ইউপিতে বিদ্রোহীরা ক্ষমা পেলেও দিতে হবে মাশুল

ইউপিতে বিদ্রোহীরা ক্ষমা পেলেও দিতে হবে মাশুল। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাইব্রিডদের পরাজয় ঘটেছে। নৌকা প্রতীক নিয়েও আওয়ামী লীগে উড়ে এসে জুড়ে বসারা ইউপি ভোটে সুবিধা করতে পারেননি।

জিতেছেন তৃণমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজনীতিবিদরা। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ‘বহিষ্কৃত’ এই নেতাদের এবারও ‘ক্ষমা’ করার চিন্তা করছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ‘শর্ত সাপেক্ষে’ তাদের ক্ষমা করা হলেও দিতে হবে মাশুল। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মতো বহিষ্কৃত বিদ্রোহীদের আবেদন করতে হবে কেন্দ্রে।

দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা সাধারণ ক্ষমা পেলেও ফিরতে পারবেন না দলের আগের পদে। তারা আপাতত প্রাথমিক সদস্য হয়ে কাজ করতে পারবেন। আগামীতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলে ঐক্যের ব্যাপারে মনোযোগ আওয়ামী লীগের। এ জন্য অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন মিটিয়ে ফেলার পাশাপাশি ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বহিষ্কার ও যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো মিটিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ।

এ জন্য ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাধারণ ক্ষমা করা হচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। দলটির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র দুই বছর। সরকারবিরোধী একটি গোষ্ঠী ও জোট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। দেশ-বিদেশে এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ঐক্যের পথ খোঁজা হচ্ছে। সে জন্য দলের ভিতর সৃষ্ট বিভাজনকে দূর করার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। তারা বলছেন, দুই কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি হয়েছে।

প্রথমতো দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও যোগ্য ব্যক্তিরা মনোনয়ন পাননি। তৃণমূল থেকে পাঠানো তালিকায় নানা স্বজনপ্রীতির ঘটনাও ঘটেছে। আবার দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে ছিল না বিএনপি। সে কারণে নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে নিজ দলের প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের হয়তো বিগত উপজেলা নির্বাচনের মতো সাধারণ ক্ষমা করা হতে পারে। তবে এটা কিন্তু এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রার্থীরা সাধারণ ক্ষমা পেলেও দলীয় পদ-পদবিতে ফিরতে পারবেন না। আবার ভবিষ্যতেও কোনো নির্বাচনে তারা নৌকা পাবেন না।’

জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপ থেকেই চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ের সংখ্যা ছিল উল্লেখ করার মতো। চতুর্থ ধাপে এসে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রায় ধরে ফেলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের। পঞ্চম ধাপে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই সংখ্যায় ভারী হয়ে গেছেন।

এ ধাপের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের তুলনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই জয় পেয়েছেন বেশি ইউপিতে। ষষ্ঠ ধাপেও একই চিত্র। গত ছয় ধাপে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ৫ হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে নিজ দলের প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ১ হাজার ৩০ জন। ৬ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ৬৯২টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৩৪১টি ইউনিয়নে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই জয় পেয়েছেন ৩৪৬টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীই ৩৩৮ জন।

ইসির হিসাব বলছে, প্রথম ধাপে ২৪ শতাংশ ও দ্বিতীয় ধাপে ৪০ শতাংশ চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। তৃতীয় ধাপে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের হার বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪৫ শতাংশে। আর চতুর্থ ধাপে তারা জয় পান ৪৯ শতাংশ ইউপিতে। পঞ্চম ধাপে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই ৫০ শতাংশ ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন। স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ, এমনকি ইউনিয়ন থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। এসব বহিষ্কার হওয়া নেতাদের দলে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দলীয় ফোরামের বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিদ্রোহীদের ক্ষমা করা হবে কিংবা ক্ষমা করা হচ্ছে এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। নির্বাচনী সাফল্যের পেছনে আমরা দলের শৃঙ্খলাকে গুরুত্ব দিই। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের ভিতরে মন-কষাকষি ও বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এ মুহূর্তে আমরা দলের শৃঙ্খলাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’ দলটির নেতারা বলছেন, দুই বছর বাকি থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে যা যা করণীয় সে ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘বিদ্রোহীদের নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। ইউপি নির্বাচনে বৃহৎ একটি অংশ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে তাদের বহিষ্কারও করা হয়েছে। আমাদের দলের সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন তারা কখনো নৌকা প্রতীক পাবেন না। এ নির্দেশনা এখনো বহাল আছে। এটাও ঠিক যে, যারা বিদ্রোহী হয়েছিলেন তারাও আমাদের দলের লোক। আগামী দিনের রাজনীতি, জাতীয় নির্বাচনসহ নানা বিষয় মাথায় রেখেই বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

Leave a Comment

error: Content is protected !!