সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় প্রতিবন্ধী সোনিয়া

সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় প্রতিবন্ধী সোনিয়া। প্রতিবন্ধী সোনিয়ার দুটি পা নেই। তবু নিজেকে সে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।

সোনিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের উজানচরনওপাড়া গ্রামে। তার বাবা রইস উদ্দিন একজন প্রান্তিক কৃষক। অভাবের সংসারে চার বোন ও দুই ভাইয়ের মাঝে সোনিয়া তৃতীয়। বাবার সংসারে উপর্জনশীল অন্যকেউ নেই। তবু বাবা রইস উদ্দিন সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষে লেখা পড়া করাচ্ছেন। সোনিয়ার স্বপ্ন লেখা পড়া করে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে একটি সরকারী চাকুরি করবে।

তাই আগামী দিনে মানুষ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কারো উপর নির্ভরশীল না থেকে আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করে বড় হতে চায়। চলতি বছর উপজেলার আলিনগর কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি (বিএম) শাখায় মা-বাবার কোলে চড়ে পরিক্ষা কেন্দ্রে এসে পরিক্ষা দিয়েছে।

সোনিয়ার বাবা রইস উদ্দিন জানান, সংসারে একমাত্র উপর্জনশীল তিনি। অভাবের সংসারে স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারে ৮জন সদস্য। এর মাঝে বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে জুয়েল চলতিবছর উচাখিলা স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে। তার ছোট বোন তানিয়া আক্তার উচাখিলা কেরামতিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে দশম শ্রেণীতে ও সাকিবুল হাসান ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে লেখা পড়া করে। অপর ছোট মেয়ে মনিকা আক্তার উচাখিলা সিদ্দিকীয়া রউজাতুল কোরআন মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণীতে পড়া শুনা করছে। পরিবারের ভরন পোষণ দিয়ে শত অভাবের মাঝেও দিনমুজুরী করে সন্তানদের লেখা পড়া করাচ্ছেন।

সোনিয়ার বড় ভাই জুয়েল মিয়া জানান, মাত্র ৭ বছর বয়সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্রথমে পায়ে ব্যাথা অনুভূত হয় সোনিয়ার। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ডাক্তাদের দেখালে ব্যাথার ওষুধ দেয় কিছু দিন ভালো থাকার পর আবার ব্যাথা শুরু হলে পুনরায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পর সোনিয়াকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। সেখানে নেয়ার পর ডাক্তাররা হাড় ক্যান্সার বলে জানান। পরবর্তী সময়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা আর করানো সম্ভব হয় নি। এরপর থেকে পা দুটি নিস্তেজ হয়ে অচল হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে জীবনরক্ষার তাগিদে ডাক্তারের পরামর্শে দুটি পা-ই কেটে ফেলতে হয়েছে।

প্রতিবন্ধী সোনিয়া জানায়, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, সম্পদ- এমন মন মানসিকতা থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দুই ভাই ও চার বোনের বড় পরিবারে খরচ সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপর আমার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে করতে অনেকটা ক্লান্ত বাবা।

সোনিয়া আরো জানায়, একবার আমার কৃত্রিম পা সংযোজন করার জন্য কিছু টাকা জোগাড় করলেও বাকী টাকার জন্য পা লাগানো সম্ভব হয়নি। তবু বাবা থেমে না থেকে আমাকে লেখা পড়া চালিয়ে যেতে সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন। বাবা-মা আমাকে কলেজে নিয়ে আসতে কষ্ট হলেও আমার ভষিৎতের কথা চিন্তা করে মা-বাবা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমি আমার উন্নত চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!