চতুর্থ প্রজন্মের ‘সুবর্ণ রুই মাছ’ উদ্ভাবন

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা চতুর্থ প্রজন্মের ‘সুবর্ণ রুই মাছ’ উদ্ভাবন করেছে। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা (বিএফআরআই) দীর্ঘ একযুগ ধরে জেনেটিক গবেষনার মাধ্যমে রুই মাছের চতুর্থ প্রজন্মের নতুন জাত উদ্ভাবন করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে এই জাতটির নামকরণ করা হয়েছে সুবর্ণ রুই মাছ।

রুই মাছের নতুন এই জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল, স্থানীয় জাতের চেয়ে প্রায় ২০.১২ ভাগ অধিক উৎপাদনশীল, খেতে খুব সুস্বাদু এবং দেখতে লালচে ও আকর্ষণীয়। মৎস্য খাতের সাথে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে চলতি বছরের ১০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এই নতুন জাতটি অবমুক্ত এবং চাষীদের মাঝে মাছের পোনা বিতরন করা হয়েছে। নতুন উদ্ভাবিত রুই মাছ মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হলে দেশে প্রায় ৮ টন মাছ অধিক মাছ উৎপাদন হবে।

স্বাদুপানির অন্যতম প্রধান মৎস্য প্রজাতি হচ্ছে রুই। বাংলাদেশে চাষযোগ্য মাছের মধ্যে রুই সবচেয়ে বাণিজ্যিক গুরুত্ব সম্পন্ন, বর্তমানে মৎস্য চাষ প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে হ্যাচারি উৎপাদিত পোনার ওপর নির্ভরশীল।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, হ্যাচারিতে উৎপাদিত রুই মাছের পোনার কৌলিতাত্ত্বিক অবক্ষয় ও অন্তঃপ্রজনন জনিত সমস্যা মৎস্য চাষ উন্নয়নে অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা হতে উত্তরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে র বিজ্ঞানী ড. জোনায়রা রশিদ বলেন যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও হালদা নদীর প্রাকৃতিক উৎসের রুই মাছ সংগ্রহ করে ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘ একযুগ গবেষণা করে কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে রুই মাছের চতুর্থ প্রজন্ম উদ্ভাবন করে।

রুই মাছের নতুন জাতের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলোঃ- স্থানীয় জাতের তুলনায় চতুর্থ প্রজন্মের ‘সুবর্ণ রুই’ ২০.১২ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল। এ মাছের গায়ের রঙ লালচে হওয়ায় দেখতে খুবই আকর্ষণীয় এবং অন্তঃপ্রজনন সমস্যামুক্ত। চলতি বছরের ১০জুন আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন জাতটি (সুর্বণ রুই) অবমুক্ত করা হয়েছে। এই জাতটি চাষ করে মৎস্য চাষী ও খামারীরা লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ ফিস ফিড এন্ড ফার্ম ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সাজ্জাদ হোসাইন বলেন দীর্ঘদিন ব্রুড মাছের আমদানি না হওয়ায় এবং ব্যক্তিগতভাবে বিদেশ থেকে ব্র“ড সংগ্রহ না করায় সুবর্ণ রুই মাছের ব্র“ড পেয়ে খামারীরা খুশি, সাথে সাথে তারা অন্যান্য প্রজাতির ব্র“ড সরবরাহের দাবিও জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ডঃ ইয়াহিয়া মাহমুদ জানিয়েছেন মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে চতুর্থ প্রজন্মের নতুন জাত ‘সুবর্ণ রুই’ স্থানীয় জাতের চেয়ে অধিক উৎপাদনশীল হওয়ায় মৎস্য খাতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে।

সুবর্ণ রুই’ দ্রুত বর্ধনশীল, খেতে সুস্বাদু, দেখতে লালচে ও আকর্ষণীয় এবং অন্ত:প্রজনন সমস্যামুক্ত, এজন্য দ্রুতই মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত হবে বলেও তিনি আশা করছেন।‘সুবর্ণ রুই মাছ’ স্বাদুপানি ও আধা-লবণাক্ত পানির পুকুর, বিল, হাওর-বাওড়ে চাষ করা যাবে, এতে দেশে প্রায় ৮০ হাজার কেজি মাছ অধিক উৎপাদিত হবে বলে গবেষকরা আশাবাদী।

Leave a Comment

error: Content is protected !!