মইনুদ্দিন চিশতী

সুলতান-উল-হিন্দ, খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (উর্দু/معین الدین چشتی) (ফার্সি: چشتی‎‎,উর্দু: چشتی‎‎ – Čištī) (আরবি: ششتى‎‎ – চিশতী) হলেন চিশতীয় ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি ১১৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ও ১২৩৫ সালে পরলোকগমন করেন। তিনি গরিবে নেওয়াজ (غریب نواز) নামেও পরিচিত।

মইনুদ্দিন চিশতীই উপমহাদেশে প্রথম এই ধারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত করেন। তিনি ভারতে চিশতী ধারার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ধারা বা সিলসিলা এমনভাবে পরিচিত করেন ;পরবর্তীতে তার অনুসারীরা যেমন, কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী, বাবা ফরিদ, নিজামুদ্দিন আউলিয়া সহ (প্রত্যেকে ক্রমানুযায়ী পূর্ববর্তীজনের শিষ্য) আরো অনেকে ভারতের ইতিহাসে সুফি ধারাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।

খাজা মইনুদ্দিন চিশতী
খাজা মইনুদ্দিন চিশতী

ভারতের আজমেরে মইনুদ্দিন চিশতীর দরগাহ
অন্য নাম হযরত খাজা গরিব নেওয়াজ
ব্যক্তিগত
জন্ম ১১৩৮

খোরাসান (আধুনিক আফগানিস্তানে) বা এসফাহন (আধুনিক ইরানে)
মৃত্যু ৬ রজব ১৫ মার্চ ১২৩৫ (বয়স ৯৬–৯৭)

অজয়ামেরু, চৌহান সামবার (বতর্মান অজমের, রাজস্থান, ভারত
ধর্ম ইসলাম
অন্য নাম হযরত খাজা গরিব নেওয়াজ
মুসলিম নেতা
ভিত্তিক আজমের, উত্তর ভারত
কাজের মেয়াদ দ্বাদশ শতাব্দীর শেষদিক ও ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথমদিক
পূর্বসূরী উসমান হারুনী
উত্তরসূরী কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী
পদ সুফিবাদ

 

প্রারম্ভিক জীবন ও নেপথ্য

ধারণা করা হয়, খাজা মইনুদ্দিন চিশতী ৫৩৭ হিজরী/১১৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পারস্যের শকস্থান রাজ্যের চিশতীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পারস্যে বেড়ে উঠেন। পনেরো বছর বয়সে তার পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার পিতার কাছ থেকে একটি বাতচক্র (উইন্ডমিল) ও একটি ফলের বাগান উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন। কিংবদন্তী অনুসারে, একদিন তিনি তার ফলবাগানে জল দিচ্ছিলেন তখন তার ফলবাগানে আসেন বিখ্যাত সুফি শেখ ইবরাহিম কুন্দুজী (কুন্দুজী নামটি জন্মস্থান কুন্দুজ থেকে এসেছে)। যুবক মইনুদ্দিন তটস্থ হয়ে যান এবং কুন্দুজীকে কিছু ফল দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এর প্রতিদানস্বরূপ কুন্দুজী মইনুদ্দিনকে এক টুকরা রুটি দেন ও তা খেতে বলেন। এর পর তিনি তার সম্পত্তি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গরীবদের মাঝে বিতরণ করে দেন। এরপর তিনি বিশ্বের মায়া ত্যাগ করে জ্ঞানার্জন ও উচ্চ শিক্ষার জন্য বুখারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

সুফি দীক্ষা

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে চিশতীয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ সুফি সাধক খাজা উসমান হারুনীর নিকট মুরীদ হন/শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার সেবায় ২০ বছর একাগ্রভাবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে উসমান হারুনী তাকে খিলাফত বা সুফি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেন।

ভ্রমণ

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বহু দেশ ভ্রমণ করেন। তৎকালীন বিভিন্ন জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, দার্শনিকসহ অসংখ্য সুফি সাধকের সাথে সাক্ষাত করেন বলে নানা গ্রন্থে তথ্য পাওয়া যায়। তিনি ইরাকের বাগদাদে আবদুল কাদির জিলানীর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। তার জীবনীতে বর্ণিত আছে যে, এ সময় আব্দুল কাদির জিলানী তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েক শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। তিনি আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোর পরে দিল্লী হয়ে আজমিরে বসতি স্থাপন করেন।

ধর্ম প্রচার

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে কিংবদন্তিতুল্য একজন ঐতিহাসিক সুফি ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বীয় পীর উসমান হারুনীর নির্দেশে ভারতে আগমন করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং তারই মাধ্যমে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। তার বিখ্যাত একটি গ্রন্থ হল “আনিসুল আরওয়াহ”।

খেলাফত প্রদান

তিনি কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করে সিলসিলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন।

মৃত্যু

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ৬৩৩ হিজরীর ৫ রজব দিবাগত রাত অর্থাৎ ৬ রজব সূর্যোদয়ের সময় ইনতিকাল করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। বড় ছেলে খাজা ফখরুদ্দীন চিশতী তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। প্রতিবছর ১লা রজব হতে ৬ রজব পর্যন্ত আজমির শরীফে তার সমাধিস্থলে ওরস অনুষ্ঠিত হয়। নানা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে সমবেত হয়।

এছাড়াও আরো জানতে পড়ুন

মইনুদ্দিন চিশতী হলেন চিশতীয় ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি গরিবে ‘নেওয়াজ’ নামেও পরিচিত। ১১৩৮ ইংরেজিতে (৫৩৭ হিজরীমধ্য এশিয়ায় খোরাসানের অন্তর্গত সিস্তান রাজ্যের সানজার নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ খাজা গিয়াস উদ্দীনমাতার নাম সৈয়দা উম্মুল ওয়ারা মাহিনুর।

শিক্ষাঃ

তিনি পিতার নিকট থেকে প্রাথমিক দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করেন। ৯ বছর বয়সেপবিত্র কুরআন শরীফ মুখস্থ করেন। অতঃপর ১৩ বছর পর্যন্ত পিতার সার্বিক তত্ত্বাবধানে দ্বীনি ইলমে গভীর ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। সমরকন্দের প্রখ্যাত আলেম হযরত শরফুদ্দীন ও বোখারার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত হুসামুদ্দীন (রহঃএর নিকট দীর্ঘ পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও তিনি প্রখ্যাত হাদিসবেত্তা ইমামুল হারামাইন হযরত আবুল মাআলী

