ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

ফাউমি মুরগি একটি প্রাচীন মিশরীয় মুরগির জাত। কয়েকশত বছর ধরে মিসরের বিখ্যাত নীল নদের আশেপাশের অঞ্চলে এরা পালিত হয়ে আসছে। এদের নামকরণ করা হয়েছে মিসরের ‘ফাইয়াম’ প্রদেশ থেকে। ফাইয়াম প্রদেশের দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের জলাভূমি ও এর আশেপাশে কাঁটাযুক্ত ঝোপঝাড় ফাউমি মুরগির আদি নিবাস। মিশরীয়রা এই খৃষ্টপূর্ব সাল থেকেই ফাউমি মুরগি পালন করে আসছে।

ফাওমি জাতের মুরগি সর্বপ্রথম ১৯৪০ সালে আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Iowa) এক অধ্যাপকের মাধ্যমে পশ্চিমে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকেই মূলত জাতটি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায়। আমাদের দেশে পাকিস্তান আমলে জাতটিকে সরকারি ভাবে পালনের জন্য সংরক্ষন করা হয়। পাকিস্তান থেকে নিয়ে আসার কারনে এরা মূলত মিশরীয় মুরগি হলেও অনেকের কাছে পাকিস্তানি মুরগি নামে পরিচিতি পায়।

ফাওমি মুরগি মূলত বন্য মুরগির একটি হাইব্রিড জাত। এটি গৃহপালিত অন্যন্য মুরগির সাথে প্রজনন ঘটায়। ধারণা করা হয়, মিশরের কাঁটাযুক্ত পাম (Palm বা খেজুর) বন এবং জলাভূমি থেকে (প্রায় 3,000 বছর আগে) এরা অভিযোজিত হয়েছে। ফাউমি মিশরে খুবই সাধারণ এবং জনপ্রিয় একটি মুরগি জাত হিসেবে বিবেচিত।

ফাউমি মুরগির বৈশিষ্ট্য

ফাওমি মুরগি আকারে ছোট, বড় ঘনকালো চোখ এবং উচু লেজ বিশিষ্ট। এদের এগিয়ে থাকা বুক, ঘাড় ও সোজা উঁচু লেজের কারনে রোডরানার পাখির ( কোকিল গোত্রের একটি দ্রুতগামী পাখি, যা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে মধ্য আমেরিকা পর্যন্ত শুষ্ক দেশে পাওয়া যায়) সাথে তুলনা করা হয়।

ফাঊমি হালকা জাতের মুরগি হিসেবে বিবেচিত। এদের নীলভ কালো পা, লালচে কানের লতি ও মাথায় একক মাঝারি ঝুঁটি বিদ্যমান। এদের কানের লতির মধ্যে সাদা সাদা স্পট দেখা যায়। ফাওমি মুরগির ত্বক নীলাভ কালো। এদের গলা ও ঘাড় সিলভার-সাদা রঙের পালকে ও কালো কালো ছোপে সারা শরীর ঢাকা।

ফাওমি ডিম দেয়া মুরগি জাত হিসেবে বিবেচিত। এরা ছোট আকারের সাদা রঙের ডিম দেয়। সাধারনত এদের কুচে হওয়ার প্রবণতা কম। তবে বয়স দুই বা তিন বছর হলে ডিমে তা দেয়ার প্রবনতা দেখা দিতে পারে।

ফাওমি মুরগি অবিশ্বাস্যভাবে রোগ প্রতিরোধী। সহজেই এরা রোগে আক্রান্ত হয়না। ফাওমি মারেক্স এবং অন্যান্য অনেক অসুস্থতার জন্য স্বাভাবিকভাবেই প্রতিরোধী বলে পরিচিত।

এদের ম্যাচুরিটি বেশ দ্রুতই আসে। মোরগগুলি অবিশ্বাস্যভাবে পাঁচ বা ছয় সপ্তাহের মধ্যেই ডাক দেয় এবং মুরগি সাড়ে ৪ বা ৫ মাসের মধ্যে ডিম দেয়া শুরু করে। গড়ে একটি মোরগ প্রায় ১.৮ কেজি ও একটি মুরগি ওজন প্রায় ১.৫ কেজি হয়। সিলভার পেন্সিল (Silver penciled) ফাওমি মুরগি সবচেয়ে পরিচিত এবং একমাত্র ফাউমির জাত।

আচরণ / মেজাজ

ফাউমি মুরগি উষ্ণ জলবায়ুতে বিশেষভাবে উপযুক্ত এবং এরা বেশ সক্রিয় শক্ত জাতের মুরগি। বেঁচে থাকার জন্য সামান্য খাদ্য প্রয়োজন।

