বিসিএস পরীক্ষায় প্রশ্নবিদ্ধ ‘প্রশ্ন’

বিসিএস পরীক্ষায় প্রশ্নবিদ্ধ ‘প্রশ্ন’। ৪১তম বিসিএসের আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির লিখিত পরীক্ষায় ‘উসকানিমূলক’ ও ‘শিষ্টাচার’বহির্ভূত প্রশ্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

‘০০৭ কোডের’ এই প্রশ্নে ‘ইসলামোফোবিয়া’ নিয়ে যেমন লিখতে বলা হয়েছে তেমনি ভারতের আসামে অবৈধ বাংলাদেশি খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া নিয়েও বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়েছে।

অথচ অবৈধ বাংলাদেশি আছে কিনা- এ নিয়ে আসাম সরকার এখনো কোনো মন্তব্যই করেনি। একই সঙ্গে চীনের ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর মতো বিতর্কিত বিষয় নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়ে ১২ ডিসেম্বর শেষ হয়। গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) ‘আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির’ লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান ঘেঁটে দেখা গেছে, কোনো স্পর্শকাতর বিষয়ে, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে এমন বিষয়ে, কেউ ক্ষুব্ধ হতে পারে এমন বিষয়ে বা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাব পড়ে এমন বিষয় নিয়ে পরীক্ষায় প্রশ্ন প্রণয়ন করা যাবে না। তবু এবার পিএসসি বিসিএস পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন প্রণয়ন করে পরীক্ষা নিয়েছে। এতে অনেক পরীক্ষার্থীই মনে করছেন উত্তরপত্র মূল্যায়নে তারা ঠিকঠাক নম্বর পাবেন না।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন হওয়ার কথা নয়। তবু আমার কাছে বিষয়টি নিয়ে খটকা লাগছে। কেন এমন প্রশ্ন প্রণয়ন করা হলো- সে বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

পিএসসির সদস্য ও ৪১তম বিসিএসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য মো. আব্দুল মান্নান এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন ভোরের কাগজকে বলেছেন, এরই মধ্যে বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে বিসিএসের প্রশ্নে স্পর্শকাতর বিষয় না থাকে সে বিষয়ে পিএসসি সচেষ্ট থাকবে বলে জানান তিনি।

পরীক্ষার প্রশ্ন ঘেঁটে দেখা গেছে, ১ নম্বর প্রশ্নেই লেখা আছে, ‘ইসলামোফোবিয়া ধারণাটি সম্পর্কে লিখুন’।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ইসলামোফোবিয়া একটি রাজনৈতিক শব্দ। একাডেমিক শব্দ নয়। এর পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য আছে। প্রশ্নে ইসলামোফোবিয়া সম্পর্কে লিখতে বলায় প্রার্থীরা লিখবেন। যিনি অমুসলিম তিনি ইসলামোফোবিয়া সম্পর্কে কী লিখবেন? পাশাপাশি যিনি মূল্যায়ন করবেন তার কাছে উত্তরটি মনঃপূত না হলে মূল্যায়ন কী হবে? একশ্রেণির পরীক্ষার্থী প্রশ্নের উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। পরীক্ষার্থীদের নম্বর কমে যাবে। সেক্ষেত্রে একটি বিশেষ শ্রেণিকে বাদ দিতেই কি এসব প্রশ্ন করা হচ্ছে? পাশাপাশি সম্পূর্ণ ইস্যুটিই সাম্প্রদায়িক রংয়ে রঞ্জিত। এ রকম প্রশ্নের ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

২ (খ) নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এ যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের ঋণের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। মন্তব্যসহ আলোচনা করুন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, চীনের ওই প্রকল্পে ভারতের তীব্র আপত্তি রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান ছাড়া অন্য কোনো দেশ এখনো এই প্রকল্পে যোগ দেয়নি। বাংলাদেশ এই প্রকল্পে যোগ দেয়নি এবং চীনের ওই প্রকল্প নিয়ে কোনো কথাও বলেনি। যেখানে এই প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্যই দেয়নি সেখানে বিসিএস পরীক্ষায় চীনের ওই বিতর্কিত প্রসঙ্গ টেনে ঋণের ফাঁদে পড়া না পড়া বিষয়ে প্রশ্নের যৌক্তিকতা কী?

৩ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে ভারতের আসাম রাজ্যে সরকারিভাবে তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশি খুঁজে বের করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জন্য একটি নীতিপত্র তৈরি করুন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আসামের বিষয়টি প্রশ্নে উল্লেখ করে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়ের ওপরেই প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আসামের বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আসামের কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কোনো ঘটনার খবর এখনো সেখান থেকে আসেনি। দুই দেশের সরকারও এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। আগ বাড়িয়ে বিসিএসে কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত উসকানিমূলক প্রশ্ন করা উচিত হয়নি বলে মন্তব্য তাদের।

১০ নম্বর প্রশ্নে বাস্তুচ্যুত, অবৈধ অধিবাসী, শরণার্থী ও মিয়ানমার নিয়ে যে প্রশ্ন করা হয়েছে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অবৈধ অধিবাসীসংক্রান্ত ব্যাপারটাও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে একজন পরীক্ষার্থী বাধ্য। যে পরীক্ষার্থী এসব বিষয়ে কিছুটা জানেনও, তিনিও প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বস্তিতে পড়বেন। সুত্র ভোরের কাগজ

Leave a Comment

error: Content is protected !!