সুফিসাধনার সুচনাঃ পনেরো বছর বয়সে তার পিতামাতা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে একটি বাতচক্র (উইন্ডমিলও একটি ফলের বাগান উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন। কথিত আছেএকদিন তিনি তাঁর ফলবাগানে পানি দিচ্ছিলেন, তখন তার ফলবাগানে আসেন বিখ্যাত সুফি শেখ ইব্রাহিম কুন্দুজী  যুবক মইনুদ্দিন তটস্থ হয়ে যান এবং কুন্দুজীকে কিছু ফল দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এর প্রতিদান স্বরূপ কুন্দুজী মইনুদ্দিনকে এক টুকরা রুটি দেন ও তা খেতে বলেন। এই পর তিনি তার সম্পত্তি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গরীবদের মাঝে বিতরণ করে দেন। এরপর তিনি বিশ্বের মায়া ত্যাগ করে জ্ঞানার্জন ও উচ্চ শিক্ষার জন্য বুখারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

সুফিসাধনার পূর্নাতাঃ মঈনুদ্দীন চিশতী বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে চিস্তিয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ ছুফি সাধক খাজা উসমান হারুনীর নিকট মুরীদ হন। তার সেবায় ২০ বছর একাগ্রভাবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে উসমান হারুনী তাকে খেলাফত বা ছুফি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেন।

উপমহাদেশে মঈনুদ্দীন চিশতীঃ তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে সুফিবাদ প্রচারে একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বীয় পীর উসমান হারুনীর নির্দেশে ভারতে আগমন করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং তারই মাধ্যমে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। এ সম্পর্কে একটি কল্পিত গল্প প্রচলিত আছে শুধু শতর্ক করার জন্য গল্পটি উল্লেখ করলাম। যাতে কেউ গল্পটি শুনলে বিভ্রান্ত না হয়।

গল্পটি হলঃ

সুফি মঈনুদ্দীন চিশতী বহু দেশ ভ্রমণ করেন। তৎকালীন বিভিন্ন জ্ঞানীগুণীপন্ডিতদার্শনিকসহ অসংখ্য সুফি সাধকের সাথে সাক্ষাত করেন বলে। তিনি ইরাকের বাগদাদে আব্দুল কাদির জিলানীর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। তিনি তার নিকট শরীয়তের বিভিন্ন সূাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে পান্ডিত্য লাভ করেন। এ সময় আব্দুল কাদির জিলানী তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেনইরাকের দায়িত্ব শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। একই সংবাদ নিজ পীর ওসমান হারুনীর সাথে মদীনায় অবস্থান ও জিয়ারতকালে নবী মুহাম্মদ এর পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন। সেই অবস্থায় তিনি মহানবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট হতে স্বপ্নযোগে দেখলেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার শিয়রে উপবিষ্ট। তিনি তাকে আজমীর শহরের দৃশ্য দেখিয়ে দিলেন। এবং তাকে  প্রয়োজনীয় পথ নির্দেশনা দিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাতে দিলেন একটি সুমিষ্ট আনার। তারপর তার জন্য দোয়ায়ে খায়ের করে যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখে খুবই চিন্তিত হলেন।  কোথায় আজমিরবিশাল হিন্দুস্থানের কোথায় রসূল করিম এর নির্দেশিত আজমীরচিন্তিত অবস্থায় তন্দ্রাছ্ছন্ন হয়ে পড়লেন মইনুদ্দিন চিশ্তী এর হুশ অর্থাৎ জ্ঞান ফিরল তখন হুকুম হল, “হেমঈনুদ্দিনতুমি আমার দ্বীনের মঈন (সাহায্যকারীআজ আমি তোমাকে হিন্দের বেলায়েত দান করলাম। তুমি হিন্দুস্থানে যাও এবং আজমির নামক স্থানে দ্বীনের প্রচার কর। খোদা তোমাকে বরকত দান করবেন সুসমাচার শুনে পরিতৃপ্ত হলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী। এই শব্দ শুনা মাত্রই তিনি খাদিম সাহেবের নিকটে পৌঁছলেন। খাদিম সাহেব তাকে রওজা শরীফে পৌঁছিয়ে আরজ করলেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মঈন উদ্দীন চিশতি উপস্থিত  কথা বলা মাত্রই রওজা শরীফ এর দরজা নিজ হতেই খুলে গেল। হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্যোতির্ময় চেহারায় আবির্ভুত হয়ে এরশাদ ফরমান: “হে কুতুবুল মশায়েখভিতরে এসো মঈন উদ্দীন চিশতি আত্মহারা হয়ে রওজা শরীফের ভিতরে প্রবেশ করলেন। সেখানে নূর  জ্যোতি দেখে তিনি বিমুগ্ধ  বিমূঢ় হয়ে যান।

মন্তব্যঃ আল্লাহর যে সকল সাহাবি রাদিয়াল্লাহ আনহুদের জান্নাহে সার্টিফিকেট দিয়েছেনতাদের কে ও তিনি  ভীষণ প্রয়োজনের সময় স্বপ্ন দ্বারা কোন নির্দেশ প্রদান করেন নি যেমনঃ আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহ আনহু এর সময় জাকাত অস্বীকার কারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা। আলী রাদিয়াল্লাহ আনহু এর সাথে আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহার যুদ্ধ (জঙ্গে জামালের যুদ্ধএবং আলী রাদিয়াল্লাহ আনহু এর সাথে আমিরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহ আনহু যুদ্ধ (সিফ্ফিনের যুদ্ধ)। হোসাইর রাদিয়াল্লাহ আনহু যখন মদীনা থেকে কুফায় রওনা হন এবং কারবালায় মর্মান্তিকভাবে শহীদ হনআল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপ্ন বা অন্য কোনভাবে জানালেন না কেনসে যা হোক তার স্বপ্ন সত্যিও হতে পারে কারন স্বপ্নের কোন সীমা পরিসীমা নেই। যে কেউ যে কোন স্বপ্ন দেখতে পারে আর স্বপ্ন শরীয়তের কোন দলীল নয়। গল্পটি মিথ্যা হওয়ার প্রধান কারন হলঃ রওজা শরীফ এর দরজা খুলে সরাসরি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সাক্ষাত। মৃত্যু পরে এমন সাক্ষাত কুরআন সুন্নাহ বিরোধী। এমন আকিদা থাকলে তিনি মুসলীম থেকে খারিজ হয়ে যাবেন। কারন আল্লাহ বলেন,

