সাইফ আল আদেলের মাথার দাম ১ কোটি ডলার

সাইফ আল আদেলের মাথার দাম ১ কোটি ডলার। জঙ্গি গোষ্ঠী আলকায়েদা আয়মান আল জাওয়াহিরির কোনো উত্তরাধিকারীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি। জানা গেছে, নতুন আলকায়েদা প্রধান হয়েছেন মিশরের একটি বিশেষ বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা সাইফ আল আদেল।

বিভিন্ন সদস্য দেশগুলোর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে তার মাথার দাম ধার্য্য করা রয়েছে ১ কোটি ডলার।

আলকায়েদা আয়মান আল জাওয়াহিরির কোনো উত্তরাধিকারীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি, তিনি গত বছর কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন বলে বিশ্বাস করা হয়। এটি ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর থেকে সংগঠনটির জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল, যা তারা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। জাওয়াহিরির মৃত্যুর পর ৬২ বছর বয়সি সাইফ আল আদেলই সংগঠনের দায়িত্ব নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছিলেন, জাওয়াহিরির উত্তরাধিকার অস্পষ্টই রয়ে গেছে; কিন্তু আলকায়েদার ঝুঁকি নিয়ে জাতিসংঘের এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের আলোচনাগুলোতে অনেক সদস্য রাষ্ট্র এই ধারণাটি গ্রহণ করেছে যে সাইফ আল আদেল ইতিমধ্যে এ গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে কাজ করছেন।

আলকায়েদা-বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জাওয়াহিরির মৃত্যুতে সতর্কভাবে প্রাণঘাতী অভিযানের পরিকল্পনা ও জঙ্গি গোষ্ঠীটিকে পরিচালনা করতে পারবেন এমন একজন কৌশলী নেতা বেছে নেওয়া নিয়ে চাপে ছিল আলকায়েদা। মিশরের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা ও আলকায়েদার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যাকে ধরা অথবা মারার জন্য ১ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র, সেই সাইফ আল আদেল এখন আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ নেতা বলে জাতিসংঘের ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী জ্বালাময়ী ভিডিও বক্তৃতা ছড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে জাওয়াহিরি তার হাই প্রোফাইল বজায় রেখে চললেও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আদেল হামলার পরিকল্পনা করেন আড়াল থেকে এবং তিনি আলকায়েদাকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী জঙ্গি গোষ্ঠীতে পরিণত করতে সাহায্য করেছেন। তাঞ্জানিয়া ও কেনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে আলকায়েদার বোমা হামলায় ২২৪ জন নিহত ও ৫ হাজারের বেশি আহত হওয়ার পর ১৯৯৮ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল গ্রান্ড জুরি আদেলকে অভিযুক্ত করেছিল। তার খুব বেশি ছবি পাওয়া যায়নি, তিনটি ছবি ছাড়া; এর মধ্যে এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা সাদাকালো ছবিটিতে তাকে খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে দেখা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীদের তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকায় চালানো হামলাগুলোর বাইরে তিনি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করতেন এবং ২০০২ সালে পাকিস্তানে মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার যোগসূত্র ছিল। এর বাইরে তার বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আদেল এখন ইরান থেকে তার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আদেল বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য ১ কোটি ডলার পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে মন্ত্রণালয়টি।

আদেল ‘আলকায়েদার নেতৃত্ব পরিষদ’ এর সদস্য এবং সংগঠনটির সামরিক কমিটির প্রধান বলে জানিয়েছে তারা। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস’ কর্মসূচীর ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, আফ্রিকার ঐ বোমা হামলার পর মিশরীয় সামরিক বাহিনীর এই সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইরানের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে চলে যান, সেখানে তিনি দেশটির রেভুল্যশনারি গার্ড কোরের দেওয়া নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করছেন।

২০০৩ সালের এপ্রিলে আদেল ও অন্য আলকায়েদা নেতাদের গৃহবন্দি করেছিল ইরান। পরে ইয়েমেনে অপহূত ইরানি এক কূটনীতিকের মুক্তির বিনিময়ে তাকে ও আরো চার জনকে ছেড়ে দেয় তেহরান। যদিও বুধবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি মিশন টুইটারে একটি বার্তা পোস্ট করে আদেলের ইরানে থাকার কথা অস্বীকার করেছে। বার্তায় তারা বলেছে, এটি লক্ষণীয় যে তথাকথিত নবনিযুক্ত আলকায়েদা নেতার ঠিকানাটি ভুল। এই ভুল তথ্য সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!