ছাত্রলীগকে কেন সুবিধা দিতে হবে?

ছাত্রলীগকে কেন সুবিধা দিতে হবে? ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তেমন খবর ছাপানোয় কি গণমাধ্যমের উৎসাহ বেশি, নাকি ছাত্রলীগ সব ধরনের খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে বলেই কেবল নেতিবাচক খবর ছাপা হয় বেশি? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন।

তবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ সম্পর্কে খারাপ খবর ছাপা হতে দেখলে তো বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী যেকোনো মানুষেরই খারাপ লাগার কথা। কিন্তু আসলে কি কারও এগুলো খারাপ লাগে? নাকি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে? প্রশ্নগুলো মাথায় এলেও উত্তর দেওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি কে, তা বোঝা যায় না।

ছাত্রলীগের নেত্রীর বিরুদ্ধে যখন গরু চুরির অভিযোগ ওঠে, কিংবা ছাত্রলীগের কোনো নেত্রী যখন কোনো নেতার বিরুদ্ধে পদ দেওয়ার টোপ ফেলে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন, তখন যদি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অস্বস্তি বোধ না করেন, তাহলে কি বলা যায় যে সবকিছু স্বাভাবিক আছে? ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এত বিরূপ খবর প্রকাশ হওয়ার পরও কেন কোনো ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না—এ প্রশ্ন করা হলেও উপযুক্ত জবাব পাওয়া যাবে না।

এ কথাগুলো মনে এল, বুধবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর পড়ে। ‘অতিথির সামনে উপাচার্যকে শাসালেন ছাত্রলীগ নেতা’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসকসহ কয়েকজন অতিথির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলাকালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে শাসিয়ে গেলেন শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ। এ সময় একই কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কিছু নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি না দেওয়া হলে উপাচার্যের বিরুদ্ধে কর্মীদের উসকে দেওয়ার হুমকিও দেন ছাত্রলীগের এই নেতা।

ছাত্রলীগের নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজ ১৫ বছর ধরে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। এই ‘আদুভাই’ এর আগেও বিভিন্ন সময় তাঁর স্ত্রী এবং নেতা-কর্মীদের চাকরিসহ বিভিন্ন টেন্ডারের জন্য উপাচার্যের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন। গত ৩১ মার্চ একই কারণে তাঁর কর্মীদের নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপাচার্যের গাড়ি আটকে বিভিন্ন আক্রমণাত্মক কথা বলেন। এমন ‘গুণধর’কে ছাত্রলীগ নেতার পরিচয় দেওয়ার সুযোগ কেন দেওয়া হয়?

উপাচার্যের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজ সামান্য অনুতপ্ত না হয়ে উল্টো বলেছেন, ‘এই উপাচার্য স্যার ছাত্রলীগকে সুবিধা দিতে চান না।’

প্রশ্ন হলো, ছাত্রলীগকে কেন সুবিধা দিতে হবে? উপাচার্য কোনো অনিয়ম করছেন কি না, তা তদারকির দায়িত্ব কি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ছাত্রলীগকে দেওয়া হয়েছে?

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে, অবৈধভাবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে, তাহলে আমি চাকরি দেব না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মেধার জায়গা, মেধার ভিত্তিতে যোগ্যরা চাকরি পাবে বলে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে কি শেষ পর্যন্ত দৃঢ় থাকতে পারবেন?

Leave a Comment

error: Content is protected !!