আফিয়া সিদ্দিকী

ড. আফিয়া সিদ্দিকী যিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিখ্যাত একজন মুসলিম স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং একজন আলোচিত মহিলা। তিনি করাচীর সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ শিক্ষিত পরিবারে ১৯৭২ সালের ২ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন। পিএইচডি ডিগ্রি ধারী এই মহিলাকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ২০০৩ সালে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আল কায়েদার সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে পাকিস্তানের করাচির রাস্তা থেকে তার তিন সন্তানসহ গ্রেফতার করে।

পরে প্রচলিত আইনের আওতায় না এনে পাকিস্তানের কারাগারে গ্রেফতার না রেখেই তাকে আফগানিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে তাকে ৫ বছর বন্দি করে রাখা হয়। মার্কিন আদালত তাকে ৮৬ বছর কারাদন্ড দেয়। বন্দি অবস্থায় তার ওপর ব্যাপক অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ আছে।

ড.আফিয়া সিদ্দিকী
عافیہ صدیقی
ড. আফিয়া সিদ্দিকী
জন্ম মার্চ ২, ১৯৭২

করাচী, সিন্ধু প্রদেশ, পাকিস্তান
অন্যান্য নাম ‘কয়েদি ৬৫০’, ‘বাগরামের ধূসর মহিলা’, ‘গ্রে লেডী অব বাগরাম’
নাগরিকত্ব পাকিস্তানি
মাতৃশিক্ষায়তন ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি(BS)
ব্রন্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয় (PhD)
পরিচিতির কারণ নির্যাতিত মুসলিম বিজ্ঞানী
উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (১.৬৩ মিটার)
বোর্ড সদস্য ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক রিসার্চ এন্ড টিচিং (প্রেসিডেন্ট)
অপরাধের অভিযোগ হত্যার চেষ্টা, প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে হামলা
অপরাধের শাস্তি দোষী সাব্যস্ত; ৮৬ বছরের জেল সাজা
দাম্পত্য সঙ্গী আমজাদ মুহাম্মদ খান (১৯৯৫ – ২১ অক্টোবর, ২০০২) (বিচ্ছেদ)
সন্তান মুহাম্মাদ আহমেদ (জন্ম: ১৯৯৬);
মারইয়াম বিনতে মুহাম্মাদ (জন্ম: ১৯৯৮) এবং
সুলাইমান (জন্ম: সেপ্টেম্বর ২০০২)

জন্ম ও শিক্ষাগত যোগ্যতা

জন্ম সূত্রে এই উচ্চ শিক্ষিত মহিলা পাকিস্তানের নাগরিক। শিক্ষা জীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রী ধারী (পিএইচডি)। স্বনামধন্য এই স্নায়ুবিজ্ঞানী শিক্ষা জীবনে অসামান্য মেধার পরিচয় দেন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রন্ডেইস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে “নিউরোলজি” বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। এছাড়াও সম্মান সূচক ও অন্যান্য ডিগ্রীর ১৪০ টিরও বেশি সার্টিফিকেট তিনি অর্জন করেন। তিনি “হাফিযে কোর’আন” ও “আলিমা”। শিক্ষা লাভের পর তিনি ২০০২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করেন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। সহকর্মীরা তাকে অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী হিসেবে পরিচয় দেন।

গ্রেফতার ও অপহরণ

পাকিস্তানি এই নাগরিককে করাচির রাস্তা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে পাকিস্তানে কোনো বিচার কার্য না করেই সরাসরি আফগানিস্তানে নিয়ে গেলে পাকিস্তান সরকার ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়। এবং তাকে অপহরনের অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন সরকারের এতে হাত রয়েছে বলে মনেকরা হয়।

গ্রেফতারের অভিযোগ ও বন্দী জীবন

আল-কায়দার সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় তিন সন্তান আহমদ, সুলাইমান ও মারিয়মকে সহ। আফগানিস্তানে বন্দি রাখা কালে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। তাকে মানসিক, যৌন ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হত এবং তাকে দিনের মধ্য কয়েকবার করে ধর্ষন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। বাগরাম কারাগার থেকে মুক্তি প্রাপ্ত বন্দিরা অভিযোগ করেছে “নির্যাতনের সময়ে আফিয়ার আত্ন-চিৎকার অন্য বন্দির পক্ষে সহ্য করাও কঠিন ছিলো।” ওই নারীর ওপর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অন্য বন্দীরা অনশন পর্যন্ত করেছিলো।

