সৈয়দ ফজলুল করিম

সৈয়দ ফজলুল করিম (১৯৩৫–২০০৬) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত, পীর ও রাজনীতিবিদ। তিনি পীর সাহেব চরমোনাই নামে সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। ইসলামের আধ্যাত্মিক শিক্ষার চর্চার পাশাপাশি স্বীয় উস্তাদ মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জীর সাথে তিনি রাজনীতিতে আগমন করেন এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সহ সভাপতি হন। হাফেজ্জীর মৃত্যুর পর তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।

সৈয়দ ফজলুল করিম
সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.)
উপাধি আমীরুল মুজাহিদীন, মাওলানা, পীর সাহেব চরমোনাই
জন্ম ১৯৩৫
চরমোনাই, বরিশাল, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা বাংলাদেশ)
মৃত্যু ২৫ নভেম্বর ২০০৬
চরমোনাই, বরিশাল, বাংলাদেশি
জাতীয়তা বাংলাদেশি
যুগ আধুনিক
সম্প্রদায় সুন্নি
মাজহাব হানাফি
আন্দোলন দেওবন্দি
মূল আগ্রহ রাজনীতি
লক্ষণীয় কাজ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
শিক্ষায়তন জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ
শিষ্য ছিলেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক
ওয়েবসাইট pirsahebcharmonai.com

 

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা



ফজলুল করিম ১৯৩৫ সালে বরিশাল জেলার কোতোয়ালী থানাধীন চরমোনাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক। তিনি পিতার নিকট প্রাথমিক শিক্ষা ও নিজ গ্রাম চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়া বরিশালে মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি ঢাকায় এসে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে ভর্তি হন এবং এখান থেকে ১৯৫৭ সালে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন।

তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন: মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী, আজিজুল হক, আব্দুল মজিদ (ঢাকুবী হুজুর), মাওলানা হেদােয়তুল্লাহ (মুহাদ্দিস সাহেব হুজুর) প্রমুখ। ছাত্রজীবনে তিনি নাছিরে মিল্লাত নামে একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

কর্মজীবন



১৯৫৮ সালে চরমোনাই জামিয়া রশীদিয়ায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। ১৯৭২ সালে তিনি নিজ পিতার কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে পিতা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাকের মৃত্যুর পর তিনি বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির আমীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

তিনি মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জীর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সহ সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ তিনি ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন (বর্তমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠা করেন।

তাসলিমা নাসরিন বিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয়ভাবে গড়ে ওঠা সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়কারীর পদ থেকে উবায়দুল হক পদত্যাগ করলে জোটবদ্ধ শরিক দলসমূহের নেতাদের অনুরোধে তিনি সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০০১ সালোর ১ জানুয়ারি হাইকোর্টের ফতোয়া বিরোধী রায় দেয়ায় সর্বস্তরের আলেমদের নেতৃত্বে গঠিত ইসলামি আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে গড়ে ওঠা আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল।

বিবাহ ও সন্তান-সন্ততি



পীর সাহেব চরমোনাই (রহঃ) ১৯৫৭ সালে লালবাগ মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদীছে অধ্যায়নরত অবস্থায় পিতা-মাতার সিদ্ধান্তে ১৯ বছর বয়সে চরমোনাই নিবাসী (মরহুম) নূর আহমাদ শিকদার সাহেবের কন্যা নূরজাহান হোসনে আরা তহমিনা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের মাত্র তিন বছর পর তাঁর এ স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। এ স্ত্রীর গর্ভে দু’জন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করেন।

তাঁরা হলেন

* মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ মোমতাজুল করীম (মোশতাক)।
* মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী।

প্রথমা স্ত্রীর ইন্তিকালের প্রায় তিন বছর পর পীর সাহেব চরমোনাই (রহঃ) দ্বিতীয় বিবাহ করেন। ভোলার দেউলায় (মরহুম) লুৎফর রহমান তালুকদার সাহেবের কন্যা আলমতাজ বেগমের সাথে এ বিবাহ সম্পন্ন হয়। এ স্ত্রীর গর্ভে দুইজন কন্যা ও সাতজন পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।

