সুদ কেন হারাম

সুদ কেন হারাম-মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ। ইসলামে রিবা বা সুদ সম্পূর্ণরূপে হারাম। পবিত্র কোরআনে সুদভিত্তিক কর্মকাণ্ডে জড়ানোকে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া যা আছে, তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা তা না ছাড়ো, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।’ (সুরা বাকারা: ২৭৮-২৭৯)

ইসলামি অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি কারণে সুদকে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ ও অর্থনৈতিক শোষণের প্রধান হাতিয়ার বিবেচনা করা হয়। কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

এক. সমাজে শোষণের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে সুদ। একদল লোক বিনা শ্রমে অন্যের কষ্টার্জিত উপার্জনে ভাগ বসায় সুদের সাহায্যেই। ঋণগ্রহীতা যে কারণে টাকা নেয়, সে কাজে তার লাভ হোক বা না হোক, তাকে সুদের অর্থ পরিশোধ করতেই হয়। ফলে অনেক সময় সুদ পরিশোধ করার জন্য ঋণগ্রহীতাকে তার বেঁচে থাকার সর্বশেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে দিতে হয়।

ফলে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পায়। গরিব কৃষকেরা বিভিন্ন সুদভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে কৃষিকাজ করে থাকেন। কিন্তু অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য কোনো কারণে আশানুরূপ ফসল পাওয়া যায় না। তখন নির্দিষ্ট সময়ে সুদসহ মূলধন ফিরিয়ে দিতে না পারলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান কৃষকের সহায়-সম্পত্তি দখল করে নেয় এবং নিলামে তুলে বিক্রি করে দেয়। এভাবে কৃষকেরা ভূমিহীন হয়ে পড়ায় কৃষি খাতে উৎপাদন কমে গিয়ে দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়ে।

দুই. সুদের কারণে অর্থনৈতিক শ্রেণিবৈষম্যের সৃষ্টি হয়। ধনীরা আরও ধনী হতে থাকে, গরিবেরা গরিব হতে হতে একপর্যায়ে চরম অসহায়ত্বের পর্যায়ে চলে যায়। এর ফলে অনেকে আত্মহত্যা কিংবা বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

তিন. সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থায় পণ্যের স্বাভাবিক মূল্য তথা উৎপাদন খরচ, পরিবহন খরচ, শুল্ক ও স্বাভাবিক মুনাফার ওপর উপর্যুপরি সুদ যোগ হতে থাকে। এর ফলে দ্রব্যমূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।

চার. ইসলামি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা হচ্ছে, পুঁজি মুষ্টিমেয় লোকের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। কারণ এর ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা চরমভাবে ব্যাহত হয়। এ জন্যই পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ধন-ঐশ্বর্য যেন কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়।’ (সুরা হাশর: ৭)

কিন্তু সুদের ফলে পুঁজি মুষ্টিমেয় লোকের মধ্যে আবর্তিত ও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে একশ্রেণির মানুষের সম্পদ বিনা শ্রমে, বিনা উৎপাদনে বৃদ্ধি পেতে থাকে, আরেক দিকে গরিব মানুষেরা প্রয়োজনীয় উৎপাদনের জন্য অমানুষিক শ্রম সত্ত্বেও দিন দিন আরও গরিব হতে থাকে।

সমাজে শোষণের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে সুদ। একদল লোক বিনা শ্রমে অন্যের কষ্টার্জিত উপার্জনে ভাগ বসায় সুদের সাহায্যেই। ঋণগ্রহীতা যে কারণে টাকা নেয়, সে কাজে তার লাভ হোক বা না হোক, তাকে সুদের অর্থ পরিশোধ করতেই হয়।

লেখক: মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
শিক্ষক ও ইসলাম বিষয়ক গবেষক

Leave a Comment

error: Content is protected !!