আফজালুর ফেরদৌস রুমনঃ ছোট পর্দার মেধাবী এবং মননশীল নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী ১৩ই মার্চ। আজ সিনেমাটির ট্রেলার রিলিজ দেয়া হয়েছে। টিজার, গান রিলিজ করার পরে সাধারন দর্শকদের মাঝে সিনেমাটি নিয়ে বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং প্রশংসা কুড়িয়েছে ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। তাই ট্রেলার নিয়ে আলাদা একটি কৌতুহল ছিল সবার কাছেই। হতাশ করেনি ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’এর ট্রেলার। রহস্য দিয়ে মোড়ানো একটি প্রেম, নারী-পুরুষের সম্পর্ক, কিছু প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি সাথে দেখাও মিলেছে এই ট্রেলারে।
সচারাচর বাংলা সিনেমায় যেরকল প্লট বা কন্টেন্টের দেখা পাওয়া যায় ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ তার থেকে ভিন্ন একটি স্বাদের গল্প নিয়ে হাজির হচ্ছে একথা বলা যায় নিঃসন্দেহে। সিনেমাটির নাম নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এক ফেসবুক পোস্টে তার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল— “সিনেমার নাম প্রকাশের পর থেকে সর্বাধিক যেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি, সে হলো ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ মানে কি?
আমার কাছে ঊনপঞ্চাশ বাতাস মানে অসম্পুর্ণ প্রশ্বাস। কিন্তু এটি কোন আভিধানিক অর্থ নয়, এটি আমার চলচ্চিত্রের ভাবার্থ। এই ধরনের অনুভূতি ব্যাখাতীত হলেও একটু ব্যখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা যাক। ধরুন আপনি বেঁচে আছেন তাই দম নেন, কিন্তু সেটি পরিপূর্ণ হয় না, কারণ আপনার বাকি প্রশ্বাসটুকু আপনার ভালবাসার মানুষের কাছে আছে। আপনারা একসাথে দম নিলেই কেবল সেটা পরিপূর্ণ হয়, জীবনের স্বাদ পাওয়া যায়। যৌথতায় বিশ্বাসের এই জাতীয় ধারণায় এক ধরনের যুক্তিহীন পাগলামি আছে বৈকি! তো এই হলো মোটা দাগে আমার তরফ থেকে নামের ব্যখ্যা।
ট্রেলারে দেখা মিলেছে সিনেমাটির প্রধান চরিত্র নিরা ও অয়নের। এতে অভিনয় করেছেন শার্লিন ফারজানা ও ইমতিয়াজ বর্ষণ। এই সিনেমা নিয়ে অনেকটা আশাবাদী শার্লিন ফারজানা। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন- ‘পরিপূর্ণ আকারে আমার প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। আর সিনেমাটিতে কাজের অভিজ্ঞতা যদি বলি, আমি তো কম কাজ করি তাই শেখার জায়গাটাও খুব কম। সেই হিসেবে সিনেমাটা আমার জন্য পরিপূর্ণ একটা ওয়ার্কশপ ছিল।
নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল হচ্ছে এমন নির্মাতা যার সাথে কাজ করতে পারার অভিজ্ঞতা মানেই হচ্ছে একটা শিক্ষা সফর। সেই হিসেবে আমি বলবো একটা ধাপ এগিয়েছি আমি। আমার লক্ষ্যই হচ্ছে সিনেমা, সিনেমাতেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চাই।’
‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমার আগে ওয়াহিদ তারেকের ‘আলাগা নোঙর’, এন রাশেদ চৌধুরীর চন্দ্রাবতীর কথা’ ও অঞ্জন সরকার জিমির ‘ক্ষত’তে অভিনয় করেছেন অয়ন। যদিও কোনো সিনেমাই এখন পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। সেই হিসেবে অয়নের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’।
সিনেমার গল্প যখন থেকে শুনেছেন তখন থেকেই সিনেমাটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত তিনি। বাংলা সিনেমার দর্শকদের কাছে এই সিনেমাটি একটি ভিন্নধর্মী গল্প নিয়ে হাজির হচ্ছে, যেটির মেকিং, গান, অভিনয় সবই মন জয় করবে বলেই আশা করেন এই নতুন কিন্তু দক্ষ অভিনেতা।
সিনেমাটিতে আরো অভিনয় করেছেন ইলোরা গওহর, মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, ড.ইনামুল হক, ফারিয়া শামস সেওতি সহ আরো অনেকে। ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ এর শুটিং হয়েছে-ঢাকার মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, ঢাকা মেডিকেল, শাহবাগ, সদরঘাট এলাকায়। কোলাহলপূর্ণ জায়গায় শুটিং করাটা নির্মাতা এবং শিল্পীদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জনাব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমাটি দেখে এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি একটি নিউজ পোর্টালকে দেয়া বক্তব্যতে বলেন- ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’কে আমি চ্যালেঞ্জ বলবো। এই চ্যালেঞ্জ স্থূল বাণিজ্যিক প্রবণতার বিপরীতে, আবার তথাকথিত আর্টফিল্মের ধারণা থেকেও তিনি বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন। আর্টফিল্মের একটা দুর্বলতা হলো, এটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য খুব ব্যাঘ্র থাকে।
দুঃখজনকভাবে পুরস্কার সেই সমস্ত ছবিকেই দেওয়া হয়, যেখানে আমাদের দারিদ্র্য, পশ্চাৎপদতা, ব্যর্থতাগুলো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে! মনে হয় এই নেতিবাচক দিকগুলোই আমাদের একমাত্র বাস্তবতা! মানুষের যে সংগ্রাম, যে আশা এবং এই জনপদে যে নানারকম ইতিবাচক কর্মতৎপরতা চলছে, এখানে যে তরুণরা স্বপ্ন দেখে, তারা যে চিকিৎসক হয়, বিজ্ঞানী হয়, এই জায়গাগুলো আসে না সেসব চলচ্চিত্রে। মাসুদ হাসান উজ্জ্বল এ সমস্ত কিছুকেই এক জায়গায় নিয়ে এসেছেন ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ দিয়ে।
‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ পরিচালনার পাশাপাশি এই সিনেমার কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য, শিল্প নির্দেশনা এবং সঙ্গীত পরিচালনা করছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল নিজেই। সিনেমার গল্প নিয়ে তিনি বলেন, সবার জীবনেই কিছু অনুভূতি থাকে যা ভাষা, প্রতীক কিংবা শব্দে প্রকাশ করা যায় না। অনুভবগুলো অনুভূত হতে হতেই যেন তার প্রকাশের আকৃতি বদলে যায়।
এই রকম অনুভূতির ইংরেজি তর্জমা হতে পারে-ইনকমপ্লিট ব্রেথ। এই অসম্পূর্ণ প্রশ্বাসের সিনেমা এটি। গল্পটা প্রেমের। যে প্রেম কোলাহলকে পরিণত করতে পারে নির্জনতায়। সিনেমাটি নির্মাতার নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘রেড অক্টোবর’র ব্যানারে প্রযোজনা করেছেন আসিফ হানিফ, নির্বাহী প্রযোজকের দায়িত্বে আছেন সৈয়দা শাওন।