২০০৮ সালে তাকে স্থানান্তর করা হয় নিউইয়র্কের এক গোপন কারাগারে। বর্তমানে তিনি পুরুষদের সাথে ওই কারাগারে বন্দি। কারাবন্দি নম্বর ৬৫০। চলমান নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি মানসিক ভারসাম্য হরিয়ে ফেলেন। পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান দাবি করে বলেন “তার দু সন্তান ইতোমধ্যেই মার্কিন নিয়ন্ত্রিত আফগান কারাগারে মারা গেছে।” তিনি আরো বলেন, “পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা ড. আফিয়া সিদ্দিকাকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে তাদেরকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।”

৩৮ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানীকে ৮৬ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়, আদালতে মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে। অভিযোগ আছে যে তাকে ২০০৮ সালে আফগানিস্তানে অজানা রাসায়নিক পদার্থ ও হামলার পরিকল্পনার নোট সহ গ্রেফতার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে ৭টা মামলা দায়ের করা হয়। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন যে গ্রেফতারের সময় তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মানচিত্রর পাওয়া যায়।

ড. আফিয়াকে ৮৬ বছর কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করার পর পাকিস্তানের রাস্তায় বিক্ষোভ হয়। অনেকেই মনে করেন তিন সন্তানের জননী হার্ভার্ড পিএইচডিধারী আফিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সন্তাসবিরোধী যুদ্ধের আর একটি নির্দোষ শিকার। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করে, “বিশ্ব জুড়ে সব জায়গায়তেই অভিযুক্তরা “বেনেফিট অব ডাউট” বা সন্দেহাতীতভাবে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে পর্যন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত হয়। ফলে সকল সুবিধা পায়। কিন্তু ড. আফিয়া তা পাননি বরং নির্যাতনের শিকার হন।”

তার ওপর অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি আলোচিত হয় কারাগার থেকে তার বহুল আলোচিত চিঠিটি লেখার পর। চিঠিটিতে আফিয়া দাবি করেন তার ওপর শারীরিক, পাশবিক নির্যাতনের পাশাপাশি একের পর এক ধর্ষন করা হয়। তার একটি কিডনিও বের করে ফেলা হয়েছিলো ফলে তিনি হাঁটতে পারতেন না। তিনি আরো দাবি করেন যে তাকে গুলি করা হয় এবং তার বুকে গুলি আঘাত ছিলো।

