কাঠগড়ায় বিদায়ী ইসি

কাঠগড়ায় বিদায়ী ইসি। ভোটসহ নানা বিষয়ে বিতর্ক নিয়ে বিদায় নিচ্ছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। আজ তাদের শেষ দিন। গত পাঁচ বছর রাতের অন্ধকারে ভোট করা, পারস্পরিক কলহে লিপ্ত হওয়া, সীমানা বিরোধসহ বিভিন্ন সংকট নিরসন না করা, প্রভাবশালীদের পক্ষে অবস্থানসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অবশ্য কোনো অভিযোগ আমলে নেননি তারা। বরং সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এক ডজন কারণে নূরুল হুদা কমিশন এখন বিচারের কাঠগড়ায়। এর মধ্যে সিইসি নূরুল হুদা দায়িত্ব নিয়েই প্রথম বিতর্কের জন্ম দেন জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা’ বলে। এরপর বিগত পাঁচ বছরে বিতর্ক আর পিছু ছাড়েনি এই কমিশনের।

সংসদীয় আসনের সীমানা ইস্যুর মীমাংসা না করায় দেশব্যাপী বিতর্কের সৃষ্টি  করে এই কমিশন। এ ছাড়া সিইসি-সচিব ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং, পরস্পরবিরোধী বক্তব্য বারবার সমালোচনার ঝড় তুলেছে। বর্তমান মেয়াদে আইন সংস্কার নিয়েও তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল কমিশনকে। নিজেদের ক্ষমতা ছাড়ার (আরপিও ৯১ই) জন্য প্রস্তাব করে বসেছিলেন তারা।

পরে বলেছেন, কপি অ্যান্ড পেস্টের ভুলে এ প্রস্তাব রয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আলাদা প্রস্তাবও করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে স্থানীয় নির্বাচনের পদ-পদবি পরিবর্তনেরও প্রস্তাব করেন তারা। শেষ পর্যন্ত তাতে আর সাড়া পায়নি কমিশন। প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চালু, অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে। সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দিয়ে আরপিও সংশোধন এখনো ঝুলে আছে।

যদিও ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নিয়ে মার্চে কুমিল্লা এবং ডিসেম্বরে রংপুরের ভোটে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিল। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনও ছিল বিতর্কমুক্ত। তবে অন্যান্য সিটি নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ভোট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। এবারের ইউপি ভোটকে অনেকেই রক্তাক্ত নির্বাচন বলেও উল্লেখ করেছেন।

বিদায়ের এক দিন আগে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা নিজেদের মেয়াদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে এবং পরিপূর্ণ নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য। কোনো রকমের কারও কথায় না, আইনের শাসনের মধ্যে থাকার চেষ্টা করেছি।’ নূরুল হুদা বলেন, ‘আমি মনে করি, আমি সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছি। সবগুলো নির্বাচন শেষ করে দিয়েছি। একটা নির্বাচনও বাকি রাখিনি। ১০ তারিখ যেটা ছিল, সেটার সময় হয়েছিল, সব নির্বাচন শেষ করে এবার আমরা পরিপূর্ণভাবে নির্বাচন শেষ করেছি।’

অভিযোগ শুরু গাজীপুর ও খুলনার নির্বাচনে: ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর ও খুলনা সিটির ভোট নিয়ে অভিযোগ উঠতে শুরু করে এই ইসির বিরুদ্ধে। এই নির্বাচনে বুথ দখল, জাল ভোট, এজেন্ট বের করে দেওয়া এবং পক্ষপাতমূলক আচরণসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এরপর গত পাঁচ বছরের প্রায় সব ভোট নিয়ে কমবেশি অভিযোগ রয়েছে।

রাতে ভোট ও অস্বাভাবিক ফলাফল: স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মতো জাতীয় নির্বাচনেও ইসির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। এমনকি কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণেও নানা অসংগতি দেখা গেছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। নির্বাচনের আগের রাতে বাক্সভর্তি ব্যালটের ছবি বিবিসির সংবাদদাতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আগের রাতে ভোট দেওয়া হয়েছে, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। এই কমিশনার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোট কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে।

