করোনা- একসাথে ঘুরে দাড়ানোর যুদ্ধ সামনে

আফজালুর ফেরদৌস রুমনঃ বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি সামলে নিতে হিমশিম খাচ্ছে সবাই। উন্নত বা অনুন্নত কোনো দেশই এই বিপদজনক অবস্থা থেকে সহজে রক্ষা পাচ্ছেনা। বলতে গেলে সারাবিশ্ব এখন লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। মানসিক, শারীরিক এবং অর্থনৈতিক সব দিক সামাল দেয়া এখন কোন যুদ্ধের চেয়ে কম কিছু না। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম না।

করোনা সামাল দিতে দেশে গত ২৬মার্চ থেকে আগামী ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত সাধারন ছুটি ঘোষনা দিয়ে জনসাধারণকে নিজ নিজ বাসায় থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অফিস,আদালত সহ সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এক ধরনের অনিশ্চয়তা এবং আতংকের মাঝে সবার দিন কাটছে।

বাংলাদেশের বিনোদন জগতের মানুষেরাও তাই আজ একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। ছোট এই ইন্ডাস্ট্রিতে সামনের দিনগুলিতে এই অবস্থার কতটা প্রভাব ফেলবে এবং সেটা কিভাবে দ্রুত কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে সেটাই এখন তারকা শিল্পীদের চিন্তার মূল বিষয়। এসব নানা প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আজকের ফিচারে খোলামেলাভাবেই নিজের অভিমত তুলে ধরেছেন মডেল, ছোটপর্দার আলোচিত এবং দক্ষ অভিনেতা গোলাম কিবরিয়া তানভীর।

ভার্চুয়াল আড্ডার প্রথমেই কেমন আছেন জানতে চাইলে তানভীর বলেন- ‘ আসলে সত্যিকারভাবে বলতে গেলে বলতে হয় ভালো নেই। আসলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ভালো থাকা যায়না। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। বাসার সবার সাথে সময় কাটাচ্ছি, একমাত্র মেয়ে আমায়রা এবং স্ত্রী অবন্তিকে নিয়েই সময় কাটছে।

শ্যুটিং থাকলে বাসায় তেমন সময় দেয়া সম্ভব হয়না তাই একদিক থেকে চিন্তা করলে এই সময়টাতে পরিবারকে পুরো সময় দেয়া যাচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মনে একধরনের ভয় এবং আতংক নিয়ে এভাবে বাসায় থাকাটাও এক ধরনের মানসিক চাপ বলেই জানান তানভীর। তবু সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের, পরিবারের এবং দেশের মানুষের কল্যানের জন্য বাসায় আছি। আর প্রার্থনা করছি যেনো খুব তাড়াতাড়ি এই অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রান পাই।

দেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিও আজ কঠিন এক সময় পার করছে।এই অবস্থায় মিডিয়ার সামনের দিনগুলো নিয়ে আপনাদের মানে যারা নিয়মিত কাজ করছেন তাদের কি ধারনা প্রশ্ন করা হলে স্মিত হেসে তানভীর বলেন- শ্যুটিং, ডাবিং, স্ক্রিপ্ট লেখা সবকিছুই বন্ধ করে আমারা সবাই বাসায় আছি। ব্যস্ততার কারনে এভাবে যেহুতু বাসায় থাকা হয়না তাই ব্যাপারটা অনেকটাই নতুন অভিজ্ঞতা। তবে এই ভয়াবহ অবস্থার কিছু অ্যাফেক্ট তো আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে পড়তে যাচ্ছে নিঃসন্দেহে। এমনিতেই আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ওরকম বড়না। এই অবস্থায় এই ক্ষতি কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে কতদিন সময় লাগে সেটা ভেবেই চিন্তাটা বেশি হচ্ছে। তবে সবাই একসাথে মিলে এই কঠিন সময়টা পার করবো এটাই কামনা।

দেশের অনেক সংগঠন বা ব্যক্তি পর্যায়ের অনেকেই এই অবস্থায় দেশের স্বার্থে এগিয়ে এসেছেন। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতেও কিছু কিছু ব্যক্তি এবং সংগঠন এগিয়ে এসেছেন এই উদ্যোগটি নিয়েও তানভীর উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, দেশের এই ক্রাইসিস সময়ে যার যার জায়গা থেকে সামর্থ্যবান সকলের এগিয়ে আসা দরকার। আমাদের কিছু সংগঠন এবং শিল্পীরা সহয়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কেউবা নীরবে কোনো প্রচার ছাড়াই সাহায্য করছেন।

অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনামূলক নানা পোষ্ট বা ভীডিও শেয়ার করছেন। সবার জন্যই আমার শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা রইলো। ব্যক্তিগতভাবে আমিও কিছু করার চেস্টা করে যাচ্ছি তবে ওইযে বললাম কিছু কাজ নীরবে করত্ব ভালো লাগে। তাই সাধ্যনুযায়ী এখন দেশ এবং দশের জন্য কিছু করার টান থেকেই নিজেকে এই কাজে যুক্ত করেছি। এই উদ্যোগে সবাই দোয়া করবেন এটাই কামনা।

