লুং ফের ভা সাইতার ঝর্ণা বান্দরবান

লুং ফের ভা সাইতার বান্দরবানের দুর্গম সালৌপিপাড়ায় (সিলোপি) পাড়ায়  অবস্থিত প্রায় অজানা একটি বিশাল ঝর্নার নাম। লুং ফের ভা সাইতার (Lung Vha Saita Waterfall) নাম যেমন কঠিন, এই ঝর্নায় যাওয়ার ট্রেইলও তেমন কঠিন। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। ট্রেইল পিচ্ছিল হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়।

যদিও বর্ষাকাল ছাড়া ঝর্ণার আসল সৌন্দর্য  খুজে পাওয়া যার না, তাই বর্ষাকালই ঝর্ণার কাছে বেড়াতে যাওয়ার উৎকৃষ্ট সময়। প্রথমত, ‘লুং ফের ভা’ নামের এ ঝরনার পানির ছোঁয়া খুব বেশি মানুষের গায়ে লাগেনি। তাই রাস্তা মোটেও সহজ হবে না। আর কিছু জায়গায় দড়ির সাহায্যও নেওয়া লাগতে পারে। তাই লুং ফের ভা সাইতার যেতে হলে সুপার লেভেলের শক্তি ও আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।

সালৌপিপাড়ায় (সিলোপি) পাড়া থেকে নির্জন জনমানবহীন রহস্যঘেরা ভুতুড়ে জঙ্গলের ভেতর বিশাল সব শতবর্ষী গাছের নিচ দিয়ে লুং ফের ভা সাইতার ঝর্ণা যাবার যাওয়ার রাস্তা। এত গাছের ভিড় ভেদ করে সূর্যের আলো আসার কোনো সুযোগই পাচ্ছে না।

জঙ্গল থেকে ট্রেইলে নেমেই শান্তির পড়শ এযেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচা!  চমৎকার ঠাণ্ডা জলধারা বয়ে চলেছে। কিন্তু একটু পড়েই বুঝা যায় দীর্ঘদিন মানুষের পায়ের স্পর্শ না পেয়ে পাথুরে এই ট্রেইল কতটা ভয়ংকর ও পিচ্ছিল হয়ে উঠেছে। তাই খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। ২০-২৫ মিনিটের এ অসাধারণ ট্রেইলটা শেষ হবে ‘লুং ফের ভা’র একদম মাথার ওপর। ওখান থেকে এই অনিন্দ্যসুন্দর ঝরনা নিচে নেমে গেছে অনেকটা পথ বেয়ে। এবার নিচে নামতে হলে এখন পাহাড় বেয়ে নামতে হবে। আর এই পথটা খুব একটা কঠিন মনে হবে না।

পাহাড়ের মাঝে পুরো আকাশটা যেন দখল করে আছে ঝরনাটা। এটাই তার রাজ্য। এখানে সে ছাড়া সবাই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। ঝর্ণার  এমন অহংকারী রূপ দেখতে সবার ভালই লাগবে বলে মনে হয়।

কিভাবে যাবেন



ঢাকা থেকে বা চট্টগ্রাম থেকে বাসে বান্দরবান (Bandarban)। বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি(ফোর হুইল ড্রাইভ), বাস, সি এন জি করে রুমা যাওয়া যায়। চান্দের গাড়ি/জীপ রিসার্ভ করলে প্রায় ৩০০০/৪০০০ টাকার মত ভাড়া পড়বে যা মৌসূম ও পর্যটকদের সমাগম ভেদে ভিন্ন হয়ে থেকে।

আর সার্ভিস এর বাসে করেও রুমা যেতে পারেন সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০০ টাকা। বাসের সিট তেমন ভালো মানের নয়। বান্দরবান শহর থেকে রুমা যেতে সময় লাগবে কমবেশি ২ ঘণ্টার মত। রুমা নেমে সার্ভিস এর চান্দের গাড়ি করে যেতে হবে রুমা বাজার, ভাড়া ৩০ টাকা জনপ্রতি।

নিয়ম অনুযায়ী রুমা বাজার থেকে পাহাড়ে কোথাও বেড়াতে যেতে হলে আপনাকে গাইড নিতে হবে, দিনপ্রতি গাইড সার্ভিস চার্জ ৫০০ টাকা। বাজারে গাইড সমিতি আছে তাদের কাছে গেলেই গাইড পাবেন ।

গাইডকে সাথে নিয়ে আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য নিবন্ধন করতে হবে। বড় দল গেলে আগে থেকে একটি কাগজে সবার নাম, ঠিকানা, পেশা, ফোন নম্বর ও বাসায় যোগাযোগের নম্বর সহ একটি তালিকা আগে থেকে প্রস্তুত করে নিয়ে যেতে পারেন।

রুমা বাজার থেকে সার্ভিস এর কিংবা রিজার্ভ চান্দের গাড়ী করে যেতে হবে বগালেক, তারপর পাসিংপাড়া। রাতটা বগালেক অথবা পাসিংপাড়ায় থাকতে পারেন। পরদিন থাইক্ষংপাড়া, থিংদলতে পাড়া হয়ে সালৌপিপাড়া। রাতটা সালৌপিপাড়ায় থেকে পরদিন খুব ভোরে ‘লুং ফের ভা’ ঝরনা অভিযান।

এছাড়াও ঢাকা থেকে

প্রথমে বান্দরবন আসতে হবে। রাজধানী শহর ঢাকা থেকে বিভিন্নভাবে বান্দরবন আসা যায়। বাসযোগে সরাসরিভাবে আসা যায়। তবে ভেঙে আসলে বাস, ট্রেন, প্লেন পছন্দসই যেকোন মাধ্যম বেছে নেওয়া যাবে।

বাস

ঢাকা টু বান্দরবান রুটে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এস. আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দরবনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসি ও ননএসি জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৫০০ টাকা। অথবা ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম এসে তারপর চট্রগ্রামের বিআরটিসি টার্মিনাল বা দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ১০০-৩০০ টাকায় বাস ভাড়ায় বান্দরবন আসা যায়। চট্রগ্রাম থেকে প্রাইভেট কারে ২৫০০-৩৫০০ টাকায় বান্দরবন যাওয়া যায়।

ট্রেন

ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম গামী সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা, মহানগর প্রভাতি কিংবা মহানগর গোধূলি ট্রেনে করে চট্রগ্রাম আসা যায়। শ্রেণী ভেদে ট্রেন ভাড়া ৩৫০ থেকে ১৫০০ টাকা। চটগ্রাম এসে উপরে নিয়মে বান্দরবান যেতে হবে।

আকাশপথ

বাংলাদেশ বিমান, জিএমজি এয়ার লাইনস, ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজসহ বেশকিছু বিমান ঢাকা থেকে সরাসরি চট্রগ্রাম ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। আকাশপথে চট্রগ্রাম এসে সড়কপথে উপরে উল্লেখিত উপায়ে বান্দরবান যেতে হবে।

সতর্কতা



পাহাড়ের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকা উচিত। পাহাড়, ঝরনাকে নোংরা করব না। বিস্কুট, চকোলেট কিংবা চিপসের প্যাকেট সঙ্গে করে নিয়ে আসুন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!