দৃষ্টিনন্দন ঈশ্বরগঞ্জ বড় জামে মসজিদ

শতাব্দীর সাক্ষী দৃষ্টিনন্দন ঈশ্বরগঞ্জ বড় জামে মসজিদ। ময়মনসিংহ শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার পূর্বে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলার অন্তর্গত ‘ক’ শ্রেণির ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা। আর এই পৌরসভার দত্তপাড়া গ্রামে ঈশ্বরগঞ্জ থানা রোডের পাশেই শতাব্দীর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় দুইশো বছরের পুরোনো দৃষ্টিনন্দন ঈশ্বরগঞ্জ বড় জামে মসজিদ।

এটি ঈশ্বরগঞ্জ চৌকি আদালতের পাশেই অবস্থিত। মসজিদটি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। কথিত রয়েছে মসজিদটি নির্মাণ করেন তৎকালীন সাব-রেজিস্টার মাসুদ মিয়া। প্রবীণ কাজী হামিদুল হক হিরা(৭৭)এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওই সময়ে এটিই ছিল ঈশ্বরগঞ্জের সবচেয়ে বড় মসজিদ। তখন থেকেই ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদের নামকরণ করা হয় ঈশ্বরগঞ্জ বড় জামে মসজিদ।

মসজিদের প্রবেশ গেইটে লেখা রয়েছে ১৮৮৭ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সে হিসেব অনুযায়ী মসজিদটির বর্তমান বয়স ১৩৫ বছর। কিন্তু স্থানীয় মুসল্লী ও এলাকাবাসীর মতে, ২০০ বছর আগে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আগেকার দিনে হয়তো স্থাপত্য নাকশায় লিখে রাখার ব্যবস্থা ছিলনা। তাই হয়তো সঠিক তারিখ ও প্রতিষ্ঠাকাল লিখে রাখা সম্ভব হয়নি।

জানা যায়, এই মসজিদটি নির্মাণের জন্য চীন ও দিল্লি থেকে কারিগর এনে নির্মাণ করা হয়। পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন এই মসজিদের দুটি অংশ রয়েছে। ছাদে প্রথম অংশে বড় আকারের তিনটি বড় গম্বুজ এবং দ্বিতীয় অংশে রয়েছে তার চেয়ে ছোট আকারের পাঁচটি ছোট গম্বুজ। মসজিদটির ছাদে মোট আটটি গম্বুজ দূর থেকে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। আর এই আটটি গম্বুজের চতুর্পাশে রয়েছে ১৪ টি মিনার। মিনার গুলোর উপরের অংশটাও গম্বুজ আকৃতির। মিনার গুলোর শীর্ষ চূড়ায় রয়েছে চাঁদ আকৃতির বাঁকানো খন্ড। সাদার সাথে মেরুন রঙের মিনার গুলো দেখলেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আলাদা প্রশান্তি চলে আসে।

সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, মসজিদটিতে রয়েছে মুয়াজ্জিনের আযান ঘর। এই ঘর থেকেই মুয়াজ্জিনের আযান ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। মসজিদের উত্তর দেয়ালে রয়েছে ছোট আকৃতির কোপ কোপ ঘর। পশ্চিমের দেয়ালে রয়েছে ৬টি পিলার। মসজিদে সব মিলিয়ে ১৯ টি কাতার রয়েছে এবং এতে প্রায় ৬০০ লোক একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। এই মসজিদের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল-এটির বাহিরে কোন মেহরাব নেই, ভিতরে রয়েছে সুন্দর একটি মেহরাব। মসজিদের বাহিরের অংশে দেয়ালের সাথে লাগানো রয়েছে নানা রকমের ফুল গাছ। যা মসজিদটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদটির স্থাপত্য শৈলী দেখেই মনে হবে এটি দেড়শো থেকে দুইশো বছর আগের তৈরি।

এছাড়াও মসজিদের সামনের দিকে রয়েছে একটি ঈদগাহ মাঠ। দক্ষিণাংশে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরে পাড় ঘেঁষে বয়ে গেছে কাঁচা মাটিয়া নদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈদগাহ মাঠ, পুকুরসহ আনুমানিক ১৫ থেকে ১৬ কাটা জমির ওপর মসজিদটি নির্মিত। মসজিদের ভেতর ও বাইরে রয়েছে অপূর্ব কারুকাজ। মসজিদের পূর্ব-উত্তর পাশে রয়েছে ঈশ্বরগঞ্জ চৌকি আদালত। পূর্বদিকে ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্বেশ্বরী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এবং আইনজীবী সমিতি।

স্থানীয় মুসল্লী রাজু মুর্শেদী জানান, প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব নিদর্শন এই মসজিদটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু ইতিহাস আর ঘটনার সাক্ষী। এটি আমাদের জন্য খুবই গর্বের।

মসজিদ কমিটির সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ তাসাদ্দাক বলেন, ‘দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদের ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায়, সে জন্য ইতোপূর্বে সংস্করণ হয়েছে। মসজিদের খতীব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্যও বরাদ্দ রয়েছে আলাদা আলাদা রুম। তিনি আরও জানান, মসজিদ কমিটির বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী আমিনুল হক মনি।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘ ঈশ্বরগঞ্জ বড় জামে মসজিদটি অপরূপ সৌন্দর্যের নিদর্শন ও মনোমুগ্ধকর। মসজিদটি দেখে প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস জানতে পারবে মানুষ। নিঃসন্দেহে মসজিদটি ঈশ্বরগঞ্জ বাসীর জন্য গর্বের।’

Leave a Comment

error: Content is protected !!