ফাউমি মুরগি্র মধ্যে বন্য পাখির স্বভাব পরিলক্ষিত হয়। সাধারনত এদেরকে ধরা হলে, এরা বেশ রেগে যায়। এ কারণে এরা সবসময়ে পোষ মানা পছন্দ করেনা। এরা সম্পূর্ণরূপে পোষ মানেনা। যদিও এদেরকে বিভিন্ন উপায়ে পোষ মানিয়ে রাখা হয়। এরা প্রাণবন্ত এক মুরগির জাত। বেশ উড়াউড়ি করে এবং গাছ গাছালি পছন্দ করে । তাই যত্নের সাথে সীমানা বা বেড়া দেওয়া প্রয়োজন।

ফাউমি মুরগি সামান্য আগ্রাসী। তবে এরা বিশেষ আক্রমনাত্মক হয় না এবং মোরোগেরা একে অপরের প্রতি সহনশীল হয়। ডিম পাড়া মুরগি দিয়ে সাধারণত ডিমে তা দেয়না। কিন্তু বয়স দুই বা তিন বছর হলে ডিমে তা দেয়ার প্রবনতা দেখা দিতে পারে। এদের ডিম হিটিংয়ের জন্য ইনকুইবেশন দরকার।

নীচে ফাউমি মুরগির পূর্ণ প্রজনন তথ্য পর্যালোচনা করা হলো।

ফাউমি মুরগি | জাতের তথ্য বা প্রোফাইল

জাতের নাম : ফাউমি।
পালনের উদ্দ্যেশ্য : সোখিনভাবে(Ornamental),ডিমের উদ্দেশ্য ও সোনালির প্যারেন্ট স্টক তৈরিতে।
জাতের আচরণ : চঞ্চল, উড়াউড়ি , বন্ধুত্বপূর্ণ, কৌতুহলী ।
আকার : মাঝারি। সাধারণত ১.৪ থেকে ২.২ কেজি।
তা দেয়ার প্রবনতা : তেমন প্রবণতা নেই।
ঝুঁটি : মাঝারি একক লাল ঝুঁটি।
জলবায়ু সহনশীলতা : সব জলবায়ু তবে উষ্ণ জলবায়ুতে ভালো।
ডিম রঙ : হালকা ধূসর।
ডিমের আকার : ছোট।
ডিমউৎপাদনশীলতা : ভাল (প্রায় ২৬০ ডিম/বছর)।
বৈচিত্র্য :একটি জাতঃসিলভার পেন্সিল।
ফাউমি মুরগির তথ্য টেবিল

 

ভাল দিকঃ

  • দেখতে সুন্দর।
  • খুব সক্রিয় শিকার প্রতিরোধী (শিয়াল, কুকুর সহজে কিছু করতে পারেনা)।
  • প্রতিরক্ষামূলক কিন্তু আক্রমনাত্মক নয়।
  • প্রাণবন্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণ।
  • খুব ভালো রোগ প্রতিরোধী ও শক্ত জাতের ।
  • দ্রুত ম্যাচিউর হয়।
  • বেশ ভালো ডিম পাড়ে।
  • কম খাদ্য পয়োজন।
  • মাংস খুব সুস্বাদু ।
  • মোরগ ঝগড়া করেনা।

খারাপ দিকঃ

  • মাংস উৎপাদনের জন্য ভালো নয়।
  • আকারে ছোট ডিম দেয়।
  • আবদ্ধ পরিবেশ পছন্দ করেনা।
  • উড়াউড়ি করে।

কেন ফাউমি মুরগি পালন করবেন?

ফাউমি মুরগির জন্য আপনার জন্য উপোযুক্ত যদি আপনি……

  • সোনালি মুরগীর প্যারেন্ট স্টক করতে চান।
  • বেশ ডিম দেয়, এমন জাতের মুরগি পালতে চান।
  • ভালো রোগ-প্রতিরোধ সম্পন্য মুরগি পালতে চান।
  • কম খাদ্য ব্যবহার করে মুরগি পালতে চান।
  • সুন্দর শোভাবর্ধনের জন্য মুরগি পালতে চান।
  • গ্রাম্য পরিবেশে ভালো এমন মুরগি পালতে চান।
  • গরম আবহাওয়ায় উপযোগী মুরগি পালতে চান।

ফাউমি জাতের মুরগি পালন পদ্ধতি ও পরিচর্যা

সোনালী, ব্রয়লার ও লেয়ারের ভিড়ে আমাদের দেশ থেকে ফাউমি জাতের মুরগি হারিয়ে যেতে বসেছে। এই ফাউমি জাতের মুরগি এক সময় আমাদের দেশে দারিদ্র বিমচনে বিশাল ভুমিকা রেখেছিল। বর্তমানে ফাউমি জাতের মুরগি পাওয়া যায় না বললেই চলে। এই ফাউমি জাতের মুরগি টি আমাদের দেশের গ্রামীন পরিবেশের সাথে মানিয়ে গিয়েছিল।

