লালন সাঁইয়ের ১৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

0
204
লালন সাঁইয়ের ১৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ লালন সাঁইয়ের ১৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী । মানুষের ভেতরের অচিন পাখিকে খোঁজ করে ‌তিনি গেয়েছেন- ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়, তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি দিতাম পাখির পায়’। তিনি মানুষের ভেতরের মানুষকে চেনা ও মানুষকে ভজন করে পার করে দিয়েছেন এক জীবন। তিনি ফকির লালন সাঁই। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালির ছেঁউরিয়ায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

প্রতি বছর এ সময় কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় কালিন্দী নদীর ধারে লালন ভক্ত-সাধকদের মিলনমেলা বসে। হয় তিন দিন ধরে অনুষ্ঠান। এবছর করোনাকালের জন্য সেই অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তার পরেও ভক্ত অনুসারীরা অনেকেই লালন সাঁইকে ভক্তি জানাতে তার মাজারে উপস্থিত হয়েছেন।

লালনের গান প্রসঙ্গে বাউলসাধক কফিল শাহ বলেছেন, লালনের গানে সবার ওপরে রয়েছে মানুষ। সবকিছুর সন্ধান পাই তার গানে। কোরআন, বেদ, মানবধর্ম, জগতের সকল ভাবনার উত্তর। কিন্তু লালনকে বুঝতে পারি না। সারা জীবন ধরে লালনেরই সন্ধান করে চলেছি।

যত দিন যাচ্ছে ফকির লালন সাঁইয়ের জীবন ও গানের ব্যাপ্তি ততই প্রভাব বিস্তার করছে মানুষের মাঝে। ১১৬ বছর বেঁচে ছিলেন, মৃত্যু হয়েছে ১৩১ বছর আগে। এই দীর্ঘ সময়ও বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাননি। বরং তার সৃষ্টির ঔজ্জ্বল্য বেড়েছে, বেড়েছে পরিধি। ফকির লালন শাহ শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে এক ঐন্দ্রজালিক মোহময়তা বিস্তার করে চলেছেন। দিনদিন তার সে ঐন্দ্রজালিক বলয়ের বিস্তৃতি ঘটছে। অগণিত মানুষ তার বিশাল সৃষ্টি জগতে প্রবেশ করে সন্ধান করছেন যেন লালনেরই।

কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার এক গভীর জঙ্গলে সাধক শিরোমনি ফকির লালন শাহ তার অনুসারী ভক্তদের নিয়ে যে আখড়া গড়ে তুলেছিলেন তা এখন সারা বিশ্বের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ফকির লালন শাহ তার গানের বাণীর ভেতর দিয়ে একটি সুসংঘবদ্ধ জীবন বিধানের নির্দেশনা দিয়েছেন। তার গান এক গভীর দ্যোতনায় এই বিশ্ব-সংসার, মানবধর্ম, ঈশ্বর ও ইহলৌকিক ও পারলৌকিকতা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে বাধ্য করে। সব মরমী সাধকেরই পরম্পরা থাকে। তবে লালনের দ্যুতি এমনই তীব্র ও রহস্যময় যে তারপরে আর কোনো মরমী সাধক নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। দুই শতাব্দী ও চার দশক পেরিয়ে গেলেও আজও লালন মরমী জগতের সার্বভৌম ব্যক্তি।

এদিকে, শিল্পকলা একাডেমি ফকির লালনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গতকাল স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। আয়োজন করা হয়েছিল সাধুমেলার। পাশাপাশি সাধক বাউলদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির বিশাল মাঠ যেন পরিণত হয়েছিল ছেঁউড়িয়ায়। এক প্রান্তে কুঁড়েঘরের আদলে স্থাপিত হয়েছে বাউলকুঞ্জ। সেখানে বাউলরা মেতে উঠেছিলেন গানের সুরে লালন বন্দনায়। লালন ভক্ত সাধুরা বলছিলেন, লালনের গানে সবার ওপরে রয়েছে মানুষ। সবকিছুর সন্ধান পাই তার গানে। কোরআন, বেদ, মানবধর্ম, জগতের সব ভাবনার উত্তর। কিন্তু লালনকে বুঝতে পারি না। সারা জীবন ধরে লালনেরই সন্ধান করে চলেছি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির সচিব মো. আছাদুজ্জামান।

আলোচনা শেষে লালন গবেষণা ও সাধনায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রথম বারের মতো সাত জন লালন গবেষক ও সাধককে সম্মাননা স্মারক প্রদান করে। লালন গবেষণায় সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয় অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী এবং অধ্যাপক ড. শক্তিনাথ ঝা (ভারত)।

লালন সাধনায় সম্মাননা দেওয়া হয় পার্বতী দাস বাউল (ভারত), ফকির মোহাম্মদ আলী শাহ (কুষ্টিয়া), ফকির আজমল শাহ্ (ফরিদপুর), নিজাম উদ্দিন লালনী (মাগুরা), শুরু বালা রায় (ঠাকুরগাঁও)।

সম্মাননা স্মারক হিসেবে প্রত্যেককে দেওয়া হয় ক্রেস্ট, স্মারকপত্র ও ২৫ হাজার টাকা। সম্মাননা ভারতের দুজন ব্যক্তিত্ব করোনার নিষেধাজ্ঞার জন্য আসতে পারেননি। তাদের পুরস্কার পরবর্তী সময়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here