বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী: পর্ব-০১

1
1011
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী: পর্ব-০১
‘রেণু একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল তাই আজ লিখতে শুরু করলাম’

‘রেণু একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল তাই আজ লিখতে শুরু করলাম’

‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এ নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালবাসা, অক্ষয় ভালবাসা, যে ভালবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে’-বঙ্গবন্ধু

তারিখ ৩০.০৫.১৯৭৩

অসমাপ্ত আত্মজীবনী-বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লিখা পান্ডুলিপি।চারখানা খাতা। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে খাতাগুলো নাড়াচাড়া করতে হয়েছে।খাতাগুলোর পাতা হলুদ,জীর্ণ, ও খুব নরম হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় লেখাগুলো এতো ঝাপসা যে পড়া খুবই কঠিন। পাঠোদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন। তবুও কাজটি শেষ করতে পারা গেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এ বইটি নতুন প্রজন্মের পাঠকের জন্য পর্যায়ক্রমে প্রচারের উদ্যেগ নিয়েছে বিএনএ নিউজ২৪ ডটকম। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী-শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটির প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ,দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লি. ঢাকা। গ্রন্থস্বত্ব: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট২০১২।

আজ প্রচারিত হলো  পর্ব-০১

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী

বন্ধুবান্ধবরা বলে, ‘তোমার জীবনী লেখ’। সহকর্মীরা বলে, ‌‘রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।‘ আমার সহধর্মিণী একদিন জেল গেটে বসে বলল, ‌‘বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী’। বললাম, ‌‘লিখতে যে পারি না, আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি’।

একদিন সন্ধ্যায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে জমাদার সাহেব চলে গেলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হল। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।

হঠাৎ মনে হল লিখতে ভাল না পারলেও ঘটনা যতদূর মনে আছে লিখে রাখতে আপত্তি কি? সময় তো কিছু কাটবে। বই ও কাগজ পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে চোখ দুইটাও ব্যথা হয়ে যায়। তাই খাতাটা নিয়ে লেখা শুরু করলাম। আমার অনেক কিছুই মনে আছে। স্মরণশক্তিও কিছুটা আছে। দিন তারিখ সামান্য এদিক ওদিক হতে পারে, তবে ঘটনাগুলি ঠিক হবে বলে আশা করি। আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেণু, আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেণু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।

আমার জন্ম হয় ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহুকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। আমার ইউনিয়ন হল ফরিদপুর জেলার দক্ষিণ অঞ্চলের সর্বশেষ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের পাশেই মধুমতী নদী। মধুমতী খুলনা ও ফরিদপুর জেলাকে ভাগ করে রেখেছে।

টুঙ্গিপাড়ার শেখ বংশের নাম কিছুটা এতদঞ্চলে পরিচিত। শেখ পরিবারকে একটা মধ্যবিত্ত পরিবার বলা যেতে পারে। বাড়ির বৃদ্ধ ও দেশের গণ্যমান্য প্রবীণ লোকদের কাছে থেকে এই বংশের কিছু কিছু ঘটনা জানা যায়।

সমন্বয়ক: ইয়াসীন হীরা, গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী

সম্পাদনায়: আবির হাসান, মুহাম্মদ মহরম হোসাইন, এহক।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here