মিছিলের সেই যুবক-সুফিয়া বেগম

মিছিলের সেই যুবক
সুফিয়া বেগম

লাশের মিছিল থেকে উদ্যত অস্ত্রহাতে
ছুটে আসে সে,
সুতীব্র চীৎকারে একাকার করে দেয়
গ্রাম-মাঠ-জনপদ-ব্যস্ত শহর।
ছুটে আসে সবাই তার ডাকে।
ক্ষেতের কৃষক,
কারখানার মজুর,
রাস্তার পথিক,
স্কুলগামী ছাত্র,
ঘরকুনো গৃহিণী,
সদ্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া রোগী
সেও ছুটে আসে।
সবাই গোল হয়ে জমা হয়
মাঝখানে লাশের মিছিলের সেই ছেলেটি।
উদ্যত পতাকা তখনও তার হাতে।
ছেলেটি চীৎকার করে বলছে,
‘আমাকে তোমরা কবর দিতে চেয়েছিলে না ?
এই দেখো, আমি চলে এসেছি।
আমি কবরে যাবনা, যেতে পারিনা।
এই তোমরা না একাত্তরে যুদ্ধ করেছিলে ?
এখনই এতটা বধির হয়ে গেলে কি করে ?’
গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো
একে অপরের মুখের দিকে তাকায়।
আরও মানুষ জমা হতে থাকে সেখানে
কোন ঔষধ বিক্রেতার সমাবেশ মনে করে।
ততক্ষণে ছেলেটির শরীর থেকে খসে পড়েছে
সাদা থানের টুকরোগুলো।
তার ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে ঝলমলে রঙিন পোষাক।
অবাক হয় সবাই, একি !
ছেলেটি সেই পোষাক দেখিয়ে আবার বলে,
‘এই দেখো, আমি মরিনি।
তোমরা ভুল করেছিলে।
তোমাদের সেই ভুল ভাঙাতেই আমি ছুটে এসেছি।

এই পতাকা দেখো।
এটা কি কোনদিন মাটিচাপা পড়তে পারে ?
আমি এই পতাকাকে ধরে আছি
সেই একাত্তর থেকে।
যখন তোমরা যুদ্ধ করেছিলে স্বাধীনতার জন্য।
বিসর্জন দিয়েছিলে অগণিত প্রাণ,
নারীর ইজ্জত,
বুদ্ধিজীবীদের কলমের শাণিত অস্ত্র।
তার বিনিময়ে এই পতাকা।
এই দেখো, ছুটে এসেছি আমি মৃত্যুর মিছিল থেকে
তোমাদেরকে জানাব বলে, যে
এই পতাকা শুধু লাল-সবুজের আলপনা নয়।
এতে মিশে আছে আমাদের জাতিসত্তার চেতনা
যা কেবল গর্জে উঠতে জানে
মাথা নোয়াতে জানেনা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!