গৃহহীণের স্বপ্ন পূরণের সারথী শেখ হাসিনা

মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি হচ্ছে বাসস্থান। বিশেষ করে আমাদের মতো দরিদ্র দেশে যেখানে মানুষ তার অন্যান্য মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে না সেখানে সুবিধা সম্পন্ন বাসস্থানের ব্যবস্থা করা জটিল। এই জটিল কার্যক্রম বাস্তবায়নে হাত দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা বিশ্বের অন্যসব রাষ্ট্র দেখাতে পারেনি তাই সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা উক্ত কাজের জন্য প্রশংসার দাবী রাখে।

এ কার্যক্রমের ফলে বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব মানুষের মাঝে আস্থার মূর্ত প্রতীক হিসেবে হাজির হয়েছেন। দেশের অগ্রগতির জন্য রাষ্ট্র নায়কের প্রতি জনগণের আস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। দেশের অগ্রযাত্রায় সব শ্রেণি পেশার মানুষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুতাপূর্ণ । জতির জনকের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহহীণ মানুষকে গৃহ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে।

মুজিব বর্ষের এ উপহার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। সমাজের এসব অবহেলিত মানুষগুলো বাঁচার স্বপ্ন দেখছে নতুন ভাবে। এ ঘর নির্মাণের ফলে এসব গৃহহীণ সাধারণ মানুষের যেমন হয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই তেমনি রক্ষা পাবে ছোটখাট প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে । আশায় বুক বেঁধে স্বপ্ন দেখছে নতুনভাবে বেঁচে থাকার। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে এ কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে। জমি আছে ঘর নাই আবার জমিও নাই ঘরও নাই তারা সত্যিকার অর্থেই অসহায়। এসব অসহায় মানুষের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়াবে এটাই বাস্তবতা।

কিন্তু পূর্বে এসব কার্যক্রম গৃহীত হয়নি তাই বলা যায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর এটি একটি অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত। এ বিবেচনায় রাষ্ট্রের বর্তমানে যতটুকু সক্ষমতা রয়েছে তার ভিত্তিতেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জমি ও ঘর তোলে দিচ্ছেন এসব অসহায় মানুষের হাতে। এযেন আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। এ ঘর প্রদানের প্রদানের মাধ্যমে আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও কিছুটা মুক্তি নিচ্ছি। দুইকক্ষ বিশিষ্টি এসব ঘরে থাকবে বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা । সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী একটি লোকও গৃহহীন থাকবে না। এ ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে সত্যিকার অর্থেই সারা পৃথিবীতে গৃহহীন মানুষের মাঝে আলোকবর্তিকা হিসেবে আর্বিভূত হবেন শেখ হাসিনা

২৩ জানুয়ারি ‘ আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ প্রতিপাদ্যে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে ভূমিহীন, গৃহহীন ও অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপের এসব ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। শুধু গৃহ তৈরিই নয় সাথে সাথে দুইশতাংশ জমির মালিকানাও প্রদান করছেন। অনেকের জন্য এটা বড় কিছু না হলেও যারা পেয়েছেন তাদের জন্য এ পাওয়া আকাশসম। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একক গৃহ মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪ প্রকল্পে আরও ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে মোট ৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারকে ঘর ও জমি দেওয়া হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া যা সকল গৃহহীনদের ঘর না দেওয়া পর্যন্ত অব্যহত থাকবে। একসঙ্গে এ বিপুল সংখ্যক মানুষকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে অন্যন্য নজির স্থাপন করল বাংলাদেশ। আর এ সফলতার অংশীদার আমরা সকলেই কিন্তু এ ক্ষেত্রে যিনি মূখ্য দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এদেশের নিম্ন শ্রেণির মানুষের দুর্দিনের ছায়াসঙ্গী হয়ে উঠা প্রধানমন্ত্রীর এ কার্যক্রমে ভূমিহীন ও ঘরহারাদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। অনেক ঘর পাওয়া মানুকে আমরা কাঁদতে দেখিছি। কিন্তু কেন এ কান্না ? কান্নার পেছনে কি রহস্য ? কান্না হচ্ছে ভালোবাসার প্রতিদান। ঠিকানাহীন মানুষের ঠিকানা পাওয়ার কান্না এটা। সবসময় কোন কিছু পাওয়াতে কান্না থাকে না। যেসব পাওয়ায় ভালোবাসা থাকে সেসব পাওয়ায় কান্না চলে আসে মন থেকে। যে ভালোবাসায় শেখ হাসিনা এঁদের কে বেঁধেছেন তা সত্যিকার অর্থেই বিরল। এ ভালোবাসা মুছে গেলেও দাগ থেকে যাবে এ কথা হলফ করেই বলা যায়। কারন এ দেওয়ায় ছিলনা কোন স্বার্থপরতা। ছিল না কোন প্রতিদান। রাষ্ট্রের প্রতি রাষ্ট্রপ্রধানের মুজিবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের মানুষের গৃহহীন না থাকার যে কমিটমেন্ট তার একটি নিদর্শন এটি। এটি মুজিব বর্ষের অন্যতম একটি বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে।

