সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ সহায়তা

সাংবাদিকদের সহায়তার জন্য সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টকে ১০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশব্যাপী সাংবাদিকদের সহযোগিতায় এ অর্থ অনুদান দিলেন তিনি।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সংক্রমণের এ দুঃসময়ে দেশব্যাপী সাংবাদিকদের সহযোগিতার জন্য ‘সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’কে ১০ কোটি টাকা দিয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সালেও ‘সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’কে ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নানাভাবে অনুপ্ররেণা দিয়ে আসছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মচারীদের জন্য প্রতিনিয়ত আর্থিক অনুদানসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেওয়াসহ গরিব-অসহায় মানুষের জন্য আর্থিক বরাদ্দ, প্রণোদনা দিয়ে চলেছেন।

গত রবিবার সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের এক জরুরি সভা শেষে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীকালে আরও ২ হাজার সাংবাদিককে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় সরকার কীভাবে সাংবাদিকদের সহায়তা করতে পারে সে ব্যাপারে ট্রাস্টি বোর্ডের জরুরি সভা ডাকা হয়। সভায় আপাতত ২ হাজার সাংবাদিককে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে এককালীন সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া এ অর্থবছরে কল্যাণ ট্রাস্টের নিয়মিত সহায়তার আওতায় ২ শতাধিক সাংবাদিককে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। প্রথম দফায় সারা দেশে দলমতনির্বিশেষে ৩ হাজার ৩৫০ জন সাংবাদিককে সহায়তা দেওয়া হয়।

কার্বন নিঃসরণ বন্ধে ধনী দেশগুলোর প্রধান ভূমিকা পালনের আহ্‌বান প্রধানমন্ত্রীর: বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঠেকাতে কার্বন নিঃসরণ বন্ধে ধনী দেশগুলোকে প্রধান ভূমিকা পালনের আহ্‌বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে আগামীকাল নয়, আজই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।

গতকাল রাতে ফরেন পলিসি ভার্চুয়াল ক্লাইমেট সামিটে ভিডিও বার্তায় এ আহ্‌বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। যদি একটি দেশ কার্বন নিঃসরণ করে তবে এতে প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং প্রতিটি দেশকে এর বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করতে হবে। ধনী দেশগুলো, বিশেষ করে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর উচিত বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ বন্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করা।

শেখ হাসিনা বলেন, নিচের দিকে ১০০টি দেশ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৈশ্বিক গ্রিন হাউস গ্যাস কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী, যেখানে জি-২০ দেশগুলো ৮০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। বর্তমান কভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গোটা বিশ্ব কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে একটি কঠিন সময় পার করছে। কভিড-১৯ ভাইরাসে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা গেছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ছোবল থেকে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার।

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এ সময়ে কভিড-১৯ মহামারীর পরে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিটি দেশের জন্য এখন অনেক বড় হুমকি, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য।

ক্রমাগত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিই সব অনিষ্টের মূল। ক্রমাগত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানব জাতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধে বাস্তব কিছু হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাতসহ ঘন ঘন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং এসব দুর্যোগের ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গেল বছর বন্যায় বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে নিমজ্জিত হয়। সুপার স্লাইকোন, আম্ফানসহ বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত করে। আর এসব কিছু হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গ্রিন হাউস নিঃসরণকারী নয়, যদিও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সদস্য দেশগুলো উল্লেখযোগ্য নিঃসরণকারী নয়। তারপরও আমরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। প্রতিবছর চরম জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বিভিন্ন দুর্যোগে বাংলাদেশ জিডিপির ২ শতাংশ হারাচ্ছে।

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ১ দশমিক ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজার এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ। নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের কথা উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিব বর্ষে সারা দেশে ৩০ মিলিয়ন গাছ লাগানোর কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিযোজন ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণে বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করছে, যা ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান।

বাংলাদেশ ১২ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র এবং উপকূলে ২ লাখ হেক্টর উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তৈরি করার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় দুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ সরকার ঘূর্ণিঝড় সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা

Leave a Comment

error: Content is protected !!