মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা বাড়ছে কেন

সড়ক পথের যানবাহনগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেল একটি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৩১ লাখের বেশি, যা মোট যানবাহনের ৬৮ শতাংশ। শুধু ঢাকাতেই নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ৮ লাখের মতো। এর বাইরে একটি বড় অংশের মোটরসাইকেল অনিবন্ধিত।

বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ৫ লাখ নতুন মোটরসাইকেল বিক্রি হয়।

মোটরসাইকেলের চাহিদা যেমন বেড়ে যাচ্ছে তেমনি এর মাধ্যমে সংঘটিত দূর্ঘটনার হারও বেড়ে যাচ্ছে। সড়ক দূর্ঘটনার ৩৫% মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা। আর এই মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার অন্যতম একটি বড়ো কারণ বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো।

একটু তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া, জ্যামে আঁটকে পড়ার ভয় থেকে মোটরসাইকেল চালকরা চিপাচাপা, এদিক সেদিক, সাত-পাঁচ না ভেবেই গাড়ী নিয়ে ছুটতে চায় যার ফলে ঘটে দূর্ঘটনা আর অস্বাভাবিক মৃত্য।

অপর দিকে মোটরসাইকেল চলকদের মধ্যে বেশির ভাগ বর্তমান সমাজের তরুণ। তারা মোটরসাইকেল চলানোটাকে স্মার্টনেস মনে করছে, আর বেপরোয়াভাবে চলানোটা তাদের বাজীতে জিতার মতো। বন্ধুদের সাথে বাজী, সময়ের আগে গন্তব্যে পৌঁছানো, আর স্পিডে চালানোটা তাদের নেশায় পরিণত হচ্ছে।

যার ফলে দেখা যাচ্ছে দূর্ঘটনার শিকার যদি ১০০ জন হয় ৮০ জনে মারা যাচ্ছে। আর যদিও প্রাণে বেঁচে যাচ্ছে কেউ কেউ তবে তাদের হয় হাত থাকছে না, না হয় পা থাকছে না কিংবা পঙ্গু হয়ে পড়ে থাকছে বিছানায়। যেটা বেশি কষ্টকর। অথচ তাদের এই পরিণতির জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। একটু ধৈর্য্য আর সচেতনতাই পারে এমন দূর্ঘটনার হাত থেকে জীবনকে রক্ষা করতে।

একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। সময়ের চাহিদা, যুগের পরিবর্তনে, মানুষের প্রয়োজনে সমাজের যে পরিবর্ধন, তা অস্বীকার করা বা রোধ করা বোকামি। তাই একে সাধুবাদ দিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে তা সমাধানের উপায় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। কোন চালকেই যেন বেপরোয়াভাবে গাড়ী না চালায় সেদিকে কড়া নজর দিতে হবে। সড়ক আইনকে জোড়ালো করতে হবে। হেলমেট ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ২০০৬ সালের একটি গবেষণা বলছে, ভালো মানের একটি হেলমেট পরলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হওয়ার ঝুঁকি কমে ৭০ শতাংশ। আর মৃত্যুঝুঁকি কমে ৪০ শতাংশ। তাই হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এবং মোটরসাইকেল চালকদের বয়স নির্ধারন করা উচিত নির্দিষ্ট করে বলে মনে করছি। কারণ উঠতি বয়সের ছেলেরা একটু বেশিই অস্থির থাকে তাই এদের দূর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকিও বেশি।

পরিশেষে, সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। দেশ, জাতি, পরিবার এবং নিজের পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জনের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হবে প্রতিটি জীবনকে। জীবনকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে হবে। একটু সময় বাঁচানোর প্রতিযোগিতায়, জীবন নামের মূল্যবান সম্পদকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না, কারণ একটি জীবনের সাথে জড়িত আছে পরিবার, সমাজ এবং দেশ। তাই বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজের মৃত্যুকে আর আমন্ত্রণ জানাবেন না।

লাইজু আক্তার
শিক্ষার্থী,
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, নারায়ণগঞ্জ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!