ঈশ্বরগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ঝুঁকিপূর্ণ: তেরটির নয়টিই ফাঁকা 

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দেয়া ঘর গুলোর বেশির ভাগ ঘরেই তালা ঝুলছে। ঘর নির্মাণের বছর যেতে না যেতেই ফাটল ধরেছে ঘরের দেয়াল ও মেঝেতে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ১৩ টি ঘরের মধ্যে ৯ টি ঘরেই ফাঁকা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের মুক্তাপুর এলাকায় দেখা মিলে এমন দৃশ্যের। শুধুমাত্র একটি ইউপিতেই নয়, উপজেলার অন্যান্য ইউপিতেও এমন খবর পাওয়া গেছে। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের মুক্তাপুর এলাকায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় একসাথে ১৩ টি ঘর নির্মাণ করা হয়। ১৩ টি ঘরের মধ্যে ৪টি পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও ৯ টি ঘরে রয়েছে তালাবন্ধ। যে ৪ টিতে মানু্ষজন বসবাস করছেন, ওইগুলোর দেয়াল এবং মেঝের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। টয়লেটের দরজাগুলোও ভেঙে পড়ায় ওইগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 

এ ছাড়াও ফাঁকা ৯ টি ঘরে এখন ঝুলছে ছোট-বড় তালা। দীর্ঘদিন যাবৎ লোকজনের বসবাস না থাকায়  অপরিচ্ছন্ন পরিবেশও তৈরি হয়েছে ঘরগুলোতে। যেইগুলো রাতের আধারে এখন ভূতুরে বাড়ি বলে মনে হয়। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘর পাওয়ার অযোগ্য এমন পরিবারকেও ঘর দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ওইগুলো এখন ফাঁকা পড়ে আছে। স্থানীয়রা আরও জানান, ঘরগুলো ভূমিহীনদের আশ্রয়ের জন্য করা হলেও ওইগুলো যাদের দখলে রয়েছে, তাদের চেয়ে যোগ্য অসহায় পরিবার আনাচে-কানাচে অনেক আছে। ফাঁকা ঘরগুলোতে পুনরায় যাচাই- বাছাই করে সত্যিকার ভূমিহীনদের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবী জানান স্থানীয়রা। 

ঘর ছেড়ে যাওয়া আশ্রিত ভূমিহীন পরিবারের লোকজনের দাবী, নির্মাণাধীন ঘরগুলোতে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় নির্মাণের কয়েকমাসের মধ্যেই ঘরের দেয়াল ও মেঝেতে ফাটল ধরেছে। এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ ওই ঘরগুলোতে যেকোনো সময় বড়সড় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। যেকারণে বাধ্য হয়েই ঘর ছেড়েছেন তারা। 

অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী কয়েকজন জানান, তালাবন্ধ করে বেশির ভাগ লোকজনই চলে গেছেন। তাদের কেউ থাকেন নিজ বাড়িতেই, কেউ থাকেন ঢাকায়। এমনও পরিবার আছে তারা শুধু ঘর দখল করে তালাবন্ধ করে চলে গেছেন, আর কখনো আসেননি। এ জন্যই বেশির ভাগ ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। 

মুক্তাপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী রওশনারা নামের এক গৃহবধূ জানান, ঘর নির্মাণের পর কিছুদিন কয়েকটি পরিবারের লোকজন বসবাস করলেও পরে ঘরে তারা তালাবন্ধ করে চলে গেছে। এরপর আর তাদের দেখা যায়নি। 

রওশনারা নামে আরেক গৃহবধূ বলেন , নির্মাণের কয়েকদিনের মধ্যেই ঘরের পিলার এবং দেয়ালে বড় আঁকারের ফাটল ধরে। ওই অবস্থায় ঘর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণে তা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। 

মফিজ উদ্দিন নামের স্থানীয় এক বৃদ্ধা বলেন, যাদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকেই তা পাওয়ার যোগ্য নয়। শুধুমাত্র নিজেদের দখলে রাখার জন্য, ঘরগুলো নিয়েছেন তারা।  যেকারণে ঘরগুলো এখন ফাঁকা পড়ে আছে। 

মো. জসিম উদ্দিন নামের একজন বলেন, সরকার থাকার জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করলেও অসহায় পরিবারগুলোর জন্য কোন কর্মের ব্যবস্থা করেনি। যেকারণে ওই অসহায় পরিবারগুলো ঘরে তালাবন্ধ করে বিভিন্ন জায়গায় কর্ম করতে গেছে। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, যারা ঘরগুলোতে থাকতে না চান, তাঁদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুন করে ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ ছাড়াও নির্মাণাধীন ঘরগুলো যেখানে যেখানে সমস্যা হয়েছে, ওইগুলো দ্রুত মেরামত করে দেওয়া হবে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!