মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ‘চল যাই’

আফজালুর ফেরদৌস রুমনঃ বাংলাদেশের ইতিহাসে মার্চ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাসেই ১৯৭১ সালে প্রকৃত অর্থে আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু করেছিলাম। আমাদের স্বাধীনতা দিবস এই মার্চ মাসের ২৬ তারিখে। ৭১ সালে নয় মাসের সেই রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু উক্তি এবং এই প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা পরিস্থিতি, ত্যাগ, ভয়াবহতার উপলব্ধি নিয়েই ‘চল যাই’ নামের একটি সিনেমা মুক্তি পেতে যাচ্ছে।

সিনেমার গল্পটা কিছুটা এমন যে, পারিপার্শ্বিক নানা অবস্থা এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা হতাশা নিয়ে কিছু তরুন-তরুনী রাজধানী ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে। ঘটনাচক্রে তাদের দেখা হয় একজন রহস্যময় আগন্তুকের সাথে। আগন্তুক তাদের বোঝাতে সক্ষম হয় যে, তার সাথে গেলে নিজেদের ব্যক্তিগত নানা সমস্যা এবং প্রশ্নের উত্তর মিলবে।

পরবর্তীতে সেই আগন্তুকের ঠিক করা গন্তব্যের দিকেই নতুন করে যাত্রা শুরু হয় তাদের। যাত্রাপথেই নানা কথার মধ্যে দিয়ে উঠে আসে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। গল্পের শেষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জে। কিন্তু সিনেমার গল্প এখানে শেষ নয়, এখানেই এই সময়ে এসে সেই সময়কার নানা বিষয় যেনো গতি খুজে পায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন যোগসূত্র আর খুজে ফেরা নানা প্রশ্নের উত্তরের দেখা পেয়ে কি বদলে যাবে একঝাক তরুন-তরুনীর উপলব্ধি বা বিবেক!! সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে প্রেক্ষাগৃহে।

সিনেমায় আগন্তুক চরিত্রে অভিনয় করেছেন গুনী এবং দক্ষ অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কয়েকজন তরুণ-তরুণীর দিশা খুঁজে পাওয়ার গল্প ‘চল যাই’। যে গল্পে নিবিড়ভাবে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ। যে যুদ্ধের বাতিঘর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার মতে, ‘এই চরিত্রটি দর্শককে ভাবাবে। মিলন ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন তাসনুভা তিশা, লুসি তৃপ্তি গোমেজ, নাভিদ মুনতাসির,হুমায়রা হিমু, সাব্বির হাসান, হৃতিকা ইসলাম, শিশুশিল্পী শরীফুলসহ আরো অনেকে। ট্রেলারে প্রতিটা চরিত্রের ঝলক দেখা গিয়েছে।

‘আমার বন্ধু রাশেদ’ নামক একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনিয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন হুমায়রা হিমু। ছোট পর্দার এই গুনী অভিনেত্রী ‘চল যাই’ সিনেমায় একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা ‘জাহানারা’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাসনুভা তিশা এই সময়ের ছোট পর্দার অন্যতম আলোচিত এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ‘চল যাই’ সিনেমার ‘সায়ান’ চরিত্রটির মধ্য দিয়ে এক নতুন তাসনুভা তিশা দর্শকদের সামনে আসতে চলেছে বলে মনে করছেন সিনেমার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে।

লুসি তৃপ্তি গোমেজ এর আগে তার অভিনয় দক্ষতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। ‘চল যাই’ সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একজন নির্যাতিত নারী ‘রোকেয়া’র চরিত্রে তার অভিনয় দক্ষতা আবারো নতুন করে প্রশংসা পেতে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ইতিমধ্যে ট্রেলারে সেই ঝলক কিছুটা হলেও দেখা গেছে। সাব্বির হাসান বাংলাদেশের জনপ্রিয় আরজে এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘পিপড়া বিদ্যা’ সিনেমায় আমরা তাকে দেখেছি।

এছাড়া বেশকিছু টিভিসি, মিউজিক ভিডিওতে তার কাজ প্রশংসিত হয়েছিল। ‘চল যাই’ সিনেমায় আবির নামের একজন আধুনিক, স্মার্ট, বুদ্ধিমান তরুনের চরিত্রে তিনি হতাশ করবেন না আমাদের বলেই ধারনা করা যাচ্ছে। নায়রা চরিত্রে হৃতিকা ইসলাম নিজের পুরোটা দিয়েই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বলে জানা গেছে। মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে আলোচিত হৃতিকা এই সিনেমা দিয়ে নিজেকে আরো এগিয়ে যাবেন এটাই আশা। বেশকিছু মিউজিক ভিডিও, টিভিসি, এবং নাটকে৷ কাজ করার মাধ্যমে নাভিদ মুনতাসীর বেশ পরিচিত এবং আলোচিত একটি নাম।

‘খুজি তোরে’ নামক মিউজিক ভিডিওতে তার কাজ আলোচিত হয়েছিল। এছাড়া ‘সুতপার ঠিকানা’ নামক একটি চলচ্চিত্রেও নিজের অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছিলেন। এবার ‘চল যাই’ অভিনেতা হিসেবে তাকে আরো বেশি প্রশংসা এনে দিবে বলে মনে করেন এই দক্ষ এবং পরিশ্রমী তরুন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ‘নিখিল দাস’ এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তূর্য। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র যেকিনা পরবর্তীতে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

খালিদ মাহবুব তূর্যর গল্প ও চিত্রনাট্যে ‘চল যাই’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন মাসুমা রহমান তানি। ক্যামেরায় আছেন সুমন সরকার। গল্প এবং চিত্রনাট্য ছাড়াও এই সিনেমার সংগীত এবং প্রোডাকশন ডিজাইন করেছেন খালিদ মাহবুব তূর্য। এন ইনিশিয়েটিভ মাল্টিমিডিয়া নির্মিত ছবিটি প্রযোজনা করেছেন রাসেল মাহমুদ। সিনেমায় মোট গানের সংখ্যা ছয়টি। বেশকিছু নবীন কিন্তু প্রতিভাবান সুরকার এবং শিল্পীদের ভালোবাসার ফসল এই গানগুলো। ‘চল যাই’ সিনেমার গানগুলো সিনেমার গল্পের সাথে মিল রেখেই তৈরী করা হয়েছে। গানগুলোতে কন্ঠ দিয়েছেন আরিফ, শোয়েব, জুয়েল,রুবায়েত সামি, আরাফাত করিম, নিরোদ কুসুম বড়ুয়া, রিয়েল এবং বিপা।

গল্পের প্রয়োজনেই সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে ঢাকা, মাওয়া, গাজীপুর এবং গোপালগঞ্জে। ফ্ল্যাশব্যাক এবং বর্তমান সময় দুইটি প্রেক্ষাপট বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরার প্রয়াসে দুটি সময়কেই বিশেষ করে ১৯৭১ সালকে সেলুলয়েডে যতটা বিশ্বাসযোগ্য করে ফুটিয়ে তোলা যায় তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে পুরো ‘চল যাই’ টিম। উল্লেখ্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি ‘চল যাই’ চলচ্চিত্রের ট্রেলার উন্মুক্ত করা হয়েছে বাংলাঢোলের ইউটিউব চ্যানেলে। একই চ্যানেলে পাওয়া যাচ্ছে সিনেমার গানগুলো। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৬ই মার্চ মুক্তি পাচ্ছে ‘চল যাই’।

Leave a Comment

error: Content is protected !!