নেজামে ইসলাম পার্টি

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, যার পূর্বনাম ছিলো জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি। বাংলাদেশের ও উপমাহদেশের একমাত্র প্রাচীনতম একটি ঐতিহ্যবাহী ইসলামী রাজনৈতিক দল।

 

নেজামে ইসলাম পার্টি
নেতা মাওলানা আবদুল লত‌িফ ন‌েজামী মাওলানা আবদু মাল‌েক হাল‌িম
প্রতিষ্ঠা ২০ মার্চ, ১৯৫২
সদর দপ্তর ৫১,৫১/এ, পুরানা পল্টন (৬ষ্ঠ তলা), রুম নং-৬০৮, ঢাকা-১০০০ ফ‌োন ০১৭১৫ ৩৪৭৮৩৭
মতাদর্শ ইসলামী শরিয়াহ
বাংলাদেশের রাজনীতি
রাজনৈতিক দল
নির্বাচন

 

প্রতিষ্ঠা


১৯৪৫ সালের ২৮ ও ২৯ অক্টোবর কলিকাতার মুহাম্মদ আলী পার্কে মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ সমর্থনে একটি উলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নিখিল ভারত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম’ নামে একটি নতুন সংগঠন। এই নতুন জমিয়ত পাকিস্তান প্রশ্নে মুসলিম লীগের পক্ষ নেয়।

কিন্তু দেশভাগের পর মুসলীম লীগ নেতৃবৃন্দের ওয়াদা ভঙ্গের ফলে নবগঠিত পাকিস্তানে ‘নেজামে ইসলাম‘ তথা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সুদূর পরাহত দেখে তারা নিরাশ হয়ে পড়েন। এক প্রকার প্রতারিত হয়েই ১৯৫২ সালে নিখিল ভারত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতৃবৃন্দ মুসলিম লীগের সঙ্গ ত্যাগ করে ‘নেজামে ইসলাম পাটি‘ নামে পৃথক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এই লক্ষ্যে ‘৫২ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার হয়বতনগরে দলটির কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনেই মাওলানা আতহার আলী (রহ.) কে সভাপতি, মাওলানা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দিন (রহ.) কে সাধারণ সম্পাদক এবং মাওলানা আশরাফ আলী ধর্মন্ডলীকে সহকারী সম্পাদক নির্বাচিত করে ‘নেজামে ইসলাম পার্টি’র কার্যক্রম শুরু হয়।

যেকোন মূল্যে পাকিস্তানে নেজামে ইসলাম তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে এই পার্টির প্রধান লক্ষ্য হিসেবে স্থির করা হয়। মুসলিম লীগের তুলনায় এই দলের নেতৃতে বড় বড় উলামা থাকায় অল্পদিনেই নেজামে ইসলাম পার্টি একটি শক্তিশালী বৃহৎ দলে পরিণত হয়।

১৯৫৪ সালের জাতীয় নির্বাচন


১৯৫৪ সালে নেজামে ইসলাম পার্টি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। এই নির্বাচনে তাদের এককালের পৃষ্ঠপোষক ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে অপরাপর বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়। এই ফ্রন্টে নেজামে ইসলাম পার্টি ছাড়া আরও যে সব দল ছিল সেগুলো হলো আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক লীগ ও কৃষক শ্রমিক পার্টি।

যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক ছিল ‘নৌকা’। যা বর্তমানে আওয়ামী লীগের পরিচয় চিহ্নে পরিণত হয়েছে। ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২১-দফা দাবি সম্বলিত একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। এর ভূমিকায় বলা হয় : ‘কুরআন ও সুন্নাহ-বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না।’

যুক্তফ্রন্ট সরকারে নেজামে ইসলাম পার্টি অংশ নেয় এবং মন্ত্রিত্ব লাভের সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারনী ভূমিকা পালন করে। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে দলটির ৩৬ জন নেতা নির্বাচিত হন।