প্রতিবছর দুই ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর কাজ হয় আমাদের ছোট পর্দায়। ধরতে গেলে মাত্র দেড়মাসের মতো বাকি আছে রোজার ঈদের। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এবার সবকিছু থমকে আছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই ইন্ডাস্ট্রির একজন পেশাদার অভিনেতা হিসেবে সামনের দিনগুলি নিয়ে কিছু চিন্তা হচ্ছে বলেও ধারনা দেন তিনি। করোনার এই ভয়াবহ অবস্থা শেষ হলেও ইন্ডাস্ট্রি আবার ঘুরে দাড়াতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানান প্রায় একযুগ ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা এই পরিশ্রমী অভিনেতা। কারন হাতেগোনা কিছু অভিনেতা অভিনেত্রী ছাড়া আমরা যারা পেশা হিসেবে শুধুমাত্র অভিনয়কে বেছে কাজ করেছি এতোদিন তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছি। এমতাবস্থায় সবার একসাথে থেকে পরিস্থিতি কাটানোর চেস্টা করতে হবে এবং এর কোন বিকল্প নাই বলেও জানান তানভীর।

ছোটপর্দার সীমানা পেড়িয়ে বড়পর্দায় এবছরই অভিষেক হতে যাচ্ছে তানভীরের। রায়হান রাফির ‘স্বপ্নবাজি’ এবং ‘ইত্তেফাক’ নামক দুটি সিনেমায় দুটি ভিন্নধর্মী এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে তানভীরকে। সিনেমায় তার যাত্রা নিয়ে তানভীর জানান, এই সময়ের অত্যন্ত দক্ষ এবং জনপ্রিয় পরিচালক রায়হান রাফির হাত ধরেই সিনেমায় অভিষেক হতে যাচ্ছে আমার। ‘স্বপ্নবাজি’ আমাদের মিডিয়ার গল্প। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা মিডিয়ার সবাই এই সিনেমাটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত।

প্রযোজক পিয়াল হোসেনের পরিকল্পনা, বিশাল বাজেট এবং শাহজাহান সৌরভ ভাই অসাধারন গল্প দাড়া করিয়েছেন এবং রাফি ভাই সেটিকে তার পরিচালনার মুন্সিয়ানা দিয়ে পুরাই বানিজ্যিক সিনেমা হিসেবে প্রেজেন্ট করতে যাচ্ছেন। ‘ইত্তেফাক’ এবং ‘স্বপ্নবাজি’ দুটি সিনেমাই কনটেন্ট নির্ভর সিনেমা। দুই সিনেমায় আমার চরিত্র পুরোপুরি আলাদা। নিজের সবটা দিয়েই কাজ করেছি, তবে এখন তো সব বন্ধ তাই আবার কবে কাজ শুরু হবে সেটার অপেক্ষায় আছি, তবে এতোটুকু বলতে পারি দর্শকেরা হতাশ হবেনা।

শ্যুটিং বন্ধ হলেও ছোট পর্দায় দেখা মিলছে তানভীরের। এনটিভিতে সপ্তাহের তিনদিন প্রচারিত হচ্ছে এই সময়ের আলোচিত ধারাবাহিক ‘পরেরমেয়ে’।

এছাড়া নাগরিক টিভিতে ‘গোল্লাছুট’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হচ্ছে। একই চ্যানেলে শুরু হতে আরেকটি সিরিয়াল নাম ‘বাউন্ডুলে’। আরটিভিতে চলছে ‘তোলপাড়’ নামে আরেকটি ধারাবাহিক। গতবছর ‘খলনায়ক’ নাটকটি দিয়ে নতুন করে আবারো আলোচনা এবং প্রশংসা পেয়েছিলেন তানভীর। এখন সেই নাটকটি দীপ্ত টিভিতে আবারো সম্প্রচারিত হচ্ছে। তাই বলা যায় কাজ বন্ধ থাকলেও দর্শকদের সামনে তিনি হাজির হচ্ছেন নিয়মিত।

এখন সব নাটক অনলাইন চ্যানেলগুলোতেও রিলিজ দেয়া হচ্ছে। তাই দর্শকদের কাছ থেকে রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে।

দেশের এই ভয়াবহ আর আতংকের পরিস্থিতিতে তার ভক্ত থেকে শুরু করে সাধারন মানুষদের ঘরে থাকার আহবান জানান তিনি। কারন যেহুতু প্রতিষেধক নাই তাই ঘরে থাকার মাধ্যমেই এই যুদ্ধ জয় করা সম্ভব। তাই ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় সবাইকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাসায় থাকতে অনুরোধ করেন তানভীর।

সাথে মহান আল্লাহ-তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা এবং অন্যসব নিয়ম-নীতি যেমন বিশ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে হাতধোয়া, পানি পান করা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাক এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার উপর জোর দেন তিনি। সবার চেস্টা এবং ধৈর্য্য এই বিপদ থেকে আমাদের খুব শ্রীঘই মুক্ত করবে আর সবার মতো এটাই কামনা করেন তানভীর।

Leave a Comment

error: Content is protected !!