করোনার কাছে “হার মানবো না” নিয়ে শিল্পীরা

0
987
করোনার কাছে

আফজালুর ফেরদৌস রুমনঃ এই মুহূর্তে সারাবিশ্বেই আতংক এবং ভয়ের নাম করোনা ভাইরাস। মানচিত্রের কোন সীমানা দিয়ে বাধা যায়নি করোনা পরিস্থিতি এবং এর ভয়াবহতাকে। এই ভয়াবহতার ছাপ এখন আমাদের দেশেও। ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে ১০০ এর ঘর। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রানহানি ঘটেছে ১৩ জনের।

বলা যায় এক সংকটময় সময় পার করছি পুরো দেশের মানুষ। পৃথিবীর সব দেশেই এমন সংকটে তারকা, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, ব্যবসায়ী সহ সাধারন মানুষজনও নানা রকমভাবে এক সারিতে এসে দাড়ায় সচেতনতা বাড়াতে, চরম বিপদেও আশা না হারিয়ে নতুন আশায় উজ্জীবিত হতে।

লকডাউনে থাকা অবস্থায় ইতালির একটি এলাকায় নিজের বাসার বারান্দায় বসে কাছের সব প্রতিবেশীদের জন্য একজন গায়কের গান গাওয়ার একটি ভিডিওচিত্র সারাবিশ্বের মানুষের মনে এক অদ্ভুত ভালোলাগায় ভরিয়ে দিয়েছিল। তারপর কিছুদিন আগে কলকাতায় বাসায় থাকার অনুরোধ জানিয়ে এক পুলিশ অফিসারের গাওয়া গান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

প্রতিটা সংকটের সময়ই শিল্পী-কলাকুশলীদের প্রতি আমাদের সাধারন মানুষদের একটি আলাদা প্রত্যাশা থাকে। কারন সেলুলয়েডে যাদের অভিনয়, গান, নাচ, আবৃত্তি আমরা দেখে থাকি। তাদের প্রতি আমাদের আলাদা একধরনের আসক্তি কাজ করে। একই কথা লেখক- সাহিত্যিক -কবি দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই তারা যখন এই পরিস্থিতিতে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি বা মনোবল বাড়ানোর জন্য কোনো কিছু নিয়ে হাজির হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই কাজটা আমাদের মাঝে পজেটিভ কিছু নিয়ে আসতে বাধ্য।

বাংলাদেশের শিল্পীদের এই করোনা পরিস্থিতিতে সাধারন মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, মনোবল বাড়ানো এবং ঘরে থাকার প্রয়োজনীয়তা এসব নানা বিষয় তুলে ধরার প্রয়াস হিসেবে গত ২২ শে মার্চ সংগীতভুবনের অনেককে ট্যাগ করে একটি পোস্ট করেছিলেন মুন্না, করোনা পরিস্থিতিতে একটা সচেতনতা মুলক গান বানানোর অভিপ্রায়ে। সেই পোষ্টে সাড়া দিয়ে অলি গান লিখে ফেলেন দ্রুত।

পরবর্তীতে লুৎফর বেলাল খান, মার্শাল, কোনাল ,ঐশি মিলে গানটা তৈরি করে ফেলেন। পরবর্তীতে নাটক এবং সিনেমার বিভিন্ন সেলিব্রিটিদের অংশগ্রহনে ভিডিওটি নির্মান করেন মুন্না। উল্লেখ্য এখানে শ্যুটিং সবাই নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে ঘরে থেকেই করেছেন। বিভিন্ন কারনে একটু সময় লাগলেও আজ সেই গানটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হাজির হয়েছেন মুন্না এবং তার সাথে এই কাজটিতে অংশগ্রহণ করা পুরো টিম।

‘হার মানবো না’ শিরোনামের এই গানটি সংস্কৃতি অংগনের নানা মাধ্যমের শিল্পীদের একসাথে হয়ে একটি সুন্দর আয়োজন। যা এই সংকটের পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য একটি অন্যরকম ভালোলাগা তৈরি করবে।

এই গানটি নির্মানের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আফজাল হোসেন মুন্না বলেন, নব্বই দশকে এইডস নিয়ে একটা গান নির্মান করা হয়েছিলো বিটিভিতে। তৎকালীন প্রায় সব তারকা শিল্পীদের অংশগ্রহণে সেই গানটি মানুষের মনে জায়গা করে নেবার সাথে সাথে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এই করোনায় ঘরবন্দী অবস্থায় তাই সেইরকম কিছু একটা বানানোর কথাটাই মাথায় আগে আসলো। যেহুতু ভিডিওটি বানাতে হলে একটি গান দরকার তাই সোমেশ্বর অলিকে বলতেই ও একটা গান লিখে দেয়। এতো দুর্দান্ত একটি গান লেখার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই অলিকে।

তবে সোমেশ্বর অলি,বেলাল খান এবং মার্সেলের পরিশ্রম, মেধা এবং কাজটির প্রতি ভালোবাসা না থাকলে আজ এই গানটি নিয়ে সবার সামনে হাজির হওয়া সম্ভব ছিলনা। স্টুডিও সাপোর্ট ছাড়া আমাদের কোনাল, ঐশি, বেলাল খান এবং মার্শাল এই অসাধারন গানটি গেয়েছেন। এবং আবৃত্তির অংশটুকু সামলিয়েছেন লুৎফর হাসান। তাই এই পাঁচজন মানুষের প্রতি আলাদাভাবে কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাতেই হবে।

মিউজিক ভিডিওতে অংশগ্রহণ করার জন্য অনেকেই রাজি ছিলেন। তবে শেষ সময়ে এসে তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ কাজটি করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে মেহের আফরোজ শাওন, সজল, জাকিয়া বারী মম, মৌটুসী, সাইফ, সম্রাট, কায়েস আরজু, মোস্তাফিজ নূর ইমরান সহ প্রত্যেকেই যার যার বাসায় থেকে লিরিক্সের সাথে ঠোট মিলিয়ে নিজ মোবাইলে ভিডিও বানিয়ে পাঠিয়েছেন। কাজটার প্রতি তাদের এই ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

এছাড়াও ফেসবুকের কয়েকজন বন্ধু, ভাই-ব্রাদার এই সময়ে আমাদের প্রিয় শহর ঢাকার কিছু স্থিরচিত্র, ভিডিও এবং ড্রোন ফুটেজ পাঠিয়েছেন যা এই ভিডিওটিকে আরো বেশি সুন্দর করে তুলে ধরতে সাহায্য করেছে।

উল্লেখ্য এই মিউজিক ভিডিওটা সবার জন্যই ওপেন করা হয়েছে। কোনো পেইজ এডমিন বা ইন্ডিভিজ্যুয়াল ব্যক্তি যদি নিজের পেইজ বা প্রোফাইলে সচেতনতার কথা মাথায় রেখে গানটি আপলোড করতে চান তবে তাকে স্বাগতম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here