আপওয়ার্ক (পূর্বে ওডেস্ক) একটি বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারভিত্তিক কোম্পানি এবং যার লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণীর কাজে দূরবর্তী কর্মীদের ভাড়া করে করিয়ে নেয়া। ২০০৩ সালে ওডেস্ক (রেড উড সিটি, সি এ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গ্রিসের ব্যবসায়িক ঠিকাদার অডিসিয়াস সাতালস এবং স্ত্রাতিস কারামানলাকিস।
আপওয়ার্ক লোগো
|
|
স্থানীয় নাম
|
|
---|---|
প্রাক্তন নাম
|
ওডেস্ক |
ধরন
|
প্রাইভেট |
শিল্প |
|
প্রতিষ্ঠাকাল | ২০০৩, ক্যাম্পবেল, ক্যালিফোর্নিয়া |
প্রতিষ্ঠাতা | ওডিসিস সাটালোস স্ট্র্যাটিস কারাম্যানলাকিস |
সদরদপ্তর | রেডউড সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া |
প্রধান ব্যক্তি
|
|
ওয়েবসাইট | upwork |
পটভূমি
আপওয়ার্ক হচ্ছে একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেখানে সারা পৃথিবী থেকে প্রায় ১ কোটি ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে। এই মূহূর্তে আপওয়ার্কে ৪ লক্ষের উপর কাজ রয়েছে। সাইটটিতে প্রতিটি প্রজেক্টের জন্য “একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য” হিসেবে অথবা “প্রতি ঘণ্টা কাজের জন্য অর্থ” উভয় প্রকারের কাজ পাওয়া যায়। আপওয়ার্ক মুলত আউটসোর্সিং-এর একটি প্রাযুক্তিক ধারণা, যা স্বাধীনভাবে চুক্তিবদ্ধ কাজ অফার করে। আপওয়ার্ক হচ্ছে ইল্যান্স, ফ্রীল্যান্সার, গুরু এবং ভিওয়ারকার(প্রাক্তন ‘রেন্ট আ কোডার’)-এর মতো একটি কোম্পানি, যেখানে একজন চাকরিদাতা এবং একজন ফ্রীল্যান্সার একে অপরের সাথে চুক্তি করে থাকেন।
বিবরণ
আপওয়ার্ক ক্রেতাদের অনলাইনে সমশ্রেণীর দলভিত্তিক কাজের অনুমোদন করে এবং কোম্পানীর মালিক ক্রীত ওয়েবসাইট সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে কাজের বিনিময়ে অর্থ পরিশোধ করে থাকেন, তাই প্রাযুক্তিক এই উৎকর্ষকে সংক্ষেপে বলা হয়ে থাকে ‘নো ডেস্ক’। যে-কেউ যেকোনো স্থান থেকে এখানে কাজ করতে পারেন।
আপওয়ার্কের বৈশিষ্ট্যসমূহ
অনলাইন পরীক্ষাসমূহ
আপওয়ার্কে পূর্বে পরিক্ষার ব্যাবস্থা থাকলেও এখন আর পরীক্ষার কোন ব্যাবস্থা নেই। এখন শুধু মাত্র আপওয়ার্কের নিয়মের উপর ভিত্তি করে একটি মাত্র পরীক্ষা দিতে হয় । যার নাম আপওয়ার্ক রেডিসেন টেস্ট।
এই সাইটের মাধ্যমে একজন ক্রেতা একই প্রোজেক্টে একসাথে অনেক কর্মী একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়োগ দিতে পারেন। দল ব্যবস্থাপনা করার জন্য রয়েছে দলগত কক্ষ, যেখানে একসাথে একসাথে দলের সকল সদ্যস্যের বিভিন্ন তথ্য, কাজের ইতিহাস এবং সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। রয়েছে “টাইম এনালাইজার” বা সময় প্রক্ষেপক, যা কোনো সদস্য কখন এবং কত সময় ধরে কাজ করছেন তা প্রদর্শন করে। ক্রেতাদের জন্য আরো রয়েছে ফ্রিল্যান্সারদের কম্পিউটারের স্ক্রিনশট দেখার ব্যবস্থা, ডেস্কটপ স্ক্রিন শেয়ারিং, বাগ ট্রেকিং এবং সাবভার্শন হোস্ট করার জন্য সার্ভার।
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সুবিধাসমূহ
