শান্ত দীঘির জলের সৌন্দর্যঘেরা মুক্তাগাছার ছালড়া

0
90
শান্ত দীঘির জলের সৌন্দর্যঘেরা মুক্তাগাছার ছালড়া

প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার ছালড়া গ্রাম। সবুজ-শ্যামলে ঘেরা এখানকার মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কারো মনে দাগ টানবে সে কথা বলাই চলে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনাময় স্থান হয়ে উঠবে শান্ত দীঘির জলের সৌন্দর্যঘেরা মুক্তাগাছার ছালড়া।

এখানে রয়েছে— বেতগাছ ও বাঁশবন, যার ভেতরে জোয়ারের পানি জমে থাকে, আর সেখানকার বেত এবং বাঁশের কচিকাণ্ড অনেকটা সুন্দরবনের শ্বাসমূলের মতো দেখায়। সেই সঙ্গে রয়েছে শালবন। বিশাল কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন দীঘি রয়েছে। শান্ত দীঘির জলের সৌন্দর্য উপভোগে অনেকেই ঘুরতে আসেন ছালড়া।

মুক্তাগাছা উপজেলার দুল্লা ইউনিয়নের গ্রাম ছালড়া ইতোমধ্যে ভ্রমণপিপাসু মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে।

ছালড়া গ্রামটা আবহমান বাংলার চিত্রকে তুলে ধরে। সেখানে রয়েছে গ্রামে ঢোকার পথে বিলের মাঝখান দিয়ে রাস্তা, গ্রামের মানুষের কর্মব্যস্ততা, শালবনের কাঠকুড়ানীদের কাঠ কুড়ানো, কৃষকের হাঁকডাক, বিলে জেলেদের মাছ ধরা, বিশাল বিশাল কয়েকটা দীঘি, বাঁশ ও বেতের বন ও সুন্দর একটি মসজিদ। আর কপাল ভালো থাকলে ঘোড়ার গাড়ি এবং দীঘিতে নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানো যায়।

ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা উপজেলার দূরত্ব ২০ কিলোমিটার এবং মুক্তাগাছা উপজেলা শহর থেকে ছালড়ার দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার।

যেভাবে যাবেন ছালড়ায়— ময়মনসিংহের টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রান্তিক সুপার বাসে করে কালীবাড়ি বাজার (৩০ টাকা) ভাড়া। অথবা প্রথমে সিএনজি (৩০ টাকা) ভাড়া মুক্তাগাছা। এর পর মুক্তাগাছা থেকে প্রান্তিক সুপার বাসে কালীবাড়ি বাজার (ভাড়া-১০ টাকা)। কালীবাড়ি বাজার থেকে ভ্যানে চড়ে ছালড়া বাজার (১০-১৫ টাকা) গেলেই পৌঁছে যাবেন দৃষ্টিনন্দন ছালড়ায়। তবে বর্তমানে ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছায় বিআরটিসির দোতলা বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। যেখানে যাতায়াত খরচ অনেক কম।

জামালপুর থেকে ঘুরতে আসা কলেজ ছাত্রী নন্দিতা বলেন, ফেসবুকের একটি পোস্ট দেখে ছাড়লা আসার আগ্রহ অনেক দিনের হলেও কলেজের ক্লাস ও সময় সুযোগ না পেয়ে এতদিন আসতে পারেননি তিনি। খুবই সুন্দর জায়গা, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসে ভালো লাগে তাদের। তবে দর্শনার্থীদের জন্য থাকা ও বিশ্রামের পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে ভালো হতো। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভ্রমণপিপাসী মানুষের কাছে দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠবে স্থানটি।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থেকে শরিফুল ও আঁখি দম্পতি বলেন, সৌন্দর্যের নিপুণ গাঁথুনি ছালড়া। সপরিবারে ঘুরতে এসে ভালো লাগছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

বৃক্ষ প্রেমিক ও কবি-সাহিত্যিক সাইফুজ্জামান দুদু বলেন, গ্রামীণ ও মনোরম পরিবেশে ঘেরা মুক্তাগাছার ছালড়া। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে এখানে। শালবন, বাঁশ-বেতবাগান ও ছোট-বড় দীঘি আপনার মনে মানসিক প্রশান্তি এনে দেবে। স্থানটি পর্যটকদের কাছে আরও দৃষ্টিনন্দন ও মনোমুগ্ধকর করতে পর্যটকদের নিরাপত্তা, বিশ্রামাগার, খাবারদাবার, আবাসন ব্যবস্থা ও যোগাযোগের মাধ্যম সহজতর করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও এসিল্যান্ড রোমানা রিয়াজ জানান, জায়গাটি ব্যক্তিমালিকানা ও বনের জমি হওয়ায় কিছু জটিলতা রয়েছে। এ কারণে সরকারিভাবে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে জমির মালিক যদি সরকারের নামে লিখে দেন কিংবা বা সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেন, সে ক্ষেত্রে সরকারিভাবে উন্নয়নকল্পে বিশেষ বিবেচনা করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here