কবিগুরুর স্মৃতিমাখা ঈশ্বরগঞ্জের জমিদারবাড়ি

কবিগুরুর স্মৃতিমাখা ঈশ্বরগঞ্জের জমিদারবাড়ি। আজ ২২ শে শ্রাবণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১তম প্রয়াণ দিবস আজ। মহাকালের চেনাপথ ধরে আসা প্রতিবছরের বাইশে শ্রাবণ রবী-ভক্তদের কাছে একটি শূন্য দিন। রবীন্দ্র কাব্যসাহিত্যের বিশাল একটি অংশে যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন, সেই পরমার্থের সঙ্গে তিনি লীন হয়েছিলেন এদিন ।

দুই বাংলার সাহিত্যপ্রেমী তথা সারা বিশ্বের সংস্কৃতিকামী মানুষ রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস পালন করে যথাযোগ্য মর্যাদায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে কবিগুরুর অবস্থান ও আমন্ত্রণস্থলে জন্মজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস পালিত হয় উৎসবের আমেজে।

কবিগুরুর স্মৃতিমাখা এমনই এক আমন্ত্রণস্থল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী জমিদারবাড়ি। ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বন্ধুর আমন্ত্রণে আঠারবাড়ি জমিদারবাড়িতে পদার্পণ করেছিলেন । এদিন কবিগুরু সোনার চাবি দিয়ে জমিদারবাড়ির দ্বার উন্মোচন করেছিলেন।

কবির সম্মানে আঠারবাড়ি রেলস্টেশন থেকে মিছিলযোগে জমিদারবাড়িতে জোড়াসাঁকোর জমিদার পরিবারের কুমার কবিকে বিপুলভাবে সংবর্ধিত করা হয়েছিলো । জানা গেছে, শান্তিনিকেতনে অধ্যয়নের সুবাদে আঠারবাড়ীর সর্বশেষ জমিদার প্রমোদ রায় চৌধুরী ও কবিগুরুর মধ্যে বন্ধুত্বের সূত্রপাত । পরে বন্ধুর আমন্ত্রণেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন আঠারবাড়ী জমিদারবাড়ীতে।

আঠারবাড়ী এসে রায় পরিবারের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন কবি। যার ফলে পরবর্তীতে দুই পরিবারের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

ঈশ্বরগঞ্জের জমিদারবাড়ি

কালের পরিক্রমায় ১৯৪৭ সনে দেশভাগ ও ১৯৫১ সনে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় আঠারবাড়ীর জমিদার পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে উপজেলা সদর হতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জমিদার বাড়ির আঙিনায় ১৯৬৮ সনে ১৫.৬৫ একর জায়গার ওপর আঠারবাড়ী ডিগ্রী কলেজ স্থাপিত হয়। জমিদারের রেখে যাওয়া অনুপম কারুকার্যময় ভবন, পূজার ঘর ও নাটমন্দিরের চিহ্ন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

পরিতাপের বিষয়, ইতিহাসখ্যাত কবিগুরুর স্মৃতিমাখা আঠারবাড়ী জমিদারবাড়ি প্রাঙ্গণে বেশ ক‘বছর যাবত প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা প্রশাসনিক উদ্যোগে ঘটা করে পালন করা হয়না কবির জন্মজয়ন্তী কিংবা প্রয়াণ দিবস। সর্বশেষ ২০১৬ সনে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব কুমার সরকারের উদ্যোগে ২২ শে শ্রাবণ কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে স্থানীয় সাহিত্যপ্রেমীদের নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।

এ ব্যাপারে আঠারবাড়ী ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অজয় কিশোর চৌধুরী বলেন, কবিগুরুর সম্মানে জন্ম কিংবা প্রয়াণ দিবসে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা উচিত। তবে করোনা অতিমারি সহ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কয়েক বছর ধরে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়না। আর তহবিল সঙ্কটের কারণে এবছরও কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে কোনো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. হাফিজা জেসমীন বলেন, কবিগুরুর সম্মানে প্রয়াণ দিবসে অনুষ্ঠানের বিষয়টি কেউ আমাকে অবহিত করেনি।

কবি ফয়সল আহম্মেদ বলেন, যেহেতু আঠারবাড়ী জমিদারবাড়ি এ অঞ্চলের একমাত্র রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত স্থান তাই কবির সম্মানার্থে উপজেলা প্রশাসন কিংবা শিল্পকলা অ্যাকাডেমির উদ্যোগে প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে অন্তত আলোচনা সভার আয়োজন করা যেতো।

কবি সোহরাব পাশা বলেন, আমরা যে মৌলিক শক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযদ্ধে জয়লাভ ও স্বাধীনতা অর্জন করেছি সে শক্তির মূলাধার হচ্ছে সংস্কৃতি। যন্ত্রসভ্যতায় মোহাবিষ্ট হয়ে আমরা ক্রমশ শেকড় থেকে সরে যাচ্ছি। যা কখনো কাম্য নয়। রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্তর মত কবিদের জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে তাঁদের স্মরণ করে আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনায় ঋদ্ধ কিংবা জাগ্রহ হতে হবে বলে জানান তিনি ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!