ডায়ালাইসিস ছাড়া কিডনি চিকিৎসা

ডায়ালাইসিস ছাড়া কিডনি চিকিৎসা। সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি চলাকালে নাটকীয়ভাবে বেঞ্চে আবির্ভূত হন সালাউদ্দিন মাহমুদ। চিকিৎসক না হয়েও নিজের আবিষ্কৃত চিকিৎসা পদ্ধতি তুলে ধরে তিনি অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে জানান, তার চিকিৎসা নিলে জটিল (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ- সিকেডি) কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করতে হবে না, প্রয়োজন হবে না কিডনি প্রতিস্থাপনেরও। বহু রোগী তার চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন, কিডনি রোগের চিকিৎসায় নিজেকে সফল দাবি করেন তিনি।

পরে সালাউদ্দিন মাহমুদের দাবির সপক্ষে তার বক্তব্য, তার কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়া রোগী, প্রচলিত কিডনি চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, সরকারের সঙ্গে কথা বলে জাগো নিউজ।

যথাযথ তথ্য-প্রমাণ হাজির করা ছাড়া তার এমন দাবি ‘অর্থহীন’ বলছেন অনেকে। চিকিৎসক না হওয়ার পরও তার এ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। সালাউদ্দিনের কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়া অনেক রোগী জানিয়েছেন, তারা সুস্থ হয়েছেন, উপকার পাননি বলেও জানিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ তার চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যয়বহুল বলেছেন।

নিজের দাবি উপস্থাপন করলে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেছিলেন, ‘সালাউদ্দিন মাহমুদের বিষয়টি নিয়ে আপনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

জাগো নিউজের সঙ্গে আলোচনায়ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিচারক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ তার হারবাল চিকিৎসায় কিডনির জটিল রোগ থেকে ভালো হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ৬২ বছর বয়সী সালাউদ্দিন।

কিডনি রোগের চিকিৎসায় একটি হারবাল হাসপাতাল গড়ার স্বপ্নও দেখেন তিনি। এজন্য তিনি একটি প্রকল্প প্রস্তাবনাও তৈরি করেছেন। হাসপাতাল হলে সেখানে তার চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে হাজার হাজার রোগী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসবেন কিডনি রোগ থেকে মুক্তি লাভের আশায়। এতে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে পারবে বলেও দাবি করেন তিনি।

নিজের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে যা বললেন সালাউদ্দিন

কিডনি চিকিৎসার বিষয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি ২৫-৩০ বছর ধরে কিডনি গবেষণার সঙ্গে জড়িত এবং হাজার হাজার, লাখ লাখ রোগীকে কিডনি চিকিৎসা দিয়ে আসছি। আমরা সাধারণত ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডি আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। দু-তিন মাস ডায়ালাইসিস করিয়েছেন এমন রোগী আমাদের কাছে এলেও ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দিতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘নিয়মিত আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে আশা করি যেকোনো পর্যায়ের কিডনি রোগী ভালো হবেন কিংবা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে না।’

‘আমরা বহু সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করেছি। ২০০০ সালে আমি তৎকালীন নোয়াখালীর সিভিল সার্জনকে কয়েকজন কিডনি রোগীর বিষয়ে বলেছি, আমি তাদের ভালো করে দেব। এসব রোগী সিকেডিতে আক্রান্ত ছিলেন। ওই সিভিল সার্জন বলেন, এটা ভালো হবে না, এদের ঢাকায় পাঠিয়ে দিন। আমি ঢাকায় না পাঠিয়ে তাদের চিকিৎসা করি। সবাই ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসা করতে প্রায় এক/দেড় বছর লেগে যায়। পরে আমি সিভিল সার্জনের কাছে যাই। উনি দেখে আশ্চর্য হয়ে যান। উনি আমাকে সংবাদ সম্মেলন করতে বলেন। ক্রনিক কিডনি ডিজিজ নিয়ে সারা পৃথিবী আতঙ্কিত। প্রচলিত চিকিৎসায় এটা ভালো হয় না। কিন্তু আমরা সেটা করেছি।’

‘নোয়াখালী জেলার সদর থানার ৩ নম্বর নোয়ান্নই ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল হাইয়ের তিনদিন ধরে প্রস্রাব হয় না, দুদিন ধরে তার জ্ঞান নেই। সদর হাসপাতাল থেকে নাম কেটে দিয়ে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু তারা গরিব, ঢাকায় যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। তার আত্মীয়-স্বজন মনে করেছে যে মারা যাচ্ছে, তার কবর তৈরিরও আয়োজন চলছে। আমি তার চিকিৎসা করলাম, সে এখনও বেঁচে আছে’- দাবি করেন সালাউদ্দিন।