এ উদ্যোগকে দেশের মানুষের পক্ষ থেকেও সাধুবাদ জানানো হয়েছে। এবং এতে যে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে তাকে কেবল প্রশংসা করলেই হবে না। এই ধারাকে অব্যহত রেখে মানবিক কল্যাণ সাধনের মাধ্যমে সুখি শক্তিশালী দেশ গড়তে হবে। এসব সরকারি কর্মসূচী সঠিকভাবে বাস্তবায়ন অনেকটাই চ্যালেঞ্জ। কিন্তু শেখ হাসিনার নির্দেশে মাঠ প্রশাসন অতি দ্রুত সময়ে সঠিকভাবে একাজটি সমাধান করছে। যা সত্যিই প্রশংশার দাবী রাখে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সদিচ্ছা থাকলে জনগণের কল্যাণের জন্য ভালো কাজ করা যায় এটি একটি জলন্ত উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে। এবং সরকারের কাজের এটি একটি ইতিবাচক দিক তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

সরকার ১ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি গৃহ নির্মাণ করেছে। এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ব্যারাক নির্মাণের দায়িত্ব পালন করেছে। এসব কার্যক্রমে যে পরিমাণ ব্যয় হয়েছে তা আমাদের দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে খুব একটা জটিল বিষয় নয়। তবে দেশের মানুষের সার্বিক বিচারে অগ্রগতি সাধিত হলেও নিম্ন শ্রেণির মানুষের সে অগ্রযাত্রাটা সুখকর নয়। নিম্ন শ্রেণির মানুষগুলো দিনকে দিন অর্থনৈতিক সুফল থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। যাদের জন্য এসব উপহার অবশ্যই তাদের প্রয়োজনীয়তার বিচারে আবশ্যক। এ প্রকল্পে ব্যয়িত টাকার তুলনায় গরীব মানুষের কল্যাণটা ভালো হয়েছে এটা বলা যেতে পারে। ঘরহারা মানুষদের ঘর প্রদান ঘটনা ইতিহাসের পাতায় বিরল । অনেক শাসক দেশ শাসন করেছেন কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এদেশের মানুষের প্রতি যে সহানুভূতি এবং যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন তা দেশের গৃহহীন মানুষের মাছে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে আর সময়ের চাহিদায় হয়তো এ কর্মকান্ড ঢাকা পড়ে যাবে কিন্তু স্মৃতি হিসেবে রয়ে যাবে। সম্প্রতি করোনা মহামারী সফলতার সাথে মোকাবেলা করে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্নফুলি টানেল, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনালের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সাথে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর পরিধিও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। সরকার এসব বড় বড় প্রকল্প দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে এ কথা অস্বীকার করার কোন সৃুযোগ নেই। তবে এ ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে অধিক।

