সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়


সেন্টমার্টিন যাবার বেশিরভাগ শীপ টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়। তাই সেন্টমার্টিন যেতে চাইলে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ চলে যাওয়া সুবিধাজনক। টেকনাফ থেকে জাহাজে অথবা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে সরাসরি বাসে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে জাহাজে/ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া সুবিধাজনক। কক্সবাজার ভ্রমণ পরিকল্পনায় থাকলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে তারপর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। অথবা কক্সবাজার থেকে এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস শীপে সরাসরি সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকেও সেন্টমার্টিন যাবার এমভি বে ওয়ান শীপ চালু হয়েছে। সেন্টমার্টিন যাওয়ার সাম্ভাব্য সকল উপায় নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো।

ঢাকা থেকে টেকনাফ যাবার উপায়


ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফে যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী, কলাবাগান, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ ও আবদুল্লাহপুর থেকে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সেন্টমার্টিন হুন্দাই, রয়েল কোচ, তুবা লাইন, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। ভাড়া সাধারণত বাস ও ক্লাস অনুযায়ী ১০৫০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। যদি শুধু সেন্টমার্টিন যেতে চান তাহলে ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে টেকনাফ চলে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। রাত ৮-১০ টার মধ্যে বাস রওনা দিয়ে সকাল ৮টার মধ্যে টেকনাফ পৌঁছে যায়।

কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ যাবার উপায়


ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে প্রতিদিনই গ্রীন লাইন, সোহাগ, টিআর ট্রাভেলস, শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, ঈগল, এস আলম, সিল্ক লাইন, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি অনেক বাস কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভেদে ভাড়া সাধারণত ৯০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও ঢাকা থেকে বিমানে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ: কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস/মাইক্রো/জিপ/সিএনজি ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যায়। কক্সবাজার হতে টেকনাফ যাওয়ার বাস ভাড়া ১৫০ টাকা ও সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকা। টেকনাফ যেতে অবস্থা ভেদে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। আর সকালের জাহাজ ধরতে চাইলে কক্সবাজার থেকে ভোরে (৬টার মধ্যে) টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে ।

চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ যাবার উপায়


চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে এস আলম এবং সৌদিয়া বাস রাত ১২ টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া জিএসই গরিবুল্লাশাহ মাজার ও দামপাড়া থেকেও কিছু বাস চট্টগ্রাম-টেকনাফ রুটে চলাচল করে। চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ বাসে যেতে খরচ হবে ৫৫০-১২০০ টাকা।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাবার উপায়


সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি জাহাজ/শীপ আসা যাওয়া করে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী শীপের মধ্যে আছে কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রজ এন্ড ডাইন, এম ভি ফারহান, আটলান্টিক ইত্যাদ। জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘন্টা।

জাহাজের ক্লাস ও মান অনুযায়ী সেন্টমার্টিন যাওয়া ও আসার টিকেট ভাড়া ৮৫০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। টেকনাফ জেটি ঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজগুলো সকাল ৯.০০-৯.৩০ মিনিটে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সেন্টমার্টিন থেকে ফেরত আসে বিকাল ৩.০০-৩.৩০ মিনিটে। সেন্টমার্টিন যাওয়ার শীপের টিকেট সাধাণত যাওয়া ও আসা সহ হয়ে থাকে। টিকেট করার সময় কবে ফিরবেন তা উল্লেখ করতে হবে।

সধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ/এপ্রিল এই পাঁচ মাস জাহাজ চলে। অন্য সময়ে গেলে ট্রলার কিংবা স্পিডবোট দিয়ে যেতে হবে। শীত মৌসূম ছাড়া বাকি সময় সাগর উত্তাল থাকে, তাই এই সময়ে ভ্রমণ নিরাপদ নয়। টেকনাফ নামারবাজার ব্রিজ বা জেটি ঘাট থেকে ট্রলার, স্পিডবোট ও মালবাহী ট্রলার ছাড়ে। ট্রলারে সেন্টমার্টিন যাবার ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। এটা সিজন ও যাত্রীভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা। ট্রলারে বা স্পিডবোটে গেলে অনেক রোলিং হয়, তাই শীপে যাওয়াটাই ভালো উপায়।