যেই ভাষনটির পর গ্রেফতার হলেন ড. আফিয়া সিদ্দিকা শুনতে ক্লিক করুন ঐতিহাসিক ভাষণ

ওবামার কাছে আফিয়া সিদ্দিকীর মায়ের হৃদয়স্পর্শী চিঠি

বারাক ওবামা
প্রেসিডেন্ট
হোয়াইট হাউজ
ওয়াশিংটন, ডিসি২৯৫০০
প্রিয় মি. প্রেসিডেন্ট,
আমার নাম ইসমত সিদ্দিকী। ড. আফিয়া সিদ্দিকী আমার কন্যা। সে এমন একজন যার সম্পর্কে আপনি ইতোমধ্যে হয়তো শুনে থাকবেন। সম্ভবত, তার সম্পর্কে নেতিবাচক কিছুই শুনে থাকবেন। ইন্টারনেট ও অন্যান্য মাধ্যমে লাখ লাখ পৃষ্ঠা একজন ব্যক্তি সম্পর্কে অনুমিত বিবরণ, প্রশংসা, কটাক্ষমূলক ব্যঙ্গবিদ্রূপ এবং একই সাথে একগাদা প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তার সমর্থকেরা তাকে সেইন্টহুডে তুলে এনেছে। আর কুৎসাকারীরা তাকে অপবাদ দিয়ে দানবে রূপায়িত করেছে। একজন মানুষ সম্পর্কিত সত্যটি এর মধ্যে হারিয়ে গেছে। আসল ঘটনা হচ্ছে, আফিয়া তিন-তিনটি সন্তানের মা এবং একজন মেধাবী মুসলিম মহিলা। তার একমাত্র উৎসাহ-অনুরাগ হচ্ছে লোকদের শিক্ষিত করে তোলা। এ জন্য সে পড়াশোনা করেছে বিশ্বের উৎকৃষ্ট সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এগুলোর মধ্যে আছে এমআইটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের সুখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোও। ২০০১ সালের ১ সেপ্টেম্বরের পর অজানা কারণে আফিয়া সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের এক শিকারে পরিণত হয়েছে।
এটি শুধু তার অসুস্থ মায়ের একটি দুঃখজনক কাহিনীই নয়। এটি সেইসব মানুষের দ্বারা নির্যাতন, অন্যায় মর্যাদাহানি, অবনমিত করা, প্রতারণা ও বর্বরতার এক বাস্তবতা- যারা নিজেদের সবচেয়ে বেশি সভ্য বলে দাবি করেন। এটি তাদের করা গুরুতর এক অন্যায়-অবিচার, যারা নিজেদের সবচেয়ে ন্যায়ানুগ বলে দাবি করেন। এটি একটি জাতির পক্ষপাতদুষ্টতার এক মহাকাব্য, যে জাতি তা থেকে নিজেকে মুক্ত বলে দাবি করে থাকে। এটি শুধু একজন নারীর কোনো অগ্নিপরীক্ষা নয়; এটি একটি জাতির অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী একটি জাতি ও এর শাসকদের ওপর কালিমা লেপনের কাজ। স্যার, এটি আমেরিকার দু’টি প্রশাসনের ‘লজ্জাকর উত্তরাধিকার’। আমি এই বিভৎস ঘটনা, এর মেরিট বা ডিমেরিট উল্লেখ করতে যাবো না, কারণ আমি নিশ্চিত- আপনার কাছে প্রবেশাধিকার পাওয়া উকিলেরা আপনাকে শুধু সেসব ‘ফ্যাক্ট’ জানাবেন, যা তাদের দাবিকেই যুক্তিযুক্ত করে তোলে। কিন্তু এই আশায় এর সাথে ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস নেটওয়ার্কের তৈরী একটি ফ্যাক্টশিট সংযোজন করছি যে, আপনি এক নজর তা দেখবেন এবং দেখবেন এর একটি ‘উল্টো পিঠ’ও আছে। আমাকে বলা হয়েছে, আপনি একজন মেধাবী আইনজীবী ছিলেন। হার্ভার্ডে আপনি ছিলেন আপনার সহপাঠীদের শীর্ষে। অতএব আমার আশা, আপনি কল্পকাহিনী থেকে সত্য বের করে নিয়ে আসতে পারবেন।
মি. প্রেসিডেন্ট, অপহরণের পর আমার মেয়েকে এই কয়েক বছর ধরে জোর করে তার সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা, তার ওপর নির্যাতন চালানো, গুলি চালানো, মারধর করা, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা এবং বিবস্ত্র করার ভাবনায় আমার হৃদয় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এমনকি, এখনো তার ডিটেনশন ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণ সৌজন্যবোধও মানা হচ্ছে না। বুলেটের ক্ষতস্থান থেকে চুঁইয়ে পড়া রক্ত নিয়ে নিউ ইয়র্কে পৌঁছার পর এক মাস তাকে কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। তার আটককারীরা নিউ ইয়র্কে এবং ফোর্টওয়ার্থের কার্সওয়েল মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটিতে আইনজীবীদের সাথে সহায়তা করতে হুমকি অব্যাহত রাখে, যাতে তা করলে তাকে শাস্তি দেয়া যায়। তাকে এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলা হয়, যেখানে নির্মম প্রতিশোধের ভয়ে পরিবারের সাথে দেখা করতেও সে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। ইতোমধ্যে তীব্র যন্ত্রণায় পার হয়ে গেছে তার ১২টি বছর- পাঁচ বছরের গোপন বন্দিত্ব জীবন এবং প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন সাত বছরের বন্দিত্ব।
সতের বছর বয়সে আমার মেয়েকে আপনার দেশে পাঠিয়েছিলাম, যাতে এমন শিক্ষা গ্রহণ করে যা বিশ্বের আর কোথাও সম্ভব হতো না। তাকে সেই মূল্যবোধ শিখিয়েছিলাম- দয়ালু হতে ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করতে; প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং অসহায় মানুষকে সহায়তা দিতে। আমার মেয়েকে সেটাই শিখিয়েছিলাম, যা আমেরিকার অবস্থান। কিন্তু আমি অবাক হই, আপনারা যখন সে মূল্যবোধ ভুলে যান। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া তার সন্তানেরা প্রশ্ন করে- কেন তাদের অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়েছিল? কেন এদের দেশ এদের ওপর এমন আচরণ করল? আপনি কি এর জবাব দিতে পারেন?
আফিয়া শান্তি ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে সন্ত্রাসী নয়। তার শিক্ষা এবং তার সন্তানের প্রতি আগ্রহসূত্রে সে হতে পারত বিশ্বের অন্ধকারতম কোনো কোণোর একটি মেধাবী আলো। শৈশবের প্রথমাবস্থায় শিক্ষার্জনের ওপর তার গবেষণা সবখানে লাখ লাখ শিশুর জন্য সহায়ক হতে পারত। আমার কন্যা হতে পারত একটি বিশ্বসম্পদ, যে বিশ্বে তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি দরকার।
আমি আপনার কাছে আর্জি জানাই, আপনার প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা ব্যবহার করে আমাদের এই সময়ের সবচেয়ে গুরুতর অন্যায়-অবিচারের একটিকে অকার্যকর করে দিন। এটা হবে এমন একটি পদক্ষেপ, যা মুসলিম বিশ্বে আপনার জন্য প্রচুর সুনাম বয়ে আনবে; যা লাখ লাখ ডলার খরচ করেও আনা সম্ভব হবে না। আপনার একটি সাধারণ পদক্ষেপ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানো একজন মায়ের হৃদয় উষ্ণতায় ভরিয়ে দিতে পারে। আর তা ফিরিয়ে আনতে পারে আমেরিকার ক্ষমা ও করুণার উপায়। আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি, এক মুহূর্ত চিন্তা করে দেখুন একজন বাবা হিসেবে, যে এক কন্যাকে ধ্বংস থেকে বাঁচাতে পারে। আপনার গোয়েন্দা সংস্থা যা-ই বলুক, তা বিবেচনায় না নিয়ে আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি- আমার কন্যা কারো জন্য কোনো হুমকি নয়। তাকে ছেড়ে দিলে শুধু আপনিই আরো শক্তিধর ও গৌরবোজ্জ্বল হবেন। কারণ, ক্ষমার প্রাপ্তি দ্বিগুণ। সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
-ইসমত সিদ্দিকী