 فَإِنَّكَ لَا تُسۡمِعُ ٱلۡمَوۡتَىٰ وَلَا تُسۡمِعُ ٱلصُّمَّ ٱلدُّعَآءَ إِذَا وَلَّوۡاْ مُدۡبِرِينَ (٥٢)

অর্থঃ নিশ্চয়ই তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না। বধিরকেও আহ্বান শোনাতে পারবে না যখন তারা পিছন ফিরে চলে যায়(রুম ৩০:৫২)।

তার নামে ঐতিহাসিক মিথ্যা  কাহিলীঃ

উপরে বর্ণিত কিচ্ছা যা হোক, সত্য কথা হল তিনি উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্যই এসেছিলেন। কিন্তু তার নামে এ সম্পর্কিত অনেক মিথ্যা কল্প কাহিনী বানান হয়েছে যে, তিনি যখন উপমহাদেশে আগমন করেন তখন শিহাব উদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরি পৃত্থিরাজ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন যুদ্ধে পৃত্থিরাজের সেনাবাহিনী পরাস্থ হয় এবং পৃত্থিরাজের সকল দর্প চুর্ন হয় এমন কি মঈন উদ্দীন চিশতীর সাথে তার নানা ধরনের বাদানুবাদ হয় এবং তিনি তার ঐশ্বরিক ক্ষমতা বলে পৃত্থিরাজ পরাস্ত ও অপদস্ত করেন।

যেমনঃ তার শিষ্য কুতুব উদ্দীন বখতীয়ার কাকী (মৃতঃ ৬৫৩ হি), উল্লেখ করেছেন যে৬১৩ হিজরীতে তিনি বাগদাদে তাঁর পীর মঈন উদ্দীন চিশতীর নিকট মুরীদ হন। এরপর কয়েক মাজলিশ তিনি বাগদাদেই থাকেন। বাগদাদে তার পীর উসমান হারুনির নিকট ছিলেন। এরপর তিনি তাঁর সহচরদের নিয়ে আজমীরে আগমন করেন। এভাবে আমরা নিশ্চিত জানতে পারছি যে৬১৩ হিজরী এর পরে হযরত মঈন উদ্দীন চিশতী ভারতে আগমন করেন। হযরত বখতীয়ার কাকী আরো উল্লেখ করেছেন যেআজমীরে অবস্থানকালে আজমীরের রাজা পৃথ্বীরাজ তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতো। একপর্যায়ে তিনি বলেনআমি পৃথ্বিরাজকে মুসলমানদের হাতে জীবিত বন্দী অবস্থায় অর্পণ করলাম। এর কয়েকদিন পরেই সুলতান শাহাবুদ্দীন ঘোরীর সৈন্যগণ পৃথ্বিরাজকে পরাজিত ও বন্দী করে। (আনিসুল আরওয়াহ; দলিলুন আরেফীন ও ফাওয়ায়েদুস সালেকীনসহ পৃ. ৬২১১৯১৩৮)। 

অথচ ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে৬১৩ হিজরীর প্রায় ২৫ বছর পূর্বে ৫৮৮ হিজরীতে তারাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বিরাজকে পরাজিত করে আজমীর দখল করেন। আর ৬১৩ হিজরীতে খাজা মঈন উদ্দীন এর আজমীর আগমনের ১০ বৎসর পূর্বে ৬০৩ হিজরীতে শাহাবুদ্দীন ঘোরী মৃত্যুবরণ করেন। এ থেকে বোঝা যায় যেএ সকল কাহিনী সবই বানোয়াট। অথবা মঈন উদ্দীন (রাহঃ) কে অনেক আগে ভারতে আগমন করতে হবে

শিষ্য কুতুব উদ্দীন বখতীয়ার কাকী (মৃতঃ ৬৫৩ হি), তার লিখিত কিতাব ফাওয়ায়েদুস সালেকীন এ বলেন। ৬১২ হিজরী তে তিনি বাগদাদ ছিলেন। তার অনেক পরে তিনি দিল্লি হয়ে আজমির আসেন। আর এর বহু  আগে আজমীরের রাজা পৃথ্বীরাজ মারা যান। এর সমর্থনে নিচে ফাওয়ায়েদুস সালেকীন” ১২৫ পৃষ্ঠার একটি স্ক্রিন সট দেওয়া হল।

পৃথ্বিরাজ সম্পর্কিত আরও কয়েকটি কাহিনী উল্লেখ করছিঃ

পৃথ্বিরাজ সম্পর্কিত মিথ্যা কাহিনী-০১: 

সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী দুই দুইবার হিন্দুস্থান আক্রমণ করেও সফল হতে পারেননি সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী। তিনি স্বপ্নে দেখলেন শ্বেত শুভ্র বস্ত্রাবৃত এক জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘‘যাও তোমাকে আমি হিন্দুস্থানের শাসন ক্ষমতা দান করলাম।” এ শুভ স্বপ্ন দেখে সুলতান মনস্থির করলেন হিন্দুস্থান অভিযান শুরু করার। ৫৮৮ হিজরি সালে সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে হিন্দুস্থান অভিমুখে রওয়ানা হলেন। এই বাহিনীর প্রধান সেনাপতি কুতুবুদ্দিন আইবেক। তারায়েনা প্রান্তরে দুই বাহিনীর মধ্যে প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হলো। মুসলমানদের প্রচন্ড আক্রমণের সামনে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল পৌত্তলিক সৈন্যবাহিনী। তারা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলোপালিয়ে গেলো সেনাপতি খান্ডে রাও। রাজা পৃথ্বিরাজও সরস্বতী নদীর তীর ধরে পালাবার চেষ্টা করার সময় মুসলমানদের সৈন্যদের হাতে বন্দী হল। শেষাবধি নিহত হল রাজা। ৫৮৮ হিজরি সালে ভয়াবহ এ যুদ্ধে সুলতান সাহাবুদ্দিন ঘোরী বিজয় লাভ করলেন। আরো সামনে এগিয়ে চললো ঘোরী বাহিনী। এর পর সহজেই এক এক করে সরস্বতীসামানা ও হাশিসহ অধিকৃত হল দিল্লী। সুলতান দিল্লীর দায়িত্ব দিলেন কুতুবুদ্দিন আইবেককে। তারপর সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী এগিয়ে চললেন আজমীরের দিকে। তাঁর এই অপ্রতিরুদ্ধ অগ্রাভিযানের সামনে অবনত হলো যুদ্ধে নিহত হিন্দু রাজাদের পুত্রগণ। দেউল নামক স্থানে সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাত করলো রাজপুত্রগণ। মুসলিম শাসনের প্রতি তাদের আনুগত্যের বিনিময়ে সম্রাট তাদেরকে দান করলেন বিভিন্ন রাজ্যের জায়গীদার। সুলতান এগিয়ে চললেন আজমীরের দিকে এর কাফেলা। ইসলাম এদিকে আজমীরে ক্রমাগত বেড়েই চলছে খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী কবুলকারীদের সংখ্যা এখন ল ল। শুধু আজমীরে নয় এখন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী  এর জামাত এখন ছড়িয়ে পড়েছে হিন্দুস্থানের কোণায় কোণায়। দর্শনার্থীদের ভিড় সব সময় লেগেই থাকে। সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী অবশেষে আজমীর এসে পৌঁছলেন। তখন সন্ধ্যা আসন্ন। সূর্যাস্ত হওয়ার পর সচকিত হয়ে উঠলেন সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদঘুরী। দূরে কোথায় আজানের ধ্বনি শোনা যায়। সেদিকে এগিয়ে যেতেই তিনি দেখলেন একদল নুরানী লোক হাত বেঁধে দাঁড়িয়েছেন। দরবেশদের জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন সুলতান। সালাত শেষে জামাতের ইমামের মুখের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠলেন সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী। এইতো সেই জ্যোতির্ময় মহাপুরুষস্বপ্নে যিনি জানিয়েছেন হিন্দুস্থান বিজয়ের সুসংবাদ। সুলতান শ্রদ্ধাভরে পরিচিত হলেন হজরত খাজার সাথে। সুলতান হযরতের মোবারক হাতে বায়াত গ্রহণ করে তার সোহবতে তিন দিন অতিবাহিত করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন । তার প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লীতে রেখে গেলেন কুতুবুদ্দিন আইবেক কে।

