করোনার টিকা প্রদান নাকি সংবিধানের ধারা…

করোনার টিকা প্রদান নাকি সংবিধানের ধারা প্রধান: টিকা গ্রহণকারীর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেই তালিকায় কেন আমরা নেই, প্রশ্ন করতে পারে সাধারণ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। প্রশ্ন তুলতে পারে গণপরিবহনের শ্রমিকেরা। প্রশ্ন কেন তুলবে না কাঁচা বাজারে সাধারণ খুচরা ব্যবসায়ীরা। প্রশ্ন করা থেকে দূরে থাকবে কেন বস্তিবাসী । যাদের হাত ধরে বাংলাদেশ আজ পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে, সেই গ্যার্মেন্ট শ্রমিক কেন বলবে না যে, করোনা টিকা প্রদান তালিকায় তাদের নাম কোথায় । যারা দুর্দিন বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে তারা কেন করোনা টিকা প্রদান তালিকায় শেষ পূর্বে থাকবে ।

প্রশ্ন আজ আমরা সবাই করতে পারি, কারণ সংবিধানের ১৯ (১) ধারা অনুযায়ী নাগরিক হিসেবে সবার দাবি সমান , সবার অধিকার সমান । যদি বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি করোনার টিকা পাওয়ার অধিকার অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তাহলে সংবিধান ১৯ (১) পরিবর্তন করতে হবে । নাগরিকদের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হল চিকিৎসা। সেই অন্যতম অধিকার যদি বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য হয় তাহলে সংবিধানের ১৯(১), ২৬(১) , ২৭, ২৮ ধারা সাথে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য আলাদা উপধারা রচনা করা এখন সময়ের দাবি । সংবিধান ১৯(১),২৬(১), ২৭ এবং ২৮ অনুযায়ী আমরা যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকি তাহলে আমাদের এবং বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের মধ্যে কোন ধরনের পার্থক্য নেই । আর যদি পার্থক্য না থাকে তাহলে, তাদের সাথে সাধারণ জনতা, শিক্ষার্থী, পরিবহণ শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, গ্যার্মেন্ট শ্রমিক, বস্তিবাসী, খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, কর্মচারী, মা ও শিশু সহ দেশের তরে নিবেদিত সকল প্রাণ এক সাথে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করবো।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে পরিকল্পনার করেছে , সেই তালিকা অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পেতে যাচ্ছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় পেশাজীবী, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎকর্মী, বন্দরকর্মী, বয়স্ক এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। এই শ্রেণীর পেশাজীবী সম্মাননীয় ব্যক্তিবর্গ মানুষগণ আগে টিকা পাবে । এর জন্য নানাভাবে টেকনিক্যাল কার্যক্রম সরকার এবং প্রশাসন করছে ।

বিষয়টি খুব সুন্দর ছিলো কিন্তু নাগরিক অধিকার সমতা রক্ষা করতে চাইলে সংবিধানের ১৯(১),২৬(১), ২৭ এবং ২৮ ধারা গুলো পরিবর্তন কিংবা উপধারা রচনা করা অপরিহার্য হয়ে পরেছে । কারণ, যদি এই বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হয় তাহলে সংবিধানের ১৯(১),২৬(১), ২৭ এবং ২৮ ধারা গুলো অমান্য করা হবে । যেটা একটি রাষ্ট্রের জন্য কখন মঙ্গলময় হতে পারে না । তাই এখন দুইটি কাজ করা যায় নয় সংবিধানের ধারা পরিবর্তন অথবা সবাইকে টিকা একসাথে নিশ্চিত করণ । যেহেতু সব টিকা একসাথে নিশ্চিত করণ এই মুহুর্তে বাংলাদেশ সরকার এবং প্রশাসন পক্ষে কোন মতে সম্ভব না, তাই আরেকটি কাজ করা যেতে পারে সেটা হল, এলাকা ভাগ করে টিকা প্রদান, এহাতে ঐ এলাকায় সকল নাগরিক সমান ভাবে অধিকার ফিরে পাবে । এছাড়া এমন কাজও করা যেতে পারে, যে সকল এলাকায় করোনার ঝুঁকি বেশি সে সকল এলাকায় আগে টিকা প্রদান করা । তাতে ঐ এলাকার সকল নাগরিকের অধিকার সমান ভাবে রক্ষা পাবে এবং করোনার প্রাদুর্ভাব অনেক অংশে কমে যাবে এবং বিভিন্ন ধরনের বিলম্ব না থেকে সাধারণ জনগন সহ সরকার এবং প্রশাসন মুক্তি পাবে ।

শাবলু শাহাবউদ্দিন
শিক্ষার্থী
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Comment

error: Content is protected !!