পানি ও যৌন হয়রানি

পানি ও যৌন হয়রানি। রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে পানির যে বেশ একটা সংকট রয়েছে, তা প্রায় সময়ই খবরের শিরোনাম হচ্ছে। তবে পানির সংকটের নেপথ্যে অন্য একটি ঘটনাও ঘটছে রাজধানীর কড়াইল ও রসুলপুর এলাকার বস্তিতে।

বেসরকারি সংস্থা ডরপের এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে বস্তির ৫ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। আজকের পত্রিকাকে ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী ব্যাপারটি নিশ্চিতও করেছেন।

সমীক্ষার তথ্যমতে, সাধারণত যেসব নারী দরিদ্র, নিরক্ষর বা যাঁদের বাড়িতে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই, হয়রানির শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেশি তাঁদেরই। সমীক্ষায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা যৌন হয়রানির শিকার বলে নিজেদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ক্ষেত্রে তখনই কোনো ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবে, যখন তারা অভিযোগ পাবে। ভুক্তভোগী নারীরা সহজে অভিযোগ করতে চান না প্রথমত, লজ্জায় এবং দ্বিতীয়ত, হয়রানির ভয়ে। অভিযোগ করলে তাঁদেরই সামাজিকভাবে দোষারোপ করা হয়। যৌন হয়রানি ছাড়াও একজন অভিযোগ করেছেন, প্রতিদিন পানি সংগ্রহের সময় মারামারি করতে হয়। কারণ, পানি না পেলে বন্ধ হয়ে যায় রান্নাবান্না ও শৌচাগারের কাজ।

সমাজে বাস করতে গেলে মানুষ চায় ন্যূনতম নিরাপত্তা। একটি স্বাধীন দেশের শহর বা গ্রামে বসবাসকারী সব মানুষেরই নিশ্চিন্তে চলাচল করা এবং জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ পাওয়া সবারই সাংবিধানিক অধিকার। সামাজিক অবস্থানের কারণে নাগরিক অধিকারের কোনো হেরফের হতে পারে না। ধনী-গরিবের বিভাজন থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু যা প্রয়োজন, তা ছাড়া কারও জীবন চলে না। বলা হয়ে থাকে পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া এক দিনও মানুষের চলে না। অথচ জীবনের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনো নারীকে যদি যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে!

মানুষ কোথায় বাস করবে—বহুতল ভবনে না বস্তিতে—তা নির্ভর করে তার আয়-উপার্জনের ওপর। বহুতল ভবনে যাঁরা থাকেন, তাঁদের যেমন পানির প্রয়োজন, তেমনি বস্তিবাসীরও পানির দরকার। বস্তিতে থাকার কারণে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনো নারীকে কেন যৌন হয়রানির শিকার হতে হবে?

আমাদের সমাজে নারী নিগ্রহের ঘটনা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। গত অক্টোবর মাসেই দেশে ৩৬৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

মানুষের মধ্যে লোভ, স্বার্থপরতা ও লিপ্সা কেন প্রবল হয়ে উঠছে—তার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা বাড়াতে হবে। বদলাতে হবে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি।

কড়াইল ও রসুলপুর বস্তিতে পানি নিয়ে যে হাহাকার, তা যেমন দূর করতে হবে, তেমনি এই পানিকে কেন্দ্র করে যে দুর্বৃত্তরা নারী নির্যাতনের পথে হাঁটছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!