ময়মনসিংহ জেলা আ’লীগের সম্পাদক পদে এম এ কুদ্দুস প্রচারণায় তুঙ্গে

ময়মনসিংহ জেলা আ’লীগের সম্পাদক পদে এম এ কুদ্দুস প্রচারণায় তুঙ্গেঃ এম এ আজিজ, ময়মনসিংহ ॥ বাংলাদেশের অতি প্রাচীন ইতিহাস ঐতিয্যের রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর কমিটির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আগামী ৩ ডিসেম্বর। ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজমাঠে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

সম্মেলনে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ (১৯৮৯-১৯৯১) যুব সংগ্রাম পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা আওয়াীলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এম এ কুদ্দুসের (মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস) অবস্থান ক্রমেই সুদৃঢ় হচ্ছে।

এম এ কুদ্দুস ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার লক্ষিপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৬ নভেম্বর ১৯৬১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম আফছর আলী এবং মাতার নাম মরহুম আয়েশা খাতুন। বর্তমানে তিনি নগরীর ২০, ফুলবাড়ীয়া রোড বাইলেন, আকুয়ায় বসবাস করছেন। শিক্ষা জীবনে তিনি বি.এস.সি (সম্মান) পদার্থবিদ্যায় ১৯৮৫ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এম.এস.সি পদার্থবিদ্যায় ১৯৮৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন।

তিনি জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১ হিসাবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে তিনি জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক (২০০৪-২০১২) সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আওয়ামী যুবলীগ ময়মনসিংহ জেলা শাখা (১৯৯৫-২০০৪), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ জেলা শাখা (১৯৯৫-২০০২) সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফুলবাড়ীয়া উপজেলা শাখা (১৯৯৪-১৯৯৯) সদস্য, সাবেক আহ্বায়ক স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ (১৯৮৯-১৯৯১), সাবেক আহ্বায়ক যুব সংগ্রাম পরিষদ ময়মনসিংহ, সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ জেলা শাখা (১৯৮৮-১৯৯১), সদস্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় পরিষদ (১৯৮২-১৯৮৮), সহ-সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ জেলা শাখা (১৯৮২-১৯৮৮), সদস্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ জেলা শাখা (১৯৭৯-১৯৮২), আহ্বায়ক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফুলবাড়ীয়া উপজেলা শাখা (১৯৭৮-১৯৭৯), সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ধানীখোলা ওসমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৫)।

এছাড়া তিনি সামাজিক কর্মকান্ডে মানবকল্যাণ সংস্থা (মাকস) এর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, লক্ষ্মীপুর দারুস্ সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা ফুলবাড়ীয়ার সভাপতি, ময়মনসিংহ জেলা কারাগারের বেসরকারী কারা পরিদর্শক, সহ-সভাপতি, রেনেসা ক্লাব, ময়মনসিংহ, সদস্য সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সদস্য জেলা পুলিশিং কমিটি, আজীবন সদস্য সেবা নিকেতনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। কর্মজীবনে তিনি মেসার্স ফ্লোরা এন্টারপ্রাইজ ও ফ্লোরা এগ্রোফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ধানীখোলা ওসমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৭৫ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সদস্য পদ গ্রহণ করে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ঐ বছরই স্কুল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর পুনরায় রাজনীতি সীমিত আকারে শুরু হলে সকল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অবস্থান নেন। ১৯৭৯-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫১ ময়মনসিংহ-৬, ফুলবাড়ীয়া নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপকভাবে কাজ করেন।

১৯৮২ সনে স্বৈরাচার এরশাদ সামরিক শাসক হিসেবে সামরিক আইন জারির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলে তৎকালীন সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ শুরু করেন।

১৯৮২ সন থেকে ১৯৮৬ সন পর্যন্ত স্বৈরাচার এরশাদ বিরাধেী আন্দোলনে সামনের কাতারের নেতৃত্বে থাকায় তৎকালীন সরকারের পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনীকর্তৃক ব্যাপক হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৮৬ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৮৯ সনের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নিজ নির্বাচনী এলাকাসহ ময়মনসিংহের সকল নির্বাচনী এলাকায় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরামহীন কাজ করেন।

তিনি ১৯৮৮ সনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর ময়মনসিংহে নতুন মাত্রা যোগ করেন। ১৯৯০ সনে ময়মনসিংহ সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯০ সনের ১০ অক্টোবর এরশাদ বিরাধেী আন্দোলনে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেন। ছাত্র ঐক্য পরিষদ নেতা ফিরাজে ও জাহাঙ্গীর পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ঐ মিছিলের প্রথম সারিতে নেতৃত্বে ছিলেন এ ত্যাগী নেতা। তিনি ১৯৯১ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

১৯৯১ সন থেকে ১৯৯৬ সন পর্যন্ত স্বৈরাচার খালেদা বিরাধেী গণআন্দোলনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করে নিজ এলাকাসহ জেলার সর্বত্র কাজ করে খালেদা জিয়াকে উৎখাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

১৯৯৬ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫১ ময়মনসিংহ-৬, ফুলবাড়ীয়া নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে জয়যুক্ত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ২০০১-২০০৮ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া বিরোধী এবং তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

এই ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা ২০০৮ সনের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫১ ময়মনসিংহ-৬, ফুলবাড়ীয়া নির্বাচনী এলাকার প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন এবং জমা দেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী বোর্ড মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করেন।

২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সরকার ২য় বারের মতো রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণের পর অদ্যাবধি পর্যন্ত উন্নয়নের সকল কার্যক্রমে তার নিজ নির্বাচনী এলাকা ফুলবাড়িয়ায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে কাজ করছেন। এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে দলীয় সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ জনগণের কাছে পৌছে দিতে মিটিং-মিছিল-সমাবেশ এবং সেমিনারের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০১২ সনে ষষ্ঠ কংগ্রেসের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১ সনে ১৩ জুলাই ফুলবাড়ীয়ার লক্ষ্মীপুর গ্রামে পশ্চিমা পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে ৮৫ জন পাকহানাদার বাহিনীর সদস্য মারা যান। পরবর্তীতে পাকহানাদার বাহিনী তার চাচা শহীদ জয়নুদ্দিন সরকার, শহীদ মমতাজ উদ্দিন এবং চাচাতো ভাই শহীদ আবু নাছেরকে গুলি করে হত্যা এবং তার নিজবাড়িসহ বহু বাড়ি ঘর পুড়িয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। এই ত্যাগী নেতার একমাত্র ছেলে মরহুম আশফাক আল রাফী (শাওন) ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ এর সাবেক সহ- সভাপতি ও সাবেক ছাত্র বৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও ছিলেন পিতার মত অত্যন্ত জনপ্রিয় ও কর্মীবান্ধব। মাস্টার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন।

২০১৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারী রাতে দলীয় প্রতিপক্ষ তাকে ডেকে নিয়ে গুলি করেন। ১১ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৮ মার্চ শাওন মৃত্যুবরন করেন। এম এ কুদ্দুস আশা করছেন দলীয় সকল কর্মকান্ড বিবেচনায় তাকেই জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হবে। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে তিনি নিজের বাজি রেখে দলের জন্য কাজ করবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।

Leave a Comment

error: Content is protected !!