জাতীয় পরিষদে সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন দলীয় সভাপতি মাওলানা আতহার আলী (রহ.), এডভোকেট মৌলভী ফরিদ ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রী। প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকার ছিলেন আব্দুল ওহাব খান। এছাড়া আইন, ভূমি ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ও ছিল নেজামে ইসলাম পার্টির মন্ত্রীদের দায়িত্বে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মুহাম্মদ আলী পরবর্তীতে নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগ দিলে তাকে দলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়।

নেজামে ইসলামের উত্থান, পতন ও পাক-বাংলার রাজনীতি


নেজামে ইসলাম পার্টি। পাক, ভারত ও বাংলার রাজনীতির একটি আলোচিত অধ্যায়ের নাম। ইসলামি রাজনীতির প্রতিনিধিত্বকারী মূল সংগঠন ছিলো এক সময়। ঐক্যমতের ভিত্তিতে পাকিস্তানের শাসনেও অংশিদারীত্ব ছিলো তাদের। এক সময় সংসদে মন্ত্রীসভায় গড়ে ওঠে তাদের প্রভাব। প্রভাব বিস্তার করেছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা ও মওলানা ভাসানীর মত জাতীয় নেতাদের উপরও। শায়েখগত বিভেদ থেকে শুরু হয় ভাঙ্গন। জন্ম নেয় আলাদা সংগঠন। পাকিস্তান আমলেই হারিয়ে ফেলে জৌলুশ। বাংলার আমলে হারান রাজনৈতিক অধিকার। একসময় রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেলেও আর ঘুরে দাড়াতে পারেনি। এখন তো নেজামে ইসলাম পার্টি একটি প্যাড সর্বস্ব দলে রূপ নিয়েছে।

নেজামে ইসলামের পূর্বনাম ছিলো ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি‘ মানে ভারতবর্ষের সময়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের রাজনৈতিক সেল হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর নেজামে ইসলামের সৃষ্টি। এটিই বাংলাদেশের ও উপমাহদেশের একমাত্র প্রাচীনতম একটি ঐতিহ্যবাহী ইসলামী রাজনৈতিক দল।

১৯৪৫ সালের ২৮ ও ২৯ অক্টোবর কলিকাতার মুহাম্মদ আলী পার্কে মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ সমর্থনে একটি উলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নিখিল ভারত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম’ নামে একটি নতুন সংগঠন। এই নতুন জমিয়ত পাকিস্তান প্রশ্নে মুসলিম লীগের পক্ষ নেয়। ব্রিটিশ শাসনামলে পাকিস্তান গঠনের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। পাকিস্তানে যোগ দেয়ার প্রশ্নে অনুষ্ঠিত সিলেট গণভোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তারা। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের এই ভূমিকার জন্য ভোটের ফলে আসাম থেকে সিলেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে যোগ দেয়।

দেশভাগের পর মুসলীম লীগ নেতৃবৃন্দের ওয়াদা ভঙ্গের ফলে নবগঠিত পাকিস্তানে ‘নেজামে ইসলাম’ তথা ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সুদূর পরাহত দেখে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতৃবৃন্দ নিরাশ হয়ে পড়েন। এক প্রকার প্রতারিত হয়েই ১৯৫২ সালে নিখিল ভারত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতৃবৃন্দ মুসলিম লীগের সঙ্গ ত্যাগ করে ‘নেজামে ইসলাম পাটি’ নামে পৃথক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এসময়ে মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী’র (রহ.) জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পাকিস্তানের অনুসারী আলেমরাও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে সম্পৃক্ত হন।

নেজামে ইসলামের প্রচেষ্টায় ‘১৯৫২ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার হযরত নগরে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনেই মাওলানা আতহার আলী (রহ.) কে সভাপতি, চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ ইসহাক (রহ.) কে সহ সভাপতি, মাওলানা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক এবং মাওলানা আশরাফ আলী ধর্মন্ডলীকে সহকারী সম্পাদক নির্বাচিত করে ‘নেজামে ইসলাম পার্টি’র কার্যক্রম শুরু হয়। যে কোন মূল্যে পাকিস্তানে নেজামে ইসলাম তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে এই পার্টির প্রধান লক্ষ্য হিসেবে স্থির করা হয়।

