‘৬০ লাখ টাকা দাও, নৌকার মনোনয়ন দেবো!’

‘৬০ লাখ টাকা দাও, নৌকার মনোনয়ন দেবো!’ লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সামছুল আলম বাবুল এ অভিযোগ করেন। জেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ আরও বেশ কয়েকজন তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিভিন্ন সময়ে তুলে ধরেছেন।

তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা এবং হাজিরপাড়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী সামছুল আলম বাবুলকে বড় মিথ্যাবাদী বলে দাবি করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু।

এদিকে, মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই ক্ষোভ থেকেই আজকের নির্বাচনে ১৫টি ইউনিয়নে প্রায় সবকটিতে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনে নৌকার জয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে সম্প্রতি তৃণমূলের বর্ধিত সভায়ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা।

সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল আলম বাবুল বলেন, আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিতে সভাপতি পিংকু আমার কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা দাবি করেছেন। আমি দিতে না পারায় তার চাচাতো রাজাকার পুত্র মাসরুকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গত ইউপি নির্বাচনে আমার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছে।

বাবুল বলেন, সভাপতি পিংকু আমার কাছে টাকা চাইলে আমি দিতে পারবো না বলি, তখন উনি আমাকে জমি বিক্রির পরামর্শ দেন। আমি পরিক্ষীত চেয়ারম্যান। দুর্নীতি করিনি, কোন টাকা খাইনি। আমি কোথা থেকে দেব।

তিনি বলেন, পিংকু সাহেব উনি একজন ব্যবসায়ী, উনি রাজনৈতিক নেতা নয়। উনি আসছেন অর্থ কামাবার জন্য। গেল ইউপি নির্বাচনে উনি একশ কোটি টাকার মতো কামিয়েছেন। জেলার ৫২টি ইউনিয়ন থেকে কোথাও এক কোটি, কোথাও ৬০ লাখ, কোথাও ৫০ লাখ টাকা নিয়ে নমিনেশন বাণিজ্য করেছেন। ওনার পেশাই হলো ব্যবসা করা। লক্ষ্মীপুর থেকে উনি কাউকে ‘আল্লাহরাস্তে’ নমিনেশন দেন নাই। উনি একজন আদম ব্যবসায়ী হয়ে কিভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন। উনি আমাকেও ছাড়েন নাই, আমি ওনার ইউনিয়নের (হাজিরপাড়া) সভাপতি। উনি আমাকে বলে, এবার আপনার কাছ থেকে সবার থেকে কম বলছি। ৬০ লাখ টাকা দেন। দিলে আপনাকে নমিনেশন দেব।

বাবুল চ্যালেঞ্চ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, আপনার দলকে বাঁচাতে চান তাহলে তদন্ত করে দেখুন। আমার কথাটুকুর সত্যতা আছে। আমার কথা মিথ্যা হলে তাহলে আমাকে জেলে দিয়েন।

জেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গত কয়েকদিন থেকেই মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য দিয়ে আসছেন। সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবদুল হালিম মাষ্টার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান ঢালী অভিযোগ করেছেন, ওই ইউনিয়নে অর্থের বিনিময়ে জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের অযোগ্য ব্যক্তি আবদুল খালেক বাদলকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। একই অভিযোগ এনেছেন ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল হাসান রনি ও মামুনুর রশিদ মামুন।

চরশাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান গোলজার মোহাম্মদও একই অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী, কুশাখালী, দিঘলী বশিকপুর ইউনিয়নে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাবুল একজন মিথ্যুক। তার নামটা প্রথমে পাঠানো হয়েছে। সে দুর্নীতি করেছে, সে রিপোর্ট গেছে। তাই মনোনয়ন পাননি। এগুলো তার নাটক, সে নাটকের ওস্তাদ।

অনান্য ইউপিতে মনোনয়ন বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, সবি মিথ্যা। নমিনেশন না পেলে বঞ্চিতরা এসব কথা বলেন।

সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Comment

error: Content is protected !!