প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যে ঘেঁরা গাবরাখালী

ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়। যেখানে বর্তমানে তৈরি করা হচ্ছে গাবরাখালী গারো পাহাড় ও পর্যটন কেন্দ্র।

ময়মনসিংহ জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমানের উদ্যোগ, অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা থেকে অপার সৌন্দর্য্যে ঘেঁরা মনোরম পরিবেশে পিকনিক স্পট মন কেড়ে নিয়েছে দর্শনার্থীদের। যেখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। দুর-দুরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে এই গারো পাহাড় ও পর্যটন কেন্দ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য।

চারপাশে রয়েছে সমতল পরিবেষ্টিত পাহাড়, পাখির কলরব আর সোনালী সূর্যের সূর্যাস্তক্ষণ দেখতে অনেক সুন্দর আর দৃষ্টিনন্দন পানির দৃশ্য যেন শীতল করে দেয় দেহমনকে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কিছু অংশ দেখা যায় এই পাহাড়ের উপর থেকে। সবুজের সমারোহ ও গজারী বাগানের মনোহারি দৃশ্য দেখে দর্শনার্থীদের চোখ ফেলা দায়। পাহাড়ের মাঝখানে নীচু জমি আছে, যা পানিতে ভরে গেলে লেক মনে হবে। নীচু জমিগুলোতে বোরো মৌসুমে ভারত থেকে সরার পানি দিয়ে বোরো ধান আবাদ করা হয়।

১২৫ একর এলাকা জুড়ে ছোট-বড় ৬৭ টি পাহাড় নিয়ে গঠিত এই গাবরাখালী পাহাড়। পর্যটন কেন্দ্রটির পাহাড়গুলো প্রায় ৭০ ফুট থেকে ১৫০ ফুট উচু । যার উপর থেকে দেখা মেলে ভারতের সীমান্ত। যে পাহাড়গুলোর রয়েছে বাহারী নাম- চিতাখলা টিলা, যশুর টিলা, মিতালী টিলা, বাতাসী টিলা ইত্যাদি।

স্বাধীনতারপূর্বে গাবরাখালী এলাকায় আদিবাসী হাজং ও বানাই জনগোষ্ঠির বসবাস ছিল। বর্তমান সেখানে মুসলমান, হিন্দু, গারো জাতির বসবাস। গাবরাখালীর পাশেই ভারতীয় সীমানা। তাই এখান থেকে উপভোগ করা যায় ভারতেরও প্রাকৃতিক অপরূপ দৃশ্য। দেখা যায় ভারতীয় মানুষের কোলাহল।

এই গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি সৌন্দর্য ভ্রমণ পিপাসুদের মন কেড়ে নেয়। ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ের অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সকল বয়সের মানুষকে। জেলা শহর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও পর্যটকরা আসেন এই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য।

এই গাবরাখালীর এক পাহাড়ে মাহবুব শাহ নামে একটি মাজার রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাঁড়া জাগিয়েছে। স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মোঃ মাহবুব আলম নামে এক ব্যক্তির মাজার এটি। তিনি বিহারী ছিলেন এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্বে গাবরাখালীতে এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি গাবরাখালীর পাহাড়গুলোতে গরু চরাতেন এবং সর্বদা তার কাঁধে গরুর রশি ঝুলিয়ে রাখতেন।

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে প্রায় ৬৮ একর জমি নিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে চলছে এই পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন কর্মকান্ড।

সাবেক জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এই গাবরাখালী পাহাড়ী গ্রামটি পর্যটন ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময়। এ পর্যটন কেন্দ্রটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চলের অনেক অসহায়-দরিদ্র মানুষেরা উপকৃত হবে, তৈরি হবে অনেক কর্মসংস্থানেরও।

এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে নানাবিদ সুযোগ-সুবিধা। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, প্রবেশ মূল্য মাত্র ১০ টাকা, রয়েছে প্যাডেল ভোট, লেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ। এছাড়াও শিশুদের জন্য রয়েছে দোলনা, বেবি পিচ, সুপেয় খাবার পানি, দূরের যাত্রীদের জন্য রয়েছে রেস্ট হাউজ, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার।

ভারতের মেঘালয় প্রদেশের পাশ ঘেঁষে পিকনিক স্পটটি তৈরি হওয়ায় ঐ এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ আরো সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এলাকাটি হয়ে উঠবে একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র। এখান থেকে প্রতি মৌসুমে কোটি কোটি টাকা সরকারী রাজস্ব আয় করা যেতে পারে।

প্রাকৃতিক পরিবেশের নানা মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে যেতে পারেন গাবরাখালী গারো হীল পর্যটন কেন্দ্রে। পর্যটন কেন্দ্রটিতে যেতে ময়মনসিংহ থেকে হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার উভয় দিক থেকে বাস, সিএনজি, মাইক্রোবাস দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!