মন্তব্যঃ এ ঘটনা ঘটে ৫৮৮ হিজরীতে আর মঈন উদ্দন আজমিরে আসেন ৬১৩ হিজরীর পারে। তাছাড়া  শাহাবুদ্দীন ঘোরী ৬০৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।

পৃথ্বিরাজ সম্পর্কিত মিথ্যা কাহিনী: দিল্লীর দ্বীন হিসেবে নির্বাচিত করলেন হযরত কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকীর উপর।প্রচার ও নওমুসলিমের বিরাট কাফেলার হেফাজতের দায়িত্ব হযরত কাকী।  সফর সঙ্গীগণন সবাই আজমীর শহরের উপকন্ঠে এসে উপস্থিত হলেন খাজা  পরিশ্রান্ত। বিশ্রামের ব্যবস্থা করতেই হয়। এই সেই বেলায়াতের প্রতিশ্রুত কেন্দ্রভুমি আজমীর। চারিদিকে পাহাড়,পাথর মরুভূমি। নিকটেই বৃছায়া। এখানেই বিশ্রামের জন্য উপবেশন করলেন দরবেশদের কাফেলা। স্থানটি ছিল রাজা পৃথ্বিরাজের উষ্ট্র পালের বিশ্রামস্থল। রাজার লোকেরা কিছুণ যেতে না যেতেই   উটের সবাইকে স্থান ত্যাগ করতে বলল। বিস্মিত হলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশতী  দলতো এসে পৌঁছবে সেই সন্ধ্যাবেলায়। অথচ লোকগুলো তাদেরকে এখনই তাড়িয়ে দিতে চায়। তিনি বললেন” ঠিক আছে আমরা চললামতোমাদের উটই এখানে বসে বসে বিশ্রাম করুক।” সে রাতেই মুখে মুখে আগন্তুক দরবেশের আগমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র। সকালে মহারাজ পৃথ্বিরাজও শুনতে পেলেন এক অদ্ভুত সংবাদ। উষ্ট্রশালার কর্মচারীগণ এসে জানালোগতকাল সন্ধ্যায় যে উটগুলো উষ্ট্রশালায় আনা হয়েছিল সবগুলো এখনও শুয়ে আছে। কিছুতেই উঠবার নাম করছে না। সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান দরবেশ দলের ঘটনাও বর্ণিত হলো রাজার কাছে। দরবেশ দলের নেতা উষ্ট্রশালা পরিত্যাগের সময় বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের উটই এখনে বসে বসে বিশ্রাম করুক।” ইতিপূর্বে বিপ্তিভাবে মুসলমান ফকিরদের সম্পর্কে এরকম অনেক কথা রাজার কর্ণগোচর হয়েছিল। চিন্তিত হয়ে পড়লেন রাজা পৃথ্বিরাজ। মনে পড়ে গেল তার রাজমাতার ভবিষ্যতবানীর কথা। তিনি বলেছিলেন এক মুসলমান ফকিরের অভিসম্পাতেই পৃথ্বিরাজের রাজ্য ধ্বংস হবে।” একি তবে সেই ফকিরসম্ভবত এই ফকিরের কথাতেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মচারীদেরকে ফকিরদের কাছে মাপ চাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন রাজা। রাজ আদেশ পালন করল শ্রমিকেরা। হযরত খাজা মইনুদ্দিন  বললেনযাওএ অবস্থা আর থাকবে না।“ উটশালায় ফিরে এসে বিস্ময়ের চিশ্তী  সঙ্গে সবাই লক্ষ করল উটগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল শুরু করেছে। ফকিরের কারামতি দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল।

 পৃথ্বিরাজ সম্পর্কিত মিথ্যা কাহিনী-০৩: খাজা মইনুদ্দিন  এর সোহবতের বরকতে আজমীরের জনগনের অন্তরের অন্ধকার দূর হতে লাগলো। জেগে উঠলো আজমিরের সত্যান্বেষী জনতা। কিন্তু আতংকিত হলো পুরোহিতরাশোষক বর্ণবাদী হিন্দু সমাজ।ভীত হলো হিংস্র রাজপুরুষগণ এবং সামন্তবাদী সম্রাট। ও তার ইসলাম বিদ্বেষী লোকজন রাজদরবারে গিয়ে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী সহচরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো। অভিযোগ শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন রাজাপৃথ্বিরাজ।রাজা একদল সৈন্যকে আদেশ দিলেন ফকির দরবেশদলকে এখনই রাজ্য থেকে বিতাড়িত করতে। রাজার আদেশ পেয়ে শুরু হলো অভিযান। কিন্তু হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী  নির্বিকার। আল্লাহ পাকের সাহায্য কামনা করলেন তিনি। সাথে সাথেই আক্রমনকারীদের কেউ হল অন্ধকারও শরীর হল নিঃসাড়। কেউ হলো ভূতলশায়ী। নিরুপায় হয়ে পায়ে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলো তারা। দয়ার সাগর গরীবে নেওয়াজ হযরত  ক্ষমা করে দিলেন সবাইকে।