প্রায় ৬ হাজার কেন্দ্রে ৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে। এই নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ২০৫টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৬ হাজার ৪৮৪টি। আর ৮০ থেকে ৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫ হাজার ৭১৯টি। এ রকম ভৌতিক ভোট বিশ্বের আর কোনো দেশে হয়েছে বলে জানা নেই।

মীমাংসা হয়নি সংসদীয় আসনের বিরোধ: সংসদীয় আসনের সীমানা জটিলতা জিইয়ে রেখে যাচ্ছে বর্তমান কমিশন। পুরনো সীমানা বহাল রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের নতুন আইনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান ইসি সীমানা জটিলতা জিইয়ে রেখেছে। কেননা সীমানা জটিলতা নিয়ে অনেক মামলা-অভিযোগ দীর্ঘদিন জমা পড়ে ছিল। অনেক এলাকার আসন পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে আদালতে মামলাও রয়েছে। কেননা এখনো অনেক আসনের সীমানা ৯০ কিলোমিটার রয়েছে। তিন-চারটি উপজেলা নিয়েও রয়েছে একটি আসন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অখন্ডতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ৬২টি আসন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো আসনের জনসংখ্যার তারতম্য ২৫ শতাংশের বেশি। এ আসনগুলোর পরিবর্তন এসেছিল ২০০৮ সালে। পরে আসনের সীমানায় তেমন পরিবর্তন আসেনি।

দুর্নীতির অভিযোগ: কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ এনে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেন ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। গত বছর ১৭ জানুয়ারি তারা এ বিষয়ে আরেকটি চিঠি দেন রাষ্ট্রপতিকে। বিশিষ্ট নাগরিকদের এমন অভিযোগের কারণে দেশব্যাপী ইসি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।

সিইসি ও কমিশনার দ্বন্দ্ব: ২০২০ সালে শুধু ভোটার উপস্থিতি নয়, নানা কারণে নির্বাচন কমিশন আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়েছিল। ওই বছরের ১০ আগস্ট ইসির ৬৭তম সভায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও এখতিয়ার প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সচিবের ওপর দ্বিতীয় দফায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চার নির্বাচন কমিশনার।

আইন সংস্কার কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইন, ২০২০’-এর খসড়া কমিশনের জন্য উপস্থাপন এবং কমিশনারদের না জানিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি নিয়েও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর আগে কমিশনে নিয়োগ ও কমিশনারদের পাশ কাটিয়ে ফাইল অনুমোদন দেওয়া নিয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে চার কমিশনার একযোগে সিইসি ও সচিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।

বিশেষ বক্তার নামে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণে ‘বিশেষ বক্তা’ ও ‘কোর্স উপদেষ্টা’ হিসেবে বক্তৃতা দিয়ে টাকা নেওয়ায় সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা অডিট আপত্তির মুখে পড়েন। ওই দুই নির্বাচনে এসব পদ তৈরি করে সারা দেশে ৩ কোটি টাকার বেশি সম্মানী ভাতা দিয়েছিল ইসি।

এই ব্যয়ের পর্যালোচনায় স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতর বলেছিল, নির্বাচনী প্রশিক্ষণের জন্য কোর্স উপদেষ্টা, বিশেষ বক্তাসহ ইসির তৈরি করা কয়েকটি পদ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত নয়। ওই ভাতা দেওয়ায় রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ওই সময় বিশেষ বক্তার তালিকায় ছিলেন সিইসি এবং চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির তৎকালীন সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবরা। আর কোর্স উপদেষ্টা ছিলেন তৎকালীন ইসি সচিব।

রক্তাক্ত ইউপি ভোট, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের হিড়িক: বর্তমান ইসির আমলে বেড়ে যায় বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন ১১১ জন। ইউপি নির্বাচনে প্রায় ১৭০০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এবারের ইউপি নির্বাচন অনেকটা বিনা ভোট ও রক্তাক্ত নির্বাচন হয়েছে। ইসি জানিয়েছে, আট ধাপে সারা দেশে মোট ৪ হাজার ১৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১০০ জনের মতো প্রাণহানি হয়েছে। আটটি ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৭১ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী এবারের ইউপি নির্বাচনে ১৩০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

