করোনার প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা

করোনার প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কাই বেশি: চীনের উহান প্রদেশে শনাক্ত হওয়া করোনা ভাইরাস এখন বিশ্বব্যাপীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। দিনদিন বেড়ে চলেছে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা। কিন্তু সচেতনতার বালাই নেই। বলা হয়ে থাকে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড কিন্তু এই পরিস্থিতিতে যেন শিক্ষার ক্রান্তিকাল নেমে এসেছে।

শিক্ষার্থীদের যখন বিদ্যা আহরণের চেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে আজ চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ শিক্ষার্থীরা। ঘরবন্দির একঘেয়েমি সময় পার করছে তবে এমন পরিস্থিতি আর ভাল লাগছে না শিক্ষার্থীদের। একপ্রকার হতাশায় দিনযাপন করছে তারা।

অদৃশ্য এক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও খোলেনি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ধাপে ধাপে বাড়ানো হচ্ছে ছুটি। এখন পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও আবার এরই মাঝে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ অবলম্বন এবং লকডাউন ঘোষণা করছে। করোনার প্রভাবে এমন পরিস্থিতিতে দিনদিন শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। অভিভাবকের অসচেতনতা ও দারিদ্র্যের কারণেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। আবার দেখা যায় অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা আসক্ত হয়ে যায় বিভিন্ন গেমস বা সাইটে। অনলাইনে আসক্ত হলেও পিতা-মাতার বোঝার উপায় থাকেনা তখন যে তাদের ছেলে-মেয়ে আদৌও সারাদিনই ক্লাস করছে নাকি অন্যান্য কিছুতে সময় পার করছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনার কারণে অনলাইনে ক্লাস হলেও সেই ক্লাসে অনেক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারেনা। কারণ অনেকেরই ডিভাইস নেই এবং গ্রামে থাকার কারণে নেটওয়ার্ক সমস্যা এমনকি আর্থিক সমস্যার কারণে অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের ডাটা প্যাক কেনার খরচ বহন করতে পারে না। এভাবে অনেক শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়ছে এবং তাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটছে। অনেকেই লেখাপড়া বাদ দিয়ে বিভিন্ন কাজকর্মে যোগদান করেছে কারণ পরিবারের হাল ধরতে হবে তাদের। গ্রামে বা শহরে লক্ষ্য করলে দেখা যায় স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একপ্রকার জোর পূর্বক বিয়ে দেয়া হচ্ছে কারণ এই করোনা কবে স্বাভাবিক হবে তার ঠিক নেই।

এখন ২০২১ সাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও শুধু ধাপে ধাপে বাড়ানো হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নোটিশ কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। এভাবে শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে বোরিং সময় কাটাচ্ছে। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো মিস করছে। করোনায় বেড়েছে বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশাগ্রস্ত। একদিকে সরকারি চাকরির বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে বিভিন্ন দুশ্চিন্তায় পরে শেষ পর্যন্ত অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিচ্ছে। কেউবা শিক্ষা জীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে অনলাইনে পরীক্ষা হলেও তা পরিপূর্ণ হচ্ছে না। কবে শেষ হবে এই মহামারী করোনা ভাইরাস তা এখন পর্যন্ত কেউ জানেনা। এর শেষ পরিনতি বা কি তাও সবার অজানা ?

আমাদের দেশে অনেক পরিবার আছে যারা সন্তানের সন্তানের মুখপানে তাকিয়ে থাকে কবে লেখাপড়া শেষ করে মা- বাবার সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু এই করোনা সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। অনেকেই এহেন পরিস্থিতিতে নিজের স্বপ্নের কথা ভুলে গিয়ে পরিবারের বেহাল অবস্থা দেখে পিতা- মাতা, ভাই- বোনের সুখের জন্য মুখে একবেলা খাবার তুলে দিতে পেশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন কাজে শামিল হচ্ছে। কেউবা রাস্তায় কাঁচামাল, বস্ত্র বিক্রি করছে। আবার কেউবা হাতে তুলে নিচ্ছে কৃষির যনত্রপাতি কিংবা রাস্তায় রাস্তায় অন্য কোনো পণ্য বিক্রি করছেন। কেউ লোকলজ্জার ভয়ে অচেনা জায়গায় গিয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করছে। অনেক কর্মহারা বাবা-মা তাদের সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তিত। শতশত শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ এই মহামারীর কবলে পরে।

এছাড়াও করোনাকালে অভিভাবকের কাজ না থাকা, সন্তানের স্কুল খোলার অনিশ্চয়তা এবং অনিরাপত্তা বোধ থেকে দেশে বেড়ে গেছে বাল্যবিবাহ। বিশেষ করে গ্রামে এই ঘটনাটি বেশি দেখা যায়। এক দিকে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছে। অনেকেই পরিবারের কথা ভেবে লেখাপড়া বাদ দিয়ে বিভিন্ন কাজকর্মে শামিল হচ্ছে অথবা বিপথে যাচ্ছে। মেয়েদের কথা আর কি বলব? সমাজে তাদেরকে হেয় করে অনেক কথা বলা হচ্ছে এবং এহেন পরিস্থিতিতে তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কাই বেশি। শিক্ষার ক্রান্তিকাল কাটিয়ে শিক্ষার বিস্তার নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে নানা রকম সংকট দেখা দেবে এবং এক পর্যায়ে অনেক সমস্যা দেখা দেবে দেশ এবং দশের জন্য। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকারে শেষ না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। তবেই হয়তো কোনো আশার আলো দেখা যাবে।

লেখকঃ সিনথিয়া সুমি
শিক্ষার্থী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
গোপালগঞ্জ

Leave a Comment

error: Content is protected !!