কওমি মাদরাসায় যা কিছু পড়ানো হয়

কওমি মাদরাসায় যা কিছু পড়ানো হয়। কওমি মাদরাসা। ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের অনুকরণে পরিচালিত হয়ে আসছে। যা ১৮৬৬ সালের ৩০ মে ভারতের দেওবন্দের ছাত্তা মসজিদের বারান্দায় ডালিম গাছের নিচে একজন উস্তাদ মোল্লা মাহমুদ ও একজন ছাত্র মাহমুদুল হাসানকে দিয়ে গোড়াপত্তন করা হয়। কালের আবর্তনে সেই মাদরাসার লক্ষ লক্ষ শাখা প্রশাখা আজ সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে ইলমের নূর ছড়িয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই এদেশে অনেক কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। প্রতিষ্ঠার পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কওমিস মাদরাসার সংখ্যা। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ২০ হাজার কওমি মাদরাসা রয়েছে। এসব মাদরাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ। এসব মাদরাসার সিলেবাস ইসলাম ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে প্রণয়ণ করা হয়েছে।

যা আছে কওমি মাদিরাসার পাঠ্যক্রমে
কওমি মাদরাসায় শিক্ষার বিভিন্ন স্তর রয়েছে। প্রথম স্তর: মক্তব। এই স্তরে শিক্ষার্থীদের কোরআন শরিফ পড়তে শেখানো হয়। দ্বিতীয় স্তর: হিফজুল কোরআন। এই স্তরে শিক্ষার্থীদের কোরআন শরিফ মুখস্ত করানো হয়। তৃতীয় স্তর: ইবতেদায়ি। এটি মূলত প্রাথমিক পর্যায় যেখানে শিক্ষার্থীদের আরবি, উর্দু ও ফার্সি পড়তে ও লিখতে শেখানো হয়। এখানে শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিতও শেখানো হয়।

এসব স্তরে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক সমতুল্য মুতাওয়াসিত্তায় ভর্তি হতে হয়। তারপর উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। সবশেষে রয়েছে সর্বোচ্চ স্তর বা দাওরায়ে হাদিস। এসব শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা কোরআন শরিফ ছাড়াও হাদিস, উসুলে হাদিস, ফিকহ, উসুলে ফিকহ, ইসলামি ফারায়েজ, ইসলামি দর্শন, ইসলামের ইতিহাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়ে থাকেন।

বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো কয়েকটি বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়। তন্মেধ্যে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে সবচেয়ে বেশি মাদরাসা রয়েছে। এ বোর্ডের প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যসূচিতে বাংলা, আরবি, ফার্সী, উর্দূ ছাড়াও গণিত, ইংরেজি, ভূগোল, সমাজ বিষয়ও রয়েছে।

এরপর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পুরো কুরআনের বাংলা অনুবাদ ব্যাখ্যাসহ ইসলামের ইতিহাস, তর্কশাস্ত্র, পৌরনীতি, সমাজনীতি, ইসলামি ফিকহ পড়ানো হয়। সর্বোচ্চ স্তরে পড়ানো হয় সিহাহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধতম ছয়টি হাদিসের গ্রন্থ। বিশেষত ইমাম মোহাম্মদ আল বুখারি রহ. সংকলিত সহিহ বুখারি শরিফ, ইমাম মুসলিম ইবনে আল-হাজ্জাজ রহ. সংকলিত সহিহ মুসলিম শরিফসহ হাদিসের অন্যান্য গ্রন্থগুলো রয়েছে।

তাকমিল বা দাওরায়ে হাদিস সমাপন করার পর উচ্চতর গবেষণার বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। এক বছর কিংবা দুই বছরের কোর্সের মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছেধীন, আরবি সাহিত্য, ইসলামী আইন গবেষণা বা উচ্চতর হাদিস নিয়ে পড়ে থাকেন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!