে। এই নির্বাচনে বিএনপি ৩০টি, জাতীয় পার্টি ২৭টি, জাসদ ৩টি, জামায়াত ইসলামী ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ২টি, বিজেপি ১, এলডিপি ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪টি আসনে জয়লাভ করে।

 

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচেন বিএনপি ১৯৩টি আসনে জয়লাভ করে। এছাড়াও, আওয়ামীলীগ ৬২টি, জাতীয় পার্টি ১৪টি, জামায়াত ইসলামী ১৭টি, বিজেপি ৪, জেপি (মঞ্জু) ১টি, ইসলামী ঐক্যজোট ২টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬টি আসনে বিজয়ী হয়।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ১৪৬টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এছাড়াও নির্বাচনে বিএনপি ১১৬টি, জাতীয় পার্টি ৩২টি, জামায়াত ইসলামী ৩টি, ইসলামী ঐক্যজোট ১টি, জাসদ ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ১টি আসনে বিজয়ী হয়।

 

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপি ২৭৮টি আসনে, ফ্রিডম পার্টি ১টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০টি আসনে জয়লাভ করে। বাকি ১১টি আসনে ভোটগ্রহণ গোলযোগের কারণে স্থগিত থাকে। নির্বাচনে ৪৯টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়। আওয়ামীলীগ জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। ফলে তিন পাচঁ মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন দিতে হয়।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এতে বিএনপি ১৪০টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ৮৮টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ১৮টি, সিপিবি ৫টি, বাকশাল ৫টি, জাসদ (সিরাজ) ১টি, ইসলামী ঐক্যজোট ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি, এনডিপি ১টি, গণতন্ত্রী পার্টি ১টি, ন্যাপ (মোজাফফর) ১টি, অনান্য দল ৩টি আসনে জয়লাভ করে।

চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসনে জয়লাভ করে। অন্যদিকে আ স ম আব্দুর রব এর নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত বিরোধী দল ১৯টি, জাসদ (সিরাজ) ৩টি, ফ্রিডম পার্টি ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৫টি আসনে বিজয়ী হন। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, সিপিবিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করে।

তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসনে বিজয়ী হয়। এছাড়াও আওয়ামীলীগ ৭৬টি জামায়াত ইসলামী ১০টি, সিপিবি ৫টি, ন্যাপ (মোজাফফর) ২টি, ন্যাপ ৫টি, বাকশাল ৩টি, জাসদ (রব) ৪টি, জাসদ (সিরাজ) ৩টি, মুসলিম লীগ ৪টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩২টি আসনে জয়লাভ করেন। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করে।

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জিয়াউল রহমানের আমলে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি ২০৭টি আসনে জয়লাভ করে। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে আওয়ামীলীগ (মালেক) ৩৯টি, আওয়ামীলীগ (মিজান) ২টি, জাসদ ৮টি, মুসলিমলীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ ২০টি, ন্যাপ (মোজাফফর) ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ২টি, বাংলাদেশ গণফ্রন্ট ২টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ১টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ১টি, জাতীয় একদা পার্টি ১টি এবং ১৬টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেন।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নৌকা প্রতীক নিয়ে ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। এছাড়াও জাসদ ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ১টি এবং ৫টি আসন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। প্রথম সংসদে ১১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন।

১৯৭৩-২০১৪: কেমন ছিল দশ সংসদ নির্বাচন

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে দেশে আরও দশটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কোন সরকারের সময় কেমন ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেসব নির্বাচনে কারা বিজয়ী হয়েছিল, কারা সরকার গঠন করেছিল, সেই সরকার ও সংসদের মেয়াদ কতদিন ছিল মনে আছে কী? কৌতূহলী পাঠকদের জন্য ইতিহাসের খেড়ো খাতা খুঁড়ে এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো দশটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত এক চিত্র।

মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের সরাসরি ভোটে ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে নির্বাচনে ১৪টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র সদস্য মিলিয়ে ১ হাজার ৯১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছিল শতকরা ৫৪.৯০% ভাগ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯২টি আসন জয় লাভ করে। তার মধ্যে ১১ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ৩টি আসনে, স্বতন্ত্র সদস্যরা ৩টি আসনে এবং ন্যাপ (ভাসানী) ও জাতীয় লীগ একটি করে আসনে বিজয় লাভ করেন। ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল গণভবনে সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল। প্রথম সংসদে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য প্রথম সংসদেই ১৫ জন সংরক্ষিত মহিলা এমপির আসন সৃষ্টি করেন এবং তাদের মনোনয়ন দেন। পরে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে দেশে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করলে সংসদ নেতা  ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এম মনসুর আলী। তবে প্রথম সংসদে বিরোধী দল বা কোনো বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন না।

প্রথম সংসদের মেয়াদ ছিল ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল হতে ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত, দুই বছর ছয় মাস। প্রথম সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন তিনজন যথাক্রমে শাহ আবদুল হামিদ, মোহাম্মদ উল্লাহ ও আবদুল মালেক উকিল। এ সংসদের ৮টি অধিবেশনে ১৩৪টি কার্যদিবসে ১৫৪টি আইন পাস হয়। স্বাধীনতার পর নতুন আইনের দরকার ছিল বলে দিনে একাধিক আইনও পাস করার নজির প্রতিষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান। সে নির্বাচনে ২৯টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ২ হাজার ১২৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছিল ৫০.৯৪% ভাগ। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২২০টি আসনে বিজয় লাভ করে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (মালেক) ৩৯, মুসলিম লীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ ২০, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ৮, আওয়ামী লীগ (মিজান) ২, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ২, বাংলাদেশ গণফ্রন্ট ২, ন্যাপ (মোজাফ্ফর) ১, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ১, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ১, জাতীয় একতা পার্টি ১ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৫টি আসনে সংসদ সদস্য পদ লাভ করেন। এ সংসদেই প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভোটে একজন নারী (সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ, খুলনা-১৪) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সংসদে সংরক্ষিত মহিলা এমপির আসন সংখ্যা ১৫ জন থেকে বাড়িয়ে ৩০ জন করা হয়।

এই সংসদের সংসদ নেতা  ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহ মো. আজিজুর রহমান। তিনি পূর্ণ মেয়াদ দায়িত্ব পালন করেন। এই সংসদের মেয়াদ ছিল দুই বছর ১১ মাস (১৯৭৯ সালের ২ এপ্রিল থেকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত)। এই সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন মির্জা গোলাম হাফিজ। বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান। এ সংসদের ৮টি অধিবেশনে ২০৬টি কার্যদিবসে আইন পাস হয় ৬৫টি।

তৃতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে। তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নবগঠিত জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ১ হাজার ৫২৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)  এই নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। নির্বাচনে মোট ভোট পড়ে শতকরা ৬০.৩১% ভাগ। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত জাতীয় পার্টি সে নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৮৩টি আসনে জয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ ৭৬টি আসনে এবং জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন লাভ করে। এ ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ (সিপিবি) ৬টি আসনে,  ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ ৫টি আসনে, মুসলিম লীগ ৪টি আসনে, জাসদ (রব) ৪টি আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি (নজরুল) ৩টি আসনে, জাসদ (মাজাহান সিরাজ) ৩টি আসনে, ন্যাপ মুজাফ্ফর) ২টি আসনে, এবং স্বতন্ত্র চারজন প্রার্থী নির্বাচনে জয় লাভ করে। তৃতীয় সংসদের সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মিজানুর রহমান চৌধুরী। এই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন শামছুল হুদা চৌধুরী। এই সংসদের সংরক্ষিত আসনে ৩০ জন মহিলা এমপি ছিলেন। তৃতীয় সংসদের মেয়াদ ছিল এক বছর পাঁচ মাস বা ১৯৮৬ সালের ১০ জুলাই হতে ১৯৮৭ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সংসদের ৪টি অধিবেশনে মোট ৭৫টি কার্যদিবসে আইন পাস হয় ৩৯টি।