ফ্রিল্যান্সাররা তাদের কাজের দক্ষতা এবং বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে পারেন তাদের কম্পিউটারে “UpWork Team” নামক একটি সফটওয়্যার ইন্সটলেশনের মাধ্যমে। এই সফটওয়্যার একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ক্লায়েন্টের কাছে কাজে অংশগ্রহণকারী ফ্রিল্যান্সারের কাজের সর্বশেষ অবস্থা স্ক্রিনশট, কাজের মেমো, এক্টিভিটি লগ এবং ওয়েবক্যাম থাকলে ছবি প্রেরণ করে থাকে। ওয়েবক্যামের মাধ্যমে প্রোভাইডার ইচ্ছে করলে দলের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে কাজ করতে পারেন। উইন্ডোজ, ম্যাক এবং লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য সফটওয়্যারটির আলাদা আলাদা সংস্করণ রয়েছে।
অর্থ উত্তোলনের পদ্ধতিসমূহ
অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং সাইটের মতো আপওয়ার্ক থেকে অনেকগুলো পদ্ধতিতে অর্থ উত্তোলন করা যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পেওনিয়ার ডেবিট মাস্টারকার্ড, মানিবুকার্স এবং ওয়ার ট্রান্সফার। ডেবিট কার্ডটির মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে অর্থ উত্তোলন করা যায়। এছাড়া ব্যাংক থেকে ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফারের মাধ্যমেও টাকা উত্তোলন করা যায়।
সমালোচনা
অনলাইনে কাজ কাজ করার সময় কোম্পানির টিম সফটওয়্যার সময় এবং তথ্য রেকর্ড (ওয়ার্ক ডায়েরি)করে থাকে। তথ্য রেকর্ড করার সময় প্রতি ১০ মিনিটের মধ্যে একটি স্ক্রিন শট নেয় যা একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয় অন্যের সামনে প্রকাশ করার শামিল।
Upwork এ কাজ করার নিয়ম
Upwork কাজ করার আগে যে বিষয় গুলো জানা প্রয়োজন
আপনি যদি আপওয়ার্ক বা অন্য যেকোন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাহলে আপনাকে যেকোন একটি কাজে যেমন ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, আর্টিকেল রাইটিং, এসইও , অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস ডেভলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। সাধারণত সবগুলো ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসেই এই ক্যাটাগরির কাজগুলো পাওয়া যায়। এসব কাজের মধ্যে নুন্যতম যেকোন একটিতে উপযুক্ত দক্ষতা অর্জন করতে পারলেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
এরপর আপনি আপনার ভ্যালিড ইমেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলুন। এরপর অ্যাকাউন্ট খোলার পর যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে প্রোফাইল ওভারভিউ। তবে এর জন্য কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই। যদি ইংরেজিতে ভালো ভাবে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে খুব সহজেই এটি করতে পারবেন। তবে অন্যের কিছু কপি করবেন না।
কিভাবে আপনার একাউন্টটি সাজাবেন
যাদের প্রোফাইল এপ্রুভ হচ্ছে না তারা উল্লিখিত পয়েন্ট অনুযায়ী প্রোফাইল সাজিয়ে তারপর সাবমিট করুন। ইদানীং আমাদের দেশের কেউ কেউ গুজব ছড়িয়েছেন যে, বাংলাদেশ থেকে আপওর্য়াক বন্ধ। তাই তারা নতুন অ্যাকাউন্ট এপ্রুভ করছে না। আসলে ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়। এজন্য আপনাকে অবশ্যই সঠিক নাম, ইমেইল, অভিজ্ঞতা, পোর্টফলিও আর শিক্ষাগত যোগ্যতা দিতে হবে। প্রোফাইল সম্পুর্ণ (১০০%) করতে হবে। তবেই আপনি জবের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবেন।
আপওয়ার্কে কাজ পেতে কী কী শিখবেন?
