দেশের একমাত্র কৃষি জাদুঘর ময়মনসিংহে

দেশের একমাত্র কৃষি জাদুঘর ময়মনসিংহে। প্রাচীনকালে ব্যবহৃত কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি আজ বিলুপ্তপ্রায়। আধুনিককালে শহরের মানুষ সহ গ্রামের কৃষকদের সন্তানেরাও আজ ভুলতে বসেছে সেই ঐতিহ্যর কৃষি যন্ত্রপাতি ও কৃষকের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। কৃষি ও কৃষকের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ধরনের উপকরণ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে গড়ে উঠেছে দেশের প্রথম কৃষি জাদুঘর।

তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জাতীয় চেতনা ও উপলদ্ধিকে শানিত করে কৃষির বিবর্তন ও ক্রমবিকাশের পরিস্কার ধারণা দিতেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) চত্বরে দেশের প্রথম ‘কৃষি জাদুঘর’।

জাদুঘরটি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে ৫০০ মিটার পশ্চিমে এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে অবস্থিত। কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য, কৃষি উপকরণ এবং যন্ত্রপাতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণে বাকৃবি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হোসেন স্বপ্ন দেখেন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি ‘কৃষি জাদুঘর’ গড়ে তোলার।

দেশের একমাত্র কৃষি জাদুঘর ময়মনসিংহে

তারই আলোকে ২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মু. মুস্তাফিজুর রহমান জাদুঘরটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। জনবল সংকট ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক কারণে এটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও অবশেষে ২০০৭ সালের ৩০জুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোশারফ হোসাইন মিঞাঁ জাদুঘরটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করেন।

পাঁচ একর আয়তনের এই জাদুঘরে রয়েছে একটি অষ্টাভূজী ভবন। ভবনের মধ্যবর্তী অংশ সূর্য্যালোকের জন্য উন্মুক্ত রেখে প্রবেশ লবি ও অফিসের জন্য একটি করে মোট ২ টি কক্ষ এবং প্রদর্শনীর জন্য ৬ টি সুসজ্জিত ও মনোরম কক্ষ রয়েছে।

জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রয়েছে ৬ টি ডিসপ্লে রুম। যাতে বড় বড় কাঁচের তাকে সাজানো রয়েছে ৪৪৯ টি উপকরণ। জাদুঘরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় আবহমান কাল ধরে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত মানুষের জীবন জীবিকার বাস্তব প্রতিকৃতি ‘বন্ধন’। জাদুঘরের প্রবেশ লবিতে প্রদর্শিত হয়েছে বিচিত্র সব মাছের অ্যাকুইরিয়ামসহ সাতটি খনার বচন।

কৃষি সংশ্লিষ্ট এত বিশাল সংগ্রহশালা বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। জাদুঘরটি পরিদর্শনের মাধ্যমে শহরের ইট পাথর কাঁচঘেরা মানুষেরা খুব সহজেই গ্রামবাংলার প্রকৃতি ও হারিয়ে যাওয়া দৃশ্য এক নজরে উপভোগ করতে পারেন। তারা কৃষির ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। জাদুঘরটি শুধুমাত্র শনিবার ছাড়া বাকি দিনগুলিতে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!