করোনায় ভোট করা নিয়ে বিতর্ক: করোনা মহামারির মধ্যে ভোট আয়োজন করে বিতর্কের মুখে ছিল নির্বাচন কমিশন। ২০২২ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ২১ মার্চ জাতীয় সংসদের তিনটি আসনে উপনির্বাচনের আয়োজন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেন তারা। ওই সময় বিভিন্ন মহল থেকে তিন উপনির্বাচন স্থগিত করার দাবি উঠেছিল।

স্বাস্থ্য অধিদফতরও বলছিল, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণে অটল থাকে ইসি। ২১ মার্চ ভোট গ্রহণ হয় তিন নির্বাচনের। তবে ওই দিন নির্বাচনী এলাকায় ভোটার উপস্থিতি হয় নগণ্য সংখ্যক। নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয় কম ভোটার উপস্থিতির।

ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৫.২৮ ভাগ। পরে সমালোচনার মুখে ২৯ মার্চের চট্টগ্রাম সিটিসহ বেশ কিছু নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন। অক্টোবর থেকে আবারও শুরু হয় নির্বাচন। তবে করোনাকালের মধ্যে ২০২০ সালের সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।

নাম পরিবর্তন নিয়ে বিতর্কে পড়ে ইসি: নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এ নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করে। পরে বিতর্কের মুখে ইসি নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। নির্বাচন কমিশন ইউনিয়ন পরিষদের নাম পরিবর্তন করে ‘পল্লী পরিষদ’, পৌরসভার নাম পরিবর্তন করে ‘নগর সভা’ আর সিটি করপোরেশনের পরিবর্তে ‘মহানগর সভা’ করার প্রস্তাব করেছিল।

নজিরবিহীন কম ভোটার উপস্থিতি: পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনগুলোতেও ভোটের হার ছিল কম। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি উপনির্বাচন হয় চট্টগ্রাম-৮ আসনে; ভোট গ্রহণের হার ছিল ২২.৯৪ ভাগ। ১ ফেব্রুয়ারি ভোট হয় ঢাকার দুই সিটিতে। এর মধ্যে উত্তরে ভোট পড়েছিল ২৫.৮৬ ও দক্ষিণে ভোট পড়েছিল ২৯.০৭ ভাগ। করোনা শুরু হলে ২১ মার্চ ভোট হয় ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনে।

এর মধ্যে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের হার ছিল সর্বনিম্ন- ৫.২৮ ভাগ। গাইবান্ধায় ভোটের হার ছিল ৫৯.৩৬ ও বাগেরহাটে ৫৯.৪৪ ভাগ। এরপর ১৭ অক্টোবর ভোট হয় ঢাকা ও নওগাঁয়। এর মধ্যে ঢাকা-৫ আসনে ভোটের হার ছিল ১০.৪৩ এবং নওগাঁ-৬ আসনে ৩৬.৫০ ভাগ ভোট পড়ে। ১২ নভেম্বর ভোট হয় ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে। এর মধ্যে ঢাকা-১৮ আসনে ভোটের হার ছিল ১৪.১৮ আর সিরাজগঞ্জে ছিল ৫১.৭৬ ভাগ। এমন কম ভোটার উপস্থিতির দায় দলগুলোর প্রতি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

জিয়াকে নিয়ে প্রথম বছরে আলোচনায় ছিলেন সিইসি: নির্বাচন কমিশনের সংলাপে জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা’ বলায় সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এর সমালোচনা করে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এর প্রতিবাদে সংলাপও বর্জন করে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী পদত্যাগই চেয়েছিলেন সিইসি কে এম নূরুল হুদার।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বিদায়ী সাক্ষাৎ: কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছে। এ সময় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম সিইসির সঙ্গে ছিলেন। সাক্ষাৎকালে তারা কমিশনের নির্বাচনী কর্মকান্ডসহ তাদের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম ও উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। তারা দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতির সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ ও জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১-এর বাংলা পাঠ রাষ্ট্রপতিকে হস্তান্তর করেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবলিত জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল ও জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। তাই নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগ, রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণের সহযোগিতা নিয়ে এ কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশন স্থানীয় পর্যায়সহ সব নির্বাচন আরও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠানে সক্ষম হবে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান ও নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!