সেন্টমার্টিনের রিসোর্ট ও হোটেল


সেন্টমার্টিনে রাতে থাকার জন্য নানান মানের রিসোর্ট, হোটেল ও কটেজ রয়েছে। ছুটির দিনে গেলে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়া সুবিধাজনক। তবে চাইলে সেখানে গিয়েও পছন্দমত রিসোর্ট ঠিক করতে পারবেন। সেন্টমার্টিনের জনপ্রিয় রিসোর্ট গুলোর মধ্যে রয়েছে –

ব্লু মেরিন রিসোর্ট (Blue Marine Resort): সেন্টমার্টিন দ্বীপের ফেরি ঘাটের খুব কাছেই ব্লু মেরিন রিসোর্টের অবস্থান। ব্ল–মেরিন রিসোর্টের এসিযুক্ত ডাবল বেডরুমের ভাড়া ১৫০০০ টাকা এবং নন-এসি ৫০০০ টাকা, ট্রিপল রেডরুমের প্রতিটির ভাড়া ৩০০০ টাকা, ছয়জনের বেডরুমের ভাড়া ৪০০০ টাকা এবং দশজনের বেডরুমের ভাড়া ৫০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01817 060065

প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্ট (Praasad Paradise Resort): সেন্টমার্টিন বাজারের ভেতর দিয়ে ব্লু মেরিন রিসোর্ট পার হয়ে আরো কিছুটা উত্তর দিকে এগিয়ে গেলে সুদৃশ্য প্রাসাদ প্যারাডাইস। বিভিন্ন ধরনের ১৬টি রুমের যেকোন একটি ভাড়া নিতে খরচ করতে হবে ২০০০-৫০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01995 539248, 01883 626003

নীল দিগন্তে রিসোর্ট (Neel Digante Resort): সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ বীচের কোণাপাড়ায় অবস্থিত নীল দিগন্তে রিসোর্টটি জেটি থেকে বেশখানিকটা দূরে অবস্থিত। নীল দিগন্তে রিসোর্টের নানা ধরণের কটেজ টাইপ রুমে থাকতে খরচ হবে ১৫০০-৫০০০টাকা। যোগাযোগঃ 0173 005 1004

প্রিন্স হেভেন রিসোর্ট (Prince Heaven Resort): উত্তর বিচে অবস্থিত প্রাসাদ প্যারাডাইস সংলগ্ন প্রিন্স হেভেন রিসোর্টে মোট ২৪ টি কক্ষ এবং একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। প্রিন্স হেভেন রিসোর্টের রুম ভাড়ার পরিমাণ ১,৫০০-৩,৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01995 539 246, 01883 626 002

লাবিবা বিলাস রিসোর্ট (Labiba Bilas Resort): বর্তমান নাম দি আটলান্টিক রিসোর্ট। পশ্চিম বীচে অবস্থিত এই রিসোর্টে রাত্রি যাপনের জন্য ৪৩ টি কক্ষ রয়েছে। আর এখানে থাকতে আপনাকে খরচ করতে হবে ৩৫০০ টাকা থেকে ১২০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগঃ 01700 969 212, 01834 267 922

ড্রিম নাইট রিসোর্ট (Dream Night Resort): পশ্চিম বীচের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ড্রিম নাইট রিসোর্টের প্রতি কক্ষে ২ থেকে ৪ জনের রাত্রিযাপনের সুযোগ। এই রিসোর্টে থাকতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগঃ 01825 656326, 01730 235002

সায়রী ইকো রিসোর্ট (Sayari Eco Resort): দক্ষিণ বীচে নজরুল পাড়ায় অবস্থিত সায়রী ইকো রিসোর্ট নান্দ্যনিকতা অনন্য। সায়রী ইকো রিসোর্টের বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৮ টি রুমে ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে। যোগাযোগঃ 01610 555500

এছাড়াও আছে ‎কোরল ব্লু, মারমেইড, দীপান্তর, পান্না রিসোর্ট, সি প্রবাল, ‎সি ইন, ‎হোটেল সাগর পাড়, রিয়াদ গেস্ট হাউজ, হোটেল স্বপ্ন প্রবাল, শ্রাবণ বিলাস, সানসেট ভিউ ইত্যাদি।

