জানা জরুরি ঋতুস্রাব স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক

ঋতুস্রাব বা মাসিক কৈশোরকালীন দৈহিক পরিবর্তনের মতোই একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। অথচ বিষয়টি আমাদের সমাজে যেন নিষিদ্ধ কোন বিষয়। দেশে প্রতিদিন গড়ে ৮ মিলিয়ন বা ৮০ লাখ নারী এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। যাদের বেশিরভাগই প্রত্যন্ত জনপদের মানুষ বা দরিদ্র কর্মজীবী মানুষ।

অজ্ঞতা আর লজ্জায় তারা অস্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে এই সময়টা পার করে। চিকিৎসকরা বলছেন, পিরিয়ডের সময় অপরিষ্কার পুরনো কাপড় বা অন্য উপকরণ ব্যবহার করলে জ্বর, তলপেটে ব্যথা ও মূত্রনালীতে সংক্রমণ হতে পারে৷

এছাডা ইনফেকশন হতে পারে জরায়ুতে। দীর্ঘমেয়াদী এই সংক্রমণ থেকে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বাস্তবতা হলো এখন প্রায়ই এ ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর আশপাশ থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। আর যে মানুষটি এ ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে তার পরিবার যে নানা দিক থেকে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ময়েদের পিরিয়ডকালীন সময় নিরাপদ করার অভিযানটা শুরু হতে পারে নিজ নিজ ঘর থেকেই। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার। সন্তানের সঙ্গে আড্ডায় এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হতে পারে। ঘরোয়া বৈঠকে বয়ঃসন্ধিকালীন মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন বিষয়ে ছেলে-মেয়েকে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।

গাড়াতেই এসব কথা শেয়ার করা না হলে কিশোর-কিশোরীর মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। না বুঝে ক্ষতির শিকার হতে পারেন অনেকে। আমার মতো যারা পরিবার থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ বঞ্চিত হয়েছেন তাদের অতীত স্মৃতি যে সুখকর নয় তা সহজেই অনুমেয়।

বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে-মেয়েদের যৌন ও প্রজনন সেবা দেয়ার মূল দায়িত্ব রাষ্ট্র তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। এক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে চলমান নানা প্রকল্পের পরিধি বাড়াতে হবে। প্রত্যন্ত জনপদে সহজলভ্য করতে হবে স্যানেটারি ন্যাপকিন ও অন্যান্য উপকরণ। মেয়েদের বিনামূল্যে প্যাডও দেয়া যেতে পারে।

কেননা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রিরিপ্রডাকটিভ বা বয়ঃসন্ধিকালে যদি মেয়েদের যথাযথ সেবা দেয়া যায় তাহলে রিপ্রডাকটিভ বা প্রজননকালে এবং পোস্টরিপ্রডাকটিভ বা প্রজনন পরবর্তি সময়ে নারীরা যে ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভোগেন তা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অর্থাৎ দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর পেছনে চিকিৎসা খাতে রাষ্ট্রের যে খরচ হয় তা কমে আসতে পারে যদি শুরুতেই কার্যকর উদ্যোগ নেয়া যায়।

এক সময় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা দিতে দেখা গেছে। বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে কনডম, পিলসহ নানা উপকরণ বা পথ্য। কিন্তু এখন মাঠে স্বাস্থ্য কর্মীদের তেমন তৎপরতা নেই। উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক সংকট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। নানা অজুহাতে শহরমুখি চিকিৎসকরা। অবস্থা এতো খারাপ যে কোথাও কোথাও ডাক্তারের অনুপস্থিতি বা ঘাটতিতে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট-ওয়ার্ড বয়রা। এই শোচনীয় অবস্থায় ঋতুকালীন বা বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা তৃণমূলে কতটুকু মিলছে তা সহজেই অনুমেয়।

মাঠ পর্যায়ে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা দিতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিও কাজ করছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রতিবন্ধকতা দূর করার পাশাপাশি কাজের গতি আনতে নজরদারি বাড়ানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে এনজিওগুলোর মধ্যে সমন্বয় রাখা দরকার।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, সবাই আলাদাভাবে কাজ না করে একসঙ্গে পরিকল্পনা করে এগুলে নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং ঋতুস্রাবের সময়ে করণীয় বিষয়ে তথ্য দেয়া সহজ হবে। পিরিয়ড নিয়ে সমাজের অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা ভাঙতে গবেষণা ও প্রচারণা বাড়ানোও প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

প্রতিবছর ২৮ মে ‘মিন্সট্রেশন হাইজিন ডে’ পালিত হচ্ছে। দিবসটির কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সীমিত না রেখে বিভিন্ন ফোরামে বছরজুড়েই এ নিয়ে আলোচনা চলতে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, মিন্সট্রেশন বা ঋতুস্রাবের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে প্রজন্মের বিস্তার হচ্ছে। এই বিষয় নিয়ে প্রতিবন্ধকতা বৈষম্য তৈরি করছে। এক্ষেত্রে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা।

তাদের পরামর্শ হচ্ছে, যারা দামের কারণে স্যানেটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারছেন না তারা কাপড় ব্যবহার করতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য নেয়া কাপড়টি অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে৷ তারপর ব্যবহারের পর সেটি সাবান ও গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে৷ এরপর ইস্ত্রি করে কাপড়টি জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে৷ এছাড়া তিনবার ব্যবহারের পর কাপড়টি ফেলে দিতে হবে৷ নইলে ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকবে৷

Leave a Comment

error: Content is protected !!