একজন আফিয়া সিদ্দিক্বী ও একটি চিঠি

সময়টা তখন ১৯৭২। পাকিস্তানে জন্ম হল একজন নারীর। বাবা মা নাম রেখেছেন আফিয়া সিদ্দিকি। সফলভাবে পড়াশোনার প্রাথমিকপর্ব শেষ করে আমেরিকায় আসেন ১৯৯০ সালে। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ হিউস্টনে ৩ সেমিস্টার পড়েন, এরপর স্কলারশিপ পেয়েভর্তি হন এমআইটিতে। তারপর আমেরিকার ব্রান্ডেইস ইউনিভার্সিটি থেকে নিউরোসায়েন্সের উপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন ২০০১ সালে। তিনি নিউরোসায়েন্সের উপর ১৪৪টি সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। তিনি বিশ্বের একমাত্র নিউরোলোজিস্ট যাকে হার্ভাড সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রিতে ভূষিত করে।

হিউস্টনে ১৯৯১ সালে তিনি একটি অসাধারণ বক্তব্য রাখেন, ইউটিউবে পাওয়া এটিই একমাত্র তার বক্তব্য।

তিনি ছিলেন পবিত্র কুরআনের হাফেজা, ছিলেন একজন আলিমা।

মুনাফিক পারভেজ মুশাররফ সরকার তাকে আল কায়েদাকে সাহায্যের মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়।করাচির রাস্তা থেকে ৩ সন্তানসহ তাকে কিডন্যাপ করা হয়। তারপর তাকে আফগানিস্থানের কুখ্যাত বাগরাম কারাগারে ৫ বছর ধরে আটকিয়ে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমান করতে পারেনি কুফফার আমেরিকা। তার ২ সন্তানকে ফেরত দেয়া হয়। কিন্তু একজনকে আর পাওয়া যায়নি। ছোট বাচ্চাটা হইতো শহিদ হয়ে গেছে কুফফারদের হাতে। তারপর ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় এই মহিয়সি নারীকে। দিনের পর দিন তাকে কারাগারে নির্যাতন করা হয়। চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। বিবস্ত্র করে পবিত্র কুরআনের উপর হাটতে বাধ্য করা হয়।

বছর খানেক আগেপাকিস্তানি মিডিয়া দ্যা নেশন এ ‍‍‌‌‌‌‌‍”মা‍‍‍‍‍‍‍র্কিন কারাগারে ক্যান্সারে আক্রান্ত আফিয়া সিদ্দিকী” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি হুবহু উপস্থাপন করা হল।“মার্কিন কারাগারে ৮৬ বছর কারাদন্ড ভোগরত পাকিস্তানি বিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।তা ছাড়া যৌন নির্যাতনে তিনি গর্ভবতীও হয়েছেন বলে তার বোন ফৌজিয়া সিদ্দিকী অভিযোগ করেছেন।দ্যা নিউজ ট্রাইবের সাথে আলাপকালে ফৌজিয়া বলেন তিনি হাউস্টনের পাকিস্তানী কনসাল জেনারেলের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন স্বাস্থ্য পরিক্ষায় আফিয়ার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। তিনি আরো বলেন, আগে খবর পাওয়া গিয়েছিল, বন্দীথাকাকালে যৌন নির্যাতনের কারনে তিনি গর্ভবতী হয়েছিলেন।

কারাগারে বন্দী ডঃ আফিয়া সিদ্দীকা থেকে প্রেরিত চিঠি।

”হে আমার ঘুমন্ত/মৃত জাতি”