 পৃথ্বিরাজ সম্পর্কিত মিথ্যা কাহিনী-০৪: সুসজ্জিত সৈন্যদল কোন কিছুই যে আর কাজে আসছে না। এক দূরাগত ফকিরের নিকট পরাজয় বরণ করতে হবে তাকেঐশ্বরিক মতাধর এই ফকিরের আনুগত্য স্বীকার করবেন নাকি তাকে বিতাড়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। এ কি বিস্ময়কর সংকট। চুপ করে থাকলেও বিপদ। বিরুদ্ধাচরণ করলেও সমস্যা।রাজা পৃথ্বিরাজ ভেবে চিন্তে ঠিক করলেনহিন্দু ধর্মের আধ্যাত্মিক সিদ্ধপুরুষদের দ্বারা প্রতিরোধ করতে হবে ফকিরকে। তাই সিদ্ধপুরুষ বলে খ্যাত ‘‘রামদেও” কে অনুরোধ করলেন তার যোগমন্ত্র বলে এই যবন ফকিরকে বিতাড়িত করতে।  এদিকে দলে দলে লোকজন গ্রহন করছে ফকিরের প্রচারিত ধর্ম ইসলাম।রাজা ভেবে চিন্তে ঠিক করলেনহিন্দু ধর্মের আধ্যাত্মিক সিদ্ধপুরুষদের দ্বারা প্রতিরোধ করতে হবে ফকিরকে। তাই সিদ্ধপুরুষ বলে খ্যাত ‘‘রামদেও” কে অনুরোধ করলেন তার যোগমন্ত্র বলে এই যবন ফকিরকে বিতাড়িত করতে।রামদেও রাজী  কে পরাস্ত হলেন। তার দীর্ঘ সাধনালব্ধ শক্তিতে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী  তখন করার বাসনায় হাজির হলেন হযরতের দরবারে। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী  ছিলেন ধ্যানমগ্ন। কিছুক্ষণ পর চোখ খুললেন হযরত। দৃষ্টিপাত করলেন রামদেও খাজা  এর জ্যোতির্ময় চেহারার দিকে। মুগ্ধ হয়ে গেলেন রামদেও। মইনুদ্দিন চিশ্তী তার অলৌকিক শক্তি মুহূর্তের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। অন্ধকারে আলো জ্বললে মুহুর্তেই যেমন করে অন্ধকার অপসারিত হয়। হজরত খাজার কদম মোবারকে লুটিয়ে  পড়লেন রামদেও। স্বীকার করলেন ইসলাম। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী  রাখলেন মোহাম্মদ সাদী। 

পৃথ্বিরাজ সম্পর্কিত মিথ্যা কাহিনী-০৫:  আনা সাগরের পাড় ঘেষে অজস্র মন্দির। আনা সগরের পানি শুধুমাত্র উচ্চ বর্ণের হিন্দু এবং পুরোহিত সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারতো না। নিম্ন বর্ণের হ্ন্দিুরা এটা তাদের ধর্মীয় বিধান বলে মনে করত। কিন্তু মুসলমানরা কি আর বর্ণভেদের ধার ধারেএকদিন আনা সাগরে অজু করতে গেলন হজরত খাজার একজন সাগরেদ। পুরোহিতরা অপমান করে তাড়িয়ে  দিল। সাগরেদ সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী  তখন তিনি হযরত খাজা মোহাম্মদ সাদীকে ‘‘আনা সাগর” থেকে এক ঘটি পানি আনার নির্দেশ দিলেন। নির্দেশ মত মোহাম্মদ সাদী আনা সাগর’ থেকে এক ঘটি পানি আনতেই দেখা গেলো এক আশ্চর্য দৃশ্য। কোথায় সাগরসব পানি তার শুকিয়ে গিয়েছে একেবারে।এই আলৌকিক ঘটনা রাজাকে জানালো প্রজারা। বিব্রত বোধ করলো রাজা। রাজা বাধ্য হয়ে আবারও তাদের প্রজাদের দুর্ব্যবহারের জন্য ফকিরের কাছে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দিলেন। প্রমাদ গুনলেন পুরোহিত সম্প্রদায়। কিন্তু উপায়ন্তর না দেখে তারা  এর কাছে গিয়ে মা ভিা করলেন। মানুষের দুর্দশা দেখে ওখাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী  পুরোহিতদের মার পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদ সাদীকে পুনরায় ঘটিতে ভরা পানি আনা সাগরে ঢেলে দিতে নির্দেশ দিলেন। নির্দেশ পালিত হলো। ঘটির পানি ঢেলে দেয়ারসাথে সাথেই ভরে গেল বিশাল হ্রদ আনা সাগর। এই আলৌকিক ঘটনার পর বহুলোক  এর হাত ধরে। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিল খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী পৃথ্বিরাজ ভেবে পাননা কি করে এ মুসলমান ফকিরকে প্রতিহত করা যায়। কেউ কেউ রাজাকে বুদ্ধি দিলেন বিখ্যাত ঐন্দ্রজালিক অজয় পালকে দিয়ে কিছু করা যায় কিনারাজা তাকেই ডেকে পাঠালেন এবং রাজকীয় পুরস্কারের প্রস্তাব করলেন। অজয় পাল তাকে ঘায়েল করার চেষ্টায় তার সর্বশক্তি দিয়ে খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী পরাজয়ের চেষ্টা করে না পেরে সে তার  ভুল বুঝতে পেরে তার সঙ্গী সাথীসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহন  অজয় পালের নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ করলেন।

পৃথ্বিরাজ সম্পর্কিত মিথ্যা কাহিনী-০৬: 