বর্তমান ব্যবস্থাপনাকে কাজে লাগিয়ে এ ভালো কাজটুকু আদায় করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে এ ভালো কাজে যেন কোন প্রকার দুর্নীতি দেখা না দেয়। তাহলে এ মানবিক কাজটিতে কালিমা লেপন হবে। কেবল মাত্র এবিষয়টি ঘর পাবার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় কারন এর ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী। এ থেকে যেমন গৃহহীনরা মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে তেমনি দারিদ্র কমে আসার সম্ভানাও তৈরি হয়েছে। তাই সরকার পরিচালনায় এটি একটি মহৎ ও প্রশংশনীয় উদ্যোগ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব জমি ও ঘর বুঝে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে উপকার ভোগীরা। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম এসব বাসস্থান গৃহহীন আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া পড়ে। যারা ঘর পেয়েছেন তারা স্বপ্নেও কল্পনাও করতে পারেনি এই রকম ঘর তাদের হবে। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এ ঘরকে আকঁড়ে ধরে স্বপ্নের বীজ বুনতে শুরু করেছেন এসব গৃহীনহীন মানুষ। ন্যায্য প্রাপ্যতায় এ কাজ যেন আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ঘোষণার পর অনেকেই এ নিয়ে শংকাও প্রকাশ করেছিল যে আদৌ তা বাস্তবায়ন হবে কি না।

তবে এ বাসস্থানের ঘোষণা শুধু বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি তা বাস্তবায়নও হচ্ছে তা প্রত্যক্ষ করছে রাষ্ট্রের জনগণ। রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতা ও সফলতা দুটোই পাশাপাশি থাকবে। তবে সফলতার অংশে যুক্ত হয়েছে এ প্রকল্প। এখন প্রকল্পের সুবিধাভোগী মানুষগুলোকে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত করতে পারলে এ কার্যক্রমের সফলতা দীর্ঘস্থায়ী হবে এটা বলা যায়। আর এসব মানুষকে স্থায়ীভাবে এগিয়ে যাওয়া ব্যবস্থা করতে পারলে এ অর্জন মাঝ রাস্তায় মুখ থুবরে পড়বে না। বর্তমান পর্যন্ত যে কার্যক্রমটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তার ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকলে মানুষের মাঝে সরকারের এ অর্জন অম্লান হয়ে থাকবে। আশার যে আলো দেখতে পাচ্ছে জনগণ বর্তমান সরকারের এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে তা কোন কারণে যেন থমকে না যায়। এক কথায় সফলতা গুলোতে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে এর সুফলভোগীদেরও এবিষয়ে সচেতন করে তোলতে হবে। এবং বাস্তবায়নকারীদেরও মনে রাখতে হবে যে এখানে যেন কোন রাজনৈতিক বিভাজন না হয়। কারন রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা দল মত নির্বিশেষে সবাই পাবার যোগ্য।

অন্য কোন উদাহরণ এখানে গ্রহণযোগ্য হবে না। রাজনীতির জায়গায় রাজনীতিটাকে রেখে ভালো কাজের সময় সমতার নীতি অনুসরণ করতে হবে। ভলো কাজের সময় একটা পক্ষকে প্রতিপক্ষ করতে চাইলে সে কাজটা সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হয় না। নিয়ম নীতি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের এ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে পারলে অবশ্যই সুফল পাবে জনগণ। এবং সারা পৃথিবীতে মডেল হিসেবে কাজ করবে এ ব্যবস্থা এবং উন্নত জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে এটাই জনগণের প্রত্যাশা। বেঁচে থাকুক এসব মানুষের স্বপ্ন বেঁচে থাকুক প্রান্তিক এসব মানুষের ভালোবাসা। যে স্বপ্নে রচিত হবে আগামীর বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা।

লেখক পরিচিতি
প্রভাষক নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার
শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী

Leave a Comment

error: Content is protected !!