আমার নাম ড. আফিয়া সিদ্দিকি ,আমি Massachusetts Institute of Technology (USA) থেকে লেখাপড়া শেষ করেছি্ এবং আমার তিনটি বাচ্চা আছে।আমার উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের সহায়তায় অর্জিত আমার উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে আমার জাতিকে সাহায্য করা। আমাকে অপহরন করা হয় আমার নিজের দেশ[পাকিস্তান] থেকে আমার দেশের তথাকথিত মুসলিম নামধারি মুরতাদ সেনাবাহিনীর দ্বারা এবং আমায় বিক্রি করে দেয়া হয় আমেরিকার কাছে।

এরপর তারা আমার উপর চালায় পাশবিক অত্যাচার। আমাকে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করা হয়, আঘাত করা হয় এবং ধর্ষন করা হয়, একের পর এক। আমার কয়েদী নম্বর দেয়া হয়েছে ৬৫০। আমিএখন মুসলিম দেশ আফগানেস্তান এর কারাগার থেকে আমার বন্দী জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে দুয়া করি আমার ভাই সেই মুহাম্মদ বিন কাশিমের জন্য।

আমি সারা বিশ্বের জনসংখার এক পঞ্চমাংশ জনসংখার মুসলিমদের বোন। ইসলামের শুরু থেকেই আমার জাতি ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত তাদের ভাইদেরকে হেফাযত করার জন্য এবং শত্রুর কবল থেকে তাদেরকে রক্ষা করার জন্য।

হাযরত উমার[রা] বলেছিলেন যে,”যদি কোন কুকুর ফুরাত নদীর ধারে মরে থাকে,তাহলে শেষ বিচারের দিন উমর সেই কুকুরের মৃত্যুর জন্য আল্লাহ’র নিকট দায়ী থাকবে।।” এই মুহূর্তে আমি নিজে নিজে হাটতে পারিনা।

আমার একটি কিডনি বের করে ফেলা হয়েছে, আমার বুকে গুলিবিদ্ধ করা হয়েছে এবং আমার বুকে গুলির আঘাত রয়েছে। আমার জন্য সব ধরনের মেডিক্যাল এবং বৈধ ও সাধারন সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাখান করা হয়েছে এবং এটা নিশ্চীত নয় যে আমি বেচে থাকব না মরে যাবো। আমি তোমাদের জন্য বোন হওয়ার যে মর্যাদা তার রদ চাই।আমি একজন গর্বিত মুসলিম,হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর অনুসারি, হযরত আবু বক্কর[রা], উমার[রা] , উসমান[রা], আলি[রা], এবং তার সকল সাহাবী ও তার সকল সঠিক ও সত্যপন্থী অনুসারীদের কণ্যা।

আমি তোমাদের বোন হতে চাই না। আমার নবী (সাঃ)এবং হযরত আবু বক্কর[রা], উমার[রা] , উসমান [রা], আলি[রা], এবং তার সকল সাহাবী ও তার সকল সঠিক ও সত্যপন্থী অনুসারীরাই আমার উদ্ধারকারী এবং আমি আল্লাহর করুণাও সাহায্য চাই, তোমাদের কাছে নয়। আমি কোনো পাকিস্তানি হতে চাই না যাদের রয়েছে ৬ লক্ষ সৈন্যবাহিনী, বিশেষ ফোর্স এস,এস,জি কিন্তু তারা আমাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আমাকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতিদিয়েছিল কিন্তু যখন আমি সাহায্যের জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলাম তখন তারা আমাকেপ্রত্যাখান করল। আমার সেই মুসলিম উম্মাহ বলে ডাকা লোকদেররয়েছে লক্ষ লক্ষ সৈন্যবাহিনী সব ধরনের টাঙ্ক,বন্দুক,জঙ্গি বিমান,সাবমেরিন কিন্তু তারা এখন পর্যন্তআমাকে উদ্ধার করতে এবং বাচাতে পারেনি।

কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাব দেয়ার ব্যাপারে তোমাদের চিন্তার কিছু নেই কারন তোমাদেরকে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নও করা হবে না এবং তোমাদেরকে কোনো উত্তরও দেয়া লাগবেনা এজন্য যে তোমরা কেউ মুসলিম হিসাবে আমার ভাই নও, এবং ইসলাম ধর্মের জন্য ও ইসলামের অন্তর্ভুক্তির জন্য আমার ভাই নও।তোমরা কেউ আরব, কেউ ইরানী, কেউ ফিলিস্তীনি কেউ আফ্রিকান, কেউ পাকিস্তানি, কেউ বাংলাদেশী, কেউ আফ্রিকান, কেউ মালোয়শিয়ান কেউ ইন্দোনেশিয়ান, কেউ দক্ষিন এশীয় হতে পারো, তবে তোমরা কেউ মুসলিম নও। আমার কথায় যদিতোমরা আঘাত পেয়ে থাক তাহলে আমি খুবই দুঃখিত কিন্তু তোমরা কেউ এটা চিন্তাও করতে পারবে না যে, আমি কী ধরনের, এবং কেমন আঘাতপ্রা্প্ত। [ড.আফিয়া সিদ্দিকি……]