রাজদরবারের একজন কর্মচারী ছিলেন মুসলমানখাজা মইনুদ্দিন  এর একান্ত অনুরক্ত। সেই কর্মচারীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন রাজা। চিশ্তী   এর কাছে বার বার হেনস্ত হবার সমস্ত ক্ষোভ যেন গিয়ে পড়লো মইনুদ্দিন চিশ্তী   এর তার উপর। মুসলমান কর্মচারী সমস্ত দুঃখের কথা খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী  কাছে বর্ণনা করার পর খাজাকে অনুরোধ করলেন তার জন্য রাজার কাছে একটি সুপারিশ  একান্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে সেই পত্র পাঠাতে। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী  কর্মচারীর পেয়ে একটি সুপারিশ পত্র পাঠালেন। সেই সঙ্গে রাজাকে জানালেন ইসলাম গ্রহণের একান্ত আহ্বান। চিঠি পেয়ে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন পৃথ্বিরাজ। মুসলমান কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করলেন রাজা। সেই সঙ্গে খাজা  এর বিরুদ্ধে উচ্চারণ করলেন অশালীন বক্তব্য। সংবাদ শুনে মইনুদ্দিন চিশ্তী   এর প্রেমময় অন্তরেও প্রজ্জলিত হলো রুদ্ররোষের খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী  আগুন। তিনি এক টুকরা কাগজে লিখে পাঠালেন রাজা পৃথ্বিরাজকে- ‘‘মান তোরা যেন্দা বদস্তে লশকরে ইসলাম বছোপর্দম অর্থাৎ আমি তোমাকে তোমার জীবিতাবস্থাতেই মুসলিম সেনাদের হাতে সুপর্দ করলাম।

তার আমলের নামে বাড়াবাড়ির বর্নণাঃ

তার নামে সনদ বিহীন অনেক কথা  চালু আছে যার সাথে ইসলামি শরীয়তের মিল নেই যেমনঃ এই মহান সুফি সাধক আল্লাহ তায়ালার প্রেমে এমনি মশগুল থাকতেন যেএকাধারে সাত দিন রোজা রাখতেন এবং সামান্য পরিমান আহার্য দিয়ে সাহরি খেতেন ও রোজার এফতার করতেন তিনি প্রতি দিবারাত্র আড়াই হাজার রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন এবং প্রায় প্রতিদিনই পবিত্র কোরআন খতম করতেন তাঁর পরিধানে ছিল মাত্র একখানা চাদর তা কখনো ছিঁড়ে গেলে তিনি নিজ হাতে সেলাই করে পরিধান করতেন কথিত আছেসেসময় গোটা ভারত বর্ষে মোট চার কোটি লোক বাস করতেন তন্মধ্যে নব্বই লাখ লোক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন

মন্তব্যঃ এ সম্পর্কে কোন মন্তব্য না করে শুধু সহীহুল বুখারীর একটি হাদিস উল্লখ করব আর সিদ্ধান্ত আপনার সত্যিকারের অলী হলে উক্ত আমল কতটুকু সত্য।

আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেনতিন ব্যক্তির একটি দলরসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর স্ত্রীগণের কাছেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য আগমন করল। তাদেরকে এ সম্পর্কে অবগত করানো হলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করে তারা বললঃ আমরা নাবীর সমকক্ষ হই কি করে যার আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এ সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বললঃ আমি বিরতিহীনভাবে সারা বছর সিয়াম পালন করব। অন্য জন বললঃ আজীবন সারা রাত সলাত পড়তে থাকব। তৃতীয় ব্যক্তি বললআমি ইবাদাতের জন্য সর্বদা নারী বিবর্জিত থাকব এবং কখনও বিবাহ করব না। (এ কথা শুনে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাছে আসলেন এবং বললেন, তোমরা কি সেই লোক যারা এরূপ কথাবার্তা বলেছআল্লাহর কসমআমি আল্লাহর প্রতি তোমাদের চেয়ে বেশী অনুগত এবং তাকে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি। অথচ তা সত্ত্বেও আমি সিয়াম পালন করি আবার বিরতিও দেই। রাতে নিদ্রাও যাইসলাতও পড়ি।  আর বিবাহও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে তারা আমার উম্মাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। (সহীহ বুখারী হাঃ নং ৪৬৯০ আ.প্র.)

 

ভুয়া কিচ্ছা কাহিনী০১ তার নামে অপর একটা শির্ক কিচ্ছা প্রচলীত আছে, সুফি মঈনুদ্দীন চিশতী স্বয়ং ইরশাদ করেন একদা আমি পীর আমার পীর মুর্শিদ কেবলা ওছমান হারুনী এর খেদমতে এক মজলিশে হাজির হই। সেখানে বেশ কয়েক জন উঁচু স্তরের শায়েখ উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গতঃ কারণে সেখানে আদব জন্য মাথা নীচু করে বসেছিলেন এমন সময় তার পীর ওসমান হারুনী নির্দেশ করেনদু রাকাত ’রাকাত নামাজ আদায় করআমি হুকুম তালিম করলাম অতঃপর ইরশাদ করেনকেবলামুখি হয়ে বসআমি কেবলা মুখী হলাম অতঃপরে তিনি

ইরশাদ করেনসুরায়ে বাকার তিলওয়াত কর আমি বিনীত কন্ঠে সুরা বাক্বারা তিলওয়াত করি।  এবার ইরশাদ হলো আটবার ছোবাহান আল্লাহ পড় আমি হুকুম তালিম করলাম এবারে হুজুর কেবলা দাঁড়িয়ে পড়েন আমার হাত তার হাতে মাঝে তুলে নেন মুর্শিদ পাক এমতাবস্থায় আকাশের দিকে মুখ ফিরালেনদৃষ্টি তার উর্ধ্ব আকাশে অনন্ত পথেএহেন এহেন হালে তিনি ইরশাদ করেনতোমাকে আজ আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে

দিলাম। এতেই আল্লাহতায়ালার সূক্ষ্মতত্ব এবং হাকিকতে এলাহির আড়ালকৃত পর্দাসমূহ উন্মোচন হয়ে গেল এত সল্প সময়ের ভেতর সবকিছু দেখিয়ে দেয়া হলযা কিনা হাজার বছরের ইবাদত রিয়াজতে লাভ হয় না বাস্তবে তা ছিল শুধু একদিন এক এক রাতের মোজাহিদার ফলশ্রুতি (মূলঃ হযরত সাইয়েদ মঞ্জুর ফরিদী আজমীরদৈনিক ইত্তেফাক ১৮ জুলাই ২০০৮)

