ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত দিবস

৯ই ডিসেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সনের এইদিনে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদর আল শামস তথা পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত হয়েছিল।

রক্তঝরা সেই উত্তাল দিনে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দামাল ছেলেরা দেশকে শত্রুমুক্ত করার দীপ্ত শপথ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নিজ থানাকে শত্রুমুক্ত করতে ১৭ই অক্টোবর রাতে কাজী আলম, আলতাফ ও হাবিবুল্লাহ খান এই ৩ কোম্পানীর মুক্তিযোদ্ধারা মাইজহাটি রেলওয়ে ব্রীজ ও টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করে।

ময়মনসিংহ- কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের উপর কাটিয়াপুরী ব্রীজটি বিধ্বস্ত করতে প্রভাত হয়ে যায়। পরে ৩ কোম্পানীর মুক্তিযোদ্ধারা সড়ক পথে অগ্রসর হয়ে দত্তপাড়া শ্মশানঘাটে একত্র হয়ে আবার ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

৩ গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন যথাক্রমে কাজী হাসানুজ্জামান হীরু (আলতাফ কোম্পানি), মতিউর রহমান (হাবিবুল্লাহ খান)ও হাবিবুর রহমান হলুদ (কাজী আলম)। আক্রমনের রুপরেখা অনুযায়ী মতিউর রহমান গ্রুপ থানার উত্তর দিক থেকে, কাজী হীরু গ্রুপ পূর্ব দিক থেকে ও হাবিবুর রহমান হলুদের গ্রুপ থানার দক্ষিন দিক থেকে একযোগে আক্রমণ শুরু করে। শত শত সাধারণ মানুষ ভীড় জমানোর ফলে দিনের বেলায় তাদের এ অভিযান সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।

এই যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছু, আনোয়ার হোসেন দুলাল, মান্নান, তাহের, মতিউর (প্লাটুন কমান্ডার), আঃ খালেক ও হাতেম আলী শহীদ হন।

আজ ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত দিবস

পরে ৮ ডিসেম্বর রাতে একযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের থানা আক্রমণের ভয়াবহতায় ভীত হয়ে পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকাররা গভীর রাতে থানা থেকে পালিয়ে যায়। তাই ৯ ই ডিসেম্বর ঈশ্বরগঞ্জবাসীর কাছে অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের দিন।

এইদিন থানা শহরে বেদনা বিধূর পরিস্থিতিতেও ফুটে উঠেছিল বিজয়ের আনন্দ। এদিন শহীদদের রক্তস্নাত রোদেলা সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সম্মিলিত ভাবে ঈশ্বরগঞ্জকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে বিজয়ের মহানন্দে মেতে উঠেছিল।

ওই যুদ্ধ সম্পর্কে যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হলুদ বলেন, আমরা ৩ কোম্পানীর ৩ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা ঈশ্বরগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করার অঙ্গীকারের ফলে ঈশ্বরগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। আর এখন এ ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানাতে হবে। এই দিনে দেশ স্বাধীন না হওয়ার পরও ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত হওয়ায় আপামর জনতার মাঝে দেখা দিয়েছিলো আনন্দের বন্যা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!