চিঠিটি পাবেন এখানেঃ

হে বোন আমরা আপনার অধম মুসলিম ভাই। যদি সত্যিকারের মুসলিম ভাই হয়ে থাকতাম তাহলে পশ্চিমাদের দেয়া হারাম বিনোদনে ডুবে থাকতাম না। গান,মুভি ইত্যাদি হারাম বিনোদনে ডুবে থেকে আপনাদের কুরবানিকে ছোট করতাম না। তাদের কবর রচিত করে আপনাদের মুক্তির ব্যবস্থা করতাম। মাফ করে দিয়েন আমাদের। হেরে গেলাম দুর্বল ঈমানের কাছে।
ইয়া আল্লাহ্‌ এই বোনকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়ে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করুন। আর যদি মুক্তি না হয়ে থাকে তাহলে জালিমদের অত্যাচার থেকে তাকে চিরমুক্তি দিয়ে শহিদ হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন। আমিন। আমিন।

মা দিবসে পাকিস্তানের টিভি প্রোগ্রামে হাজির হন আফিয়া সিদ্দিকির ছেলে ও মেয়ে।

মহান আল্লাহ্‌ এই সন্তান ২জনকে বড় হওয়ার এবং মায়ের দেখানো পথে চলার তাওফিক দান করুন।

কে এই আফিফা সিদ্দিকী

দুই শত্রুদল পরস্পর হাত মিলিয়েছে এবং একটি শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এরপর চার দিক থেকে ‘মোবারক হো, মোবারক হো’ আওয়াজ আসতে শুরু করেছে। এ আওয়াজগুলোর আড়ালে ফোঁপানো কান্না শুনতে পাই। আমি ওই কান্না গভীরভাবে শোনার চেষ্টা করেছি। দূর-বহু দূর থেকে ভেসে আসা ফোঁপানো কান্নাকে আমরা অলীক কল্পনা ভেবে উপেক্ষা করার চেষ্টা করি। কিন্তু এটা অলীক কল্পনা ছিল না। এটা এক নারীর আওয়াজ, যিনি বেদনাভরা ভঙ্গিতে কেঁদে কেঁদে জিজ্ঞাসা করছিলেন, এই আমেরিকা, এই ব্রিটেন, এই জাতিসঙ্ঘ, এই সভ্য পৃথিবী- এরা সবাই তো তালেবানকে ‘সন্ত্রাসী’ বলত। এরপর ওই ‘সন্ত্রাসী’দের সাথে শান্তি আলোচনাও হয়েছে। অবশেষে দোহায় তাদের সাথে শান্তিচুক্তিও হয়ে গেল। যদি তারা সন্ত্রাসী না হয়, তাহলে আমার অপরাধ কী? আমার বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসের অভিযোগ আনা হয়েছিল। আপনারা সবাই আরো বলেছিলেন, তালেবানের সাথে যোগ দিয়ে আমেরিকানদের ওপর হামলার পরিকল্পনা আঁটছিলাম। এখন ওই তালেবানদের জিজ্ঞাসা করুন, আমি কবে ও কোথায় তাদের সাথে যোগ দিয়ে হামলার পরিকল্পনা করেছি?