মুসলিম লীগের তুলনায় এই দলের নেতৃত্বে বিজ্ঞ ও শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম থাকায় অল্প দিনেই নেজামে ইসলাম পার্টি একটি শক্তিশালী বৃহৎ দলে পরিণত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে নেজামে ইসলামের রাজনীতির প্রভাব বেশি বিস্তার লাভ করে। মুসলিম লীগের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে মওলানা ভাসানী আওয়ামী মুসলিম লীগের, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক কৃষক শ্রমিক পার্টি গড়ে তুলেন। এগুলোও পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এমন সময়েই ১৯৫৪ সালের জাতীয় নির্বাচন চলে আসে। মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে তখনই প্রথম রাজনৈতিক জোটের জন্ম হয় যুক্তফ্রন্ট নামে।

১৯৫৪ সালে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল নেজামে ইসলাম পার্টি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। এই নির্বাচনে তাদের এককালের পৃষ্ঠপোষক ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে অপরাপর বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচন করা হয়। এই ফ্রন্টে নেজামে ইসলাম পার্টি সাথে ঐক্য করে ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক লীগ ও কৃষক শ্রমিক পার্টি। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগের দলীয় প্রতিক ‘নৌকা’। যা বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিচয়চিহ্নে পরিণত হয়েছে। ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২১-দফা দাবি সম্বলিত একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। এর ভূমিকায় বলা হয় : ‘কুরআন ও সুন্নাহ-বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না।’

ইতিহাসের পাতা থেকে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন থেকে নেজামে ইসলামের নাম কৌশলে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ যুক্তফ্রন্টে নেজামে ইসলামের রাজনীতির প্রভাব ছিল বিস্তর। যখন যুক্তফ্রন্টের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছিল তখন নেজামে ইসলামের সভাপতি মাওলানা আতহার আলী রহ. এর প্রস্তাব ছিল যুক্তফ্রন্ট থেকে কোন কমিউনিস্ট ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। যুক্ত্রফ্রন্টের অন্যতম শরিক নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আতাহার আলী রহ. ১২ জনের তালিকা দিয়ে বলেলেন_এরা বর্ণচোরা কমিউনিস্ট, এদের মনোনয়ন দেয়া যাবে না। আবার এই বারোজন রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। বলাই বাহুল্য নেজামে ইসলাম পার্টির অভিযোগ মিথ্যা ছিলো না। তাঁরা সকলেই গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন এবং এটা শহীদ সোহরাওয়ার্দীও খুব ভালোভাবেই জানতেন।

সোহরাওয়ার্দী এগিয়ে এলেন উদ্ধার করতে, তিনি বললেন, আমি বিলেতে কমিউনিস্ট দেখেছি, আমি কমিউনিস্ট চিনি_কমিউনিজম বুঝি। ‘এ মুসলিম ক্যান নেভার বি এ কমিউনিস্ট (একজন মুসলমান কখনো কমিউনিস্ট হতে পারেনা), এট মোস্ট দে ক্যান বি কল্ড লালমিয়া (তাঁরা বড় জোর লালমিয়া হতে পারে, যারা মুখেই কেবল কমিউনিস্ট বুলি আওড়ায়)’।