চতুর্থ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। তখনো রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নির্বাচনটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মুজাফ্ফর) এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই বর্জন করেছিল। জাতীয় পার্টিসহ ৮টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়। প্রার্থী ছিলেন ৯৭৭ জন। নির্বাচনে ৫৪.৯৩% ভোট পড়েছিল। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসন লাভ করে। এর মধ্যে ১৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ুবিজয় লাভ করে। এই সংসদে স্বতন্ত্র সদস্য নির্বাচিত হন ২৫ জন, সম্মিলিত বিরোধী দল পায় ১৯টি আসন, জাসদ (শাজাহান সিরাজ) পায় ৩টি আসন, ফ্রিডম পার্টি পায় ২টি আসন।

চতুর্থ সংসদে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও পরে কাজী জাফর আহমদ। এই সংসদে সংরক্ষিত আসনে কোনো মহিলা এমপি নির্বাচিত করা হয়নি। এই সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন শামছুল হুদা চৌধুরী। এই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন  জাসদের আ স ম আবদুর রব। এই সংসদের মেয়াদ ছিল দুই বছর সাত মাস বা ১৯৮৮ সালের ১৫ এপ্রিল হতে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সংসদের ৭টি অধিবেশনে ১৬৮ কার্যদিবসে আইন পাস হয় ১৪২টি।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নির্বাচনে ৭৫টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। মোট  ভোট পড়েছিল ৫৫.৪৫% ভাগ। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ১৪০টি আসন লাভ করে। আওয়ামী লীগ আসন লাভ করে ৮৮টি। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত জাতীয় পার্টি পায় ৩৫টি আসন। ১৮ জন এমপি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী সংসদে বিএনপি তথা সরকারি দলের শরিক হিসেবে আবির্ভূত হয়। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ৫টি আসন, বাকশাল ৫টি আসনে বিজয়ী হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ  (মোজাফ্ফর), গণতান্ত্রিক পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (শাজাহান সিরাজ), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ইসলামী ঐক্য জোট একটি করে আসনে বিজয় লাভ করে।

পঞ্চম সংসদের সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এই সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন আবদুর রহমান বিশ্বাস ও শেখ রাজ্জাক আলী। এই সংসদে বিরোধী দলের আসন গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টিও বিরোধী দলে যোগ দেয়। সংসদে সংরক্ষিত মহিলা এমপির ৩০টি আসন বিএনপি (২৮) ও জামায়াত (২) হিসেবে নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়।

পঞ্চম সংসদের মেয়াদ ছিল চার বছর আট মাস বা ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল হতে ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।  এই সংসদের ২২টি অধিবেশনে ৪০০ কার্যদিবস সংসদে আইন পাস হয় ১৭৩টি।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। তখন ক্ষমতায় ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও জোট এই নির্বাচন বর্জন করে। তারপরও এ নির্বাচনে ১ হাজার ৪৫০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। মোট মাত্র ২৬.৭৪% ভোট কাস্ট হয়েছিল। এই সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি পেয়েছিল ২৮৯টি আসন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছিলেন ১০টি আসনে। এ ছাড়া ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স (এনডিএ)-এর একজন প্রতিনিধি এই সংসদে এমপি ছিলেন। ষষ্ঠ সংসদের সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এই সংসদের ৩০ জন মহিলা এমপি ছিলেন। এই সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন শেখ রাজ্জাক আলী। এ সংসদে বিরোধী দল বা কোনো বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন না। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১২ দিন  বা ১৯৯৬ সালের ১৯ মার্চ হতে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত। এর মধ্যে মাত্র চার কার্যদিবস অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই সংসদেই গভীর রাত পর্যন্ত অধিবেশন চালিয়ে সংবিধান সংশোধন করে গণদাবি অনুযায়ী নির্দলয়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিল পাস ও পরে কার্যকর করা হয়। এ ছাড়া এ সংসদে আর কোনো আইন পাস হয়নি।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১২ জুন। সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ২৮১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৮১টি রাজনৈতিক দল থেকে মোট ২ হাজার ৫৭৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ  নেয়। নির্বাচনে শতকরা ৭৫.৬০ ভাগ ভোট পড়েছিল। সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে। সংসদে বিএনপির আসন ছিল ১১৬টি, জাতীয় পার্টির ৩২টি, জামায়াতে ইসলামীর ৩টি। এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোট, জাসদ (রব) ও একজন স্বতন্ত্র সদস্য সংসদে একটি আসনে এমপি নির্বাচিত হন। এই সংসদে মহিলা আসন সংখ্যা ছিল ৩০টি।