কন্যাদ্বয় হলেন



সৈয়দা আফীফা বেগম।
সৈয়দা আরীফা বেগম (মরহুমা)।

পুত্রগণ হলেন



* সৈয়দ মুহাম্মাদ মু’তাসিম বিল্লাহ (মরহুম)।
* মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
* মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
* সৈয়দ মুহাম্মাদ আমীনুল করীম (আযাদ) (মরহুম)।
* মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ জিয়াউল করীম।
* মাওলানা মুফতী সৈয়দ এসহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের।
* মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ নূরুল করীম।

প্রথম পুত্র হযরত মাওলানা সৈয়দ মোমতাজুল করীম (মোশতাক)। তিনি দাওরায়ে হাদীছ পাস করেন। তিনি বর্তমানে ঢাকায় ব্যবসার সাথে জড়িত।

দ্বিতীয় পুত্র হযরত মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী। তিনি আলিয়া মাদ্রাসা হতে কামিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএ এবং মদীনা ইউনিভার্সিটি হতে কুরআন ও হাদীছের উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি জাতীয় মহিলা মাদরাসা রামপুরার মুহাদ্দিছ। তিনি দৈনিক ইত্তেসাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নায়েবে আমীর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তৃতীয় পুত্র সৈয়দ মুহাম্মাদ মু’তাসিম বিল্লাহ আড়াই বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।

চতুর্থ পুত্র হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি কামিল হাদীছ ও ফিক্বহ বিভাগ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরে চরমোনাই জামিয়ায় পাঠদান করেন এবং বর্তমানে চরমোনাই জামিয়ার রঈস ও কওমিয়া শাখার মুহতামিম হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি শাইখ (রহঃ) এর ইন্তিকালের পরে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে আমীরুল মুজাহিদীন হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পঞ্চম পুত্র হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। তিনি কামিল হাদীছ ও ফিক্বহ বিভাগ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরে চরমোনাই জামিয়ায় পাঠদান করেন এবং বর্তমানে চরমোনাই জামিয়ার নাযেমে আলা বা নির্বাহী পরিচালক। তিনি বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নায়েবে আমীর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ষষ্ঠ পুত্র সৈয়দ মুহাম্মাদ আমীনুল করীম (আযাদ)। তিনি ১৩ বছর ৯ মাস বয়সে ইন্তিকাল করেন।

সপ্তম পুত্র হযরত মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ জিয়াউল করীম। তিনি কামিল ফিক্বহ পাস করেছেন। তিনি সমাজ সেবক ও ব্যবসায়ী হিসাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দ্বীনী দাওয়াতের সফরও করে থাকেন।

অষ্টম পুত্র হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের। তিনি দাওরায়ে হাদীছ ও ইফতা পাস করার পর জাতীয় মহিলা মাদ্রাসা রামপুরা ঢাকার পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি সারা বছরই দ্বীনী দাওয়াতী সফরে নিয়োজিত থাকেন।

নবম পুত্র হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ নূরুল করীম। তিনি দাওরায়ে হাদীছ ও ইফতা পাস করার পরে ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন।

হুযূরের জীবিত পুত্রগণ আল্লাহ তায়ালার খাছ রহমাতে প্রত্যেকেই যোগ্যতা সম্পন্ন আলিম ও পরহিজগার। তারা সকলেই অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দূরদর্শী।

হুযূরের প্রথমা কন্যা লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব শোয়াইব আহমাদের সহধর্মিনী।

কনিষ্ঠা কন্যা সৈয়দা আরীফা বেগম সাড়ে তিন বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।

মৃত্যু



তিনি ২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

 

Leave a Comment

error: Content is protected !!