যাই হোক শেষ পর্যন্ত মাওলানা আতাহার আলীর তালিকা ১২ থেকে কমে মাত্র একজনে এল। তিনি হাজি দানেশকে কিছুতেই নমিনেশন দেবেন না। সোহরাওয়ার্দী আর আতাহার আলী নমিনেশন বোর্ডে বসেছেন। হাজী দানেশ ঢুকবেন। আগেই সোহরাওয়ার্দী তাঁর প্রিয় শিষ্য শেখ মুজিবকে বলে দিয়েছেন হাজী দানেশকে যেন ভালো করে ব্রিফ করে দেয়া হয়। হাজী দানেশ ঢুকলেন রুমে, টুপি দাঁড়ি নিয়ে, ঢুকেই লম্বা করে বলে উঠলেন, “আচ্ছালামু আলাইকুম”। সোহরাওয়ার্দি বলে উঠলেন, দেখেন মাওলানা সাহেব, কমিউনিস্টদের মুখে দাড়ি আর মাথায় টুপি থাকে? ওরা কখনো, “আচ্ছালামু আলাইকুম” বলে? ওরা বলে “লাল সালাম”। মাওলানা আতাহার সাহেব মাথা নাড়েন, তিনি বলেন, না স্যার, আপনি জানেন না, সে পাক্কা কমিউনিস্ট আমার কাছে খবর আছে। সোহরাওয়ার্দী বলেন, আরে দেখেন তাঁর দাঁড়ি আছে টুপি আছে। মাওলানা সাহেব ছাড়বেন কেন? তিনিও বলেন, মার্ক্স-লেনিনেরও টুপি দাঁড়ি দুটাই ছিল স্যার, আপনি তো জানেন। এবার বিরস বদনে সোহরাওয়ার্দী প্রশ্ন করলেন। হাজী সাহেব, নমিনেশন দিলে পাশ করবেন তো? হাজী সাহেব ঘর কাপিয়ে উত্তর দিলেন, ইনশাল্লাহ স্যার পাশ করবো। এইবার সোহরাওয়ার্দী লাফিয়ে উঠলেন, এই দেখেন মাওলানা সাহেব, “একজন কমিউনিস্ট কখনো আল্লাহ বলতে পারে না। কমিউনিস্ট আল্লাহ বললে সে কমিউনিস্ট থাকে না। যান, হাজী সাহেব আপনাকে নমিনেশন দেয়া হলো”

প্রার্থী চুড়ান্ত করে শুরু হলে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রচারণা। জনসভা গুলোতে নেমে এসেছিল সর্বস্তরের জনগণের ঢল। মুসলিম লীগের বিপর্যয় ঘটিয়ে যুক্তফ্রন্ট অল পাকিস্তানে সরকার গঠন করলো।

যুক্তফ্রন্ট সরকারে নেজামে ইসলাম পার্টি অংশ নেয় এবং মন্ত্রীত্ব লাভের সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারনী ভূমিকা পালন করে। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে দলটির ৩৬ জন নেতা নির্বাচিত হন।

জাতীয় পরিষদে সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন দলীয় সভাপতি মাওলানা আতহার আলী (রহ.)। এডভোকেট মৌলভী ফরিদ ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী। প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকার ছিলেন আবদুল ওহাব খান। এছাড়া আইন, ভূমি ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ও ছিল নেজামে ইসলাম পার্টির মন্ত্রীদের দায়িত্বে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মুহাম্মদ আলী পরবর্তীতে নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগ দিলে তাকে দলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। যে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিয়ে লড়াই করেছিল ওলামা ও তৌহিদী জনতা সে মলিন স্বপ্নে নেজামে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সরকারে থাকার কারণে প্রাণ লাভ করে।

ঘটনা ক্রমে ১৯৫৬ সালের কাউন্সিলে পশ্চিম পাকিস্তানে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতৃত্ব চলে যায় সাবেক জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সমর্থক ব্যক্তিবর্গের হাতে। আর পূর্ব পাকিস্তানে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতৃত্ব ছিল পাকিস্তান সমর্থক আলেমদের হাতে। মাওলানা আতহার আলীর রহ. নেতৃত্বে তারা পূর্ব পাকিস্তানে নেযামে ইসলাম নামে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কর্ম তৎপরতা অব্যাহত রাখেন। এভাবেই পাকিস্তানের দুই ভূখণ্ডে দুই দর্শনে বিশ্বাসী দুই দল আলেমের নেতৃত্বে একই নামে জমিয়তে উলামার রাজনৈতিক ও অন্যান্য কার্যক্রম চলতে থাকে। কিন্তু দিনে দিনে মাদানী আর থানবীর শিষ্যদের দূরত্ব প্রকাশ্যে আসে।

১৯৬৪ সালের নির্বচনে অরাজনৈতিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম তাদের রাজনৈতিক দলের প্রার্থী কে সমর্থন না করে সরাসরি রাজনৈতিক ভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী দেন। এবং নির্বাচনের পর জমিয়তে উলামার কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ব পাকিস্তানে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করেন।

 

Leave a Comment

error: Content is protected !!