সন্তানের সাথে পিতা মাতার বন্ধুত্বপূর্ণ আচারণ করা উচিত- সোহানুর রহমান (সোহান)। সন্তান প্রতি পালন আজকাল মা-বাবার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যানেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সন্তানকে সঠিক মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে।
কারণ আজকাল ছেলে মেয়েরা প্রয়োজনের থেকে একটু বেশি স্বাধীনতা চায়।আর তারা একটু বেশি সংবেদনশীল। তাই খুব সহজেই ঘটে যায় নানা বিপত্তি। এ কথা বলা হয়ে থাকে যে, একটি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র হচ্ছে তার পরিবার বড় হয়ে সে যে পরিবেশেই শিক্ষা নিয়ে যাক না কেন? পারিপারিক শিক্ষার একটা প্রভাব তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
তাই প্রত্যেক মা-বাবার ই সন্তান প্রতিপালনের কিছু কথা মেনে চলা উচিত। যেমন: সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচারণ করুণ, সন্তান হচ্ছে পিতা মাতার অমূল্য সম্পদ তাই এ আদরের সন্তানের সাথে ভালো সদাচরণ করা উচিত কারণ একজন পিতা মাতার ভালো আচারণের কারণে আপনি হতে পারেন আপনার সন্তানের কাছে বিশ্বস্ত বন্ধু। অবসর সময়ে তার সঙ্গে মাঝে মাঝে তাকে নিয়ে ঘুরতে যান। তাহলেই সে আপনার সঙ্গে সহজ হতে পারবে আর সকল কিছু শেয়ার করতে পারবে। যেমনটা আমার বাবা মা আমার সাথে করেন সব সময়।
আর এসব দিকগুলো হলেই একজন সন্তানকে সু সন্তান হিসাবে গড়ে তুলে যায়। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে দেখা যায় তার উল্টো দিক উচ্চ বিলাসী পিতা-মাতা তো আছেই নিম্ন শ্রেণীও তার সন্তান কোথায় যাচ্ছে কার সাথে যাচ্ছে কি করছে তার কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছে না। অল্প বয়সে অনেকে আবার ছেলেকে শিক্ষা -দিক্ষা না দিয়ে রাজনীতির দিকে দাবিত করছে। আর এজন্য সন্তানদের নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় ঘটছে এবং মাদকের দিকে যুকছে আদরের সন্তানটি।
সম্প্রতি আমার নিজের চোখে দেখা, যেহেতু সাংবাদিকতা পেশায় আছি তাই বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য থানায় যেতে হয়। ঐদিন থানায় ওসি মহোদয়ের এর রুমে বসে তথ্য সংগ্রহে করছিলাম তখন ওসি সাহেব এর ফোনে ৯৯৯ নাম্বারে একটি কল আসে যে এক মেয়েকে তার জন্মদাতা পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে যে, তার পিতা তাকে মারধর করছে এজন্য অভিযোগ করেছে এই দিনই আমাদের ভৈরবর একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে তিনটি ছেলে একসাথে খেলছিলো এসময় সবার ছোট ছেলেটি চেয়ারে বসেছিলো এক বন্ধু ছেলেটিকে চেয়ার থেকে ফেলে দিলে ছেলেটি কান্না করছিলো তাদের বাবা এসে বড় ছেলেটিকে বলছে তোমার ছোট ভাইকে ডাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো তুমি দ্যাখলে না কেন?
বড় ছেলেটি বাবার সাথে রেগে বলে আমি কেন দেখবো এক পর্যায়ে ছেলেটি তার বাবার সাথে রাগ করে বলছে সে কলায় দড়ি দিয়ে আত্মা হত্যা করবে পড়ে ছেলেটিকে আমি জিজ্ঞাস করলে সে বলে তার বাবার দোষ বাবা তার সাথে খারাপ আচারণ করে বাবা বলে ছেলে তার শাসন অনুশাসন শুনে না।
পরে ছেলেটির মায়ের কাছে কাছে জানতে পারি তাদের সন্তানটি ইদানিং কিছু বন্ধুদের সাথে মিশে এসব আচারণ করছে। এই যে নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় এ জন্য কারা দায়ী? আগের আমরা যখন ছোট্ট বেলায় প্রাথমিক শিক্ষা জীবনে স্কুলে ক্লাস শুরু হওয়ার আধা ঘন্টা আগে আমাদের বড়দের সাথে কি রকম আচার ব্যবহার করতে হয় ছোটদের কিভাবে স্নেহ করতে হয় শিক্ষা দিতেন কিন্তু কালের স্রোতে তা আজ আর নেই বললেই চলে কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষক ছাত্র উভয় ফেইজবুক ব্যবহারে আসক্ত; আমরা ভাই -বোন যে বড় হয়েছি আমরা দেখেছি যে আমাদের সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ এবং গৃহিনী মাতা আমাদের সাথে কি পরিমাণ বন্ধুত্বপূর্ণ আচারণ করেছেন তা কেবল আমরাই বলতে পারবো আর তাদের আদেশ, উপদেশ, নিষেধ মেনে চলেছি বলেই আজ আমরা ভাই বোন সমাজে প্রতিষ্ঠিত।
কিন্তু বর্তমান আধুনিক টেকনোলজি সম্পর্কে জানা খুব জরুরী। কিন্তু আমাদের তরুণ সমাজ বেশি ভাগ সময়েই তার অব্যহার করে থাকে। তাই টেকনোলজি ব্যবহার সম্পর্কে আপনার সন্তানকে সচেতন করে তুলুন। সন্তানকে পরিশ্রমী হতে উৎসাহিত করুন, অনেক বাবা-মা-ই ভাবেন আমার সন্তান কেন কষ্ট বা পরিশ্রম করবে। একটু ভেবে দেখুন সে যে পরিশ্রম করবে বা করছে তার সুফল সে নিজেই উপভোগ করবে।
যার ফলে সে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে আর মানসিক প্রশান্তি পাবে।তাই সন্তাকে পরিশ্রম করতে উৎসাহিত দিন।তার জীবন তাকেই উপভোগ করতে দিন। আপনার ইচ্ছে আর স্বপ্ন কখনো সন্তানের উপর বোঝা হিসাবে চাপিয়ে দেয়া যাবে না। আর একজন সন্তান যদি মনে করেন শিশু কালে আমাদের পিতা মাতা আমাদের যে ভাবে লালন পালন করে আদর যত্ম করে বড় করেছেন বড় হয়ে আমরা ও তাদের বৃদ্ধা আশ্রমে না দিয়ে তাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের সাথে ভালো আচারণ ও সেবা যত্ম করা উচিত।
এ সম্পর্কে আমাদের মহানবী (সা.) বলেন, যখন তোমাদের সন্তানেরা কথা বলতে শেখে তখন তাদের কালেমা লা -ইলাহা ইল্লাল্লাহ শিক্ষা দাও (বায়হাকি)।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।