যে গ্রামে ভোটার সংখ্যা মাত্র ১৯ জন!

যে গ্রামে ভোটার সংখ্যা মাত্র ১৯ জন! মাত্র ১৫ বাড়ি আর ৫০ সদস্য নিয়ে একটি গ্রাম। যার অবস্থান নেত্রকোনার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণে ফতেপুর ও শিবপাশা গ্রামের মধ্যবর্তী ধলাই নদীর পশ্চিমপাড়ে টিকে আছে এ গ্রামটি। গেজেটেও রয়েছে মাটুয়া গ্রামের নাম। ভোটার তালিকা অনুযায়ী এ গ্রামে পুরুষ ভোটার ১০ আর নারী ভোটার ৯ জন রয়েছেন।

এলাকাবাসী ও সচেতন মহল জানান, ভোটের সময়েই এ গ্রামে প্রার্থীরা আসেন, সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচন শেষ হলে তাদের আর দেখা মিলে না।

আগামী ৫ জানুয়ারি আসন্ন মদন উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অথচ ওই গ্রামে নেই কোনো পোস্টার, মাইকিং ও প্রার্থীদের আনাগোনা। গ্রামের লোকজন বলতে পারে না সুনির্দিষ্ট প্রার্থীদের নাম। এমনি একটি গ্রাম নেত্রকোনার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের মাটুয়া। জনসংখ্যার দিক থেকে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে গ্রামটি।

জানা যায়, একসময় এ গ্রামে হিন্দু প্রভাবশালী হরেন্দ্র চন্দ্র সরকার, বিরেন্দ্র চন্দ্র সরকার ও মহিষ চন্দ্রপাল পরিবারের সদস্যদের বসবাস ছিল। ১৯৭৬ সালে হিন্দু পরিবারগুলো বাড়ি বিক্রি করে ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে যায়।

সরেজমিন মাটুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে ধানের ক্ষেত, যোগাযোগের কোনো রাস্তা নেই। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে এ গ্রামের লোকজন সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে মনের ক্ষোভে ক্রমান্বয়ে অর্ধশতাধিক ভোটার পাশের ইউনিয়নে গেছে। বর্তমানে এ গ্রামে মাত্র ১৯ ভোটার রয়েছে।

এ গ্রামের বাসিন্দা হিরণ মিয়া জানান, আজ পর্যন্ত এ গ্রামে কোনো প্রার্থী আসেননি। জানি না কে কোন প্রার্থী? তবে নির্বাচন এলে প্রার্থীদের আনাগোনা হয়। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। নির্বাচন শেষ হলে আর ওনাদের দেখা পাওয়া যায় না।

একই গ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার প্রতিটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ মাদ্রাসা গড়ে তুললেও এ গ্রামে কোনো কিছুই নেই। সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত আমরা। নামেই গ্রাম। ফলে অনেকেই মনের দুঃখে এ গ্রাম থেকে ভোটার স্থানান্তর করে পাশের ফতেপুর ইউনিয়নে চলে গেছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মদন উপজেলা শাখার মহাসচিব মোতাহার আলম চৌধুরী বলেন, একসময় এই গ্রামে প্রসিদ্ধ লোকের বসবাস ছিল। তারা এখান থেকে চলে যাওয়ায় মুসলমান কয়েকটি পরিবার এ গ্রামে বসবাস করতে থাকে। সেবাবঞ্চিত এ গ্রামটিকে দ্রুত প্রশাসন ও জনপ্রতিনধিগণের সুদৃষ্টি রাখা জরুরি।

তিয়শ্রী ইউপি চেয়ারম্যান ফখর উদ্দিন আহমেদ জানান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে এই এলাকাটি সেবাবঞ্চিত। আমি আশা করব সরকার যদি ধলাই নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দেয় তা হলে এ গ্রামটি ঐতিহ্য ফিরে পাবে।

মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ বলেন, শুনেছি গ্রামটি খুবই অবহেলিত। গ্রামটিতে আমি অচিরেই যাব। তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Leave a Comment

error: Content is protected !!