সেন্টমার্টিনে কোথায় খাবেন


সাধারণত বেশিরভাগ রিসোর্টেই খাবারের ব্যবস্থা থাকে। আপনি যে রিসোর্টে থাকবেন সেখানে খাবার ব্যবস্থা আছে কিনা আগে জেনে নিন। সামুদ্রিক মাছের নানা পদের সাথে বাংলা খাবারের আয়োজন থাকে প্রায় সব জায়গাতেই। রিসোর্ট গুলোতেই থাকে বারবিকিউ এর ব্যবস্থা। সেন্টমার্টিন বাজারে কাছে বেশ কিছু খাবার হোটেল আছে। চাইলে সে গুলো থেকেও খাবার খেতে পারবেন। যদি রাতে না থেকে দিনে দিনে ফিরতে চান সেই ক্ষেত্রের বাজারের হোটেল গুলোতেই খাবার পাবেন।

যেসব হোটেল ও রেস্তোরাঁতে গিয়ে খেতে পারেন তার কয়েকটি হল কেয়ারি মারজান রেস্তোরাঁ, বিচ পয়েন্ট, হোটেল আল্লার দান, বাজার বিচ, আসাম হোটেল, সি বিচ, সেন্টমার্টিন, কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট, রিয়েল রেস্তোরাঁ, হাজী সেলিম পার্ক, সেন্টমার্টিন টুরিস্ট পার্ক, হোটেল সাদেক ইত্যাদি। তবে অবশ্যই খাবার ও দাম একটু যাচাই করে নিবেন।

সেন্টমার্টিনে কি খাবেন


সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জিনিস হল ডাব যা একাধারে মিষ্টি ও সুস্বাদু। সেন্টমার্টিনে গেলে অন্তত একটা ডাব টেস্ট করা উচিত। যারা মাছ খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য সেন্টমার্টিন কোরাল, সুন্দরী পোয়া, ইলিশ, রূপচাঁদা, লবস্টার, কালাচাঁদা ইত্যাদি নানান ধরনের ও স্বাদের বাহার নিয়ে অপেক্ষা করছে। নিজের মত করে মাছ পছন্দ করে কিনে বারবিকিউ করার সুযোগ থাকে সব রিসোর্ট ও হোটেলেই। আর যদি সুযোগ হয় তবে কুরা খেয়ে দেখতে পারেন (দেশী মুরগিকে কুরা বলে ডাকা হয়)। এখানে আরো রয়েছে অফুরন্ত লইট্টা, ছুড়ি, রূপচাঁদা, কাচকি ইত্যাদি জানাঅজানা শুঁটকি মাছের ভান্ডার। এছাড়া গরমের সময় গেলে সেখানের তরমুজ খেয়ে দেখতে পারেন।

কি করবেন ও কি দেখবেন


যারা দিনে গিয়ে দিনেই সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসবেন তারা পরবর্তীতে আফসোস করতে পারেন তাই সবচেয়ে ভালো হয় অন্তত একদিন সেন্টমার্টিনে অবস্থান করা। এতে যেমন পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখতে পারবেন তেমনি এই আনন্দময় ভ্রমণ আপনাকে সবসময় মোহিত করবে।

ডে লং ট্রিপ: যারা সময়ের অভাবে ডে লং ট্রিপে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাবেন তারা জাহাজ থেকে নেমে সময় নষ্ট না করে ভ্যান নিয়ে সরাসরি চলে আসুন পশ্চিম বীচ বা মেইন বীচে। এর জন্য আপনাকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ভ্যান ভাড়া গুণতে হবে। এখানে হেঁটে আসতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে তবুও ডে লং ট্রিপে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না। এই জায়গাটা পানিতে নামার জন্য ভালো তাই বীচে এসে চাইলে সচ্ছ পানিতে গা ভেজাতে পারেন। যাই করেন না কেন অবশ্যই মাথায় রাখবেন আপনাকে ২ টার আগে ফ্রি হতে হবে নইলে খাওয়ার সময়টুকুও পাবেন না। আর অবশ্যই ৩ টার আগেই আপনাকে জাহাজে পৌঁছাতে হবে। হাতে সময় থাকলে মেইন বীচের কাছে হুমায়ূন আহমেদের কটেজ দেখে আসতে পারেন। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে এই ধরণের ট্রিপ আপনাকে সময়ের প্রতি সীমাবদ্ধ করে রাখবে তাই অন্তত এক দিনের প্ল্যান নিয়ে সেন্টমার্টিন আসুন।