তারপর ও আমরা এই জাতটিকে ধরে রাখতে পারছি না। আমাদের দেশের খামারিরা এক সময় ডিম উৎপাদনের জন্য এই জাতটি বাণিজ্যিক ভাবে পালন করতেন। এই জাতটি হারিয়ে যারার অন্যতম কারন হলো পর্যাপ্ত মুরগির বাচ্চা না পাওয়া কারণে খামারিদের মধ্য অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

আগে সরকারি মুরগির খামারে প্রচুর পাওয়া যেত কিন্তু এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের (বার্ড ফ্লু ) কারণে সরকারি খামারের মুরগি নিধন করা হয়েছে। তাই বাচ্চার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফাউমি জাতের মুরগিটি যদি আবার খামারিদের মধ্যে। ছড়িয়া দেয়া যায় তাহলে এই জাতটি আমাদের দেশে পল্লী অঞ্চলে দারিদ্র বিমোচনে বিশাল ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে এবং আমাদের দেশ থেকে এই জাতটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

উৎপত্তিঃ–  ফাউমি জাতের মোরগ-মুরগীর উৎপত্তিস্থল মিশর।

বৈশিষ্ট্য

১. পালকের রং কালো ও সাদা ফোটা ফোটা, ঘাড়ের পালক সাদা।
২. কানের লতি এবং গায়ের চামড়া সাদা।
৩. ডিমের খোসা সাদা।
৪. ডিমের খোসা সাদা।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।

উপযোগীতাঃ ডিম উৎপাদনকারী জাত হিসাবে পরিচিত এ জাত আমাদের দেশীয় আবহাওয়ায় পালনের উপযোগী। এদের বার্ষিক গড় ডিম উৎপাদন ১৫০- ২০০ টি।

এখন চলুন জেনে নেয়া যাক ফাউমি জাতের মোরগ-মুরগীর পালন সম্পর্কে 

ঘর তৈরি : মুরগির জন্য খোলামেলা ঘর হতে হবে। ১.৫ মিটার (৫ ফুট) লম্বা X ১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং ১ মিটার (৩.৫ ফুট) উঁচু ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের বেড়া বাঁশের তরজা বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে। এছাড়া মাটির দেয়ালও তৈরি করা যাবে। বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। ঘরের চাল খড়, টিন বা বাঁশের তরজার সাথে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। প্রতি ১০-১৫টি মুরগির জন্য এইরকম একটি করে ঘর তৈরী করতে হবে ।

খাবার : বাড়ির প্রতিদিনের বাড়তি বা বাসী খাদ্য যেমন ফেলে দেওয়া এঁটোভাত, তরকারি, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, ঘাস, লাতা পাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি মুরগি কুড়িয়ে খায়।

পরিচর্যা করা : ছেড়ে পালন পদ্ধতিতে মুরগি পরিচর্যার জন্য সময় বা লোকজনের তেমন দরকার পড়ে না। তারপরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে। সন্ধ্যায় মুরগি ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে। ঘরে উঠলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।

মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া ২.৫ সে.মি. (১ ইঞ্চি) পুরু করে বিছাতে হবে। পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। এ পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন করা গেলে প্রায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই ভাল একটা মুনাফা পাওয়া যাবে।

প্রতিবন্ধকতা ও সমাধান : মুরগি পালনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা রাণীক্ষেত রোগ, এ রোগের প্রচলিত নাম চুনা মল ত্যাগ। পাখি হা করে ঠোঁট তুলে শ্বাস নেয়। ঝিমুনী ও ধীরে ধীরে পক্ষাঘাত হয়। বড় মুরগির নাকে শব্দ হয়। ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত এই রোগটি মুরগির শ্বসনতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিশেষ আক্রমণ করে।

রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণ সমূহ;-

  • মুরগী খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
  • মাথা নিচু ও চোখ বন্ধ করে ঝিমাতে থাকে।
  • সাদা চুনের মত পাতলা মল ত্যাগ করে।
  • নাক দিয়ে সর্দি ও মুখ দিয়ে লালা ঝরে।
  • শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয় এবং হা করে নিঃশ্বাস নেয়।
  • ঘাড় বেঁকে যায়, কখনও কখনও একই স্থানে দাঁড়িয়ে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।
  • মুরগী দূর্বল হয়ে ঠোঁট ও বুক মাটিতে লাগিয়ে বসে পড়ে।

রাণীক্ষেত রোগের প্রতিরোধ ও চিকিতসা :

  • প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ এ রোগের হাত থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়।
  • রোগাক্রান্ত মোরগ-মুরগীর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য উচচক্ষমতা সম্পন্ন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • আক্রান্ত মুরগীকে অবশ্যই অন্যান্য মুরগীর সংস্পর্ষ থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। মরে যাওয়া মুরগী ২-৩ হাত মাটির নীচে পুঁতে ফেলতে হবে।

লেয়ার মুরগির বাচ্চা কোথায় পাওয়া যায়

ফাউমি মুরগির বাচ্চা বিক্রয়

Leave a Comment

error: Content is protected !!