মন্তব্যঃ পীর সাহের বললেনতোমাকে আজ  আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দিলাম এতেই তিনি আল্লাহতায়ালার সুক্ষতত্ব এবং হাকিকতে এলাহির আড়ারকৃত পর্দাসমূহ উন্মোচন হয়ে গেল আল্লাহর আল্লাহতায়ালার সুক্ষতত্ব যা গায়ের খবর তা কেউ জানে না, জানতে পারবেও না এমন ক্ষমতা পৃথিবীতে কোন নবী রাসূলদের  দেন নি তিনি তার সুক্ষতত্ব যা গায়ের খবর অহির মাধ্যমে যতটুকু নবী রাসূলদের মাধ্যমে প্রকাশ করছেন ততটুকু আমাদের সম্বর এর বাইরে যা বলবে সবই মিথ্যা আর প্রতারণ মাত্র মহান আল্লাহ বলেন,

 قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِى نَفۡعً۬ا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ‌ۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَڪۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِىَ ٱلسُّوٓءُ‌ۚ إِنۡ أَنَا۟ إِلَّا نَذِيرٌ۬ وَبَشِيرٌ۬ لِّقَوۡمٍ۬ يُؤۡمِنُونَ (١٨٨

অর্থ: হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলোনিজের জন্য লাভ -ক্ষতির কোন ইখতিয়ার আমার নেই৷ একমাত্র আল্লাহই যা কিছু চান তাই হয়৷ আর যদি আমি গায়েবের খবর জানতামতাহলে নিজের জন্যে অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না৷ আমিতো নিছক একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা আমি গায়েবের খবর জানতামতাহলে নিজের জন্যে অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না৷   এমন জাতীর জন্য, যারা বিশ্বাস করে।৷  [আরাফ ৭: ১৮৮]

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরিস্কার ভাবে ঘোষনা দিতে বললেন যে, আমি গায়েবের খবর জানলেনিজের অনেক কল্যান করতাম এবং কখনো কোন ক্ষতি আমাকে স্পর্শ করতনা। পরের আয়াতে সুরা নামলে আল্লাহ তাআলা বলেন,

 قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِى ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُ‌ۚ وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ يُبۡعَثُونَ (٦٥)

অর্থ: তাদেরকে বলআল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না৷ এবং তারা জানেনা কবে তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হবে[নামল  ২৭:৬৫]

মহান আল্লাহ আমাদের এহেন শির্ক গল্প থেকে বাচার তৌফিক দান করুক। হক জেনে বাতিল পরিহার করার তৌফিক দান করুক। আমিন

 

ভুয়া কিচ্ছা কাহিনী -০২

খাজা বাবা যখন প্রথম ভারতবর্ষে আসেন তখন পাঞ্জাব হয়ে লাহোরে প্রবেশ করেন। কথিত আছে আল্লাহর এক পথরে চরে তিনি নদী পার হন। পাথরে দাড়ান ভাসমান পানির উপর খাজা বাবা বললেনহে পাথর আমার আ্গে এমনি করে তুমি আর কতোজন কে পার করেছপাথর জবাব দিলহুজুর আপনার আগে আরও দুজন পার করেছি। এখন আপনাকে নিয়ে আড়াই জন হল। খাজা বাবা বললেন,“হে পাথরআমি যদি তাদের তুলনায় অর্ধেক হইতবে আমার পূর্ণতা কিভাবে সম্ভব?” পাথর জবাব দিলেন, হে খাজা, আমি আপনকে নিয়ে যাচ্ছি গঞ্জে বখশর দরবারে। সেখানে আপনার জন্য একটি চিল্লা ঘর সজ্জায়িত আছে।  খানে আপনি ৪০ দিন ধ্যান করেবেন।  আপনার  ৪০ দিন ধ্যান সাধনার পর আপনি পূর্ণ হবেন।  চিল্লা ঘর থেকে ধ্যান সাধনা করে খাজা

 বাবা ৪০ দিন পর বের হলেন। এবার খাজা বাবা কে দেখতে পূর্ণিমার চাদের মতো লাগছে। যে রুমে তিনি ধ্যান 

করেছেন, ঐ রুমের দরোজায় আজো লেখা আছে, হুজুরায়ে এহতেকাফে খাজা মইনুদ্দিন এবার লাহোর ত্যাগ করে ল্লীতে চলে আসলেন। সেখানে তিনি একটি গুহায় রাতের পর রাত ধ্যান করতেন। ইতিহাসে আছে খাজা বাবা

 যখন ধ্যান করে দরোজায় দাঁড়াতেন, তিনি কারো দিকে তাকাতেন না। দরোজায় রাখা একটি পাথর ছিল, খাজা

বাবা  বের হয়ে সর্ব প্রথম পাথরের দিকর তাকালেন। দেখা যেত তার দৃষ্টি পরার পর পাথরটি ঘামত আর পানি ঝরত।

মন্তব্যঃ ধ্যান করাচিল্লা লাগান ইসলামি শরীয়তের কোন বিধান না। এর মাধ্যমে কোন সফলতা থাকতে পারেনা। যদি এর মাঝে কোন কামিয়াবি থাকত তবে। আল্লাহ অহী দ্বারা উম্মতে মুহাম্মদিদের জানাতের। সাহাবি রাদিয়াল্লাহু আনহুমাগন তা পালন করতেন। চার ইমামদের মাঝে কেউ না কেউ বাতলে দিতেন।  ধ্যানের দ্বারা সফলতার দাবি করেছেন গৌতম বুদ্ধআর হিন্দুদের সন্ন্যাসিগন ধ্যানের দ্বারা সিদ্ধিলাভের আশা করে। উক্ত ঘটনা সত্য মিথ্যা বাচ বিচারের দরকার নেই কারন কোন আল্লাহ প্রিয় বান্দা তাহাজ্জুত সালাতজিকির আজগান না করে ধ্যান দ্বারা অলী হবেন ভাবা অন্যায়।

তার বৈবাহিক জীবনঃ তিনি ৫৬১ হিজরীতে অধিক বয়সে বিবাহ করেন তার প্রথম স্ত্রী সামন্ত হিন্দু রাজার কন্যা বিবি আমাতুল্লাহ তাঁর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন এক কন্যাবিবি হাফেজ জামিলা দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম বিবি ইসমাতুল্লাহ বানু তিনি ছিলেন সাইয়িদ হাসান মাশহাদির কন্যা তার গর্ভে জন্ম লাভ করেন পুত্র শায়খ ফখরুদ্দিনশায়খ আবু সাঈদ এবং শায়ক হুসামদ্দিন