১ রাত ২ দিনের প্ল্যান: যারা এক দিনের প্ল্যান নিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আসবেন তারা জাহাজ থেকে নেমে হোটেলে উঠে পড়ুন। দুপুরের খাবার খেয়ে হালকা বিশ্রাম নিয়ে চলে আসতে পারেন ছেঁড়া দ্বীপ। চেষ্টা করবেন ৪ টার আগে আগেই রওনা দিতে তাহলে ছেঁড়া দ্বীপে সূর্যাস্ত দেখে ফিরতে পারবেন। ছেঁড়া দ্বীপের সূর্যাস্ত অসাধারণ তবে সূর্যাস্তের পরে বেশি দেরি করবেন না। সন্ধ্যায় মূল দ্বীপে ফিরে বাজারের জেটিতে আড্ডা দিতে পারেন কিংবা পশ্চিম বীচের যে কোন জায়গায় বসাতে পারেন গানের আসর। রাতে বার-বি-কিউ করার ক্ষেত্রে রিসোর্টে করতে পারেন। রিসোর্টে মাছের দাম একটু বেশি নিলেও মাছগুলো ফ্রেশ থাকে। অথবা আশেপাশের হোটেলে পছন্দমত মাছ বারবিকিউ করে খেতে পারবেন। পরদিন সকালের সময়টা চারপাশে হেঁটে কাটিয়ে দিন অথবা আগের দিন ছেঁড়া দ্বীপে না গিয়ে থাকলে সকাল সকাল ছেঁড়া দ্বীপ থেকে ঘুরে আসুন। দুপুরের আগেই ফিরে আসুন, গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে আস্তে ধীরে ২ টা ৩০ এর মধ্যে নির্ধারিত জাহাজে উঠে পড়ুন।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ খরচ


যে কোন ভ্রমণে খরচ কত হবে তা সম্পূর্ণই আপনার উপর নির্ভর করবে। আপনি কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন ও কি করবেন সেইসব বিষয়ের সাথে কোন সময় যাচ্ছেন তার উপরেও খরচ নির্ভর করে। পিক সিজন (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) বা ছুটির দিন গুলোতে থাকা খাওয়া সহ অন্যান্য খরচ একটু বেশিই হবে। কম খরচে ও মোটামুটি মানের হোটেলে ১ রাত থাকা ও খাওয়া সহ ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে কত খরচ হবে তার একটা ধারণা দেবার জন্যে খরচের তালিকা দেওয়া হলো। যা থেকে আপনি কিছুটা হলেও খরচ সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন।

*যাতায়াত খরচ
বাসের টিকেট – যাওয়া ও আসা সহ ২২০০ টাকা (নন এসি), ২,৮০০-৪,৪০০ টাকা (এসি)।
শিপ/জাহাজ ভাড়া – যাওয়া ও আসা সহ ৮৫০ টাকা (ওপেন ডেক), ১১০০-১৬০০ টাকা (এসি)।
ছেড়া দ্বীপ – ট্রলারে যাওয়া আসা ২০০ টাকা।
লোকাল যাতায়াত – সেন্টমার্টিনের বাজারে কিংবা আশেপাশে যাওয়ার ভ্যান ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা।
অন্যান্য খরচ – ২০০টাকা।

*খাবার খরচ
যাত্রার দিন – যাত্রা বিরতিতে রাতের খাবার ১০০-২০০ টাকা।
১ম দিন – নাস্তা ৬০-১০০ টাকা, দুপুরের খাবার ১২০-২২০ টাকা ও রাতের খাবার/বার বি কিউ ২০০-৩০০ টাকা।
২য় দিন – নাস্তা ৬০-১০০ টাকা, দুপুরের খাবার ১২০-২২০ টাকা।
ফিরে আসার দিন – যাত্রা বিরতিতে রাতের খাবার ১০০-২০০ টাকা।

