প্রিয়তমার খোলা চিঠি

প্রিয়তমার খোলা চিঠি
প্রিয় রুদ্র,,
তুমি কেমন আছ?
আশা করি ভাল আছ। আমিও ভাল আছি। ভাল না থেকে কি করবো বলো, এক জীবন তো আর কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়া যায় না। এক জীবনে সময়ের সাথে অর্জিত দুঃখ কষ্ট মান অপমান, রাগ অভিমান অভিযোগ, পাওয়া না পাওয়া এত্ত কিছু মনে রেখে তো আর জীবনে চলে না?

আমিও ভুলে গেছি। তোমার দেওয়া, দুঃখ, কষ্ট, মান, অপমান। ভুলে গেছি অভিযোগ, অভিমান, ভুলে গেছি অবজ্ঞা, ঘৃণা, অবহেলা, ভুলে গেছি ভালবাসা। আচ্ছা রুদ্র, যে অবহেলা ভুলে যেতে পারে সে কি ভালবাসাও ভুলে যেতে পারে? আমার মনে হয় পারে। যে ভালবাসার মত স্বর্গীয় সুখ ভুলে যেতে পারে সে অবহেলার মত তুচ্ছ জিনিস ভুলে যেতে পারবে। পারে নাহ্! রুদ্র নিজের জিবনের সমস্ত সুখ, দুঃখ আনন্দ, বেদনা, পাওয়া না পাওয়া উৎসর্গ করে কাউকে নিঃস্বার্থ ভালবাসার মধ্যে চরম প্রশান্তি আছে। তুমি হয়তো বুঝবেনা।

যে কখনো কাউকে ভালইবাসেনি সে ভালবাসার গভীরতা বুঝবে কি করে। তোমার অবজ্ঞা, অবহেলা পেতে পেতে আমি হয়তো ভুলে যাব একদিন তোমাকে কি ভীষণ ভালটাই না বেসেছিলাম। কিন্তু তুমি কি কখনো ভুলে যেতে পারবে? একটা জীবনের বিপরীতে শুধু তোমার জন্য অবক্ষয় ভালবাসাই ছিলো।

রুদ্র পৃথিবীতে কোন অবিনশ্বরীয় বস্তু নেই যার সাথে আমার ভালবাসার তুলনা করতে পারি। এই যে এত্ত বড় হিমালয় পর্বত তাও তো গলে গলে নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে। এই যে মাথার উপর বিশাল আকাশ তাও তো বিলিন হয়ে যাবে অবশেষে। এই যে ধরিত্রী তাও তো চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে কোন একদিন, জগদীশ্বরের আদেশে। তবে কি ভালবাসা অবিনশ্বর, না নাকি বেদনা।

যে চরম ভাবে কাউকে ভালবেসে, ভালবাসার বিপরীতে অবহেলাই পেয়ে যায় হঠাৎ করে সেও একদিন ভালবাসতে ভুলে যায়। কিন্তু যে কারনে, অকারণে প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে অবহেলার বিপরীতে ভালবাসা পেয়ে যায় সে কখনো প্রাপ্তির খাতায় যুক্ত হওয়া ভালবাসাকে ভুলতে পারেনা। রুদ্র তুমিও পারবেনা।

রুদ্র বিগত কিছুদিন আগে তোমার চিঠি পেয়েছিলাম তুমি আমায় লিখেছিলে-শিরু, সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার শুরু করা যায় না? আচ্ছা রুদ্র নদী যে পথ পেরিয়ে বয়ে চলতে চলতে একসময় সমুদ্রের বুকে বিলিন হয়ে যায়, সেই বিলায়িত জল রাশি নিয়ে কি সে আর কখনো ফেলে আসা পুরানো পথে ফিরে আসতে পারে?

কখনোই না। আমার ভালবাসার বিনিময়ে অর্জিত অবজ্ঞা অবহেলা, দুঃখ, কষ্ট, পাওয়া না পাওয়া সকলি, সমুদ্রে পতিত হওয়া জলের মতই বিলিন হয়ে গিয়েছে। আমি তোমার জন্য না ভালবাসা পুষে রেখেছি, না ঘৃণা পুষে রেখেছি। এই ছোট্ট হৃদয়ে তোমার জন্য অশেষ করুণা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। কখনো ভেবে দেখেছো কতোটা দুঃখ পেলে আকাশ কাঁদে, কখনো ভেবে দেখেছো মানুষ কতটা ক্ষত বুকে পুষে আগ্নেয়গিরি মত জ্বলে পুড়ে মরে?

কতটা বেদনা পুষে রেখে, মানুষ দুঃখ লুকিয়ে হাসে। কতটা অভিমান নিয়ে মানুষ নদীর মত বয়ে চলতে চলতে নিজেকে বিলিন করে দেয় নিজেকে। রুদ্র তুমি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি অতটা মহৎ নই। আজ আর আমার আকাশের মত কাঁদবার, কিংবা, দুঃখ পুষে হাসবার ক্ষমতা নেই, অভিমান পুষে নদীর মত বয়ে চলবারও ক্ষমতা আমার আর নেই।

রুদ্র আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি বিস্তৃর্ণ সীমানার মত শূন্য, আমি পাহাড়ের মত একলা ভরদুপুরে ডাকতে থাকা ডাহুক পাখিটির মত নিঃস্বঙ্গতা নিয়ে গোধূলি লগ্ন পেরুবার পড়েই গভীর অন্ধকার ঘেরা শূন্যতায় নিজেকে সপে দেই। এই অন্ধকার আচ্ছন্ন জীবনে আর নিজেকে জড়াতে এসো না। রুদ্র, শেষ বিদায় বেলায় আমি শুধু অতটুকুই চাই তুমি ভাল থেকো রুদ্র।

ইতি
শিরিন শিলা

Leave a Comment

error: Content is protected !!