‘গাছগাছারি থেকে আবিষ্কৃত ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করেন’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ওষুদের নাম নেফ্রোজেন, এটি ভেষজ ওষুধ। ২০০৩ সালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট অধিদফতর থেকে ওষুধের পেটেন্ট রাইট অর্জন করি। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) থেকে পরীক্ষা করা এ ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স করা সালাউদ্দিন ১৯৮৩ সাল থেকে কিডনি চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রচলিত অর্থে ডাক্তার নই। আমি প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার লিখিও না। আমি অ্যালোপ্যাথিকের ওপর চার বছরের ডিপ্লোমা নিয়েছি। আমি কমিউনিটি মেডিকেল সার্ভিস বা সিএমএস এবং ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট বা ডিএমও সনদ নিয়েছি।’

‘ভুয়া ডাক্তার ও গবেষকের অভিযোগে আমার নামে মামলাও হয়’ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আদালতে আমার পক্ষেই রায় হয়। আমি নোয়াখালীর বাঁধেরহাট এএম ডিগ্রি কলেজে রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চাকরি করতাম। মামলা হওয়ায় আমি সেই চাকরি হারাই।

‘আমি প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার না লিখে লিখি অ্যাপোথেকারি। অ্যাপোথেকারি অর্থ যিনি ওষুধ উৎপাদন করেন এবং তা বাজারে বিক্রি না করে সরাসরি রোগীর ওপর অ্যাপ্লাই করেন। এটা পৃথিবীর সব দেশে আছে কিন্তু বাংলাদেশে নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি একসময় ওষুধ প্রশাসন পরিদফতরের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের ডিন চৌধুরী মো. হাসান সাহেবের সঙ্গে দেখা করে সবকিছু বলি। উনি বলেন, আপনি যেটা করেছেন তা তো নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মতো। তবে এখন কিছু করতে পারব না। আমি যখন আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাব তখন কিছু করতে পারব। উনার কথা উনি রেখেছেন, তিনি আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব প্রায় চার বছর ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন। আমি ওনার কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি না থাকলে আমি হারিয়ে যেতাম।’

উচ্চ আদালতে গিয়ে বক্তব্য দেয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি পত্রিকায় দেখেছি, মানুষ মেরে কিডনি রেখে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। যেখানে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনে আত্মীয় ছাড়া কাউকে কিডনি দেয়ার নিয়ম নেই, সেখানে এ অবস্থা! সেখানে আত্মীয়-স্বজনের বাইরে কিডনি দেয়ার নিয়ম করলে আরও বিশৃঙ্খলা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি যখন শুনলাম আইন সংশোধন করে আত্মীয়-স্বজনের বাইরেও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেয়ার জন্য রিট করা হয়েছে, এটা শুনে আমার খুব খারাপ লাগল। আমি মনে করেছি, বয়স তো অনেক হয়েছে, এখন আমার মৃত্যু হলে ক্ষতি নেই। যেহেতু আদালতে আমার কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। রায়ও হচ্ছে মনে হয়। তাই ভাবলাম, আমার না হয় জেলই হলো, ঝুঁকি নিলাম।’

‘আমি এজলাস কক্ষের একেবারে পেছনে বসেছিলাম, আমাকে কয়েকবার বেরও করে দেয়া হলো। আবার এসে বসি। একপর্যায়ে আমি মাই লর্ড বলে হাত তুললাম। বিচারপতি বললেন, আপনি কে, আপনাকে তো চিনি না। যা হোক, আমি ডায়াসের দিকে এগিয়ে গিয়ে পাগলের মতো আমার কথা বলা শুরু করলাম।’

সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি বললাম, আমি কিডনি রোগের গবেষক ও আবিষ্কারক। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট কিংবা কিডনি ডায়ালাইসিসও করা লাগে না। এটা এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন, তাই আইন সংশোধন করে পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন নেই মাই লর্ড। আমি কোন কোন রোগী ভালো করেছি আমি সেটা বলেছি।’

‘বিচারপতির পরিচিত দুজনের নাম বলেছি। একজন জেলা জজের মা আরেকজন জেলা জজের স্ত্রী। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেছি। তখন তিনি আমার কথা বিশ্বাস করেছেন। বুঝেছেন, এটা পাগলামি নয়। আদালত প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আমার কথা শুনেছেন’ বলেন সালাউদ্দিন।

