অহংকারী নমরুদের যেভাবে পতন হয়

নমরুদ ছিল হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সময়ে পৃথিবীর বাদশাহ। সে ছিল পৃথিবীর চারজন বড় শাসকের অন্যতম। পবিত্র কোরআনে তার সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। পৃথিবীতে সে-ই সর্বপ্রথম রাজমুকুট পরিধান করেছে এবং নিজেকে খোদা দাবি করেছে। ক্ষমতা ও অহংকার তাকে এতটাই অন্ধ করে দিয়েছিল যে সে বিশ্ব জাহানের মহান রবের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু মহান আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকারের একটি প্রাণী দিয়েই তার সমস্ত অহংকারকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছেন।

অহংকারী নমরুদ যখন আল্লাহর বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিল। হজরত ইবরাহিম (আ.) দূরে আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে দেখালেন। দূরে কালো রঙের একটা মেঘ দেখা যাচ্ছিল। যখন সেটা কাছে চলে এলো, লাখ লাখ মশার গুণ গুণ শব্দে ময়দান মুখরিত হলো। কিন্তু নমরুদ অবজ্ঞার সুরে বলল, এ তো মশা! তুচ্ছ প্রাণী, তাও আবার নিরস্ত্র। এ সময়ের মধ্যে প্রতিটি সৈন্যের মাথার ওপর মশা অবস্থান নিল।

অতঃপর তাদের বুঝে ওঠার আগেই মশাগুলো তাদের নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করল। তারপর দংশন করা শুরু করল। সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলো। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তীরন্দাজরা ঊর্ধ্বে তীর নিক্ষেপ আর পদাতিক সেনারা নিজেদের চারপাশে অন্ধের মতো তরবারি চালাল, যার ফলে একে অপরকে নিজেদের অজান্তেই আহত বা নিহত করে ফেলল।

মশার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন নমরুদ পালিয়ে প্রাসাদে চলে এলো। এ সময় একটি দুর্বল লেংড়া মশা তাকে তাড়া করল এবং কিছুক্ষণ মাথার চারপাশে ঘুরে নাসিকা পথে মস্তিষ্কে ঢুকে পড়ল। তারপর মগজে দংশন করা শুরু করল। নমরুদ যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে উন্মাদের মতো প্রাসাদে প্রবেশ করল এবং যন্ত্রণায় দিশাহারা হয়ে পাদুকা খুলে নিজের মাথায় আঘাত করতে শুরু করল।

অবশেষে মাথায় মৃদু আঘাত করার জন্য একজন সার্বক্ষণিক কর্মচারী নিযুক্ত করল নমরুদ। সুদীর্ঘ ৪০ বছর তাকে এই দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। অবশেষে মাথার আঘাতের ব্যথায় নমরুদের মৃত্যু হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা ৬৮৬)

এভাবেই মহান আল্লাহ যুগে যুগে বহু অহংকারীকে অত্যন্ত অপমানজনকভাবে ধ্বংস করেছেন। নমরুদ নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্ষমতাধর ভাবত, তাই সে নিজেই নিজেকে খোদা দাবি করে বসেছিল। কিন্তু মহান আল্লাহর ছোট্ট একটি মাখলুকই তাকে বুঝিয়ে দিল যে সে কতটা অসহায় ও নগণ্য।

Leave a Comment

error: Content is protected !!