সপ্তম সংসদের সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এই সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী ও আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট। সপ্তম সংসদের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর বা ১৯৯৬ সালের ১৪ জুলাই হতে ২০০১ সালের ১৩ জুলাই পর্যন্ত। সংসদের ২৩টি অধিবেশনে ৩৮৩ কার্যদিবসে  মোট আইন পাস হয় ১৯১টি।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর। সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ৪৮৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫৫টি দল থেকে  মোট ১ হাজার ৯৩৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়।  এ নির্বাচনে ৭৪.৭৩% ভোট পড়েছিল। সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির আসন ছিল ১৯৩টি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৬২টি ও জামায়াতে ইসলামী ১৬টি আসনে জয়লাভ করে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট) ১৪ আসনে, জাতীয় পার্টি (এন-এফ) ৪ আসনে ও ইসলামী ঐক্যজোট ২ আসনে বিজয়ী হয়। একটি করে আসন পায় জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হন ছয়জন এমপি। এই সংসদে সংবিধান সংশোধন করে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৩০ থেকে ৪৫টি করা হয়। এর মধ্যে আসন সংখ্যার ভিত্তিতে বিএনপি ৩৬টি, জামায়াতে ইসলামী ৪টি, জাতীয় পার্টি (ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট) ৩টি ও ইসলামী ঐক্যজোট ২টি মহিলা আসন নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়।

অষ্টম সংসদের সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এই সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার। অষ্টম সংসদের মেয়াদও ছিল পাঁচ বছর বা ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর হতে ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত। সংসদের ২৩টি অধিবেশনে ৩৭৩ কার্যদিবসে আইন পাস হয় ১৮৫টি।

নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদের  নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছিল। এ নির্বাচনে শতকরা ৮৬.৩৪% ভাগ ভোট কাস্ট হয়েছিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩০ আসনে বিজয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টি আসন পায়। জাতীয় পার্টি পায় ২৭ আসন, জাসদ ৩ আসন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী ২টি করে আসন পায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি পায় একটি করে আসন। এ সংসদে স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন চারজন। এই সংসদে সংবিধান সংশোধন করে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৪৫টি থেকে ৫০টি করা হয়। এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ ৪১, বিএনপি ৫ ও জাতীয় পার্টি ৪ জন মহিলা এমপির আসন পায়।

এই সংসদের সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এই সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ও ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। নবম সংসদের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর বা ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি হতে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। সংসদের ২৩টি অধিবেশনে ৪১৮ কার্যদিবসে আইন পাস হয় ২৭১টি।

দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই বর্জন করে। তবে  আওয়ামী লীগসহ ১৭টি দল ও স্বতন্ত্র সদস্যরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৩৩ আসন পায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ১৫৪টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয় লাভ করেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি পায় ৩৪ আসন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬ আসন, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬টি আসন, জাসদ (ইনু) ৫টি আসন, তরিকত ফেডারেশন ২টি আসন, জিপি, বিজেপি ও বিএনএফ একটি করে আসন লাভ করে।

দশম সংসদের সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। পার্টি চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পান। এ ছাড়া বিরোধী দল থেকে সরকারে তিনজন মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। এই সংসদ দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল ২৮ জানুয়ারি। সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। দশম সংসদের দুজন সদস্য আন্তর্জাতিক দুটি ফোরামের প্রধান নির্বাচিত হয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস নির্মাণ করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন  চৌধুরী নির্বাচিত হন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সভাপতি এবং এ সংসদের একটি সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ঢাকায় সফলভাবে এই দুটি আন্তর্জাতিক ফোরামের সম্মেলন আয়োজন করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। বিদায়ী সংসদের ২৩তম অধিবেশন পর্যন্ত ৪১০টি কার্যদিবসে ১৯৩টি আইন পাস হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সংবিধানের ষোড়শ ও সপ্তদশ সংশোধনী। যদিও হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন অবৈধ হিসেবে রায় দেন এবং মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পরই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। অনেকে মনে করেন এসব কারণেই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করেন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!