চিকিৎসায় রওশন এরশাদের কিডনি রোগ ভালো হয়েছে দাবি করে অন্যান্য সুস্থ হওয়া মানুষের সংক্ষিপ্ত পরিচিত নিয়ে তৈরি করা ‘সাক্ষ্য প্রমাণপত্র’ নামে একটি বইও দেখান সালাউদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘সরকারের সহযোগিতা ছাড়া একটা গবেষণা কখনও সফল হয় না। সরকার যদি একটা হারবাল হাসপাতাল করে, সেখানে আরও বিশেষজ্ঞ যদি এটার সঙ্গে থাকেন তাহলে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আমরা সবাই মিলে একটা ভালো জিনিস করতে পারি।’

‘কিডনি চিকিৎসার জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি হারবাল হাসপাতাল করার প্রকল্প প্রস্তাবনা আমি তৈরি করেছি। এ হাসপাতাল হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশ থেকে মানুষ আসবে।’

সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বার্ন ইউনিটের মতো হাসপাতাল করেছেন। তার কাছে আমার আকুল আবেদন, যদি হারবাল হাসপাতাল হয়, পদ্মা সেতু সমান টাকা আমরা বছরে ট্যাক্স ও ভ্যাটের মাধ্যমে সরকারকে দিতে পারব। কারণ পৃথিবীতে এ রোগের চিকিৎসা নেই। আমরা যদি ঠিকভাবে প্রচার করতে পারি, তখন সারা পৃথিবী থেকে লাখ লাখ রোগী এসে এ হাসপাতালে ভর্তি হবে। সরকার যদি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নিজে করে বা করার অনুমতি দেয়, তবেই এটা সম্ভব। প্রয়োজনে আমরা বাংলাদেশিদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেব।’

চিকিৎসা খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফি একবার ৫০০ টাকা নেয়া হয়। এরপর যতবার প্রয়োজন আসবেন, কোনো ফি দিতে হবে না। যদি শুধু কিডনি রোগ নিয়ে আসেন তবে পাঁচ থেকে ১০ হাজারের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে। তবে কিডনি রোগের সঙ্গে যদি ডায়াবেটিস থাকে, লিভার ও হার্ট কিংবা অন্যান্য সমস্যা থাকলে পুরো চিকিৎসার জন্য সাত লাখ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। রোগীর ধরনের ওপর ভিত্তি করে তিন মাস থেকে কারও কারও ক্ষেত্রে সারাজীবনও ওষুধ খেতে হতে পারে।’

টিকাটুলির ২৩/৫ কে এম দাস রোডের চেম্বারে সোম ও মঙ্গলবার এবং নোয়াখালীর মাইজদী অনন্তপুরে শুক্র ও শনিবার বসেন তিনি। বলেন, ‘তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ছোট ছোট পরীক্ষা-নিরীক্ষাও আমরাই করি।’

চিকিৎসা নেয়া রোগীরা যা বলছেন

রূপনগর আবাসিক এলাকার (রোড-২, বাসা-১২) বাসিন্দা অধ্যাপক এ এস এম ফজলুল করিম সালাউদ্দিন মাহমুদের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি উপকার পেয়েছি। কিন্তু উনার চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল আমার জন্য। আমি একটি কলেজের শিক্ষক, এ ব্যয় বহনের সক্ষমতা আমার নেই। এক বছরের মতো চিকিৎসা নিয়েছি, মাসে আমার ২০-২৫ হাজারের মতো টাকা লাগত।’

সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট খন্দকার আহসান হাবিবও তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি থাকেন শান্তিনগরে। আহসান হাবিব বলেন, ‘তার চিকিৎসাটা অনেক ভালো। আমার কিডনিতে বারবার পাথর হচ্ছিল। কয়েক দফা অপারেশন করিয়েছি। একপর্যায়ে চিকিৎসকরা জানান, কিডনি কেটে ফেলতে হবে। তার চিকিৎসায় আল্লাহর রহমতে আমি ভালো হয়েছি।’

তবে শান্তিনগরের বাসিন্দা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘তার চিকিৎসা নিয়ে আমি তেমন কোনো উপকার পাইনি। যদিও আমি ওষুধ খেয়ে যাচ্ছি।’