গভীরভাবে লক্ষ করে দেখি, এটা ড. আফিয়া সিদ্দিকীর আওয়াজ। আমার মাথা জোরে ঝাঁকি দিলাম। দোহায় আফগান তালেবানের প্রতিনিধি মোল্লা আবদুল গনি ব্রাদার ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধি জালমে খলিলজাদের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এ দৃশ্য দেখে একে অপরকে মোবারকবাদ জানাচ্ছিল। আর আমার কানে ড. আফিয়া সিদ্দিকীর আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছিল, যিনি দোহা থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে আমেরিকার একটি কারাগারে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তিনি শুধু একজন নারী নন, বরং তিনি একটি ট্র্যাজেডি। আপনার অন্তর যদি এখনো জীবিত থাকে, তাহলে ওই ট্র্যাজেডির ফোঁপানো কান্না আপনিও শুনতে পাবেন। আপনিও গভীরভাবে ওই ফোঁপানো কান্না শুনুন। ড. আফিয়া সিদ্দিকী আপনার কাছে জানতে চাচ্ছেন- হে আমার প্রিয় পাকিস্তানের জনগণ! আজ তোমরা বিশ্বকে বেশ গৌরবের সাথে বলছ, যদি পাকিস্তান সহায়তা না করত, তাহলে আমেরিকা ও আফগান তালেবানের মধ্যে শান্তিচুক্তি কখনোই হতো না। আচ্ছা, আমাকে একটু বলো তো, ওই চুক্তির অধীনে আমেরিকা ও আফগান সরকার পাঁচ হাজার আফগান তালেবান বন্দীকে মুক্তি দেবে এবং তালেবান এক হাজার প্রতিপক্ষ বন্দীকে মুক্তি দেবে; এ সবকিছুর মধ্যে পাকিস্তান সরকার কি তার জাতির এক কন্যার মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারত না? যারা তালেবানের সাথে হাত মিলাল এবং তাদের সাথে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষরও করল, তাদের কাছে ড. আফিয়া সিদ্দিকী এখনো ‘সন্ত্রাসী’ কেন?

ড. আফিয়া সিদ্দিকীর সাথে আমার কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। তবে ২৯ ফেব্র“য়ারি, ২০২০ সালে দোহায় তালেবান ও আমেরিকার মধ্যে শান্তিচুক্তির পর কয়েকজন পাকিস্তানি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, ড. আফিয়া সিদ্দিকী কবে মুক্তি পাচ্ছেন? আমি পড়েছি বিপাকে। আমাকে নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানি ছাত্রী মালালা ইউসুফজাইয়ের সমর্থকও মনে করা হয়, যার ওপর পাকিস্তানের তালেবান সোয়াতে হামলা করেছিল। আমাকে ড. আফিয়া সিদ্দিকীর হিতাকাক্সক্ষীও বলা হয়, যাকে আমেরিকা ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করেছে। সম্ভবত এর কারণ হচ্ছে, ২০০৩ সালে ইমরান খান প্রথম ব্যক্তি, যিনি জিও নিউজে আমার প্রোগ্রাম ক্যাপিটাল টকে ড. আফিয়া সিদ্দিকীর অপহরণ নিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল সালেহ হায়াতের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। ওই টিভি প্রোগ্রামে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আফিয়া সিদ্দিকীকে একজন ‘ভয়ঙ্কর নারী’ আখ্যা দেন। এতে স্পষ্ট হয় যে, এ নারী আমাদের সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন।

এরপর ইমরান খান বারবার আফিয়া সিদ্দিকীর জন্য সোচ্চার হলেন, কিন্তু তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। আফিয়ার ব্যাপারে মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠনগুলো বেশি সোচ্চার হয়নি। কেননা জেনারেল পারভেজ মোশাররফের ‘উদারমনা সরকার’ নিজেদের অনেক অপরাধকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ আখ্যায়িত করে দেশের মানুষকে বোকা বানাত। আফিয়ার ব্যাপারে এ প্রোপাগান্ডা করা হয়েছে যে, তিনি তো পাকিস্তানের নাগরিকই নন, তিনি আমেরিকার নাগরিক। এরপর আফিয়ার মাতা ইসমত সিদ্দিকী আমাকে করাচিতে তার বাসায় ডেকে নিয়ে কন্যার পাকিস্তানি পাসপোর্ট দেখান, যেখানে আমেরিকার ভিসা লাগানো ছিল। এ দাবিটি মিথ্যা প্রমাণিত হলো যে, ড. আফিয়া সিদ্দিকী মার্কিন নাগরিক ছিলেন। এ কথাও বলা হয়েছে, আফিয়া তার সাবেক স্বামী আমজাদকে তালাক দিয়ে আলকায়েদার কোনো সন্ত্রাসীকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু এ অভিযোগও কখনো প্রমাণিত হয়নি। ড. আফিয়া সিদ্দিকীর সঙ্কটময় জীবনের সূচনা ২০০২ সালের অক্টোবরে, তার স্বামীর সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর। তার সাবেক স্বামীর দাবি, তিনি ২০০৩ সালে গ্রেফতার হননি, বরং তিনি নিজেই গায়েব হয়ে গিয়েছিলেন। অথচ ৩০ মার্চ, ২০০৩ সালে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা লোকজন তাকে করাচি থেকে গ্রেফতার করেছিল। বহু মানুষ এ গ্রেফতারি চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছে এবং পরের দিন এ সংবাদ করাচির কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশও করা হয়। ইসমত সিদ্দিকী যাদের মাধ্যমে তার কন্যার মুক্তির জন্য চেষ্টা করেন, তাদের মধ্যে তৎকালীন সিনেট চেয়ারম্যান মিয়া মুহাম্মদ সুমরুও শামিল আছেন, যিনি বলেছিলেন, ‘অল্প দিনের মধ্যেই আফিয়াকে ছেড়ে দেয়া হবে।’ তবে এরপর তার গুম হয়ে যাওয়াটা এক রহস্যে পরিণত হয়।