চাইলে আরও কম খরচে খাওয়া দাওয়া করা সম্ভব। বাজারের ভিতরের দিকে হোটেল গুলোতে গিয়ে সাধারণ খাবার খেলে খরচ অনেক কমে যাবে।

*থাকার খরচ
স্ট্যান্ডার্ড হোটেল/রিসোর্ট কাপল রুম বা ডাবল বেড ১৫০০-৩০০০ টাকা। বাজারের দিকে মোটামুটি মানের হোটেল ৮০০-১২০০ টাকা। খুবই পিক সিজন আর সরকারি ছুটির দিনে ভাড়া আরও একটু বেড়ে যাবে। এক রুমে কয়েকজন মিলে থাকলে খরচ ভাগ হয়ে কমে যাবে। পিক সিজন ও ছুটির দিন ছাড়া গেলে খরচ আরও কম হবে। এছাড়া আরও কম খরচে থাকতে চাইলে স্থানীয় মানুষদের বাড়িতে অল্প টাকায় থাকতে পারবেন, এ জন্যে একটু খুঁজে ও কথা বলে দেখতে হবে।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকে


বেশ কিছু ট্রাভেল এজেন্সি সিজনের সময় সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজ অফার করে। ভ্রমণ প্যাকেজ গুলো সাধারণত সেন্টমার্টিন ১ রাত বা ২ রাত থাকা, যাওয়া আসার খরচ, খাবার খরচ সহ সবকিছু অন্তর্ভুক্ত থাকে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজ খরচ নির্ভর করে কোন মানের জাহাজে যাওয়া আসা হবে, কেমন মানের রিসোর্টে রাখবে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার উপর। সাধারণত ট্যুর এজেন্সির প্যাকেজ প্রাইস গুলো ঢাকা থেকে যাওয়া আসা সহ জনপ্রতি ৫,৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

যাওয়া আসার বাস টিকেট, শীপ টিকেট কাটা ও সেখানের রিসোর্টে বুকিং করা অনেকের কাছে ঝামেলার মনে হতে পারে। যদি নিজেরা সবকিছুর আয়োজন করতে না চান, ঝামেলা কমাতে চান তাহলে ভালো দেখে কোন ট্যুর এজেন্সির প্যাকেজে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা


  • সেন্টমার্টিন আমাদের দেশের সম্পদ, তাই প্রকৃতির ক্ষতি হয়ে এমন কিছু করবেন না।
  • সেন্টমার্টিনে মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি কম থাকে। কথা বলতে সমস্যা হতে পারে। তবে টেলিটক তুলনামূলক ভাল কাজ করে।
  • বর্তমানে নিয়মিতভাবে সেন্টমার্টিনে বিজিবি টহল দেয়৷ তারা অনেক সময় রাত ১২টার পর পর্যটকদেরকে বীচ বা জেটি এলাকায় থাকতে নিষেধ করে।
  • সঠিক জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলবেন। দয়া করে প্লাস্টিক/পলিথিন কিছু সৈকতে ফেলে আসবেন না।
  • কম খরচে সেন্টমার্টিন থাকা ও খাওয়ার জন্যে ছুটির দিন গুলোতে না গিয়ে অন্যান্য দিনে যেতে পারেন।
  • বর্তমানে সেন্টমার্টিনে অনেক হোটেল ও কটেজ গড়ে উঠেছে, থাকার জায়গায়র অভাব তেমন হয় না।
  • পর্যটন এলাকায় যে কোন কিছুর জন্যে দরদাম করবেন কেনাকাটায়।
  • মানুষ বেশি হলে আগেই শিপের টিকেট কেটে রাখতে পারেন।
  • দালালদের খপ্পরে পড়বেন না। নিজেই সবকিছু করুন।
  • চাইলে কক্সবাজার বিভিন্ন এজেন্ট থেকে সেন্টমার্টিন এর প্যাকেজ কিনে নিতে পারবেন।
  • সেন্ট মার্টিন যাওয়া আসার সময় জাহাজের ডেক থেকেই সবচেয়ে সুন্দর ভিউ দেখতে পাবেন।
  • সমুদ্রে নামার সময় সতর্ক থাকুন।

সূত্রঃ vromonguide. com