নিকুঞ্জ-২ (রোড-১৮, বাড়ি-৩৬) এর বাসিন্দা সুধীর কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী সন্ধ্যা বিশ্বাস কিডনি রোগে আক্রান্ত। তাকে ডায়ালাইসিসও করানো হয়েছিল। পরে ২০১৭ সালে সালাউদ্দিন সাহেবকে দেখাই। তার ওষুধ খাওয়ায় ডায়ালাইসিস করা লাগছে না। কিন্তু পুরো যে সুস্থ হবে সেই লক্ষণও দেখছি না। প্রতি মাসে স্ত্রীর জন্য ৩০-৩৫ হাজার টাকার ওষুধ লাগে।’

অন্য চিকিৎসকদের মত

সালাউদ্দিন মাহমুদের দাবির বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রানা মোকাররম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘যে কেউ যে কোনো দাবি করতে পারে। তবে বিশ্বাসযোগ্য হতে হলে সেটার সপক্ষে তথ্য-প্রমাণ লাগবে।’

তিনি বলেন, ‘অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসায় সিকেডি ভালো হওয়ার মতো অসুখ নয়।’

‘তবে তিনি যদি সিকেডি ভালো করে ফেলছেন- এমন দাবি করেন, তাকে তো কাগজপত্র দেখাতে হবে। চিকিৎসার আগে পরীক্ষা করে দেখাবেন যে, এ কিডনি খারাপ ছিল, ব্লাড রিপোর্ট এমন ছিল। চিকিৎসার পর ভালো হয়ে গেছেন, স্বাভাবিক হয়ে গেছেন, সেই রিপোর্টও তিনি দেখাবেন। তার দাবির সপক্ষে প্রমাণাদি নিয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন। তিনি নেফ্রোলজিস্টদের সম্মেলনেও নিজের গবেষণার ফলাফল প্রমাণসহ তুলে ধরতে পারেন। সত্যি হয়ে থাকলে তো তিনি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হবেন’ বলেন রানা মোকাররম।

গত ২৩ নভেম্বর মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও চিকিৎসক আব্দুর নূর তুষার ‘কার চিকিৎসা দরকার?’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আদালতে দাঁড়িয়ে একজন রসায়নবিদ দাবি করলেন তিনি ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়াই যেকোনো কিডনি রোগীকে মরণাপন্ন অবস্থা থেকেও সুস্থ করতে পারেন।

তিনি বলেন, তিনি রোগীদের চিকিৎসা করে সুস্থ করেন। এক সরকারি উকিল সাক্ষ্য দিলেন যে, তার চিকিৎসায় রোগী ভালো হয়। রওশন এরশাদও তাদের একজন। যার চিকিৎসা করার লাইসেন্স নেই, তিনি সর্বোচ্চ আদালতে ঘোষণা দেন যে, তিনি চিকিৎসা করেন। আদালত তাকে বাহবা দেন। আদালত তাকে কিছুই বলেন না, উল্টো নোবেল পাওয়ার মতো ঘটনা বলে তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যেতে বলেন।’

স্ট্যাটাসে তিনি আরও লেখেন, ‘এ দেশে রেজিস্ট্রেশন নং লিখতে হয় ডাক্তারকে। আর কোয়াক, প্রকাশ্য আদালতে বলে সে লাইসেন্স, ডিগ্রি, নং ছাড়াই চিকিৎসা করে। অথচ আদালতে দাঁড়িয়ে রসায়নবিদ বেআইনি চিকিৎসা করার ঘোষণা দিলে সরকারি উকিল তার পক্ষে দাঁড়িয়ে তার গুণ বর্ণনা করেন। তার কোনো সাজা হয় না। যে আদালত ডাক্তারের হস্তাক্ষর নিয়ে নির্দেশ দেন, সেই আদালত ভুয়া ডাক্তারকে কিডনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে মেনে নিয়ে পরামর্শ দেয় মন্ত্রণালয়ে যেতে। সরকার আইন বানায় চেম্বারে ন্যূনতম চেয়ার না থাকলে ডাক্তারের জরিমানা ৫০ হাজার, অনাদায়ে কারাদণ্ড। এ দেশে ডাক্তারের দুর্দশা হবে না তো কার হবে? এটা কোয়াকেরই দেশ হবে। চিকিৎসা কার দরকার? উকিলের, রসায়নবিদের নাকি ডাক্তারের? নাকি…?’

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সালাউদ্দিন মাহমুদের বিষয়ে তারা তেমন কিছুই জানেন না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগের কথা আমার জানা নেই।’

Leave a Comment

error: Content is protected !!