এটা শুধু একজন আফিয়ার কাহিনী নয়। মোশাররফের শাসনামলে আলী আসগর বাঙ্গুলজাই ও জারিনা মারিসহ অসংখ্য মানুষের গুম হওয়াটা রহস্যই থেকে গেল। আজ পর্যন্ত তাদের বেশির ভাগের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আফিয়ার কাহিনী নতুন মোড় নেয় ২০০৮ সালের জুলাইয়ে। মোশাররফের ক্ষমতা শেষ হওয়ার মাত্র এক মাস আগে মার্কিন সরকার দাবি করে, আফিয়াকে আফগানিস্তানের গজনি শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওখানে তিনি তালেবানের সাথে মিলে হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। আফিয়াকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। ২০১০ সালে আফিয়ার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করে অভিযোগ দেয়া হয়, তিনি এক মার্কিন সেনার কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে তার ওপর গুলি চালিয়েছেন, তবে ওই সেনা বেঁচে যান। আফিয়ার বিরুদ্ধে নতুন সাক্ষীও উপস্থিত করা হলো। তন্মধ্যে একজন আফগান নাগরিক আহমদ গুলও ছিলেন। তবে কোনো রাইফেলেই আফিয়ার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেল না। ১৪ দিনের ট্রায়াল চলাকালে আফিয়া বারবার বলেছেন, ‘তার ওপর মার্কিনিরা নির্যাতন চালিয়েছে।’ এ কারণে আদালতের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টির অভিযোগে তাকে আদালত থেকে বের করে দেয়া হয় এবং শুধু হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এ বন্দিদশা ৩০ আগস্ট, ২০৮৩ সালে শেষ হবে। আফিয়ার মুক্তির জন্য পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ২১ আগস্ট, ২০০৮ সালে প্রথম প্রস্তাব গৃহীত হয়। ওই সময় ইউসুফ রাজা গিলানি প্রধানমন্ত্রী ও শাহ মাহমুদ কুরাইশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। সিনেট যখন আফিয়ার মুক্তির জন্য ১৫ নভেম্বর, ২০১৮ সালে প্রস্তাব পাস করে, তখনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন শাহ মাহমুদ কুরাইশি। দোহাতে যখন শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়, তখনো সেখানে কুরাইশি সাহেব উপস্থিত ছিলেন। ইমরান খানকে চুক্তির কৃতিত্ব দেয়া হচ্ছিল। এই সেই ইমরান খান, যিনি ২০০৩ সালে সর্বপ্রথম আফিয়ার জন্য সোচ্চার হয়েছিলেন। আজ তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। আফিয়া কিছু দিন আগে কারাগারে হিউস্টনের পাকিস্তানের কনস্যুলেট জেনারেলকে ইমরান খানের নামে একটি পত্রও দিয়েছেন। জানা নেই, ওই পত্র খান সাহেব পর্যন্ত পৌঁছেছে কি না। কিন্তু আফিয়ার ফোঁপানো কান্না অনেক মানুষের কাছে পৌঁছেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করছেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো মানুষ হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবু আমাকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর যারা আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করে বেড়ায়, তাদের সাথে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়ে গেল। আমার অপরাধ কি শুধু এই যে, আমি একজন পাকিস্তানি?

পাকিস্তানের জাতীয় পত্রিকা দৈনিক জং ০২ মার্চ, ২০২০ সংখ্যা থেকে ভাষান্তর ইমতিয়াজ বিন মাহতাব [email protected]

লেখক : পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট, প্রেসিডেন্ট জি নিউজ নেটওয়ার্ক (জিএনএন)

2 thoughts on “আফিয়া সিদ্দিকী”

  1. ড.আফিয়া সিদ্দিকী নিঃসন্দেহে একজন প্রতিভাবান নারী। যিনি ইসলাম সমাজের মহিলাদের একজন অনুপ্রেরণার নাম,অথচ সেই আপু এভাবে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে এটা হতে পারে না। আপুকে হেপাজত করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবো,আর মুসলিম ভাইয়া এর সঠিক বিচার চেয়ে একটা আন্দোলনের ডাক দিবো,ইনশাআল্লাহ।
    আল্লাহ সুবহানাহুতাআ’লা, আপুকে আর একটু সময় ধৈর্য ধারণ করার মতো তৌফিক দান করুক। “আমিন”।

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!