এই তরিকার কিছু কিতাবঃ মঈনুদ্দীন চিশতী রচিত বেশ কিছু কাসিদাগজল ও রুবাই রয়েছে যা তার ভক্তরা নিয়মিত তাদের আসরে পাঠ করে। তার নামেও একটি কিতাব আছে‘আনিসুল আরওয়াহ’ আসলে এ কিতারটি তার লেখা কিনা সে সম্পর্কে অনেক সন্দেহ আছে। হাদিসের নামে জালিয়াতী গ্রন্থে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ বলেনএই তরিকার মাশাইখ রচিত বলে কিছু পুস্তক প্রচলিত। এগুলি উস্তাদ বা পীরের সাহচর্য্যের স্মৃতি ও আলোচনা’ হিসেবে রচিত। খাজা মঈন উদ্দীন চিশতী তাঁর উস্তাদ উসমান হারুনীর সাথে তাঁর দীর্ঘ সাহচর্য্যের বিবরণ আনিসুল আরওয়াহ’ নামক পুস্তকে। খাজা কুতুব উদ্দীন বখতীয়ার কাকী তাঁর উস্তাদ মঈন উদ্দীন চিশতীর সাথে তার সাহচর্য্যের স্মৃতিগুলি লিখেছেন দলিলুল আরেফীন’ পুস্তকে। খাজা ফরীদ উদ্দীন গঞ্জে শক্কর তাঁর উস্তাদ কুতুব উদ্দীন এর সাহচর্য্যের স্মৃতিগুলি লিখেছেন ফাওয়ায়েদুস সালেকীন’ পুস্তকে। খাজা নিজাম উদ্দীন আউলিয়া তাঁর উস্তাদ ফরীদ উদ্দীন এর সাহচর্য্যের স্মৃতিগুলি লিখেছেন রাহাতিল কুলব পুস্তকে। প্রসিদ্ধ গায়ক আমীর খসরু তাঁর উস্তাদ নিজাম উদ্দীনের সাহচর্য্যের স্মৃতিগুলি লিখেছেন রাহাতুল মুহিব্বীন পুস্তকে। এ সকল পুস্তক পাঠ করলে প্রতীয়মান হয় যেএগুলি পরবর্তী যুগের মানুষদের রচিত জাল পুস্তক। অথবা তাঁরা কিছু লিখেছিলেন সেগুলির মধ্যে পরবর্তী যুগের জালিয়াতগণ ইচ্ছামত অনেক কিছু ঢুকিয়েছে। এই পুস্তক গুলিতে কুরআন হাদীস ভিত্তিক অনেক ভালো কথা আছে। পাশাপাশি অগণিত জাল হাদীস ও মিথ্যা কথায় সেগুলি ভরা। এ ছাড়া ঐতিহাসিক তথ্যাবলী উল্টাপাল্টা লেখা হয়েছে। এমন সব ভুল রয়েছে যা প্রথম দৃষ্টিতেই ধরা পড়ে। প্রত্যেক বুযুর্গ তাঁর মাজালিসগুলির তারিখ লিখেছেন। সন তারিখগুলি উল্টাপাল্টা লেখা। যাতে স্পষ্টতই বুঝা যায় যেপরবর্তীকালে এঁদের নামে এগুলি জালিয়াতি করা হয়েছে। 

 তার তরিকার আমলঃ ভারতের বিভিন্ন দরবারের চিশতীয়া তরীকার আমলওযীফা ইত্যাদির মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। উপযুক্ত বুযুর্গগণের নামে প্রচলিত পুস্তকাদিতে এ সকল তরীকা’ বা পদ্ধতির কিছুই দেখা যায়না। আবার এ সকল পুস্তকে যে সকল যিকর-ওযীফার বিবরণ রয়েছে সেগুলিও প্রচলিত চিশতীয়া তরীকার মধ্যে নেই। চিশতীয়া তরীকার ক্ষেত্রেও শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী বিবরণের সাথে সাইয়েদ আহমদ ব্রেলবীর বিবরণের পার্থক্য দেখা যায়। আবার তাঁদের দুইজনের শেখানোর পদ্ধতির সাথে বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত চিশতীয়া তরীকার ওযীফা ও আশগালের পার্থক্য দেখা যায়। এগুলির কোনটি অরিজিনাল আর কোনটি বানোয়াট তা জানার কোনো উপায় নেই।

তার তরিকার খেলাফত প্রাপ্ত খলীফাঃ মঈনুদ্দীন চিশতী মাধ্যমেই উপমহাদেশে প্রথম এই ধারা প্রবর্তিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে তাঁর অনুসারীরা যেমন, বখতিয়ার কাকী, ফরিদ, নাজিমদ্দিন আউলিয়াসহ আরো অনেকে ভারতের ইতিহাসে সুফি ধারাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। তবে এদের মধ্যে তিনি কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পন করে সিলসিলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন

মৃত্যুঃ

মঈনুদ্দীন চিশতী ৬৩৩ হিজরীর ৫ রজব দিবাগত রাত অর্থাৎ ৬ রজব সূর্যোদয়ের সময় ইন্তেকাল করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। বড় ছেলে ফখরুদ্দীন চিশতী তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। ভারতের আজমীরে তাকর দাফন করা হয় এবং এ আজমিরে হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি এর মাজার অবস্থিত মোগল সম্রাট আকবর তার মাজার শরিফ বেষ্টনী করে একটি সুরম্য সমাধিসৌধ নির্মাণ করে দেন। ৯৭৮ হিজরীতে বাদশাহ আকবর খাজা সাহেবের মাজার সংলগ্ন স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদটি সাদা ও লাল মর্মর পাথরে নির্মিত। প্রতিবছর ১লা রজব হতে ৬ রজব পর্যন্ত আজমিরে তার সমাধিস্থলে ওরছ অনুষ্ঠিত হয়। আজমীর শরীফ কালক্রমে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের দর্শণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। হিন্দুমুসলিমশিখবৌদ্ধখৃষ্টান সকলে এখানে আসে দর্শক হিসাবে। কিছু অজ্ঞ পীর পন্থী মুসলীম এখানে আসে তাদের মনের আশা পুরন করতে তারা মনে করে আজমীর হল শ্রেষ্ঠ রূহানী রাজধানী এবং  ফয়েজ বরকত হাসিলের মারকাজ অথচ এসব কারনে তারা ইসলাম ও মুসলিম থেকে খারিজ হয়ে যায়। ভারতবর্ষে শিরক ও পৌত্তলিক জাহিলিয়াতের অন্ধকারের সাথে তারা মিলেমিসে শির্ক কাজ করে ইসলামের নামে। তারা মুসলিম দাবি করে কিন্তু ইসলামের নামে বিদআতও করে থাকে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!