বিশ্বের বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট আপওয়ার্ক। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সিং কাজের বড় বাজার এটি। বাংলাদেশ থেকেও অনেক ফ্রিল্যান্সার এ সাইটে কাজ করেন। মঙ্গলবার এ সাইট কর্তৃপক্ষ এখনকার সবচেয়ে জরুরি দক্ষতাগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।
গত প্রান্তিকে এসব দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে বলে জানিয়েছে আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ। আপওয়ার্কের দক্ষতা সূচক বা আপওয়ার্ক স্কিল ইনডেক্স নামের ওই সূচকে এখনকার শ্রমবাজার, প্রযুক্তি খাতের বর্তমান চিত্র, নতুন এবং উঠতি দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
আপওয়ার্কের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মী নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে তাদের ব্যবসা খাতে এখনো দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। নতুন ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগামী এক দশকেও উঠতি দক্ষতাগুলোর চাহিদা থাকবে।
আপওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ক্যাসরিয়েল বলেন, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন বাড়ছে। ফ্রিল্যান্সারদের ব্যবসা খাতে চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতাগুলো অর্জন করতে হবে, তা না হলে দ্রুত তাদের কর্মীবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যুগোপযোগী করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বেন।
ক্যাসরিয়েল বলেন, এখনকার ব্যবসায়ীরা দক্ষতা উন্নয়নে বেশি জোর দিচ্ছেন। কর্মীবাহিনীর ওপর আজকের বিনিয়োগ আগামীকাল তাদের প্রয়োজন পড়বে। ফ্রিল্যান্সাররা জানেন দক্ষতা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৮ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে দ্রুত বর্ধনশীল ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতাগুলো বছরের হিসাব ধরলে ১৭৫ গুণ চাহিদা বেড়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ ১০টি দক্ষতার চাহিদা বেড়েছে ৬০০ গুণ পর্যন্ত। দেখে নিন ২০টি দক্ষতার সেই তালিকা:
১. হ্যাডুপ
২. ড্রপবক্স এপিআই
৩. জেনেটিক অ্যালগরিদম
৪. মাইক্রোবায়োলজি
৫. কম্পিউটেশনাল লিঙ্গুইস্টিক
৬. সার্টিফায়েড ইনফরমেশন সিস্টেমস সিকিউরিটি প্রফেশনাল (সিআইএসএসপি)
৭. ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং
৮. ইন্টারকম
৯. ইন্টারঅ্যাকটিভ অ্যাডভারটাইজিং
১০. ইনভিশন
১১. এমপ্লয়ি ট্রেইনিং
১২. কিউবারনেটেস
১৩. ওঅথ
১৪. অটোডেস্ক রেভিট
১৫. অ্যাপ স্টোর অপটিমাইজেশন
১৬. অ্যাপ ইউজাবিলিটি অ্যানালাইসিস
১৭. ভুজেএস ফ্রেমওয়ার্ক
১৮. লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সলিউশন (এলএমএস) কনসাল্টিং
১৯. থ্রিডি স্ক্যানিং
২০. রিঅ্যাক্ট ডট জেএস ফ্রেমওয়ার্ক
আপওয়ার্কের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে বিগ ডেটা সলিউশন তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়ছে। সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতার তালিকার শীর্ষে থাকা হ্যাডুপ হচ্ছে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, যা বিগ ডেটা অ্যাপ্লিকেশন বিশ্লেষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। আপওয়ার্কে পাঁচ হাজারের বেশি দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হ্যাডুপ বিষয়ে অভিজ্ঞ। এ খাতের ক্লাউডেরা ও হর্টনওয়ার্কের মতো দুটি বড় প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ শুরু করেছে এবং ডেটাব্রিক ও কনফ্লুয়েন্টের মতো ওপেন সোর্স সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো তাদের মূলধন বাড়িয়েছে। মূল্যবান ডেটা বা তথ্য থেকে লাভজনক ব্যবসা দাঁড় করাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই হ্যাডুপে যাঁরা দক্ষ, তাঁদের চাহিদা বেড়েই চলেছে। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী পাঁচ বছরে হ্যাডুপের বাজার বছরের হিসাবে গড়ে ২৯ শতাংশের বেশি বাড়বে। ২০২৩ সাল নাগাদ বাজার দাঁড়বে ৩ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের।
আপওয়ার্কের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অপ্রচলিত অনেক শিক্ষার অপশন এখন বেড়ে যাচ্ছে। প্রচলিত শিক্ষার বাইরে নতুন দক্ষতা অর্জন করতে নতুন নতুন বিষয় শিখছেন ফ্রিল্যান্সাররা। ৯৩ শতাংশ ফ্রিল্যান্সারের মত হচ্ছে, তাঁদের চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ডিগ্রির চেয়ে তাঁদের দক্ষতাবিষয়ক কোনো প্রতিষ্ঠান বেশি দরকারি। তবে ৭৯ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার বলেছেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের লেখাপড়া তাঁদের বর্তমান কাজের ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে। এখন তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে তাই এমপ্লয়ি ট্রেইনিং, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সলিউশনের মতো দক্ষতাগুলোর চাহিদা বাড়ছে। এখনকার সময়ে দিনের মধ্যে পাঁচ ঘণ্টা মানুষ স্মার্টফোনে কাটাচ্ছে। স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপে ৯০ শতাংশ সময় কাটাচ্ছে মানুষ। প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা মোবাইলে দ্বিগুণ জোর দিচ্ছেন। তাই অ্যাপ স্টোর অপটিমাইজেশন ও অ্যাপ ইউজাবিলিটির মতো দক্ষতার চাহিদা বাড়ছে। এর বাইরে সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল পণ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের চাহিদাও বাড়তে দেখা গেছে।